পঞ্চাশ বছর আগে, ইংরেজরা তখনও আমাদের বুকের ওপর বসে এদেশে রাজত্ব চালাচ্ছে। এটা সেই সময়ের গল্প। কলকাতা থেকে দু-আড়াই শ মাইল দূরে ঢাকা জেলার এক গ্রামে ছিল আমার মামারবাড়ি। গ্রামটার নাম বাজিতপুর। আমার ছেলেবেলার বেশ ক’টা বছর সেখানে কেটেছে। বাজিতপুর আর তার চারপাশের আরো বাইশখানা গ্রাম নিয়ে ছিল একটি মাত্র থানা । থানাটা ছিল ওই বাজিতপুরেই।
হেমন্ত চৌধুরীকে আমি ছেলেবেলা থেকেই অসাধারণ মানুষ ব’লে মনে ক’রে অাসছি। পাঠশালা থেকে ইস্কুলে, ইস্কুল থেকে কলেজ আমরা দুজনে বরাবরই একসঙ্গে শিখেছি লেখাপড়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ব্বোচ্চ ধাপ পর্য্যন্ত ওঠবার পরেও জীবনের যাত্রাপথে আমাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়নি।
সন্ধ্যায় আগেই আজ পৃথিবী অন্ধকার হবে। পশ্চিমের আকাশে এখনও খানিকটা জায়গা জুড়ে অস্তগত সূর্যের বুকের রক্ত-মাথানো আলো ছড়ানো আছে বটে, কিন্তু তার চিহ্নি তাড়াতাড়ি মুছে ফেলবার জন্যে হু-হু করে বিরাট এক কালো মেয়ে ধেয়ে আছে।
বাজু একসঙ্গে মাথাা আর হাত নাড়তে নাড়তে বলে, ‘না দাদাই, ভূত-টুত বলে কিসসু নেই। স্রেফ গাঁজা।’ বাজুর বন্ধু বিট্টুও ঠোঁট উলটে দিয়ে বলে, একদম বোগাস।’ ফি বছর বাজু পুজোর ছুটিতে মামাবাড়ি আসে। পুরো ছুটিটা কাটিয়ে একেবারে ভাইফোঁটার পর নিজেদের বাড়ি ফিরে যায়।
আপনি পল্লীর জীবন অধ্যয়ন করিয়াছেন, -তবে জানিতে পারিয়াছেন যে মূল্যে বিদ্বজ্জনের সভা-দরবারের শাস্ত্র-কথায় তর্ক-বিতণ্ডা উথিত হয়, কাব্য-দর্শনের চর্চ্চা-কােলাহল আসর সরগরম করিয়া তােলে,- যেমন আর এক পার্শ্বে আমাদের তাল-বেতালের বা প্রবাদ প্রবচনের কঠিন প্রশ্ন-সমস্যার গভীর চিস্তাকূলিত ভাব রেখা দিয়া উঠে, বা মজলিসে মজলিসে বৈঠকীয় রসকথায় হাস্যে লহরে লহরে খেলে।
তারপরই ডোর-বেল বাজল ৷ কর্নেল যথারীতি হাঁক দিলেন,-ষষ্ঠী ! একটু পরে একজন বেঁটে নাদূস-নূদুস গড়নের মধ্যবয়সী ভদ্রলােক ঘরে ঢুকে বললেন,-নমস্কার কর্নেলসায়েব ! আমি ঘনশ্যাম মজুমদার ৷ কাল কপালীগড় থেকে আপনাকে টেলিফোন করেছিলুম ৷ কর্নেল বললেন,-বলুন ঘনশ্যামবাবু ৷ আলাপ করিয়ে দিই । ইনি পাইভেট ডিটেকঢিভ মিঃ ক কে হালদার ৷ রিটায়ার্ড পুলিশ ইন্সপেক্টর ৷ গণেশ অ্যাভেনিউতে এঁর ডিটেকটিভ এজেন্সি আছে ৷ আর'-'জয়ন্ত চৌধুরি ৷ দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার সুখ্যাত ক্রাইম-রিপোর্টার ৷ ঘনশ্যামবাবূ আমাদের নমস্কার করে বললেন,-আমার পরিচয় দেবার মতো কিছু নেই । কপালীগড় রাজবাড়ির কেয়ারটেকার।
ভীমগড়ের পাহাড়ি জঙ্গলে শেষ মার্চের বিকেলে কর্নেলের সঙ্গী হয়ে বেরুনাের সময় চৌকিদারের ওইসব কথা শুনে বেশ অম্বস্তিতে পড়ে গিরেছিলূম । কিন্তু কর্নেলের মুখ দেখে বুঝতে পেরেছিলুম, তিনি কেমন যেন নির্বিকার । বারকয়েক কালো দৈত্যের ব্যাপারটা কী হতে পারে, জিগ্যেস করেও কোনও উত্তর পাইনি ৷ তিনি ভীমগড়ের শেষদিকটার খানা-খন্দে ভরা পিচরাস্তায় পাখিদের ডাকাডাকি স্বাভাবিক।
ছেলেবেলা থেকেই আমার আদার্শ হচ্ছেন ডাঃ লিভিংস্টোন, ন্যানসেন, রবার্টু পিয়ারি ও কাপ্তেন স্কট প্রভৃতি দুঃসাহসী মহাজনরা - নতুন-নতুন বিপদসস্কুল অজানা দেশে নতুন-নতুন অভিযানে বেরিয়ে যাঁরা অকাতরে প্রাণদান করেছেন বা বিপজেয়ী হয়ে ফিরে এসেছেন ৷ সুখশয্যাশায়ী বিলাসীকে আমি ঘৃণা করি, আমার শ্রদ্ধা জাগে কণ্টকশয্যাশায়ী হঠযোগীকে দেখলে । পিতামাতার পরলোক গমনের পর প্রথম যখন স্বাধীন হলূম তখনই স্থির করলুম, এতদিন ধরে যে দিবাস্বপ্নের সাধনা করে আসছি সর্বাগ্রে তাকেই সফল করে তৃলব ৷ পৈত্রিক সম্পত্তির অভাব ছিল না।
অনেকে অভিযোগ করেন, আমার জীবন নাকি অস্বাভাবিক! তাঁদের মতে, স্বাভাবিক মানুষের জীবন এমন ঘটনাবহুল হতে পারে না ৷ যদিও নিজেকে আমি পাগল বা গণ্ডমূর্থের মতো নেপোলিয়নের সঙ্গে তুলনা করছি না, তবে তর্কের খাতিরে এখানে কেবল এই প্রশ্ন বোধহয় করতে পারি, নেপোলিয়ন কি স্বাভাবিক মানুষ ছিলেন না? তিনি মাত্র বাহান্ন বৎসর বেঁচে ছিলেন ৷ তার ভেতর থেকে প্রথম পঁচিশ বৎসর অনায়াসেই বাদ দেওয়া যায় ৷ কিন্তু বাকি মাত্র সাতাশ বৎসরের মধ্যে নেপোলিয়নের জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল যে ঘটনার-পর-ঘটনার প্রচণ্ড বন্যা, তাদের অবলম্বন করে কি অসংখ্য নাটক ও উপন্যাস রচনা করা চলে না?
আজ এক বৎসর কাল ধরিয়া অদ্ভূত কাগু হইতেছে । গত বারোটি অমাবস্যার রাত্রে বারোজন লোক অদৃশ্য হইয়াছে ৷ প্রতি দুর্ঘটনার রাত্রেই একটা আশ্চর্য বিষয় লক্ষ করা গিয়াছে ৷ মানসপুর সুন্দরবনের কাছাকাছি হইলেও তাহার ভিতরে এতদিন ব্যাঘের উৎপাত বড় একটা ছিল না ৷ কিন্তু দুর্ঘটনার আগেেই ঘটনান্থলের চারিদিকে ঘন-ঘন ব্যাঘের চিৎকার শোনা যায় ৷ ঠিক অমাবস্যার রাত্রি ছাড়া আর কোনওদিনই এই অদ্ভুত ব্যাঘ্নের সাড়া পাওয়া যায় না । এ-ব্যাঘ্র যে কোথা হইতে আসে এবং কোথায় অদৃশ্য হয় কেহই তা জানে না।
সবাই জানেন রবীন্দ্রনাথ তার যৌবনবয়সে শিলাইদহ সাহাজাদপুর পরিসর পূর্ববঙ্গের এমনি সব বিভিন্ন অঞ্চলে দীর্ঘকাল ভ্রমন করেছিলেন। এইমাত্র তিনি যে চিঠিপত্র লিখেছিলেন সেগুলি ‘ছিন্নপত্র’ নামে সংকলিত হয়েছে। জমিদারী দেখাশোনার কাজে অবনীন্দ্রনাথরা খুব কম বারই সাহাজাদপুর। জমিদারী দেখাশোনার কাজে অবনীন্দ্রনাথরা খুব কম বারই সাহাজাদপুর গিয়েছিলেন।
না থাকুক সাধ্য, পাহাড়ের মাথাতেই একদিন পাওয়া যাবে ওদের কাউকে ৷ রিখভের যা দরকার এখন, তা হল পাহাড় থেকে চারশো গজের মধ্যে এমন একটা জায়গা খুজে পাওয়া, যেখানে জৌরজেরির বন অপেক্ষাকৃত পাতলা, যেখানে ঢুকে লুকিয়ে থাকা চলে । লুকিয়ে থাকবে শিকারী, রোদ পোয়াবার তাগিদে কোন গন্ডার প্রভু গিরিসানুতে এসে দাঁড়ানাে মাত্র তড়াক করে লাফিয়ে উঠ্যব সে, ব্যাং করে একটা আওয়াজ হবে তার রাইফেল, চারশো গজ দূরে বিরাট গন্ডার লুটিয়ে পড়বে মরণ যাতনায়।
শিশু-সাহিত্যের পবিত্র উদ্যানে পদার্পণ করবার আগে প্ৰণাম জানাই দেবতার পায়ে ; তারপর বাংলাভাষাভাষী প্রত্যেকটি লোককে সাদরে সম্ভাষণ জানিয়ে, আমাদের _পুরােবত্তী অপরাপর শিশু-সহবােগীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ক্যাছি৷ র্তাদের পরিশ্রম ও আদর্শ বাঙালী ছেলেমেয়েদের কোমল বুকে অনেক দিন হতে সঞ্জীবন-রসের কাজ করে আসছে
সন্ধ্যেবেলা ছোট্ট খোকা বায়না ধরে তার মায়ের কাছে........ মা, এবার গল্প বলো.....
গল্পের কথা শুনে অমনি আনন্দে ভরে উঠে মায়ের মন । ছোট্ট খোকাকে আরো ...অারো কাছে টেনে নিয়ে সুরু করেন গল্প... রূপ কথার গল্প হাসি রাজারানীর গল্প-
ছোট্ট খোকা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে তার মায়ের মুখের দিকে ... গল্প শুনতে শুনতে তার মন চলে যায় তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে---
ভারতের উত্তর-পাঁশ্চম সীমান্তে কাশ্মীর নামে এক রাজ্য আছে । প্রাচীনকালে ঐ কাশ্মীর রাজ্যে সর্ব গুণসম্পন্ন একজন সুলতান রাজত্ব করতেন ৷ তাঁর একটি কন্যা ছিল । কন্যার নাম ফরোখনাজ । ফারাখনাজ যেমন ছিল নানা ৰিদ্যায় সুশিক্ষিতা, তেমনিই ছিল অসামান্য রূপবতাী ৷
আর্ট কলেজ থেকে পাস করার পর শিল্পীজীবন শুরু সিনেমার হোর্ডিং, স্নো-পাউডার-ক্রিমের লেবেল ডিজাইন করে।
শুকতারা পত্রিকায় অলংকরণ-শিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু গত শতকের পঞ্চাশের দশকে। কমিকস অনুরাগী ক্ষীরোদচন্দ্র মজুমদারের অনুরোধে প্রথমে জন্ম নিল হাঁদা-ভোঁদার কাণ্ডকারখানা। এরপর শুকতারা পত্রিকাতেই এল বঁটুল দি গ্রেট”।
ষাটের দশকের শেষভাগে কিশোর ভারতী পত্রিকার শুরুর সময়ে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক দীনেশচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায়ের উৎসাহে এল আরেকজোড়া মূর্তিমান ‘নিন্টে আর ফন্টে’। পরবর্তীকালে কেল্টুদা ও সুপারের আবির্ভাবে নন্টে-ফন্টের ছবিতে-গল্প হয়ে ওঠে। আরও জমজমাট। নন্টে-ফন্টের সেই পথ চলা আজও অবিরাম।
এ ছাড়াও বহু অলংকরণ ও অন্যান্য কমিকস একেছেন ক্লান্তিহীন এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী।
কিন্তু এই কৃতিত্ব কি শায়েস্তা খাঁর একার? সিবাস্তিয়ান গঞ্জালেসের মত লোক কেন নিজে থেকে শায়েস্তা খাঁর হাতে ধরা দেবে? সেও কি সম্ভব? না, তা সম্ভব না। তাকে এই কাজে বাধ্য করেছিল এক অতি সাধারণ বাঙালি যুবক, বিশু ঠাকুর। কিভাবে সেই অসাধ্য সাধন করেছিল বিশু ঠাকুর? সেই রুদ্ধশ্বাস কাহিনীর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা পাওয়া যাবে 'জলদস্যু' উপন্যাসে। 'জলদস্যু' এমন এক ঐতিহাসিক উপন্যাস যা লেখা হয়েছে মূল ঘটনার কয়েকশ বছর পর। তাও আবার এতে স্থান পেয়েছে এমন একটা ঘটনা যা ঐতিহাসিককের অজ্ঞতার কারণে ক্রমেই বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছিল। সেরকম একটা ঘটনাকে আবারো পাঠকের সামনে নিয়ে আসার সব ক্রেডিট লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। কিন্তু এ-ও মনে রাখা দরকার, স্বভাবতই উপন্যাসের সকল ঘটনা হান্ড্রেড পারসেন্ট নিখুঁত না।