একজন দক্ষ বিচারপতি, লেখক, মানবধিকার কর্মী এবং সরকার বিরোধী শিরিন এবাদির কণ্ঠ নিজের দেশে মানুষের অদিকার আদায়ের পক্ষে সর্বদা স্পষ্ঠ এবং সোচ্চার, এবং সে উচ্চারণ দেশের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো বহির্বিশ্বে । একজন নিবেদিত প্রাণ মানবাধিকার কর্মী এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে এবাদি অনেকটা একাই ইরান এবং গোটা পৃথিবীর জন্য সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা জুগিয়েছেন।
বইটি মূলত একজন সাহসী নারীর ইতিহাসের বাঁক প্রত্যক্ষকের অবিস্মরণীয় স্মৃতিগাথা। তাঁর সহকর্মী অন্যান্য আইনজীবিরা যেসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, নারী এবং শিশুবিষয়ক মামলা সচেতনভাবে বর্জন করতেন-তিনি সে সব মামলা পরিচালনা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এবাদি তাঁর পাবলিক ক্যারয়ারের সবিশেষ বর্ণনা দিয়েছন, নিজের বিশ্বাস, নিজের অভিজ্ঞতা এবং সাধারণ জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষাসহ ব্যক্তিগত অনুষঙ্গ হাজির করেছেন বইটিতে। আমরা দেখি , একজন বিপ্লবী কণ্ঠস্বর এমন একটা ভূখণ্ডেও অতিসাধারণ জীবনযাপন করছেন, যেখানে এসব কণ্ঠ রোধ করে চিরতরে বন্ধ করবার প্রয়াস সর্বদা কার্যকর। এবাদি নিজের তেহরানের বালিকাবেলা, গৃহস্থালি, নিজের শিক্ষাজীবন ইত্যাদি বর্ণনার পাশাপাশি ইরানের সবচেয়ে আলোচিত একজন মহিলা বিচারক হিসেবে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়কার নিজের পেশাগত জীবনের কিছু সফলতার বর্ণনা দিয়েছেন বইটিতে। ১৯৭৯ সালের ইরানের বিপ্লবের ভাবধারার বর্ণনা দিয়েছেন সুনিপূনভাবে, একই সঙ্গে কট্ররপন্থী মোল্লাদের হাতে পড়ে ইরানের সমাজব্যবস্থার করুন পরিণতির বিরোধিতা করেছেন। একদিন যে বিচার বিভাগের তিনি প্রধান ছিলেন, ধর্মতান্তিক প্রশাসন কর্তৃক বিচারক হিসেবে মহিলাদের অযোগ্য ঘোষণা করার পর কীভাবে তাঁকে অপদস্থ করে ওই একই বিভগের কেরানি করা হয়, সে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন তিনি। ইরানের যে পুরুষতন্ত্র নারীদের মৌলিক অধিকার এবং সাধারণ জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতা হরণ করেছে, তিনি তার তীব্র প্রতিবাদ করেন।