বাবার চাকরি ছিল রেলে। শৈশব ভাল করে পরিস্ফুট হয়নি তখননা, তার আগেই শুরু হল এক যাযাবর জীবন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কলকাতায়, আর যুদ্ধ থামবার আগেই বাবার সঙ্গে বদলি হয়ে ঘুরে ঘুরে আমরা সাতঘাটের জল খেয়েছি। বিহার, উত্তর বাংলা, পূর্ব বাংলা, আসাম। এক জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায়। পিছনে ফেলে এসেছি। পুরােনাে আসবাব, হেঁড়া বই, প্রিয় বন্ধু, পােষা কুকুর। কত কেঁদেছি, মনে মনে বলেছি—আমি এ জায়গা ছেড়ে কোথাও যাবাে না। পরে দেখেছি জীবন যা কেড়ে নেয় তাই ফিরিয়ে দেয় আবার। একটা সরে গিয়ে আর একটার কেমন জায়গা করে দেয়। পুরােনাে জায়গা ছেড়ে নতুন জায়গায় গিয়ে নির্লজ্জের মতাে বন্ধু পাতিয়েছি কতজনার সঙ্গে।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২রা নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময়, তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরীরত পিতার সঙ্গে তিনি বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে ঐ একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে ঘুণ পোকা নামক তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তার প্রথম উপন্যাস মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মানবজমিন উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান।