‘নিরাশ্রয় পাঁচটি আঙ্গুল’ কবিতায় কিশোরী হেলেনের প্রতি কবির অসহায় প্রেমের দৃপ্ত উচ্চারণ অনুরণিত হয় পাঠকের হ্রদয়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত সময়ে রচিত ‘দুঃসময়ে আমার যৌবন’ কবিতায় কবি যৌবনকে সাবধান করেছেন শুধু নারীকে না সাজানোর জন্য। মরণাস্ত্রের সাথে প্রণয় করা কবি আগুনের হোলি খেলার মুহূর্ত ১৯৭১ কে ফিরিয়ে এনেছেন ‘অস্ত্র সমর্পণ’, ‘অগ্ন্যুৎসব’ এবং ‘অন্যরকম সংসার’ কবিতাগুলোতে। পাঁচ দুপুরের নির্জনতার খুনী কবি হেলাল হাফিজ ‘বেদনা বোনের মত’, ‘ইচ্ছে ছিলো’, ‘প্রতিমা’, ‘হিরণবালা’, ‘তুমি ডাক দিলে’, ‘অমীমাংসিত সন্ধি’, ‘হ্রদয়ের ঋণ’ ‘প্রস্থান’ ইত্যাদি প্রেমের কবিতাগুলোতে এঁকেছেন শর্তহীন প্রেমের পবিত্র জলছবি, মৌনতাগ্রাসী পাখির প্রেমাকুলতা, অষ্টপ্রহরের খামখেয়ালী ভালোবাসা সমাচার আর নারী খেলার প্রথম ও পবিত্র ঋণ শোধাবার অব্যর্থ প্রয়াসের ছবি। শৈল্পিক তাবিজ কিংবা নিমীলিত লীলা নারী কে নির্ণয় করার চেষ্টা করেছেন ‘দুঃখের আরেক নাম’ আর ‘অনির্ণীত নারী’ নামক কবিতায়। স্বাধীনতার অপ্রাপ্তি আর স্বপ্নভঙ্গের অনুপম পান্ডুলিপি ‘যেভাবে সে এলো’, ‘নিখুঁত স্ট্র্যাটেজী’, ‘ব্যবধান’, ‘একটি পতাকা পেলে’ ইত্যাদি কবিতা পাঠকমনকে বিষন্ন করে তোলে কিন্তু হতাশ করে না।
হেলাল হাফিজ (জন্মঃ ৭ অক্টোবর, ১৯৪৮) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি যিনি স্বল্পপ্রজ হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর কবিতা সংকলন যে জলে আগুন জ্বলে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর অসংখ্য সংস্করণ হয়েছে। ওই গ্রন্থটির ১৯ টি সংস্করণ প্রকাশিত হলেও এরপর গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে তার নিস্পৃহতা দেখা যায়। ২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’;- এ কবিতার দুটি পংক্তি ‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’ বাংলাদেশের কবিতামোদী ও সাধারণ পাঠকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়ে থাকে।[১] তিনি সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কাজ করেছেন। দেরীতে হলেও ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।