বারান্দার নীচে বাগানে বসে আমরা চা খাচ্ছিলাম: আমি, আমার স্ত্রী মনােবীণা, মেয়ে অমলা। নাতনিটি বাগানে ছােটাছুটি করে খেলা করছে, পাতা ছিড়ছে গাছের, ফটকের কাছে শিউলি গাছটার তলায় গিয়ে ঘাড় উঁচু করে তাকিয়ে আছে, বােধ হয় কুঁড়ি দেখছে, তাকে বলা হয়েছে সন্ধের পর ফুল ফুটতে শুরু করবে, হয়তাে সেই আশায় অপেক্ষা করছে। বেতের হালকা গােল টেবিল, চার-পাঁচটা বেতেরই সস্তা চেয়ার, আমরা প্রায় টেবিল ঘিরে বসে আছি। বীণা নাতনির দিকে মুখ করে, অমলা আমার দিকে, আর আমি খানিকটা বেঁকা হয়ে পশ্চিমের দিকে মুখ করে বসে ছিলাম। বেতের টেবিলের ওপর চায়ের কাপ, বিস্কিট আর কুচো নিমকির প্লেট, মণি-মানে আমার নাতনির দুধের কাপ, ওভালটিনের শিশি। শরৎকালের শেষ, বিকেল নেই, সন্ধেও হয়নি পুরােপুরি, মাঝামাঝি অবস্থা, ঝাপসা গাঢ় হয়ে আসছে, সামান্য পরেই অন্ধকার নামবে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (Sunil Gangapadhyay) বিংশ শতকের শেষার্ধে আবিভুর্ত একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিস্টোব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা-ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাঙলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তাঁর কবিতার বহু পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "নীললোহিত", "সনাতন পাঠক" ও "নীল উপাধ্যায়" ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।