সে বলে, ঈশ্বর আছেন, আমি আছি। ঈশ্বর সত্যই আছেন, আমি আছি কি না সেটাও ঈশ্বর জানেন। আমি জানি ঈশ্বর আছেন, তাই আমিও আছি। নইলে কী করে জানব ঈশ্বর আছেন? এটা অতি সােজা কথা। পাত্ৰাধার তৈল কি তৈলাধার পাত্র—সে ইয়ার্কি নয়! সহজ সরল কথা। আমি আছি কি নেই? এটা জানেন ঈশ্বর। বেশ কথা। ঈশ্বর কী জানেন বা না জানেন সে প্রশ্নই ওঠে । তিনি সব জানেন—আবার কিছুই জানেন না। তিনি অনন্ত কিন্তু সৃষ্টি করেন—আবার অনন্তশয্যায় অনন্ত ঘুমে ঘুমিয়ে থাকেন। কাজেই হিসাবটা ওদিক দিয়ে নয়। ঈশ্বর আছেন আমি এটা জানি। সেটাই প্রমাণ যে ঈশ্বরও জানেন আমি আছি। আমি যদি না থাকব তবে কী করে জানব একমাত্র ঈশ্বরই জানেন আমি আছি কি নেই? কাজেই আমি আছি।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (মে ১৯, ১৯০৮ - ডিসেম্বর ৩, ১৯৫৬) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তার রচনায় ফুটে উঠেছে। জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করেন বিয়াল্লিশটি উপন্যাস ও দুই শতাধিক ছোটোগল্প। তাঁর রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসীমামী, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্পসংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজি ছাড়াও তাঁর রচনাসমূহ বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী এই কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে।