বিভূতিভূষণের রচনা সম্বন্ধে কিছু আলােচনা করিব ইচ্ছা ছিল। কখনও কখনও এ বিষয়ে বিভূতিবাবুর সহিত কথা বলিয়াছি। তিনি খুশি হইয়াছেন, বলিয়াছেন, ‘বেশ হবে, তুমি লেখাে। কিন্তু কিছুই করা হইয়া ওঠে না, সময়াভাব ও আলস্য প্রধান কারণ। আরও একটি কারণ ছিল, ভাবিয়াছি এত ত্বরা কিসের? আলােচনার যােগ্য অনেক বই বিভূতিবাবু অবশ্য লিখিয়াছেন, কিন্তু আরও কিছু লিখুন না কেন। সুর সমের কাছে আসিলে তবে তাহার পুরা রূপটি সহজগ্রাহ্য হয়, বিভূতিবাবুর রচনার ধারা তাে এখনও সমাপ্তির কাছে আসে নাই, তবে আবার এত ত্বরা কেন। কিন্তু সুর সমের কাছে আসিবার আগেও যে সুরকারের জীবন সমাপ্ত হইতে পারে এই স্থূল কথাটা মনে পড়ে নাই, অন্তত বিভূতিবাবুর সম্পর্কে মনে পড়িবার কোনও কারণ ছিল না।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ( Bibhutibhushan Bandyopadhyay) ,জন্ম ইংরেজি -১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বাংলা ১৩০১ সনের ২৮শে ভাদ্র) তার মামার বাড়ি কঁচরাপাড়ার কাছাকাছি মুরাতিপুর গ্রামে। পিতা মহানন্দ। মাতা মৃণালিনী দেবী। পৈতৃক নিবাস যশোহর জেলার বনগ্রাম মহকুমায় ইছামতী নদীতীরবতী বারাকপুর গ্রামে। শিক্ষণ স্বগ্রাম ও অন্য গ্রামের পাঠশালায়। পরে বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে। ১৯১৪ খ্রি. ম্যাট্রিক, ১৯১৬-তে আই.এ. এবং ১৯১৮ খ্রি. ডিস্টিংশনে বি.এ. পাশ করে এম.এ. এবং ল্য-ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু পড়া অসমাপ্ত রেখে প্রথমে জাঙ্গীপাড়ার স্কুলে ও পরে সোনারপুর হরিনাভি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মাঝে কিছুদিন গোরক্ষিণী সভার প্রচারক, পরে খেলাৎ ঘোষের বাড়িতে সেক্রেটারি, গৃহশিক্ষক এবং এস্টেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার-রূপে কাজ করলেও আমৃত্যু শিক্ষকতা করেন। কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রাবস্থায় প্রথম বিবাহ। এক বছরের মধ্যে পত্নী গৌরীদেবীর মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন প্রায়-ভবঘুরের জীবনযাপন। দ্বিতীয় বিবাহ রামাদেবীর সঙ্গে ১৯৪০ সালে। একুশ বছরের দিনলিপি, ছোটোগল্প, ভ্ৰমণকাহিনি এবং কিশোর-সাহিত্য রচনা করেন। তার লেখা “দৃষ্টিপ্ৰদীপ’, ‘আরণ্যক’, ‘ইছামতী’, ‘কিন্নরদল, প্রভৃতি। ১৯৩০ সাল থেকে ঘাটশিলা-গালুডি অঞ্চলের প্রতি আকর্ষণ-ওখানেই বাড়ি কেনেন। স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র রেখে ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর ঘাটশিলায় প্রয়াত হন।