আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করা উচিত যে, মানব প্রজাতির সদস্যদের বিশেষ উল্লেখকালে যখন সাধারণভাবে মানুষ’ বা ‘সে’ বিশেষণ ব্যবহৃত হয়েছে তখন তার অনুষঙ্গে নারীপুরুষ উভয়কেই যুক্ত করা হয়েছে। বাকরীতির এটুকু অনুমােন প্রার্থিত। এরকম ব্যবহারে পুরুষতান্ত্রিক উপাদানের ওপর কোনাে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এমন অনুমান অনুচিত হবে।
সাধারণ মানুষের জীবিকা বলতে, স্টেশনের পাশে, রাস্তার ফুটপাত দখল করে টিন দিয়ে ঘেরা ছােট ছােট দোকান। চাষের জমি অফুরন্ত নয়। তবে কিছু জমিতে চাষ হয়। আদ্রার বহু মানুষ রেলে কাজ করেন। কিন্তু ওয়াগন ব্রেকার পেশার মানুষও আছে। হিজড়ে সম্প্রদায়ের আধিপত্য আছে। ওদের জীবিকা বলতে দোকানদারদের থেকে তােলাবাজি। হিজড়েদের দুটো দল আছে। ওদের মধ্যে খুন-খারাপিও লেগে থাকে। হিজড়ে মানে অবশ্য প্রায় সবই মেয়েলি পুরুষ।
হিন্দু ধর্মের ঈশ্বরের মতােই বাঙালির আড্ডা নিরাকার এবং সাকার। একই সঙ্গে স্পষ্ট এবং রহস্যময়। বাঙালি জীবনের সঙ্গে কোথায় যেন এর শেকড়টি ছড়িয়ে আছে অনেক দূর পর্যন্ত। যদিও হালফিলের টি ভি আর ভি সি আর-এর দৌরাত্ম্য বাড়ির বিখ্যাত আড্ডাগুলিতে প্রায় ছেদ টেনে দিয়েছে। অত সময় নেই—এ যুক্তিতে চায়ের দোকান বা রকের আড্ডা স্তিমিত প্রায়। কারণ বেশির ভাগ চায়ের দোকানে। যে প্রভাতী খবরের কাগজ ও ডবল হাফ চা নিয়ে আড্ডা বসত, তার গুরুত্ব অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে টেলিভিশনের খবর পাঠ। আর ষাট-সত্তরের চায়ের দোকানে দোকানে রাজনৈতিক আলােচনায় যে উত্তাপ ও উত্তেজনা ছিল, তার অনেকটাই এখন নিছকই স্মৃতি মাত্র।
সুখের হােক বা দুঃখেরই হােক পর্যটক জীবন বিচিত্র। আবার পর্যটনের ফলে যে অভিজ্ঞতা লাভ করা যায় তা বড় কম নয় ; কারও কারও জীবনে তা বড় সম্বল হয়ে থাকে। আমার মনে হয়, এই পবিত্র ভারতভূমির মধ্যে, তীর্থস্থান বলে যেগুলি আছে, সেগুলির কিছুটাও যদি দেখা যায় তাহলে আমাদের মনে সহজেই এ ধারণা প্রবল হয়ে ওঠে যে, সৌন্দর্যের উপাসক আমাদের পিতৃপুরুষেরা কি অসাধারণ উদার, লােককল্যাণের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐ স্থানগুলি তীর্থক্ষেত্র বলে আবিষ্কার এবং চিহ্নিত করে | গেছেন তাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য। চিরশান্তির নিকেতন এই হিমালয় আজও আমাদের আনন্দের উৎস হয়ে আছে, এত দুঃখের মাঝেও।
নিজের জীবনকালের কথায় নিজের জীবনকে গৌন করে কালকে বড়ো করে শৈশবের কথা এবং কৈশোরের কথা লিখে সাহিত্য-জীবনের কথা লেখার সংকল্প যখন করেছিলাম তখন এ কাজ যে কত কঠিন তা ভেবে দেখিনি। লিখতে বসে মনে হচ্ছে এমন কঠিন কাজে হাত না দেওয়াই ভালো ছিল। সহজাত লিখনক্ষমতায় এমন কঠিন কাজকে সহজ করে তুলেছেন তিনি। উম্মোচিত হয়েছে তাঁর সৃজনজীবনের অন্দরমহল। সেই সঙ্গে, বিগত শতকের তিরিশের দশকের শুরু থেকে পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ-আমাদের জাতীয় জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই সময়পর্বকে চিনে নেবার আয়াসেও সহযোগ দান করে এই আত্মচরিতমূলক গদ্য।
অনেকে কমলাকান্তকে পাগল বলিত। সে কখন কি বলিত, কি করিত, তাহার স্থিরতা ছিল না। লেখাপড়া না জানিত, এমন নহে। কিছু ইংরেজি, কিছু সংস্কৃত জানিত। কিন্তু যে বিদ্যায় অর্থোপার্জন হইল না, সে বিদ্যা কি বিদ্যা? আসল কথা এই, সাহেব সুবাের কাছে যাওয়া আসা চাই। কত বড় বড় মূখ, কেবল নাম দস্তখত করিতে পারে,—তাহারা তালুক মুলুক করিল—আমার মতে তাহারাই পণ্ডিত। আর কমলাকান্তের মত বিদ্বান, যাহারা কেবল কতকগুলাে বহি পড়িয়াছে, তাহারা আমার মতে গণ্ডমূখ।
ওদের সরল বিশ্বাস দেখে মায়া হত। যে কোনও বিবাহিত মেয়েই সারা জীবন ধরে যেসব জিনিস কাছে নেই, থাকবার নয়, তাদের বাদ দিয়ে কাজ চালিয়ে যায়। কোনও বাড়িতে এমন পুরুষ দেখলাম না যে তাদের ধরবার সাধ্যি রাখে। ডিম বাদ দিলে যা কখনওই হবার নয়, মেয়েরা হামেশাই ডিম বাদ দিয়ে তাই করে নেয়— একথা পুরুষ ছাড়া সবাই মানে। আবার বলে কিনা মেয়েদের বুদ্ধি কম। সত্যি কথা বলতে কী, এই যে পুরুষানুক্রমে মেয়েদের বুদ্ধিহীনতার প্রবাদ চলে আসছে, এতে মেয়েদের কম সুবিধে হচ্ছে না। তা ছাড়া বেজায় বুদ্ধি না থাকলে মান্ধাতার আমল থেকে কেউ বােকা সেজে থাকতে পারত না। যাকগে, এখন চাকরে মেয়েদের কথাই হােক।
গল্প উপন্যাসের চেয়ে ২০০০ সালের ছেলেমেয়েদের জীবনে বড় হয়ে উঠেছে কঠিন কঠোর রূঢ় বাস্তবতা তীব্র প্রতিযোগিতা, মুল্যবোধের অবক্ষয়, বিশ্বায়নের খোলা জানালা দিয়ে ঝড়ের মত হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ছে অপসংস্কৃতি। অর্থনৈতিক অবক্ষয় ও দুর্নীতিপঙ্কিল সমাজ জীবনে বদ্ধ দমবন্ধকর পরিবেশে রোল মডেল বলতে এখন হয় চিত্ৰতারকা না হয় ক্রিকেট তারকা। এই অবস্থায় আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে তাদের জন্য কলাম ধরছেন। একজন সাংবাদিক লেখক। জীবনসন্ধ্যায় এসে তিনি দেখেছেন, এই নেতিবাদী জীবনধারা থেকে আজকের প্রজন্মকে বাঁচাতেই হবে। তিনি বলছেন। আমি বহু ব্যক্তিগত বিপর্যয়ের মধ্যে হতাশ হইনি, আপনারাও হতাশা হবেন না। যারা বড় হতে চাও তাদের জন্য লেখকের পথনির্দেশ : ইস্কুলে যা পড়ানো হয় না।
উত্তরবঙ্গের গ্রামীন লােকজীবনে বিশেষ করেছােটদেশী, বড়দেশী, পলি, বাবুপলি, কোচ, রায়কত, দেবংশী, মালি, বরঙ্গা প্রভৃতি রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে অতি প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন দেবদেবীকে পূজিত হতে দেখা যায়। বংশপরমম্পায় চলে এইসব দেব-দেবীর পূজা-পার্বণ ও লােকাচার। এইসব দেবদেবী হ’ল পরিবারে ও সমাজে সমস্ত শুভ ও অশুভের ত্রাণ কর্তা। দেবদেবতার প্রসন্ন ও অপ্রসন্নতার উপর নির্ভর করে নিজের ও দশের মঙ্গল ও অমঙ্গল। তাই, দেবদেবীর প্রতি এরা অন্ধ বিশ্বাসী এবং দেবদেবতার প্রভাব। এদেব জীবনে অপরিসীম।
ভারী ভারী পর্দাগুলােকে টেনে টেনে জানলা ছায়, কাচ ছায় ঈশা ঘরে ঘরে ঘুরে ঘুরে। হালকা হলুদের ওপর এক বর্ণচ্ছায় গাঢ় হলুদ মােটিফ বসানাে চমৎকার পর্দা সব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কেননা এ তাে রৌদ্রশােষক রং নয় একেবারেই। ঘন সবুজ, গাঢ় মেরুন কি খয়েরি ছিল ঠিকঠাক রং। কিন্তু রুচির সঙ্গে প্রয়ােজনের প্রায়ই মতে মেলে না। সাত হাজার টাকার পর্দা কিনে শেষ শীতে মুখ আলাে করে ফিরেছিল দম্পতি। হালকা চন্দন দেওয়াল। তাতে হলুদ পর্দার আভা সিলিং পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। কী সুন্দর! এখন রােদের তাপের সঙ্গে নিজের তাপ যােগ করে, ফেরত পাঠাচ্ছে সেই শখের পর্দা।