প্রথমেই জানিয়ে রাখতে চাই যে, এই বইতে যাঁরা বিশুদ্ধ কবিতার রস খুঁজতে যাবেন, তাঁদের নিরাশ হবার সম্ভাবনাই খুব বেশী । এ বইতে কবিতা নেই, আছে অনুবাদ কবিতা। অনুবাদ কবিতা একটা আলাদা জাত, ভুল প্রত্যাশা নিয়ে এর সম্মুখীন হওয়া বিপজ্জনক। অনুবাদ কবিতা সম্পর্কে নানা ব্যক্তির নানা মত আছে, আমি এতগুলি কবিতার অনুবাদক, তবু আমার ব্যক্তিগত দৃঢ় বিশ্বাস, অনুবাদ কবিতার পক্ষে কিছুতেই বিশুদ্ধ কবিতা হওয়া সম্ভব নয়, কখনাে হয়নি। কোলরিজ বলেছিলেন, একটি কবিতার সেইটুকুই বিশুদ্ধ কবিতা, যার অনুবাদ সম্ভব নয়। সেই বিশুদ্ধ ব্যাপারটি কি তা বুঝতে হলে, আর একটি বিশুদ্ধ কবিতা পড়ে দেখতে হবে, আজ পর্যন্ত কোনাে সমালােচক তার বর্ণনা করতে পারেননি। কবিতার সংজ্ঞা, ব্রহ্মেরই মতন, অনুচ্ছিষ্ট। সংজ্ঞা না হােক, এই সরল সত্যটি সর্ববিদিত যে, কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য তার শব্দ ব্যবহার, বিংশ শতাব্দীর কবিতা সঙ্গীতের প্রভাব কাটিয়ে শব্দের গভীর অর্থের প্রতিই বেশী মনােযােগী, এবং এক ভাষার শব্দ চরিত্র অপর ভাষায় হুহু প্রকাশ করা একেবারে অসম্ভব।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (Sunil Gangapadhyay) বিংশ শতকের শেষার্ধে আবিভুর্ত একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিস্টোব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা-ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাঙলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তাঁর কবিতার বহু পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "নীললোহিত", "সনাতন পাঠক" ও "নীল উপাধ্যায়" ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।