Categories


ভবঘুরে শাস্ত্র

‘ভবঘুরে শাস্ত্র’ লেখার প্রয়ােজনীয়তা আমি অনেক দিন থেকে অনুভব করছিলাম। আমার মনে হয় অন্যান্য সমধর্মী বন্ধুরাও এর প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করছিলেন। ভবঘুরেমির অঙ্কুর জাগানাে এই শাস্ত্রের কাজ নয়; বরং যে অঙ্কুর মাথা তুলেছে তার পুষ্টি ও পরিবর্ধন তথা পথ প্রদর্শন এ বইয়ের লক্ষ্য। ভবঘুরের পক্ষে উপযােগী সমস্ত কথা সূক্ষ্ম রূপে এখানে এসে গিয়েছে, এমন কথা বলা উচিত হবে না, কিন্তু যদি আমার ভবঘুরে বন্ধুরা তাদের জিজ্ঞাসা ও অভিজ্ঞতার দ্বারা সাহায্য করেন, তাহলে আশা করি, পরের সংস্করণে এর অপূর্ণতা অনেকটা দূর করা যাবে।


ফার্স্ট বয়দের দেশ

নববর্ষ মানে ক্যালেন্ডারের ছড়াছড়ি। তাদের কত না রূপ, কত বিচিত্র ধরন। যেমন, চোঙের ভেতর পাকিয়ে রাখা দেওয়াল ক্যালেন্ডারগুলাে; সেগুলােকে খুলে সােজা করে দেওয়ালে ঝােলানাের পরও পাকানাে ভাবটা থেকেই যায়, তারা যেন তাদের চোঙের ভেতরকার জীবনের স্মৃতিটা ভুলতেই চায় না! আবার দেখুন, টেবিল ক্যালেন্ডারগুলাের চেহারা, সুন্দর সুন্দর ছবিতে ভর্তি, কিন্তু তাতে তারিখগুলাে খুঁজে পাওয়া মুশকিল, সব ছবিতে ঢাকা। আর যে বস্তুটিতে রাখার জন্য তাদের নামকরণ টেবিল ক্যালেন্ডার, সেটাতে কী ঝামেলা করেই না তাদের বসাতে হয়।


প্রকাশিত-অপ্রকাশিত জীবনানন্দ দাশের কাব্য সমগ্র

কেউ বলেন, তিনি বিষন্নতার কবি, আবার কেউ তার লেখনীর মধ্যে এক অতীন্দ্রিয় জীবনবােধের সন্ধান করেছেন। কেউ বলেছেন, জীবনানন্দ মানে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মেলবন্ধন। কোনাে কোনাে উন্নাসিক সমালােচক আবার জীবনানন্দীয় কবিতাকে দুর্বোধ্য আখ্যা দিয়েছেন। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতায় এমন একটি নাম, যা রবীন্দ্রনাথের পর নির্দ্বিধায় স্মরণযােগ্য। এই যােগ্যতাকে আমরা কীসের নিরিখে পরিমাপ করব? মনে প্রশ্ন জাগে, কবিদের কবিত্বশক্তির বিচার কি এই ভাবে যােগ্যতার মাপকাঠিতে নির্ণীত হতে পারে? রবীন্দ্রনাথের মতাে জীবনানন্দও ছিলেন স্বতন্ত্র প্রতিভার অধিকারী। জীবনানন্দীয় কবিতা বিচার বিশ্লেষণ করতে হলে তার সময় এবং তার যুগকে অনুভব করা উচিত।


চরিত্রহীন

উপেন্দ্র আর কোন প্রশ্ন না করিয়াই রাজী হইলেন। এটা তাহার অভ্যাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলি এতই ভাল করিয়া পাশ করিয়াছিলেন যে, ছাত্রমহলে তাহার শ্রদ্ধা ও সম্মানের অবধি ছিল না। ইহা তিনি জানিতেন। তাই, কাজে-কর্মে, আপদে-বিপদে তাহারা যখনই আসিয়া পড়িয়াছে, তাহাদের আবেদন ও উপবােধকে মমতায় কোনদিন উপেক্ষা করিয়া ফিরাইতে পারেন নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতীকে ডিজাইয়া আদালতের লক্ষ্মীর সেবায় নিযুক্ত হইবার পরও ছেলেদের জিমন্যাস্টিকের আখড়া হইতে ফুটবল, ক্রিকেট ও ডিবেটিং ক্লাবের সেই উঁচু স্থানটিতে গিয়া পূর্বের মত তাহাকে বসিতে হইত।


সুভাষ থেকে নেতাজি

তাকে খতম করার জন্য অর্থাৎ তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরি করার জন্য ওরা এখানে এসেছে। এই জেলাশাসকের কৃতকর্মের জন্য মেদিনীপুরের স্বাধীনচেতা দামাল ছেলেদের আদালতে, অনেক আগেই তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। সেটাও জানতে পেরে, প্রাণ বাঁচাতে অতি গােপনে রাতের অন্ধকারে বাংলা থেকে বদলি হয়ে, বিহারের মজফরপুর এসেছে। কাপুরুষরা জানে না যে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিচারের শাস্তি ওকে পেতেই হবে। হাকিম নড়বে তাে হুকুম নড়বে না। তাই হুকুম বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে, প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম, মজফরপুর এসে, সবকিছু ঠিকঠাক মতাে দেখে নিচ্ছে। জেলাশাসক কিংসফোর্ড কোন্ রাস্তায় অফিসে যায় কখন যায়, কখন ফেরে। কোন গাড়িতে, কোন রাস্তায় যায়।


দৃষ্টি-প্রদীপ

সকলের চেয়ে কাজ বাড়ে পূজো-আচ্চার দিনে—এ বাড়িতে বারাে মাসের বারােটা - পূর্ণিমাতে নিয়মিত ভাবে সত্যনারায়ণের সিন্নি হয়। গৃহদেবতা শালগ্রামের নিত্যপূজা তাে আছেই। তা ছাড়া লক্ষ্মীপূজা মাসে একটা লেগেই থাকে। এসব দিনে সংসারের দৈনিক বাসন বাদে পূজোর বাসন বেরােয় ঝুড়িখানেক। এঁদের সংসার অত্যন্ত সাত্ত্বিক গোঁড়া হিন্দুর সংসার পুজো-আচ্চার ব্যাপারে পান থেকে চুন খসবার জো নেই। সে ব্যাপারে দেখাশুননা করেন জ্যাঠাইমা স্বয়ং। ফলে ঠাকুরঘরের কাজ নিয়ে যাঁরা খাটাখাটুনি করেন, তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে।


ছোটো প্রশ্নে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান

লাইব্রেরি একটি জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। এটি সমাজের সকল স্তরের সকল শ্রেণীর মানুষজনকে সেবা প্রদান করে। স্বাক্ষরতা থেকে শুরু করে শিক্ষা জগতের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সর্বস্তরেই গ্রন্থাগার উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে। সমাজের সার্বিক উন্নয়নে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এগুলি সবই সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে চিহ্নিত। এগুলি সমাজে বিভিন্নভাবে অবদান রাখে। তেমনি সমাজের প্রতি গ্রন্থাগারের অবদানের কথা স্মরণ করে এটিকেও সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলা চলে।


খেরোর খাতা

ওদের সরল বিশ্বাস দেখে মায়া হত। যে কোনও বিবাহিত মেয়েই সারা জীবন ধরে যেসব জিনিস কাছে নেই, থাকবার নয়, তাদের বাদ দিয়ে কাজ চালিয়ে যায়। কোনও বাড়িতে এমন পুরুষ দেখলাম না যে তাদের ধরবার সাধ্যি রাখে। ডিম বাদ দিলে যা কখনওই হবার নয়, মেয়েরা হামেশাই ডিম বাদ দিয়ে তাই করে নেয়— একথা পুরুষ ছাড়া সবাই মানে। আবার বলে কিনা মেয়েদের বুদ্ধি কম। সত্যি কথা বলতে কী, এই যে পুরুষানুক্রমে মেয়েদের বুদ্ধিহীনতার প্রবাদ চলে আসছে, এতে মেয়েদের কম সুবিধে হচ্ছে না। তা ছাড়া বেজায় বুদ্ধি না থাকলে মান্ধাতার আমল থেকে কেউ বােকা সেজে থাকতে পারত না। যাকগে, এখন চাকরে মেয়েদের কথাই হােক।


কমলাকান্তের দপ্তর

অনেকে কমলাকান্তকে পাগল বলিত। সে কখন কি বলিত, কি করিত, তাহার স্থিরতা ছিল না। লেখাপড়া না জানিত, এমন নহে। কিছু ইংরেজি, কিছু সংস্কৃত জানিত। কিন্তু যে বিদ্যায় অর্থোপার্জন হইল না, সে বিদ্যা কি বিদ্যা? আসল কথা এই, সাহেব সুবাের কাছে যাওয়া আসা চাই। কত বড় বড় মূখ, কেবল নাম দস্তখত করিতে পারে,—তাহারা তালুক মুলুক করিল—আমার মতে তাহারাই পণ্ডিত। আর কমলাকান্তের মত বিদ্বান, যাহারা কেবল কতকগুলাে বহি পড়িয়াছে, তাহারা আমার মতে গণ্ডমূখ।


আমার সাহিত্য জীবন

নিজের জীবনকালের কথায় নিজের জীবনকে গৌন করে কালকে বড়ো করে শৈশবের কথা এবং কৈশোরের কথা লিখে সাহিত্য-জীবনের কথা লেখার সংকল্প যখন করেছিলাম তখন এ কাজ যে কত কঠিন তা ভেবে দেখিনি। লিখতে বসে মনে হচ্ছে এমন কঠিন কাজে হাত না দেওয়াই ভালো ছিল। সহজাত লিখনক্ষমতায় এমন কঠিন কাজকে সহজ করে তুলেছেন তিনি। উম্মোচিত হয়েছে তাঁর সৃজনজীবনের অন্দরমহল। সেই সঙ্গে, বিগত শতকের তিরিশের দশকের শুরু থেকে পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ-আমাদের জাতীয় জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই সময়পর্বকে চিনে নেবার আয়াসেও সহযোগ দান করে এই আত্মচরিতমূলক গদ্য।


রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার এবং পুনরাবিষ্কার

‘তিন জোড়া লাথির ঘায়ে রবীন্দ্র-রচনাবলী লুটোয় পাপােশে। এক সময় এরকম আমরাই লিখেছিলাম। আমরা মানে? পঙক্তিটি রচনার মতন দুষ্কর্ম আমারই, কিন্তু যেহেতু ছ’খানা পায়ের উল্লেখ আছে, তাই সমবেত কণ্ঠস্বরও বলা যেতে পারে। ষষ্ঠ দশকের গােড়ার দিকের রচনা, রবীন্দ্রনাথের তিরােধানের পর দুটি দশক পার হয়ে গেছে, তবু বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি অতিমাত্রায় উপস্থিত। তা তাে তিনি থাকবেনই, কিন্তু এমন একটা রবীন্দ্র ভাবধারা প্রসারিত হয়েছিল,