সকলের চেয়ে কাজ বাড়ে পূজো-আচ্চার দিনে—এ বাড়িতে বারাে মাসের বারােটা - পূর্ণিমাতে নিয়মিত ভাবে সত্যনারায়ণের সিন্নি হয়। গৃহদেবতা শালগ্রামের নিত্যপূজা তাে আছেই। তা ছাড়া লক্ষ্মীপূজা মাসে একটা লেগেই থাকে। এসব দিনে সংসারের দৈনিক বাসন বাদে পূজোর বাসন বেরােয় ঝুড়িখানেক। এঁদের সংসার অত্যন্ত সাত্ত্বিক গোঁড়া হিন্দুর সংসার পুজো-আচ্চার ব্যাপারে পান থেকে চুন খসবার জো নেই। সে ব্যাপারে দেখাশুননা করেন জ্যাঠাইমা স্বয়ং। ফলে ঠাকুরঘরের কাজ নিয়ে যাঁরা খাটাখাটুনি করেন, তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ( Bibhutibhushan Bandyopadhyay) ,জন্ম ইংরেজি -১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাংলা ১৩০১ সনের ২৮শে ভাদ্র) তার মামার বাড়ি কঁচরাপাড়ার কাছাকাছি মুরাতিপুর গ্রামে। পিতা মহানন্দ। মাতা মৃণালিনী দেবী। পৈতৃক নিবাস যশোহর জেলার বনগ্রাম মহকুমায় ইছামতী নদীতীরবতী বারাকপুর গ্রামে। শিক্ষণ স্বগ্রাম ও অন্য গ্রামের পাঠশালায়। পরে বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে। ১৯১৪ খ্রি. ম্যাট্রিক, ১৯১৬-তে আই.এ. এবং ১৯১৮ খ্রি. ডিস্টিংশনে বি.এ. পাশ করে এম.এ. এবং ল্য-ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু পড়া অসমাপ্ত রেখে প্রথমে জাঙ্গীপাড়ার স্কুলে ও পরে সোনারপুর হরিনাভি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মাঝে কিছুদিন গোরক্ষিণী সভার প্রচারক, পরে খেলাৎ ঘোষের বাড়িতে সেক্রেটারি, গৃহশিক্ষক এবং এস্টেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার-রূপে কাজ করলেও আমৃত্যু শিক্ষকতা করেন। কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রাবস্থায় প্রথম বিবাহ। এক বছরের মধ্যে পত্নী গৌরীদেবীর মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন প্রায়-ভবঘুরের জীবনযাপন। দ্বিতীয় বিবাহ রামাদেবীর সঙ্গে ১৯৪০ সালে। একুশ বছরের দিনলিপি, ছোটোগল্প, ভ্ৰমণকাহিনি এবং কিশোর-সাহিত্য রচনা করেন। তার লেখা “দৃষ্টিপ্ৰদীপ’, ‘আরণ্যক’, ‘ইছামতী’, ‘কিন্নরদল, প্রভৃতি। ১৯৩০ সাল থেকে ঘাটশিলা-গালুডি অঞ্চলের প্রতি আকর্ষণ-ওখানেই বাড়ি কেনেন। স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র রেখে ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর ঘাটশিলায় প্রয়াত হন।