ঝক করে টর্চের ফোকাসটা মেরেই নিরাপদ বলল, আরিব্বাস! এ যে লহরী খেলছে। নেলাে একটু পেছনে। এক হাতে গরুর দড়ি, অন্য হাতে ভরা থলি। গরুটা একটু পিছনে দাঁড়ানাে। নেলাে বলল, কাপড়খানা খুলে গামছাখানা পরে নেন। এ হল ভাসি গাঁয়ের জলা। তলায় তলায় ইছামতীর সঙ্গে যােগ আছে। বর্ষার ইছামতীর জল বাড়লে এই জলা একেবারে তল। ঘুরপথ নেই? তা থাকবে না কেন? পিছনবাগে চার মাইল গিয়ে দক্ষিণের রাস্তা ধরে গেলে পাক্কা পাঁচ ক্রোশ। তা সে রাস্তাও আপনার মনের মতাে হবে না। হরেদরে কাশ্যপ গােত্র। এই রাস্তায় বরং সুবিধে আছে। নিরাপদ খ্যাক করে উঠল, সুবিধে! সুবিধেটা কী দেখছ? জলার ভিতর দিয়ে ছাড়া কি আর পথ ছিল না?
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২রা নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময়, তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরীরত পিতার সঙ্গে তিনি বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে ঐ একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে ঘুণ পোকা নামক তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তার প্রথম উপন্যাস মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মানবজমিন উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান।