মবিন উদ্দিনের বয়স পঞ্চাশ। নেত্রকোনা শহরে "বিউটি বুক সেন্টার" নামে তার একটা বইয়ের দোকান আছে। দোকানের বিক্রি-বাট্টা তেমন ভাল না।কোনও রকম সংসার চালাচ্ছেন এই দিয়ে। স্ত্রী এবং ১৩ বছরের এক অন্ধ মেয়ে নিয়ে তার সংসার। মেয়ের নাম সুপ্তি।সু প্তি দেখতে অসাধারন সুন্দর। সব থেকে সুন্দর ওর চোখদুটি। কেউ ওর চোখদুটি দেখলে বিশ্বাস করতে চাইবেনা যে সে অন্ধ। আরও একজন মানুষ মবিন উদ্দিনের সংসারে ছিল। তার বড় ছেলে টুনু। বছর ছয়েক আগে প্রচন্ড জ্বর উঠে মারা গেল। ও তখন ভার্সিটির হোস্টেলে ছিল। জ্বর বেশি দেখে শিক্ষকরা মিলে ওকে হাসপাতাল নিয়ে যায়। মবিন সাহেব হাসপাতালে গিয়ে দেখেন ছেলে অজ্ঞান। নার্স এসে বলল ওর জ্ঞ্যান ফিরতে দেরি হবে, আপনি বরং এই ফাঁকে চা খেয়ে আসুন। তিনি চা খেয়ে ফিরে এসে আর ছেলেকে পেলেন না। শুনলেন মৃত্যুর আগে টুনুর জ্ঞ্যান ফিরেছিল। সে জিজ্ঞেস করেছিল "বাবা আসেনি?" এর জন্য তিনি গত ছয় বছর ধরে চা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়। হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও হুমায়ূন আহমেদ সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। হুমায়ূন আহমেদ এর সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশী না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তাঁর নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা ইত্যাদি।