চারটি গল্প নিয়ে এই বই। বই-এর নামকরণ ঠিক হয় নি। নাম শুনে মনে হতে পারে বইটি খুব ছোটদের জন্যে। আসলে তা নয়। বইটি কিশোর-কিশোরীদের জন্যে। তিনটি গল্পের বিষয়বস্তু এমন যে খুব বাচ্চারা কিছুই বুঝবে না। তারা এই বই পড়লে আমার উপর রাগ করবে। ভুরু কুচকে ভাববে-এই পাগরা এসব কি লিখেছে ? একটি গল্পে ছোটদের চোখে বড়দের সমস্যা দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। জানি না এই গল্প ছোটদের বইএ দেয়া ঠিক হল কি-না “বড় মামা এবং রাজকুমারী সুবর্ণ রেখা” হচ্ছে সেই গল্প। বড় মামার চরিত্রটি জীবন থেকে নেয়া। আমার বড় মামা যেমন ছিলেন এই গল্পেও ঠিক সে রকম রাখা হয়েছে।
গল্পগুলি লেখার পেছনে মজার ইতিহাস আছে। একবার আমি কি করলাম-রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। রাগ করলে সবাই খুব ছেলেমানুষ হয়ে যায়। আমিও তাই হলাম, ভাবলাম -এই যে বাড়ি থেকে বের হচ্ছি আর ফিরে যাব না। কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখি মানব্যাগ আনি নি। পকেটে একটি টাকাও নেই। বাসায় ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে-কিন্তু ফিরবার অজুহাত পাচ্ছি না। রাত কাটল কমলাপুর রেল ষ্টেশনে। ষ্টেশনের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত হাঁটি। ক্ষুধা তৃষ্ণায় শরীর অবসন্ন। তারচেয়েও বড় কথা আসার সময় দেখে এসেছি মেয়েটি জ্বরে কাতর।বেচারীর কথাও খুব মনে পড়তে লাগল এইসব ভুলে থাকার জন্যে গল্প ভাবতে শুরু করলাম। চারটি গল্প এইভাবে তৈরী হল।
হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়। হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও হুমায়ূন আহমেদ সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। হুমায়ূন আহমেদ এর সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশী না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তাঁর নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা ইত্যাদি।