বাঙালির ইতিহাস লুট হয়ে গেছে। বাঙালি নিঃস্ব, দরিদ্র, হতদরিদ্র। কিন্তু সে কর্মবিমুখ, লােভী, পরশ্রীকাতর, প্রতারক নয়; এগুলাে বহিরাগত বৈশিষ্ট্য। বাঙালির মৌল ধর্ম সাংখ্যযােগ-তন্ত্র, যেখানে লােভ হিংসা প্রতারণার কোনাে স্থান নেই। বাঙালি সুখী পরােপকারী অতিথিপরায়ণ পরিশ্রমী জাতি। ডাকাতের অস্ত্রের কাছে গৃহস্থের পরাজয়ের অর্থ এই নয় যে, সে ভীরু, কাপুরুষ, দায়িত্বহীন। বাঙালির চরিত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকাংশ নিন্দনীয় ব্যাপার বিদেশি প্রতারক শাসকের হাড়ে-মজ্জায় মিশ্রিত ছিল। ইতিহাস তার উজ্জ্বল সাক্ষী। শাসকগােষ্ঠীর প্রতারণা, লাম্পট্য, লােভী ও নিচু মানসিকতার প্রমাণ ইতিহাসের সকল গ্রন্থ। বাঙালির শান্তিপ্রিয় বৈশিষ্ট্যে এসব আমদানিকৃত বহিরাগত কলঙ্ক।
উপন্যাস এখন বিচরণ করে সমাজজীবনের প্রামিত্মক পরিসরে। আলো ফেলে সামাজিক সত্মরের আনাচে-কানাচে, মনোগহনে, কখনো অজ্ঞাত ভুবনে। প্রকৃতিবৈচিত্র্যে ভরা বাংলাদেশের হাওর-অঞ্চল, তেমনি একটি প্রত্যমত্ম এলাকা, সেখানে সমাজের সত্মরবিন্যাস ও কাঠামো মূল সামাজিক বিন্যাস থেকে আলাদা। মাসউদুল হকের দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসে উপন্যাসে তেমনি একটি পরিসরকে কাহিনির পটভূমি করেন, তুলে আনেন সেখানকার মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, অসিত্মত্বের সংগ্রাম ও স্বপ্নের পসরা। গোটা দেশের শিক্ষা, উন্নতি ও সভ্যতার কাঠামো থেকে দূরে এই হাওর। সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর এলাকা ও সন্নিহিত গ্রামগুলো নিয়ে লেখক যে-কাহিনি বয়ন করেন তা তাঁর অভিজ্ঞতার ফসল। তাতে আছে হাওর-অঞ্চলে বসবাসরত মানুষগুলোর কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, অনিয়ন্ত্রিত আদিম বৃত্তির অনুপুঙ্খ বর্ণনা। আরো আছে আফাজ মাস্টার নামে এক স্কুলশিক্ষকের শিক্ষার আলো ছড়ানোর একনিষ্ঠ প্রয়াস। লেখক চিহ্নিত করেন জমিদারি প্রথার অবসান হলেও তার ছায়ারূপী জল-অধিপতিদের দৌরাত্ম্য ও শোষণপ্রক্রিয়া। এছাড়া দেখান প্রশাসনযন্ত্রের অত্যাচার ও ক্ষমতায়নের কুটিলতায় বিপর্যসত্ম মানুষগুলোর দুরবস্থা, তাদের সংঘাত-দ্বন্দ্ব। সেখানকার প্রজন্ম স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে হাওর থেকে পাথর তোলার কাজে ভবিষ্যৎকে বাধ্য হয়ে বন্দি করে রাখে। প্রকৃতির মধ্যে টিকে থাকার আদিম লড়াই আর মানুষের গড়া সভ্যতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত তাদের দ্বন্দ্বের মর্মতলে প্রবেশ করেন লেখক, তুলে আনেন জীবনের বহমানতা ও টিকে থাকার সৃষ্টিশর্তকে। এ-উপন্যাস একামত্মই বাসত্মবধর্মী ধারায় রচিত। গ্রন্থনা সরল বর্ণনামূলক, ভাষা প্রাঞ্জল ও নিরলংকার। লেখকের অভিজ্ঞতা ও সহমর্মিতায় উপন্যাসটি আঞ্চলিক জীবনছবির শিল্পপ্রতিমা হয়ে ওঠার দাবি রাখে।
বাঙালির ইতিহাস লুট হয়ে গেছে। বাঙালি নিঃস্ব, দরিদ্র, হতদরিদ্র। কিন্তু সে কর্মবিমুখ, লােভী, পরশ্রীকাতর, প্রতারক নয়; এগুলাে বহিরাগত বৈশিষ্ট্য। বাঙালির মৌল ধর্ম সাংখ্যযােগ-তন্ত্র, যেখানে লােভ হিংসা প্রতারণার কোনাে স্থান নেই। বাঙালি সুখী পরােপকারী অতিথিপরায়ণ পরিশ্রমী জাতি। ডাকাতের অস্ত্রের কাছে গৃহস্থের পরাজয়ের অর্থ এই নয় যে, সে ভীরু, কাপুরুষ, দায়িত্বহীন। বাঙালির চরিত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকাংশ নিন্দনীয় ব্যাপার বিদেশি প্রতারক শাসকের হাড়ে-মজ্জায় মিশ্রিত ছিল। ইতিহাস তার উজ্জ্বল সাক্ষী। শাসকগােষ্ঠীর প্রতারণা, লাম্পট্য, লােভী ও নিচু মানসিকতার প্রমাণ ইতিহাসের সকল গ্রন্থ। বাঙালির শান্তিপ্রিয় বৈশিষ্ট্যে এসব আমদানিকৃত বহিরাগত কলঙ্ক।
বাংলাদেশের চিলেরা পাহাড়ে থাকে না। অন্যদিকে পাখি গবেষকেরা বলছেন যে সােনালি ইগল পার্বত্য অঞ্চলে পাওয়া যায়। তাই আমাদের কাছে। মনে হয়, কবি কোথাও সােনালি ইগল সম্পর্কে পড়েছেন এবং সেই অর্থেই তিনি সােনালি চিল বা সােনালি ডানার চিলের কথা বলছেন। সােনালি। ইগলের একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এই পাখি হচ্ছে একগামী বা monogamous। এরা বহুগামী নয়। দুটি সােনালি ডানার ইগল একসঙ্গে জীবন কাটিয়ে দেয়। এরা সব সময় জোড়ায় জোড়ায় চলে। এ ধরনের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ কারও সঙ্গী মারা গেলে যে মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়, কবি তা-ই ফুটিয়ে তুলেছেন এ কবিতায়।