"বইটি যখন লিখেছিলাম, তখন কোনো ভাবে এবং কখনও ভাবিনি যে বইটির দু'মিলিয়ন কপি ছাপার বার্ষিকী পালন করার সৌভাগ্য হবে। এ তো অপ্রত্যাশিত অচিন্তিতপূর্ব। যাহােক বইটি এত সংখ্যক বিক্রি হবার দৃষ্টিকোন থেকে নয়, আন্তরিকভাবে আমি সেই সব ব্যক্তিবর্গের কাছে কৃতজ্ঞ যাদেরকে আমি ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটি সক্রিয় জীবন দর্শন পেতে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে অগ্ৰাধিকার দিয়েছিলাম। যে সক্রিয় নিয়ামাবলীসমূহ এই বইটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে এবং যা এ বইটি সবাইকে শেখাতে সাহায্য করে তা কিন্তু এমনি এমনি হয়নি, তার জন্য অনেক কষ্ট একটি যথাযথ পথ খুঁজে বের করতে হয়েছে আর এসবের মাঝেই আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের কঠিন সমস্যাগুলোর উত্তর খুঁজে পেয়েছি, কারণ আমি এমন এক ব্যক্তি যাকে অনেক জটিলতর মানুষের সাথে কাজ করতে হয়েছে। এ বইটি আমার এমন এক প্রয়াস যা নিবেদিত হয়েছিল আমার আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভে, আর এভাবে তা আমাকে বিশ্বস্তভাবে সাহায্য করেছে। আমার আন্তরিক উপলব্ধি ও বিশ্বাস তা একইভাবে অন্যদেরও সাহায্যে আসবে। সহজ সরল এই জীবন দর্শন বিধিবদ্ধ করণের কাজে আমি আমার নিজের জীবন জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে পেয়েছি যীশু খ্রিস্টের শিক্ষা থেকে। আমি কেবল মাত্ৰ এ সব সত্যকে ভাষায় এবং সুচিন্তিত আকারে ভোধগম্যভাবে আজকের মানুষের কাছে বর্ণনা করেছি। জীবনের যে যথাযথ পথ এ বইটি নির্দেশ করে এবং সাক্ষ্য বহন করে তা খুবই অদ্ভূত। এটা সহজ সাধ্যও নয়। আসলে তা প্রায়ই কঠিন কাজ, তা সত্যেও এ আনন্দে পূর্ণ, পূর্ণ আশায় এবং জয়লাভে। আমার সুন্দর মনে পড়ছে সেদিনের কথা, যেদিন আমি বইটি লিখা শুরু করার জন্য কিভাবে বসেছিলাম। আমি জানতাম যে সেরা কাজটি করার জন্য আমার যে সামর্থ ছিল তার থেকেও অধিক সামর্থ আমার প্রয়োজন ছিল, তাই তার জন্য আমার যে সাহায্যের প্রয়োজন ছিল আর আমি বুঝেছিলাম তা আসতে পারে শুধু বিধাতার কাছ থেকে। আমার এবং আমার স্ত্রী দুজনেরই একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছিল যে, আমাদের সকল কাজে এবং সমস্যায় আমরা বিধাতাকে আমাদের সার্বিক সাথী রূপে গ্রহণ করবো। তাই আমরা আন্তরিকভাবে তার সাহায্য এবং সঠিক দিক নির্দেশনা চেয়ে প্রার্থনা করতাম এবং আমাদের পরিকল্পনা বিধাতার হাতে ন্যস্ত করতাম। আর যখন পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হত প্ৰকাশকের কাছে তা তুলে দেবার জন্য তখন আমি আর আমার সহধর্মিনী আবার তা প্রার্থনা সহযোগে বিধাতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতাম । আমাদের প্রার্থনা ছিল এই বইটির বিষয়বস্তু যেনো মানুষের আরও ফলপ্রসু, আরও স্বার্থক জীবন যাপনের সহায়ক হয়। যখন প্রথম দু’লাখ মিলিয়ন কপি ছাপাখানা থেকে ছাপা হয়ে আমাদের কাছে এল ঐ মুহূর্তটি আবার আমাদের কাছে একটি অনুপম আধ্যাত্মিক মুহূর্ত বলে প্রতিভাত হল। বিধাতাকে পরম ভক্তি ভরে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলাম। তার সাহায্যের জন্য এবং বইটি আবার তাকে উৎসর্গ করলাম। বইটি লিখা হয়েছিল এ দুনিয়ার সাধারণ মানুষদের জন্য, নিশ্চিত যে আমিও তাদের একজন। আমি জন্মেছিলাম এবং লালিত পালিত হয়েছিলাম মধ্যপাশ্চাত্যের নিবেদিত প্ৰাণ এক খ্রিস্টান পরিবারের বিনয়ী পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে। এখানকার সবাই ছিল আমার মনের মত যাদেরকে আমি জানতাম এবং ভালোবাসতাম পরম বিশ্বাসে। যখন পরম বিশ্বাসে তাদের কেউ বিধাতার হাতে নিজেকে সঁপে দিত, বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে দেখল, কিভাবে ঐশীশক্তি ও গরিমা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে তাদের জীবন রনের উত্তরণে। গভীর উদ্বেগের সাথে বইটি লিখেছিলাম মানুষের দুঃখ বেদনা, কষ্ট ও অস্তিত্বের সংগ্রামের উপর। বইটি আমাদের শেখায়, কিভাবে মনের শান্তির আবাদ করতে হয়, এবং তা বৈরী জীবন থেকে পালিয়ে সুরক্ষিত, নিশ্চল বন্দীত্ব স্বীকার করে নয়, বরঞ্চ তা কাজ করে একটি শক্তি কেন্দ্র রূপে, যা থেকে উদ্ভূত হয় গঠনমূলক ব্যক্তিবর্গের ও সমাজ জীবনের চালিকা শক্তির। এটি শিক্ষা দেয় সঠিক চিন্তার যতাৰ্থতা, খ্যাতি সুখ্যাতির উপায় বের করার জন্য নয়, ধনসম্পত্তি ও শক্তিধর হবার জন্য নয়। কিন্তু শিক্ষা দেয় কিভাবে বিশ্বাসের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনের পরাজয়কে পরাভূত করে জীবনের গঠনমূলক ও মূল্যবান মূল্যবোধকে সুসম্পন্ন করতে হয়। এক কঠিন ও সুশৃঙ্খল জীবন পথের দিশারী এ বই, আবার এ ও সত্যি যে বা যারাই তার বা তাদের জীবনে জয় লাভ করেছে, জয় লাভ করেছে। এ বৈরী দুনিয়ার নানা বিরূপ ও প্রতিকুল অবস্থার উপর, এ বই নিঃসন্দেহে তাদের জন্যে নিয়ে আসে। জয়ের অনাবিল মহানন্দ । যারা এ বইটির প্রদত্ত ও প্রানবন্ত আধ্যাতিক কলা কৌশলগুলো প্রয়োগ ও চর্চা করে বাস্তব জীবনে জয় লাভ করেন তাদের আনন্দঘন বিজয়ানুভূতির কথা আমাকে লিখে জানিয়েছেন এবং যারা এখনও সেই ক্রমন্বিত অভিজ্ঞতা লাভ করছেন আমি কি তাদের জানাতে পারি যে আমি কত না খুশি! অটুট ও অবিরাম সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য, বন্ধুসুলব বিশ্বস্ততার জন্য। মহানুভব ঈশ্বর মানুষের কল্যানে ও সাহায্যার্থে এ বইটি ব্যবহারে অবারিত আশীষ দান করুন। Norman Vincent Peale নরম্যান ভিনসেন্ট পিল "
Dr. Norman Vincent Peale দিকভ্ৰান্ত পথিকের সঠিক এবং আলোকিত পথের । দিকদ্রষ্টা নরম্যান ভিনসেন্ট পিল’ আমেরিকার ওহিও রাজ্যের বোয়ার্সভাইলে ১৮৯৮ সালের ৩১ মে এক খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । লেখাপড়া শেষে তিনি একজন লেখক, পেশাদার বক্তা এবং ধর্মযাজক হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন । জীবনের কর্মদক্ষতা যতদিন বজায় থাকে ততদিন মানবকল্যাণমূলক কাজেই আজীবন ব্ৰতী থাকেন । জাতিগতভাবে তিনি একজন আমেরিকান। সাধারণ জীবনযাত্রার ধারক মি. নরম্যান ভিনসেন্ট পিল আজীবন ইতিবাচক এবং মানব হিতকর চিন্তার বিষয়বস্তু নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ও গবেষণা করেছেন । তাঁর লিখিত বেশকিছু আত্মকল্যাণমূলক গ্রন্থের মধ্যে দ্য পাওয়ার অব পজিটিভ থিংকিং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । বরেণ্য এই চিন্তাবিদ ও লেখক ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর ৯৫ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন ।