Note : All deposit is refundable
ধর্মাদ্ধদের হিংস্র থাবার আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় আজ হতে চার বছর আগে তাঁর প্রয়াণ ঘটে স্বজনহীন চিকিৎসা-বঞ্চিত পরিবেশে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার তীর্থ ভূমি জার্মানিতে। গতানুগতিক প্রথায় আবদ্ধ আমাদের সমাজ পরিবেশের নিয়ামকদের অসামান্য মূর্খতার সমান্তরালে গ্রাম্যে কুচক্রের মুখোশ উন্মোচনের জন্যপ্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে বিতর্কিত হয়েছেন তিনি। নির্দ্বিধায় উচ্চকন্ঠে সত্য বলার সাহসের জন্য পেয়েছেন মুক্তমনা তরুন সমাজের ভালোবাসা। তাঁর প্রয়াণ এই বাংলাদেশের সমা্জ -রাষ্ট্রের ক্ষতি , মানবেতার ক্ষতি সন্দেহ নেই। সন্দেহ নেই অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে আমাদের বিদ্যালয় অঙ্গনে , শিক্ষার ক্ষেত্রে । এই প্রসঙ্গে বলতে হয় আমাদের গ্রন্থভবন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় অত্যন্ত দীন। এই দীনতার রাজ্যে ভাষা বিজ্ঞান চর্চায় বিশেষ করে চোমস্কি উত্তর বস্তু নিষ্ঠ তাত্ত্বিক শাস্ত্রাটির ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনা শুরু করেছিলেন ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ। বিগত শতকে তাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনায় ব্যাপৃত থাকলেও বর্তমান শতকের শুরুতে তিনি ভাষাবিজ্ঞানের ফলিত শাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন।বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জ্ঞান পিপাসুদের আকাঙ্খা পূরনের জন্য ভাষার ব্যাকরণ রচনার তাগিদে ড. হুমায়ূন আজাদ লিখতে শুরু করেছিলেন ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞান শিক্ষার প্রণালীর পদ্ধতির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। কিন্তু প্রকৃতির নিষ্ঠুর পরিহাসে ভাষাবিজ্ঞানের প্রায়োগিক শাখায় পদচারণা তার অকস্মাৎই থেমে গেল। পড়ে রইল তাঁর পাঠ কক্ষের বহুবিধ কাগজ পত্র, পাণ্ডলিপির ভিড়ে যৎসামান্য রচনা।
হুমায়ুন আজাদ (Humayun Azad) জন্ম -এপ্রিল ২৮, ১৯৪৭, মৃত্যু -আগস্ট ১১, ২০০৪) (বৈশাখ ১৪, ১৩৫৪–শ্রাবণ ২২, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন বাংলাদেশি কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনীতিক ভাষ্যকার। তাঁর জন্ম নাম ছিলো হুমায়ুন কবীর। ১৯৮৮ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর নাম পরিবর্তনের মাধ্যম তিনি বর্তমান নাম ধারণ করেন। বাবা আবদুর রাশেদ প্রথম জীবনে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও পোস্টমাস্টারির চাকুরি করতেন পরে ব্যবসায়ী হন। মা জোবেদা খাতুন একজন গৃহিণী ছিলেন। তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে আজাদ ছিলেন পিতামাতার প্রথম পুত্রসন্তান। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পিতৃবিয়োগ ঘটে। তিনি ছেলেবেলায় প্রায় ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত রাড়িখালের প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৬ সালে তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিশেবে। এখানে কিছুকাল কর্মরত থাকার পর ১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। একই বছর ১৯৭২ সালের শেষ দিকে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং পরবর্তী কালে কয়েক বছর বাংলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলা বিভাগে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। হুমায়ুন আজাদ ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে লতিফা কোহিনুরকে বিয়ে করেন। তাঁর দুই কন্যা মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ এবং এক পুত্র অনন্য আজাদ। বাংলাদেশে যখন মৌলবাদ বিস্তার লাভ করতে থাকে, বিশেষ করে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত, তখন ২০০৪ এ প্রকাশিত হয় হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ গ্রন্থ। এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠি তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়, এবং বিভিন্ন স্থানে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালায়। তিনি এই বইটিতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ফ্যাসিবাদী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এর কঠোর সমালোচনা করেন । আর তারই জের ধরে ২০০৪ সালে হুমায়ুন আজাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়, যার দায়িত্ব পরবর্তীতে জমিয়াতুল মুজাহেদীনের সন্ত্রাসবাদীরা স্বীকার করে। হুমায়ুন আজাদ ১১ আগস্ট ২০০৪ সালে জার্মানির মিউনিখ শহরে মৃত্যুবরণ করেন।