Categories


বাঙালনামা

কয়েকটি মানুষকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ব্যাপারে। আর একটু সোচ্চার হচ্ছি। তাদের শীর্ষে প্ৰয়াত বন্ধু কুমার মুখার্জি এবং অমর সান্যাল। কুমার “রোমন্থন” প্রকাশ হওয়া অবধি বর্তমান লেখাটি লিখতে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। দুই কিস্তি প্ৰকাশ হওয়ার পর তিনি চলে গেলেন। আমার নানা অনুল্লেখ্য কাজের সাক্ষী অমর সান্যাল মহা উৎসাহে লেখাটি পড়ছিলেন। যে কিস্তিতে ওঁর কথা লিখেছি, সেটি প্রকাশিত হওয়ার কয়েকদিন আগে তিনিও লোকান্তরিত হলেন। আমার সমস্ত লেখাটি ধাপে ধাপে যাদের মাথায় লোষ্ট্রবৎ নিক্ষেপ করেছি। তাদের মধ্যে প্রথম উল্লেখযোগ্য ঔপন্যাসিক-অধ্যাপক কুণাল বসু এবং তাঁর পত্নী সুস্মিতা। অক্সফোর্ডে ওঁদের বহু শ্ৰান্ত সন্ধ্যাস্মিত মুখে এই অত্যাচার সহ্য করে কেটেছে। আমার স্ত্রীও এই উৎপীড়নের সহ-শিকার ছিলেন। চতুর্থ এবং পঞ্চম যে দুই ব্যক্তি এইভাবে উৎপীড়িত হয়েছেন দুর্ভাগ্যক্রমে তারাও ‘আনন্দবাজার’ সংস্থার কর্মী, ফলে তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা তাদেরও টেলিপ্যাথি মারফত বুঝে নিতে হবে।


বুদ্বুদ

“তােমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না। বললাম দুটো টিকিট জোগাড় করে দাও, তাও পারলে না! এমন ভোঁদাই-মার্কা হয়ে থাকলে চলবে?” বিটুদা বিরক্ত হয়ে ‘ভোঁদাই-মার্কা’র সংস্পর্শ এড়াতেই বােধহয় অসম্ভব ভিড়ের মধ্যেও গুতিয়ে জায়গা করে নিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। আর আমি লজ্জায় লাল হয়ে দেখলাম, আশপাশের মানুষজন ‘ভোঁদাই-মার্কা’-কে মনোেযােগ দিয়ে নিরীক্ষণ করছে। সচরাচর দেখা যায় না তাে, তাই! অফিসের প্রথম দিনেই এ কেমন বেইজ্জতি ভাই! আমি মেট্রোর ভিড়েও যথাসম্ভব অন্যদিকে তাকানাের চেষ্টা করলাম।


খুঁজে ফিরি কুন্ডলিনী

হবার সময় এ নাম বলতে হেডমাষ্টার বললেন, এ নামটা ভাল নয়, তাের ভাল নাম কি জেনে আয়। বাড়ি ফিরে দেখি পিসিমা পড়ছেন শ্রীমদ্ভাগবত। পিসিমাকে জিজ্ঞাসা করলাম, পিসিমা আমার ভাল নাম কি? তিনি তখন বােধহয় পড়ছিলেন সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম-স্বরূপের কথা। না ভেবে, না চিন্তে বলে দিলেন, যা, বলগে সচ্চিদানন্দ। দুটো নামের সঙ্গেই জুড়ে গেল স্বামিজী স্বামিজী গন্ধ, ধর্ম ধর্ম ভাব। ভাগ্যের প্রহসন আর কাকে বলব! আমার প্রথম প্রকাশক আমার ডাক নামে বই ছাপালেন। সেই থেকে আমি নিগুঢ়ানন্দ’ হয়ে আছি।


গল্পসমগ্র -২য়

তখনই কিন্তু গঙ্গার দিকে না গিয়ে আমি ওঁকে নিয়ে কেল্লার দিকে রাস্তা ধরে আরও একটু হাঁটলাম । হাওয়া ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। বেশ শীতের শিরশিরে ভাব। উনি শালটা ভালােভাবে জড়িয়ে নিলেন শরীরে। আপনমনেই বললেন, কলকাতায় আছি, অথচ এতখানি সময় আমার নিজস্ব, এটা যেন ঠিক বিশ্বাসই করতে পারছি না। কলকাতায় অভিযােগ অনেক বেশি থাকে।


রচনাসমগ্র ২য় খণ্ড

করখানায় জানাজা নমাজ পড়ার সময় হাত পা ধুয়ে বসার জন্যে এই পুকুর কাটানাে হয়েছিল একদিন। এখন অযত্নে পড়ে থাকা এই ভাঙা ঘাট, শ্যাওলা ঢাকা পুকুর যে কোনাে স্মৃতিভারাক্রান্ত মানুষের মন আরও ভারী করে তুলবে। পৃথিবীতে আমরা আসি অল্পদিনের জন্যে। একদিন যাব—চলে যাব—যেতেই হবে—এই ভাবনায়, ভয়ে নানাভাবে আমরা মৃত্যুর পরেও নিজেকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। সেজন্যেই স্মৃতি, স্মৃতিসৌধ, মঠ, ফলক।


রচনাসমগ্র ১ম খণ্ড

মেজবােন কনকের যাওয়া হল না। দিন দশেক হল কাশিতে কষ্ট পাচ্ছে সরল। ছানি কাটলেও চোখগুলাে আর আগের মতাে কাজ করে না। কার ফোন?’ বলতে কনক কিছু ভাঙল না বুডাের কাছে। মকরধ্বজ মেড়ে খলে চাল ধােয়া জল ঢেলে দিল একটু-তারপর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বারান্দার কোণে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। হয়তাে তরঙ্গিণী ঠিক এখনই মরে যাচ্ছে।


উপেন্দ্রকিশোর সমগ্র

একদিন রাজা দশরথ পুরােহিত আর মন্ত্রীদিগকে সইয়া ছেলেদের বিবাহের পরামর্শ করিতেছেন, এমন সময় বিশ্বামিত্র মুনি তাহার সহিত দেখা করিতে আসিলেন। মুনিদের ভিতরে বিশ্বামিত্রের মান বড়ই বেশি। তাহার মত তপস্যা খুব কম লােকেই করিয়াছে, তেমন ক্ষমতাও খুব কম লােকেরই আছে। তাহাতে আবার লােকটি বিলক্ষণ একটু রাগী। এরূপ লােককে যেমন করিয়া আদর-যত্ন করিতে হয়, দশরথ তাহার কিছুই বাকি রাখিলেন না। তারপর তিনি বলিলেন, ‘মুনিঠাকুর, আপনি যে আসিয়াছেন, ইহা আমার বড়ই সৌভাগ্য; আর ইহাতে আমি খুবই সুখী হইলাম। এখন আপনি কী চাহেন বলুন আমি তাহাই দিতেছি।


জলে আঁকা

দীপা চিন্তিত মুখে বলল, “ঠিকই বলেছিস, আমিও করব। পারলে আজ থেকেই শুরু করে দেব। তুই যা ভয় পাইয়ে দিলি। রান্নাও শিখব, আবার টিভিও দেখব। আজই বাড়ি গিয়ে একটা রুটিন তৈরি করে ফেললে কেমন হয় ? তাের কাছে কোনও সাজেশান আছে? এই ধর কোনটা ইনপর্ট্যান্ট সিরিয়াল, কোনটা ভেরি ইনপর্ট্যান্ট, এই রকম আর কী। তাহলে সেগুলাের পাশে স্টার লাগিয়ে বসে যাব। পরীক্ষায় সাজেশন হলই আসল।


শনি-রবি

সরমা যা বলেন সেটা ভুল নয়। চুলের ওপরে না হয় কলপ মাখানাে যায়, কিন্তু হাড়ের ভেতরে কলপ লাগাবে কেমন করে? চুলে কলপ দেওয়ার অভ্যেসটা এতদিনে ছাড়িয়েছেন বড়বৌদি। কিন্তু চুলগুলাে এখনও ধপধপে শাদা হলাে না। তারও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সরমা। বলেছেন, “এখন কিছুদিন মেহেন্দী লাগাও ছােঠাকুরপাে। তােমাদের গাইয়ে-বাজিয়েদের মধ্যে তাে মেহেন্দীর বেশ চল রয়েছে। পরে ঠিক হয়ে যাবে।”


পাড়ি

‘ছ’ বছরের মেয়ে, রাত জাগবে কী? ওর তােমার মতন তাে কিছুই পারার কথা নয়, শমী। তবু তাে মিতুল প্রচুর কিছু পারে। সকালে উঠে নিজে নিজেই মুখটুক ধুয়ে স্কুলের পােশাক পরে তৈরি হয়ে নেয়। সেটা কম কথা? এবার দেখাে, মিতুলই তােমাকে বেড-টী করে দেবে।


উড়াল

আমার সামনে সেই মেয়ে। যাকে ক’দিন ধরেই লক্ষ্য করছি। ও-ও কি। সেটা খেয়াল করেছে? ঘন চন্দনবাটার মতাে রং। এক-পিঠ কালাে চুল। পুয়ের্তোরিকান? মেক্সিকান? নাকি ক্রেওল? অ্যাকসেন্ট থেকে বােঝা গেল না। কি জানি কালাে মেয়েও হতে পারে। অনেক কৃষ্ণাঙ্গদের গায়ের রং বেশি কালাে হয় না। নাঃ, কৃষ্ণাঙ্গ নয়। হতে পারে না। ওই নাক, ওতে অন্য ইতিহাসের চিহ্ন। হয়তাে ইহুদী হতে পারে। টানা সােজা, লম্বা, কালাে চুল কোমর পর্যন্ত। চওড়া কালাে চামড়ার ওপরে রুপােলি স্টীলের বােতাম লাগানাে বেল্ট-টা পর্যন্ত একটা ভারী সিল্কের পর্দার মতাে ঝুলছে। হিস্পানিক মেয়েই হবে। ইংরেজি উচ্চারণ যদিও খুব স্পষ্ট, হিস্পানিক অ্যাকসেন্ট নেই।