আব্বুর পছন্দের খাবার রেঁধে টিফিন কেরিয়ারে ভরে সেদিনই আইনজীবীদের সাথে নিয়ে আম্মা একাই জেলে গেলেন আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে। আম্মা আইনজীবীদের সহায়তায় হাইকোর্টের মাধ্যমে আব্বুর আটকাদেশকে অবৈধ চ্যালেঞ্জ করে আব্বুকে মুক্ত করার জন্য নথিপত্র জোগাড় করেছিলেন। হত্যাকারী সেই আর্মি–মোশতাক সরকার আব্বুকে দুর্নীতিতে জড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা করেও দুর্নীতি তো দূরের কথা, একটা সাধারণ নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগও দাঁড় করাতে পারেনি। আব্বুকে মুক্ত করার জন্য ৫ নভেম্বর আদালতে রিট পিটিশন ওঠার কথা। আম্মা আব্বুকে সেই খবর জানালেন। কিন্তু আব্বু যেন কেমন চিন্তামগ্ন রইলেন। তিনি আম্মার ডাক নাম ধরে বললেন, ‘লিলি, আজ রাতে ডায়েরির শেষ পাতা লেখা হবে। সেই সঙ্গে শেষ হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা।’ তারপর বললেন, ‘আর বোধহয় বাঁচব না।’ জেলে আব্বুর সাথে আম্মার সেই শেষ সাক্ষাৎ।.... হ্যা, ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করেছেন লেখিকা। সবচেয়ে বড় বেদনা তখনই, যখন প্রকাশের সব ভাষা হারিয়ে যায় নিমেষেই।
শিক্ষাবিদ শারমিন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত তাজউদ্দিন আহমদ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেত্রী প্রয়াত জোহরা তাজউদ্দিনের বড় মেয়ে। ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ওয়াশিংটন ডিসির জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি খেকে ১৯৯০ সালে উইমেন্স স্টাডিজে এম এ করেছেন শারমিন। মানবাধিকার ও নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক বিভিন্ন ইন্সটিটিউট ও সংস্থায় পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন প্রায় দু’দশক ধরে। প্রগতিশীল ইসলামি নীতি গবেষণামূলক ইন্সটিটিউট ‘মিনারেট অব ফ্রিডম’ এর সাবেক পরিচালক এবং প্রতিষ্ঠাতাদের একজন শারমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তাজউদ্দিন আহমদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেছেন ২০১১ সালে। তাঁর সরাসরি অভিজ্ঞতা খেকে লেখা বই Daughter of Bangladesh Liberation Witnesses Tahrir Emancipation প্রকাশিত হয়েছে ২০১২ সালে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাঁর প্রয়াত পিতা তাজউদ্দিন আহমদের অবদান নিয়ে লেখা ‘তাজউদ্দিন আহমদ নেতা ও পিতা’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ সালে