Note : All deposit is refundable
যে কোনো দেশের কূটনৈতিক কর্মকান্ডে বিস্তর লিখিত দলিল চালাচালি হয়। আর এতে থাকে আপাতভাবে তুচ্ছ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার গুরুত্তপূর্ণ বিবরণ। যা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন তো আছেই, আরেকটি উদ্দেশ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় কিছু রেখে যাওয়া। বাংলাদেশের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ট্র্যাজেডি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সুবিদিত। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের শত শত দলিলে ওই সময়ের ঘটনাবলির রয়েছে লিখিত বিবরণ। মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড একটু ব্যতিক্রমধর্মী গবেষণাপদ্ধতি অনুসরণ করেছে। মুজিব হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত অধিকাংশ লেখা যেখানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাত্কার এবং অনুমাননির্ভর যুক্তি দিয়ে রচিত, মিজানুর রহমান খান সেগুলোর ওপর নির্ভর না করে মার্কিন মহাফেজখানা থেকে অবমুক্ত করা কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সামরিক ক্যু-এর কুশীলব এবং এ নিয়ে তত্কালীন পরাশক্তি ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহের কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করেছেন। আলোচ্য বইটিতে ভূমিকা ও উপসংহারসহ মোট ১৫টি ছোট অধ্যায় রয়েছে। এ ছাড়া এতে ছয়টি তথ্যবহুল পরিশিষ্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। মার্কিন দলিলে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান বর্ণনা করেন যে হেনরি কিসিঞ্জার এবং নিক্সন প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা পাকিস্তানের ভাঙন রোধের জন্য যে আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং এমনকি ভারত মহাসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবহর ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের হুমকি দেন, তার মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় সোভিয়েত প্রভাব প্রতিহত করা।
মিজানুর রহমান খান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। ১৯৭১ সালে কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন মিজানুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। জুন মাসে ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণের পর তাঁকে ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জে পাঠানো হয়। ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক আবু তাহের (বীর উত্তম) তাঁকেসহ ৪৮ জনকে নিয়ে একটি দল গঠন করে আলাদাভাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেন। তিনি তাঁদের সম্মুখযুদ্ধের জন্য রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন। মহেন্দ্রগঞ্জ সাবসেক্টরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি স্থানে তাঁরা সম্মুখযুদ্ধ করেন। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি আবু তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর বড় একটি দল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কামালপুর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে। এই যুদ্ধেও তিনি অংশ নেন। সেদিন তিনিসহ ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা মেজর তাহেরের সঙ্গে ছিলেন। তাঁদের ওপর নির্দেশ ছিল কামালপুরের পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থান দখলের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ১০ জন সেখান থেকে অস্ত্রশস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে নিজেদের ঘাঁটিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তাঁরা সেটা করতে পারেননি। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা যুদ্ধের একপর্যায়ে মেজর তাহের আকস্মিকভাবে আহত হন। সে সময় তিনি ও তাঁর এক সহযোদ্ধা দ্রুত আহত মেজর তাহেরকে ধরে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। সেদিন শেষ পর্যন্ত কামালপুর যুদ্ধ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মিজানুর রহমান খান স্বাধীনতার পর পড়াশোনা শেষ করে জনতা ব্যাংকে চাকরি করেন।