ঐশী এবার কেজি থ্রি-র ছাত্রী। অনেক ভাল ছাত্রী। তার রােল নম্বর দুই। ঐশী সকালে বাথরুমে ঢুকল। বাড়ির পেছনদিকে রান্নাঘরের পর বাথরুম। বাথরুমের ওপর তিনটি পেয়ার গাছ ভর্তি পেয়ারা। বাথরুমের চৌবাচ্চায় টইটুম্বুর পানি। ছাদের ওপর একটা ওভারহেড ট্যাংকও অবশ্য আছে। কিন্তু দাদার ব্যবস্থা হল, চৌবাচ্চায় পানি থাকা চাই, একটু একটু করে বদনা ভরে পানি নয়, চৌবাচ্চায় বালতি ডুবিয়ে পানি তুলতে হবে। দুজন কাজের ছেলে দুই বেলা চৌবাচ্চা ভর্তি করে রাখে।
ছড়ার সঙ্গে লুৎফর রহমান রিটনের নাম যতোটা চটজলদি প্রাসঙ্গিক হয়ে ধরা দেয় ততোটা সাহিত্যের অন্য মাধ্যমের সঙ্গে দেয় না। এর পেছনে নিহিত কারণ অবশ্য ছড়ার ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্যের তুঙ্গতা। কিন্তু এ-কথা ভুললেও চলবে না যে ছোটদের-বড়দের উভয়েরই জন্য সূক্ষহাস্যরমন্ডিত স্বতন্ত্র এক গদ্যেরও তিনি কারয়িতা। ছড়ার পাশাপাশি ছোটদের জন্য যে অনেক ধরনের গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেছেন সেটা কোনও অজানা খবর নয়। ছোটদের গল্পের বই নিখোঁজ সংবাদ (১৯৮৬) দিয়ে শুরু হয়েছিল যে যাত্রার তা ছোটদের উপন্যাস ঝন্টুপন্টুদের গোয়েন্দাগিরি (১৯৯২), ভূতের ডিমের ওমলেট (১৯৯৯) ও টোকাই আমিন টোকাই বেড়াল (২০০০)-এর মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই প্রবাহই আর একটু অগ্রসর হল বাচ্চা হাতির কান্ডকারখানা উপন্যাসের মাধ্যমে। লুৎফর রহমান রিটন সম্পন্ন একজন শিশুসাহিত্যিক বলে জানেন শিশুদের মনের দুনিয়ায় পৌঁছে যাবার রাস্তা। তাঁর যে কোনও লেখাতেই সূক্ষ্ম হাস্যরসের পাশাপাশি থাকে শিশুর উদ্ভটরসের জগৎ। সমকালীন ঘটনাবলি কিংবা ব্যক্তিকেও তিনি প্রাসঙ্গিক করে নেন বলে তাঁর কৌতুলহাস্যের মাত্রা আরও চড়ে ওঠে। শিশুদের প্রিয় অনুষঙ্গ পাখি ও প্রাণীর জগৎ। ছোটদের জন্য গদ্য রচনার সময়ে সে-কথা তাঁর মনে থাকে। ছড়াকার সত্তাও প্রায়শই উঁকিঝুঁকি মারে তাঁর গদ্যের চলতিপথে।
ব্ল্যাক বিউটি। কালো রঙের একটা ছোট্র ঘোড়ার বাচ্চা। মনিবের সযত্ন পরিচর্যায় বেড়ে উঠছে দিনে দিনে। কিন্তু কপালে তার সুখ সইল না। একটু বড় হয়ে উঠতেই লাগিয়ে দেয়া হলো গাড়ি টানার কাজে। কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হলো ভারী কলার, পিঠে জিন, চোখে ঠুলি। কেড়ে নেয়া হলো তার স্বাধীনতা। তবু আপন বৈশিষ্ট্যে ব্ল্যাক বিউটি ঠিকই আর সবার থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। গৃহপালিত পশু সম্পর্কে পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে এ উপন্যাসটি।
গবাক্ষবাবু মুখে একটা দুঃখসূচক চুক চুক শব্দ করে বললেন, “পয়সাটা বৃথাই গেল রে। গাঁ-গঞ্জের মানুষ কি আর এত ভাল নামের কদর বুঝবে? উচ্চারণই করতে পারবে না।”
কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে মােলায়েম গলাটা বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই বলল, “গাঁয়ের লােকের উশ্চাটনের কথা আর বলবেন না মশাই। উশ্চাটন একেবারে যাচ্ছেতাই। আগে পঞ্চা-পঞ্চা করত, এখন পেড়াপেড়ি করায় বদু বদু বলে ডাকে। প্রিয়ংবদ উশ্চাটনই করতে পারে না।”
সাহেবের ক্যাম্প পাতা মাঠের মাঝখানে। কতগুলাে অশথ বট বহুদিন এখানে জটল্লা পাকিয়ে আছে, প্রায় ছ-কাঠা জায়গা জুড়ে। একটু দূরে শ্মশান। চোতববাশেখে মড়া পােড়াতে গিয়ে রােদ সহ্য করতে না পারলে অনেকে এখানে এসে দাঁড়ায়। চারদিকে গাছের ছায়া, রােদ সেঁধােয় না। সাহেব পছন্দ করে এখানে আস্তানা পেতেছিলেন। রাত্রে গরমের দিনে ভারি আরাম তাঁবুর বাইরে এসে ইজি চেয়ার পেতে হাওয়া
আকাশে উজ্জ্বল আলোর একটি ঝলকানি দেখা গেল। তারপর একটি স্পেসশিপ এসে নামল স্পুকসভিল শহরের রিজারভয়েরের কাছে। স্পেসশিপ থেকে বেরিয়ে এল কিন্তূতকিমাকার কয়েকটি ভিনগ্রহের প্রাণী। তারা তাদের সঙ্গে যোগদানের আমন্ত্রণ জানাল অ্যাডাম ও তার বন্ধুদের । কিন্তু কেউ জানে না আদৌ আর কোনওদিন বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা অ্যাডমরা ...
ঘুমিয়ে দুপুরবেলা ওড়ানাে সম্ভব হলে সমস্যা ছিলাে না, কিন্তু ঐ সময় ঘুমােবার কথা ভাবতেও পারে না। খাটের পুরু তােশকে তুলাের গরমে ছাদের শিকারী রৌদ্র ঘাপটি মেরে থাকে। জলেশ্বর মালীর মতাে, মালীবৌয়ের মতাে খুব ঠাণ্ডা মেঝেয় হাত-পা ছড়িয়ে সটান পড়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ফরাশ পাতা মেঝের উপরেও শােবার উপায় নেই, মা ক্ষেপে উঠবে। অনেক কিছুই তার সহ্য হয় না, ধাতে পােষায় না। বইয়ের রঙিন মলাটে কালি পড়ে গেলে ক্ষেপে ওঠে, নাকে হাত চেপে না হাঁচলে ক্ষেপে ওঠে, রঙের বাক্স কালি-কলম-দোয়াত এলােমেলাে ছড়িয়ে রাখলে ক্ষেপে ওঠে, অনেক কিছুই মা’র কাছে অসহ্য। বাঞ্ছারামপুরে বেড়াতে গিয়ে গ্রামের ছেলেদের পাল্লায় পড়ে পুকুরে কলমিলতার ফুল তুলতে গিয়েছিলাে সে, তাতেও চটে গিয়েছিলাে মা; রাগের চোটে বেড়ানাে বাতিল করে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ফিরে এসেছিলাে ঢাকায়।
লোম ঝুমঝুম ভাস্কা বেড়াল দিব্যি খেলা করছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। ভলোদিয়া আর ভাদিক দুই ভাই মিলে ছবি আঁকছিল বসে বসে। শান্ত আবহাওয়া ঘরটির। হঠাৎ মেঝেয় পড়ে থাকা নিরীহ টুপিটা জ্যান্ত হয়ে উঠল। দুই ভাই আঁতকে উঠে সোফায় চড়ল লাফিয়ে। জ্যান্ত টুপিটা এগুতে শুরু করল সোজা ভাদিকের দিকে। ভয়ে দুই ভাই দৌড়ে গেল রান্নাঘরে। তারপর কী হল? নিকোলাই নোসভের লেখা এই মজার গল্পটি আমাদের জন্য অনুবাদ করেছেন ননী ভৌমিক। ছবি এঁকেছেন ইভান সেমিওনভ।