আপনি ভেবে দেখুন, এই যে আপনার হাতের ঘড়িটা। ঘড়িতে একটা চামড়ার বেল্ট আছে। বেল্টটা বেশ সুন্দর, হয়ত কোনাে প্রাণীর চামড়া দিয়ে তৈরি। তাহলে কী দাঁড়াল? বেল্টটা তৈরির জন্য কোথাও না কোথাও প্রথমে একটা প্রাণীকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। তারপর নানা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সেই চামড়াকে একসময় আপনার হাতঘড়ির বেল্টের জন্য শােভাবর্ধক করে তৈরি করা হয়েছে। তার মানে, শুধু মানুষই যে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে ও আমাদের জীবনের ব্যাপারে অবদান রাখে তা না; জীবজন্তু গাছপালা ধাতু পাথর রােদ হাওয়া নদী সমুদ্র বিশ্ব মহাবিশ্ব-এমনি কোটি কোটি জিনিশও ভূমিকা রাখে।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। অধ্যাপনা করেছেন তিনি তিরিশ বছর-১৯৬২ সাল থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত। অধ্যাপক হিসেবে তাঁর খ্যাতি কিংবদন্তিতুল্য। ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দােলন হয়, তিনি ছিলেন তার নেতৃত্বে। সাহিত্য পত্রিকা 'কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্যযাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে সংহত ও বহমান করে রেখেছিলেন এক দশক ধরে। বাংলাদেশে টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকে মনস্বী, রুচিমান ও বিনোদন-সক্ষম ব্যক্তিত্ব হিশেবে আবির্ভূত হন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। টেলিভিশনের বিনােদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তিনি পথিকৃৎ ও অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব। এইসব ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সাহিত্যচর্চায় নির্বিষ্ট। কবিতা, প্রবন্ধ, ছােটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জর্নাল, জীবনীমূলক বই ইতািলয়ে তাঁর গ্রন্থভাণ্ডারও যথেষ্ঠ সমৃদ্ধ। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ ২৭ টি। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ব্যক্তিত্বের প্রায় সবগুলো দিক সমন্বিত হয়েছে তার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক সত্তায় । তিনি অনুভব করেছেন যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের প্রয়োজন অসংখ্য উচ্চায়ত মানুষ। আলোকিত মানুষ চাই”—সারা দেশে এই আন্দোলনের অগ্রযাত্রী হিশেবে ত্রিশ বছর ধরে তিনি রয়েছেন সংগ্রামশীল। ২০০০ সাল থেকে সামাজিক আন্দােলনে উদ্যোগী ভূমিকার জন্য তিনি দেশব্যাপীঅভিনন্দিত হয়েছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধ আন্দােলন, পরিবেশ দূষণ-বিরোধী আন্দােলনসহ নানান সামাজিক আন্দােলন তাঁর নেতৃত্বে প্রাণ পেয়েছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, পিতা মৃত আয়ীম উদ্দিন, জন্মস্থান : পার্ক সার্কাস, কলকাতা। জন্মসাল: ২৫ জুলাই ১৯৪০। পৈতৃক নির্বাস : কামারগতি, কচুয়া বাগেরহাট। বর্তমান ঠিকানা : ৭৭ সেন্ট্রাল রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। শিক্ষা : মাধ্যমিক : পাবনা জিলা স্কুল (১৯৫৫); উচ্চমাধ্যমিক : প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ, বাগেরহাট ১৯৫৭; স্নাতক সম্মান (বাংলা) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬০), স্নাতকোত্তর (বাংলা) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬১)। পেশা : অধ্যাপনা, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি : বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। পুরস্কার : জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৭), মাহবুব উল্লাহ ট্রাস্ট পুরস্কার (১৯৯৮), রোটারি সিড পুরস্কার (১৯৯৯), বাংলাদেশ বুক ক্লাব পুরস্কার (২০০০), র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার : (২০০৪), একুশে পদক (২০০৫), শেলটেক পদক (২০০৬)।