‘তিন জোড়া লাথির ঘায়ে রবীন্দ্র-রচনাবলী লুটোয় পাপােশে। এক সময় এরকম আমরাই লিখেছিলাম। আমরা মানে? পঙক্তিটি রচনার মতন দুষ্কর্ম আমারই, কিন্তু যেহেতু ছ’খানা পায়ের উল্লেখ আছে, তাই সমবেত কণ্ঠস্বরও বলা যেতে পারে। ষষ্ঠ দশকের গােড়ার দিকের রচনা, রবীন্দ্রনাথের তিরােধানের পর দুটি দশক পার হয়ে গেছে, তবু বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি অতিমাত্রায় উপস্থিত। তা তাে তিনি থাকবেনই, কিন্তু এমন একটা রবীন্দ্র ভাবধারা প্রসারিত হয়েছিল,
আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করা উচিত যে, মানব প্রজাতির সদস্যদের বিশেষ উল্লেখকালে যখন সাধারণভাবে মানুষ’ বা ‘সে’ বিশেষণ ব্যবহৃত হয়েছে তখন তার অনুষঙ্গে নারীপুরুষ উভয়কেই যুক্ত করা হয়েছে। বাকরীতির এটুকু অনুমােন প্রার্থিত। এরকম ব্যবহারে পুরুষতান্ত্রিক উপাদানের ওপর কোনাে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এমন অনুমান অনুচিত হবে।
সাধারণ মানুষের জীবিকা বলতে, স্টেশনের পাশে, রাস্তার ফুটপাত দখল করে টিন দিয়ে ঘেরা ছােট ছােট দোকান। চাষের জমি অফুরন্ত নয়। তবে কিছু জমিতে চাষ হয়। আদ্রার বহু মানুষ রেলে কাজ করেন। কিন্তু ওয়াগন ব্রেকার পেশার মানুষও আছে। হিজড়ে সম্প্রদায়ের আধিপত্য আছে। ওদের জীবিকা বলতে দোকানদারদের থেকে তােলাবাজি। হিজড়েদের দুটো দল আছে। ওদের মধ্যে খুন-খারাপিও লেগে থাকে। হিজড়ে মানে অবশ্য প্রায় সবই মেয়েলি পুরুষ।
হিন্দু ধর্মের ঈশ্বরের মতােই বাঙালির আড্ডা নিরাকার এবং সাকার। একই সঙ্গে স্পষ্ট এবং রহস্যময়। বাঙালি জীবনের সঙ্গে কোথায় যেন এর শেকড়টি ছড়িয়ে আছে অনেক দূর পর্যন্ত। যদিও হালফিলের টি ভি আর ভি সি আর-এর দৌরাত্ম্য বাড়ির বিখ্যাত আড্ডাগুলিতে প্রায় ছেদ টেনে দিয়েছে। অত সময় নেই—এ যুক্তিতে চায়ের দোকান বা রকের আড্ডা স্তিমিত প্রায়। কারণ বেশির ভাগ চায়ের দোকানে। যে প্রভাতী খবরের কাগজ ও ডবল হাফ চা নিয়ে আড্ডা বসত, তার গুরুত্ব অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে টেলিভিশনের খবর পাঠ। আর ষাট-সত্তরের চায়ের দোকানে দোকানে রাজনৈতিক আলােচনায় যে উত্তাপ ও উত্তেজনা ছিল, তার অনেকটাই এখন নিছকই স্মৃতি মাত্র।