প্রেম তো অনুভূতি মাত্র, ব্যক্তিভেদে সর্বদাই সে অন্য, কখনো কখনো অনন্যও বটে। তবে কেন এ সংগ্রহের নাম ‘অন্য প্রেম’? ‘অন্য’ কথাটি এখানে নিছকই পৃথক অর্থে গৃহীত হয়নি, হয়েছে স্বতন্ত্র এক প্রেমের ভুবনের দ্যোতক হিসেবে। এই ভুবনে পাঠকের যাতায়াত কদাচিৎ হয়ে থাকে, যেহেতু বাজারে প্রাপ্ত প্রেমের গল্পের সংকলনগুলি অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করে গল্পের তথাকথিত গ্রহণযোগ্যতার ওপর। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাস করি, গত একশো বছরে বাংলা কথাসাহিত্যে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য বিশ্বমানের প্রেমের গল্প, শুধু ছোটোগল্প হিসেবেই যেগুলি চিরায়ত, শাশ্বত। এই সংগ্রহ চয়ন করে নিয়েছে কেবলমাত্র সেই সকল প্রেমের গল্প, বাজার-নির্ধারিত সাহিত্যের চৌহদ্দির বাইরে যাওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে যারা। তাই রবীন্দ্রনাথ থেকে অভিজিৎ সেন পর্যন্ত ব্যপ্ত এ সংগ্রহের পাতা উলটে পাঠক শরিক হন ভিন্ন এক অনুভবে। যেন শতবর্ষের বাংলা ছোটোগল্পের মহানভ অঙ্গনে পরিভ্রমণ করে এলেন তিনি। পরিভ্রমণের এই অভিজ্ঞতা বহুমাত্রিক। কখনো তা সাক্ষী হয় একটি পুরুষকে কেন্দ্র করে নারী ও নাগিনীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার, আবার কখনো তা কালোবাজারে প্রেমের প্রকৃত দর জানতে পেরে বিস্ময়ে, ভয়ে শিউরে ওঠে। বুঝতে পারে, মরু ও সংঘের মধ্যেও হয়তো-বা প্রচ্ছন্ন থাকে কোনো এক বিষণ্ণ অন্ধকার, যে তমসা ছিন্ন করে আমাদের কানে ভেসে আসে মেঘমল্লার। রং বদলাতে থাকা গিরগিটির থেকে প্রথম সে মানবীর দুরত্ব যতদূর, বারান্দা থেকে ততদূর তাকালেও হয়তো শেষপর্যন্ত খুঁজে নেওয়া যায় না সেই সব আত্মহত্যার উত্তরাধুনিক উত্তরাধিকারের সূত্রটিকে। তাই এই সংগ্রহ শুধু অন্য কিংবা স্বতন্ত্র নয়, স্বয়ম্ভুও বটে। আপনা থেকেই সে গড়ে নেয় নিষ্কলুষতার এমন এক জাদুঘর, যেখানে মমি হয়ে আছে নিঃশব্দ চরাচর_যে চরাচর পেরিয়ে অন্য এক সকালবেলায় পৌঁছোতে গেলে পেরোতে হবে সাঁকো, পরে নিতে হবে আখ্যানের রক্ষাকবচ। ৩৬টি ছোটোগল্পে ছুঁয়ে নেওয়া চিরায়ত বাংলা প্রেমের গল্পের আশ্চর্য ভুবন।