খুব ভাের ইনডাের সুইমিং পুলের ধারে তিনি এসে দাঁড়ালেন, মুখে হাসি নেই, গাম্ভীর্যও নয়, একটু চিন্তিত বােধ হয়, প্যান্টের দু পকেটে হাত, কাঁধটা একটু উঁচুতে তােলা, দু পা পরস্পরের সঙ্গে কাটাকুটি করা, গায়ে সাদাকালাে একটা ব্যানলনের গেঞ্জি। নিথর জলে তার ছায়া পড়েছে। একটু ঝুঁকলেই নিজের ছায়া তিনি দেখতে পারেন। কিন্তু গত বিশ বাইশ বছর ধরে তিনি পৃথিবীর হাজারাে পত্রপত্রিকায়, পােস্টারে, চলচ্চিত্রে বা টেলিভিশনে নিজের এত ছবি দেখেছেন যে নিজের ছায়া বা প্রতিবিম্ব দেখতে তাঁর আর কোনাে ইচ্ছেই হয় না। সারাটা জীবন তাঁকে তাড়া করছে হাজারাে ক্যামেরা, ফ্ল্যাশ লাইট, হাজারাে সাক্ষাৎকার, লক্ষ লক্ষ লােকের জয়ধ্বনি, স্তুতি ও ভালবাসা।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২রা নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময়, তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরীরত পিতার সঙ্গে তিনি বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে ঐ একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে ঘুণ পোকা নামক তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তার প্রথম উপন্যাস মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মানবজমিন উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান।