ঘটনাচক্রে ওল্ড পােস্ট আপিস স্ট্রীটের আদালতি কর্মক্ষেত্রে আমাকেও একদিন এমনি অসংখ্য অপরিচিত চরিত্রের সাক্ষাৎ সংস্পর্শে আসতে হয়েছিল। সেদিন অচেনাকে চেনা আর অজানাকে জানাই ছিল আমার জীবিকার অপরিহার্য অঙ্গ। তারপর এতদিন পরে হঠাৎ একদিন টের পেলাম কখন যেন আমার আকাশও বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছে তাদের রঙে। কখন যেন নিজেরই অজ্ঞাতসারে তাদের আমি ভালাে বেসে ফেলেছি মনে মনে। জানি, আইনের সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্কটা বিশেষ মধুর নয়। অন্ততঃ সাহিত্যের কমলবনে আইনের কলরব ঠিক ভ্রমর গুঞ্জনের মতাে শােনায় না। কিন্তু এই গ্রন্থে আমি আইনকে দেখিনি। ওল্ড পোেস্ট আপিস স্ট্রীটের যে মানুষদের একদিন ভালােবেসেছিলাম তাদেরই আজ অক্ষরে আবদ্ধ করবার চেষ্টা করেছি মাত্র, আর কিছু নয়।
আজকের খবরের কাগজে কোনাে চাকরির বিজ্ঞাপন নেই। অর্জুন কাগজটাকে ভাঁজ করে আকাশের দিকে তাকাতেই যেন বুড়িদিকে দেখতে পেল। দু’বছর আগেও এই জলপাইগুড়ি শহরে বুড়িদির মতাে ফরসা সুন্দরী বােধহয় কেউ ছিল না। এমন রঙ ছবিতেও দেখা যায় না। তারপর কী হল কে জানে, বুড়িদির মুখে কালাে ছােপ জমতে লাগল। এখন সেগুলােয় ছেয়ে গেছে মুখ, তবু ফাঁকে ফাঁকে ফরসা চামড়াটাকে বােঝা যায়। কিন্তু সেটাই যে অস্বস্তির। এই দুপুরের আকাশটা যেন অবিকল বুড়িদি, সারা মুখে মেঘের মেচেতা নিয়ে বসে আছে।
জীবনে অনেক জিনিস ঘটে, যাহার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজিয়া পাওয়া যায় —তাহাকে আমরা অতিপ্রাকৃত বলিয়া অভিহিত করি। জানি না, হয়তাে খুঁজিতে জানিলে তাহাদেরও সহজ ও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কারণ বাহির করা যায়। মানুষের বিচার, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতালব্ধ কারণগুলি ছাড়া অন্য কারণ হয়তাে তাহাদের থাকিতে পারে—ইহা লইয়া তর্ক উঠাইব না, শুধু এইটুকু বলিব, সেরূপ কারণ যদিও থাকে—আমাদের মতাে সাধারণ মানুষের দ্বারা তাহার আবিষ্কার হওয়া সম্ভব নয় বলিয়াই তাহাদিগকে অতিপ্রাকৃত বলা হয়।
ইংল্যাণ্ডের নেতারা ইচ্ছা প্রকাশ করলেন জর্মানী, ইতালির ফ্রান্সের ঘরের খবরাখবর চাই। ইনটেলিজেন্স সাভিসকে পুনগঠন করবার দাবী উঠল। যারা এই দাবী করেছিলেন তারা ছিলেন ধনী, জমিদার এবং রাজনীতিতে রক্ষণশীল। এরা দেশের অর্থনীতি তৈরি করতেন এবং এরা রাশিয়ার বিরােধী ছিলেন এবং কমনিজম এদের কাছে জুড়ি ছিল। এদের মধ্যে অনেকে হিটলারের গােপন সমর্থকও ছিলেন। একটি উদাহরণ হল সম্রাট পঞ্চম জজের বড় ছেলে প্রিন্স অব ওয়েলস, যিনি পরে ডিউক অব উইণ্ডসর নামে ইতিহাসে পরিচিত হয়ে ছিলেন, তিনি ছিলেন হিটলারের গােপন সমর্থক।
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে মুশকান জুবেরিকে খুঁজে যাচ্ছে নুরে ছফা। তবে সে একা নয়, প্রবল ক্ষমতাবান আরেকজনও মরিয়া হয়ে উঠছে রহস্যময়ি এই নারীকে খুঁজে পেতে। সেই ক্ষমতাবানের সাহায্য নিয়ে নতুন উদ্যমে নেমে পড়ে ছফা, দ্রুতই আবিষ্কার করে মুশকান সম্পর্কে এতোদিন যা জানতো সবটাই মিথ্যে। বরং এখনকার গল্পটি অনেক বেশি যৌক্তিক আর বাস্তব। সত্য-মিথ্যার এক গোলকধাঁধায় ঢুকে পড়ে সে। কিন্তু তার কোন ধারণাই নেই, মুশকানের মুখোখুখি হলে কোন সত্যটি জানতে পারবে। এতোদিন এই রহস্যময়ি কোথায় ছিলো-এ প্রশ্নের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে, কিভাবে ছিলো! আর পাঠক যখন সেটা জানতে পারবে তখন আরেকবার শিহরিত হবে, আবিষ্কার করবে মুশকানের প্রহেলিকাময় জগত।