গা-ছমছমে ভয়ংকর বাঘের গল্প শুনতে কে-না ভালোবাসে! বনের রাজা বাঘ না হলেও, বাঘের চেহারা ও হাঁটা-চলার মধ্যে আছে আশ্চর্য রাজকীয় ব্যাপার। ‘বাঘ’ শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক শিহরণ জাগানো রোমাঞ্চ। সুন্দর রায়ের পুরুত ঠাকুরের মশাল হাতে বাঘের দিকে তেড়ে যাওয়া, কলমের কেরামতিতে সাপ-ব্যাং দিয়ে মজাদার বাঘ-শিকার, যোশিপুরের ফরেস্ট অফিসার সরোজবাবুর খৈরি নদীর ধার থেকে কুড়িয়ে আনা বাঘের বাচ্চা, ঋজুদার বন্দুকে লাওয়ালঙের বাঘ শিকার, বিধু দারোগার সেই বদন গাছে বেঁধে রাখা লাজুক বাঘের গল্পে ঠাসা এই বই। শিবরাম চক্রবর্তী, লীলা মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহ, শৈলেন ঘোষ, অতীন বন্দোপাধ্যায়, নির্বেদ রায়, এরকম পঁচিশজন লেখকের কলমে রোমাঞ্চকর পঁচিশটি মনকাড়া বাঘের গল্পের এই সংকলন। জঙ্গলের বাঘ জঙ্গলে থাকুক, অভয়ারণ্যের বাঘ থাকুক অভয়ারণ্যে। আমরা দুই মালাটের মধ্যে বন্দি পঁচিশটি বাঘের গল্প তুলে দিলাম মরমি পাঠকের হাতে।
টুই জানলা দিয়ে উল্টোদিকে চেয়েছিল। মুখ না ঘুরিয়েই বলল, সব পুরুষই তাই। সাে হােয়াট্! তাদের ছাড়া চলেও না যে মেয়েদের! তােমার মত এত স্বাবলম্বী ওয়েল-অফ মেয়েরও চলেনা কি? তুমি কিন্তু যাই-ই বলাে টিটিদিদি, আমি জানি না, কেন আমার এখনও খুব ভালাে লাগে অমুদাকে। ভেরি নাইস গাই! ভেরি আন্ডারস্ট্যান্ডিং, লাভিং। খুবই নরম মানুষ। আ জেনুইন পার্সন। মেকী মানুষে ভরে গেছে এই পৃথিবী। আমি জানি না, তােমার মত হাইলি ইন্টেলিজেন্ট মানুষ হয়ে তুমি এমন ভুল করলে কি করে?
সিমি মানে সীমন্তিনী বড়ুয়া। আমাদের সঙ্গেই গ্র্যাজুয়েশান করেছে। মেয়েটা। তারপর আমাদের সঙ্গেই ভরতি হয়েছে এম এতে। ইলেশের ওকে। খুব পছন্দ! খুব মানে ‘খ’-এর পরে অনেক হ্রস্ব-উ দিয়ে খুব। সেই কলেজের ফার্স্ট ইয়ার থেকে সিমির পিছনে লাইন দিয়েছে ইলেশ। সেই কারণেই ওর নিজেদের ব্যাবসায় না ঢুকে ইউনিভার্সিটিতে ঢােকা। কিন্তু আজও খুব একটা সুবিধে করতে পারেনি ও! সিমি ওকে পাত্তাই দেয় না!
আগেকার দিনের কর্তাদের বেশ একটা ভারিক্কি চাল ছিল । দেখলেই বােঝা যেত, ইনি কর্তাব্যক্তি মানুষ, স্ত্রীপুত্র পরিবার নিয়ে সংসার করেন। একমেবা দ্বিতীয়মের সন্ধান পেয়ে গেছেন । উড়ু উড়ু, প্রেমিক-প্রেমিক ভাব আর নেই । যা পেয়েছি প্রথম দিনে, তাই যেন পাই শেষে । যার মুখ দেখে এতকাল ঘুম ভাঙছে, সেই মুখটিই যেন খাবি খাবার সময় ঝাপসা ঝুলে থাকে, মৃত্যুপথযাত্রীর চোখে । 'চললুম ডার্লিং, হুলাে রইল, রােজগার করে খাওয়াবে । একটি ভাল ছেলে দেখে বুচীটার বিয়ে দিও। আহা সমুখে শান্তির পারাবার ।
‘প্রাকৃত’ শব্দের অনেক অর্থ আছে অভিধানে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘লৌকিক’। সচরাচর আমাদের ইন্দ্রিয় আমাদের যা দেখায়, শোনায়, উপলব্ধি করায়, তা-ই লৌকিক। লৌকিক শব্দেরও অভিধানে অনেক অর্থ; তার মধ্যে আছে জাগতিক, সাংসারিক, সামাজিক। এখন যা সচরাচর সমাজে, সংসারে বা এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতে আমরা দেখতে পাই না, অথচ তার অস্তিত্ব আছে বলে ধারণা করা হয়, তাই লৌকিক নয়, অলৌকিক। অন্যভাবে বলতে গেলে অপ্রাকৃত।
এখানে কোনও বাণী নেই, মাথায় ঢিসুম কোনও কারুকাজ নেই, কোনও গ্রাম্ভারি বক্তব্য নেই, কোনও তথাকথিত সুতোও নেই - যা ধরে পাঠক ঝুলবেন। এখানে কিছু আঁকিবুঁকি আছে, ক্ষতদাগ আছে, গল্পবীজ আছে - তবে ক্ষত খুঁটে গল্প তোলার তাগিদও নেই কোনও। শুধু রাস্তার বাঁকে বাঁকে চলে যাচ্ছে আমাদের চারিপাশ, আমাদের সময়, আমাদের বাঁচা। খানিকটা রোজনামচার ঢঙে, খানিকটা স্বগতোক্তির মতো। নিজের সঙ্গে বকবক কিম্বা হঠাৎই এক উন্মাদের ছটফটিয়ে ওঠা, চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দিতে চাওয়া, ঘেঁটে দিতে চাওয়া এই প্রকাণ্ড সুস্থতাকে।
ছড়িয়ে দেওয়া যায় না এমন আলোর দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছি। একেকটা স্বর আসে কাকেদের ডাকের মতো। রোমশ ঐ হাতের তলায় লুকোনো মার্বেল চোখের কোনায় অপেক্ষা লেখা ছিল। পাত্তা না দিয়ে গাঢ়তর আরও উপেক্ষার দিকে চলে গেছি। এখানে রাতের অভাব বোধ করতে হয়। দিন বড়ো একঘেয়ে আর ঘুণেরা অপ্রতিরোধ্য। খাটের পায়া থেকে সশরীরে উঠে আসা জীব এখন পুঞ্জীভূত ঘামের দিকে চলে যায়। পা গুলি ক্রমশ সরু হয়ে আসছে। টের পাই ও পাড়ার মেয়েরা জল নিতে এসে গল্পের সুবাদে এ ওর গায়ে ঢলে পড়ে। তাদের পুরুষ্ট নিতম্বের দুলুনিতে পা কাঁপে। আঁচল সরে গেলে পিঠের আঁচড়গুলি চওড়া হতে হতে একেকটা মেঘের মতো ফুটে থাকে। জলের আস্বাদ নিতে গিয়ে ঘাট পিছল হয় আরও। শ্যাওলার দেওয়ালটুকু বিবস্ত্র করে তিনতলা ছাত উঠে গেল... খালি পায়ে উঠে আসে একলা মেয়ে। তার বাম তিল স্পর্শ করে সতেজ হাওয়া শাড়ি উড়িয়ে নিতে সাহস পায় দিন দিন।
সােনালী মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল, তােমার মাছ বেছে দিতে দিতে বড়মার খেতে অসুবিধে হয়। তুমি নামেও খােকন কাজেও খােকন। দ্যাখ সােনালী, আমি এ বাড়ির একমাত্র ছােট ছেলে। তুমি কখনও এ বাড়ির একমাত্র বড় ছেলে, আবার কখনও একমাত্র ছােট ছেলে। খােকনের মা হেসে উঠলেও খােকন ওর কথার কোনাে জবাব না দিয়ে আলু-পটলের তরকারি মাখা ভাত মুখে দিয়েই বলল, তরকারিটা লাভলি হয়েছে।
প্রবাদ আছে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধে হয়। আজকাল তাই আমি সন্ধেটা বাড়ির বাইরে কাটাতে চেষ্টা করছিলাম। সব দিন যে পারছিলাম এমন নয়। তবে কিছুদিন পারছিলাম। তিন বাড়িতে টিউশন, বইপাড়ায় প্রুফ দেখার পরও যেদিন দেখি সন্ধে কাটেনি সেদিন সােজা চলে যাচ্ছিলাম গঙ্গার ধারে, জাদুঘরের বারান্দায় অথবা চক্ররেলের স্টেশনে। এসব জায়গায় বসে সন্ধে হওয়া দেখতে চমৎকার লাগে। মনে হয় কে যেন আঁজলা করে খানিকটা অন্ধকার ভারি যত্নে ফেলছে কলকাতার ওপর! ভাবছিলাম, কটা দিন সুন্দরবন বা বেতলার জঙ্গলে গিয়ে পা ঢাকা দেব। খরচাপাতি নিয়ে চিন্তা নেই।
হইলেন। তিনি বলিলেন, কি এক দুর্গন্ধ, অনুভব করিতেছেন। উহা নিবারণের জন্যে নাসিকা আচ্ছাদিত করিয়াছেন। তখন নবাব বলিলেন, তবে তিনি জাতিভ্রষ্ট হইয়াছেন; কারণ, “ঘ্রাণ অর্ধেক ভােজন।” শ্যাম রায় আপন অস্ত্রে আপনি আহত হইয়া, তাহা স্বীকার করিলেন। সে দিন হইতে তিনি জাতিভ্রষ্ট হইলেন। তাঁহার বংশীয়েরা চট্টগ্রামের মুসলমান-সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনও অগ্রগণ্য। ইহারা মুসলমান হইলেও আমরা ইহাদিগকে কুটুম্বের মত শ্রদ্ধা ভক্তি করি।
যাদের বিয়ে হল বইটি একান্তভাবেই বিবাহিতদের জন্য। বিবাহিত তরুণ দম্পতিদের উদ্দেশে বইটি লেখা হলেও সব বয়সের বিবাহিতরাই বইটি পড়তে পারবেন। তবে তাদের প্রাপ্তমনস্ক হতে হবে। একদা ‘হতাশ হবেন না’ ৩য় খণ্ডে দাম্পত্য জীবন নিয়ে যে আলােচনা শুরু করেছিলাম সেটি সূচনামাত্র। নারী-পুরুষের সম্পর্ক, সমাজ পরিবার ও সবার ওপর মানুষের ব্যক্তিগত মনস্তত্ত্ব। (তার আচরণ, স্বভাব, ভাবনা) ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে আলােচনা করা যায় না। তাই আমি এ নিয়ে মােট পাঁচটি বই লেখার কাজ শুরু করি।