মনে আছে তালেবানের হাতে বন্দী সেই খৃস্টান নারী সাংবাদিকের কথা? ২০০১ সালে আমেরিকার সন্ত্রাসবাদী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আফগানিস্তানে তালেবানের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অপহৃত হয়েছিলেন এ নারী সাংবাদিক এবং পরবর্তীতে মুক্তি পেয়ে গ্রহণ করেছিলেন ইসলাম। শুধু তাই নয়, ইসলাম গ্রহণের পর তিনি হয়ে উঠেন ইসলামের একজন অকুতোভয় দায়ি। মনে আছে সেই সাহসী নারীর কথা? পুরো পশ্চিমাবিশ্বকে যিনি কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তার আত্মজীবনী বয়ান করে। তার নাম ইভন রিডলি। পশ্চিমাবিশ্বে যিনি এক বিস্ময়ের নাম! ‘ইন দ্য হ্যান্ড অব তালেবান’ তারই আত্মজীবনী গ্রন্থ। যেখানে তিনি টুইন টাওয়ার হামলা থেকে শুরু করে সংবাদ সংগ্রহের জন্য তার আফগান যাত্রা, ওয়ার অন টেরর, তালেবানের হাতে বন্দী হওয়া, মুক্তি, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার চমকপ্রদ কাহিনি বর্ণনা করেছেন নিঃশঙ্কোচে। ইউরোপ ও আমেরিকায় ইসলাম নিয়ে যে ভীতি ও শঙ্কা দিন দিন ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে, কীভাবে পশ্চিমারা ইসলাম ও মুসলিমদের দোষী সাব্যস্ত করে পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করছে, নির্দোষ মানুষকে কীভাবে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, মানবতার শত্রু বলে চিহ্নিত করছে- তার এক নির্মোহ বয়ান এ গ্রন্থ।
তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৮ সালের ২৩ এপ্রিল। তিন বােনের মধ্যে সবার ছােট রিডলি বেড়ে উঠেন ইংল্যান্ডের ডারহামের স্ট্যানলিতে। ছােটবেলা থেকেই সংবাদ ও সাংবাদিকতা ছিলাে তার ধ্যান-জ্ঞান। তাই নিজের চাকরিজীবন শুরু করেন স্ট্যানলি নিউজ নামের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে। পরবর্তীতে তিনি লন্ডন কলেজ অব প্রিন্টিংয়ে পড়াশােনা করেন। এটা ছিলাে তার উপরে উঠার একটা শক্ত সিঁড়ি। এ সিঁড়িতে পা দিয়েই পরবর্তীতে তিনি বিখ্যাত সব। সংবাদমাধ্যমে কাজ করার সুযােগ পান। যেমন- দ্য সানডে টাইমস, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট অন সানডে, দ্য অবজারভার, ডেইলি মিরর এবং নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার হামলা পরবর্তী সংবাদ সংগ্রহের জন্য ইভন রিডলি সাংবাদিক হিসেবে পাকিস্তান আসেন এবং সেখান থেকে আফগানিস্তানে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে তিনি তালেবানদের হাতে অপহৃত হন। তার দশ দিনের বন্দিজীবন পুরাে বিশ্ব মিডিয়ায় তােলপাড় করে ফেলে। দশ দিন পর তালেবানরা তাকে নিঃশর্তে মুক্তি দেয়। বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি কাছ থেকে তালেবানদের জীবন-যাপন দেখার সুযােগ পান। এই সুযােগ তাকে পরবর্তীতে ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তােলে এবং তিনি ইসলাম সম্বন্ধে পড়াশােনা শুরু করেন। অবশেষে ২০০৩ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ। করেন। তার ইসলাম গ্রহণের সংবাদে পুরাে পৃথিবী নতুন করে তাকে নিয়ে আবার মেতে উঠে। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তিনি সােচ্চার কণ্ঠে ইসলামের পক্ষে কথা বলে আসছেন। ২০১৪ সালে তিনি ব্রিটিশ মুসলিমস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।