Note : All deposit is refundable
জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইটি খুব সাধারণ এক গল্পের অসাধারণ আখ্যান হয়ে উঠার কাহিনী। এক সাধারণ বাঙালি নারীর ব্যক্তিগত ডায়েরীর বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় দলিল হয়ে উঠার গল্প। জাহানারা ইমামের একজন সাধারণ মা থেকে শহীদ জননী হয়ে উঠার দিনলিপি। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইটিতে জাহানারা ইমাম মায়ের মমতা নিয়ে, বাঙালি নারীর শাশ্বত মহিমা নিয়ে, দেশপ্রেমিকের ভালোবাসা নিয়ে একাত্তরের দিনগুলোর গল্প আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইটি ডায়েরীর আদলে লেখা। এখানে পরিচ্ছেদের প্রথমেই বিভিন্ন দিনের তারিখ দেয়া এবং নিচে সেই দিনের ঘটনাপ্রবাহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ডায়েরীর তারিখ শুরু হয়েছে মার্চের প্রথম দিক থেকেই আর শেষ হয়েছে ডিসেম্বরের একদম শেষে গিয়ে। এর মাঝে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সব বড় ঘটনাই দিন অনুযায়ী অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে। ডায়েরীতে যেমন ৭ মার্চের শেখ মুজিবর রহমানের রেসকোর্স ময়দানের ভাষণের কথা বলা হয়েছে, তেমনি ভাষণ পরবর্তী মার্চের দিনগুলোতে কীভাবে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন অশুভ আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছিলো সেই গল্পও একান্তভাবে উঠে এসেছে। তারপর ২৫শে মার্চের কাল রাতের বর্ণনা বেশ বিস্তৃতভাবে এসেছে। জাহানারা ইমাম বিভিন্নজনের কাছে থেকে ২৫ মার্চ রাতের যে সব ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা শুনেছিলেন সে সবও তিনি ‘একাত্তরের ডায়েরী’ বইটিতে লিপিবদ্ধ করেছেন। তাই সে রাতের নৃশংসতার প্রায় সব দিকই এখানে উঠে এসেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের হত্যাকাণ্ড, পুরান ঢাকার হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের হত্যাকাণ্ডের বীভৎসতার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ছোঁয়াও পাওয়া যাবে এই বইয়ে। তার পরপরই চলে আসে এই ডায়েরীর মূল আলোকপাত যেই ব্যাপারে সেই রুমীর কথা। রুমী জাহানারা ইমামের বড় ছেলে। অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন এবং মেধাবী ছেলে সে। যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানী অত্যাচারী শাসকদের প্রতি সে তীব্র ঘৃণা অনুভব করতো। তারপর যুদ্ধ যখন শুরু হল তখন পরিচিত ঢাকাকে এই ভয়ানক তাণ্ডবলীলায় বিপর্যস্ত হতে দেখে, চেনা মানুষগুলোকে নরপশুদের হাতে খুন হতে দেখে রুমী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলো না। অবশেষে তার যুদ্ধে যাবার সুযোগ এসে গেল। সে বন্ধুদের মাধ্যমে একদিন ট্রেনিংয়ে যাবার সুযোগ পেল।
জাহানারা ইমাম ( জন্ম: মে ৩, ১৯২৯ - মৃত্যু:জুন ২৬, ১৯৯৪) একজন বাংলাদেশী লেখিকা, শহীদ জননী, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ একাত্তরের দিনগুলি। একাত্তরে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শফি ইমাম রুমী দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হন। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন৷ রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই তিনি শহীদ জননীর মযার্দায় ভূষিত হন৷