Categories


হাসির এ্যাটম বোম

যাই হােক, এ্যামে তুলে নকুড় মামাকে নিয়ে যাই ঠেলে ঠেলে। প্রদর্শনীর গেট। পেরিয়ে যতই এগুচ্ছি ততই ভিড় জমে যাচ্ছে নকুড় মামাকে দেখতে। মামার ধৈর্য। অসাধারণ। তিনি নাকের নীচে অবধি চাদর ঢাকা দিয়ে রেখেছেন। মুখে বাক্য নেই। কিন্তু কতক্ষণ আর ধৈর্য ধরবেন, বিচারকের বিরুদ্ধে একবার রুখে উঠলেন আর গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে উঠেই ওজস্বিনী ভাষায় বক্তৃতা দিতে আরম্ভ করলেন। গোঁফের কথা তখন আর মনে ছিল না। আর তাই না দেখে কী হাসি সবার! এক বছরের বাচ্চারাও হেসে উঠলাে।


কিং কঙ্

কিং কঙ্
অমানুষিক মানুষ
ভগবানের চাবুক 
আলেকজান্ডার দি গ্রেট


অমৃত কথা

জীবনটিকে শুদ্ধ পবিত্র করে গড়ে তুললেই সত্যস্বরূপ ঈশ্বর বা আত্মা আছেন এটি অনুভব করা যায়। ত্যাগ, পবিত্রতা, সংযম অভ্যাসে জীবন শুদ্ধ হয়, পবিত্র হয়। মূল কথা ত্যাগ’ বা অনাসক্তি। প্রসঙ্গক্রমে ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের উক্তি স্মরণ করতে পারি। এই ত্যাগ বা অনাসক্তির কথা বােঝাতে গিয়ে তিনি বলেছেন : “দশবার গীতা উচ্চারণ করলে যা হয় তাই গীতার মূলকথা।” বর্ণ বিপর্যয়ের | ফলে দশবার উচ্চারণে ‘গীতা’ শব্দটি ত্যাগী’ হয়ে যায়। ত্যাগী’ বা ‘তাগী’ একই অর্থ প্রকাশ করে। এইটি গীতার প্রধান কথা।


ভারতজোড়া কথনকথা

বাংলা অনুবাদে ৫২টি ভারতীয় ভাষার ১২৮ টি লোকগল্প সংকলন


জন্মভূমি মাতৃভূমি

মার্চের দশ তারিখ হয়ে গেল। কিন্তু এখনও দেখছি দু এক দিন অন্তর অন্তরই। ব্রুকলিনের আকাশ তুষার ঝরিয়ে চলেছে। পনেরটা শীতের মধ্যে তেরটাই আমাদের কেটেছে দক্ষিণে যেখানে কর্কটক্রান্তি নিকটবর্তী হওয়ার দরুন আবহাওয়া অনেকটা নম্র। শীতটা শুধু একটু কড়া। দিল্লির শীতের মতাে। তা-ও জানুয়ারীর পরই শীত পাততাড়ি গুটোয়। এতাে তুষার বা ব্লিজার্ড আমাদের অভ্যেস নেই। বৃষ্টিপাতের মতাে তুষারপাতও আমার মতে কাচের আড়াল থেকে উপভােগ করবার জিনিস। বেরােতে হলেই চমৎকার ! গত বছরটা শীতের মরশুমে পালিয়েছিলুম অস্ট্রেলিয়ায়।


পঞ্চাশটি গল্প

বাজখাই গলার চিৎকারে ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি চোখ খুললাম। ট্রেন কি চলছে? নাকি থেমে আছে? ট্রেনের এই একটা মজা। অনেকক্ষণ চলার পর থেমে গেলেও বােঝা যায় না। বাইরের বদলে ট্রেন তখন চলতে থাকে শরীরের ভেতরে। ভেতরের সেই ট্রেনটা মাঝেমধ্যে হুইল্ল দেয়, ঘটাং ঘটাং করে নদীর সাঁকো পেরােয়! উঠে বসলাম! না, ট্রেন থেমেই আছে। কামরা অন্ধকার। তবে একেবারে অন্ধকার নয়। কোথা থেকে যেন আবছা একটা আলাে আসছে। এই তাে ঘুমােনাের আগেই দেখেছি, করিডরে নীল রঙের ডুমাে ডুমাে আলাে জ্বলছিল। সেগুলাের কী হল? ট্রেন থামার সঙ্গে আলােও নিভে গেল! আবছা আলােটা কোথা থেকে আসছে? নিশ্চয় কোনও জানলা খােলা। আবার চিৎকার।


আনন্দসঙ্গী : প্রবন্ধ

সীতা-নির্বাসনের পরে রামের শােকাকুল অবস্থার বর্ণনা রামায়ণে নিতান্ত সংক্ষিপ্ত। সীতাকে পরিত্যাগ করিয়া লক্ষ্মণ চতুর্থ দিবসে অযােধ্যায় প্রত্যাবর্তন করিলেন এবং রামের প্রাসাদে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন—তিনি (রাম) দুঃখাবেগে জলধারাবুলােচনে অনবরত রােদন করিতেছেন। শশাকের বর্ণনা রামায়ণে এই পঙক্তিমাত্রে পর্যবসিত। রাম ধীরােদাও-গুণান্বিত নায়ক, প্রাকৃতের ন্যায় শােক্যভিভূত হইয়া মুক্তকণ্ঠে বিলাপ তাদৃশ নায়কের প্রকৃতি-বিরােধী; তাঁহার “জলধারাকুললােচনই অন্তগুঢ় ঘনব্যথ শােকশল্যের দারুণ বেধন-বেদনার নীরব নিদর্শন। তাই পঙক্তিমাত্রে শােক বর্ণনা সমীচীনই মনে হয়। উত্তর চরিতে এই মর্মন্তুদ শশাকের করুণ রসাত্মক অনেকগুলি শ্লোক আছে; তাহাদের দুইটির বঙ্গভাষায় অনুবাদ উদ্ধৃত করিলাম। সহৃদয় পাঠক শােকের তীব্রতা ইহাতে অনুভব করিতে সে কৃত করলাম। সহৃদয় পাঠক শশাকের তীব্রতা ইহাতে ত করিতে পারিবেন, বােধ হয়।


রবীন্দ্র-প্রসঙ্গঃ আনন্দবাজার পত্রিকা ২য় খণ্ড

স্বদেশীযুগের দেশ ভাবনার মধ্যে যে ত্যাগ, কমোদ্যম, গ্রাম সংগঠনের ও সমাজ গঠনের প্রাণবন্ত উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল, মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই তা বিদূরিত হয়েছে দেখা যায়। শুধু দেশের মাটির সঙ্গে সম্পর্কহীন রাজনৈতিক কূটকৌশল বড় হয়ে উঠেছে, গড়ার কাজ ছেড়ে আরম্ভ হয়েছে বাধা দানের কৌশল—সে অহিংস বা সহিংস যাই হােক না কেন। এমন কি স্বদেশের ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র কি রূপ নেবে তাও আমরা মিলিতভাবে স্থির করতে ব্যর্থ হয়েছি।


টমটমপুরের গল্প

টমটমপুর নামে কোনাে জায়গা কোথাও নেই। টমটমপুর নামে কোনাে জায়গা কোথাও ছিলাে না। আসলে অন্য একটা জায়গার কথা কিছুদিন হলাে বারবার লিখছি, এবার তাই নামটা একটু বদলিয়ে দিলাম। তবে এই নাম বদলের অন্য একটা কারণও আছে। যানবাহন বলতে নৌকো ছাড়া টমটম ঘােড়ার গাড়িই ছিলাে আমাদের অল্পবয়সের সেই শহরের একমাত্র সম্বল। হয়তাে কারাে মনে পড়তে পারে ডুলি বা পালকিও ছিলাে, কিন্তু তার ব্যবহার ছিলাে সীমিত, সংখ্যা ছিল নিতান্তই নগণ্য। অবশ্য যাতায়াত প্রধানত ছিলাে জলপথেই, স্থলপথ প্রায় ছিলাে না বললেই চলে। রেলগাড়ি আমরা ছােটবেলায় চোখেই দেখিনি।


আগুন পাখির রহস্য

সকালবেলা রেডিয়াে খােলা থাকে, কাকাবাবু দু-তিনখানা। খবরের কাগজ পড়েন। কাগজ পড়তে-পড়তে কখনও রেডিয়ােতে ভাল গান হলে শােনেন কিছুক্ষণ, আবার কাগজ-পড়ায় মন দেন। বেলা ন’টার আগে তিনি বাইরের কোনও লােকের সঙ্গে দেখা করেন না। কাকাবাবুর মতে, সকালবেলা প্রত্যেক মানুষেরই দু-এক ঘণ্টা আপনমনে সময় কাটানাে উচিত। জেগে ওঠার পরেই কাজের কথা শুরু করা ঠিক নয়।


দশটি কিশোর উপন্যাস

আমাদের মফস্বল শহরে বরাবরই খুব শীত পড়ত। একেই তাে জায়গাটা ছিল বিহারের পাহাড়ি এলাকা, তার ওপর আমাদের শহরের আশেপাশে ছিল যত রকম বনজঙ্গল। ছােটনাগপুর পার্বত্য এলাকা বলতে ভূগােল বইয়ে যা বােঝাত আমরা তার চেয়েও বেশি বুঝতাম, অন্তত শীতকালে পার্বত্য এলাকার দৌরাত্মটা বেশ হাড়ে হাড়ে অনুভব করতাম। তবু একথা ঠিক, আমাদের মফস্বল শহরটি ছিল খুব সুন্দর।


আমি আমার মৃত্যুর পর স্বাধীনতা চাই না

জোরা নীল হার্সটন হারলেম রেনেসাঁস’ সময়ের একজন প্রধান বুদ্ধিজীবী। তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ নিগ্রো অভিব্যক্তির চরিত্র থেকে কিছু সারাংশ এখানে তুলে ধরছি যাতে আফ্রিকান আমেরিকান কবিদের লেখা বুঝতে সুবিধে হয়। আমেরিকায় একটা বিখ্যাত টিভি সিরিয়াল ছিলনাম ‘টুইলাইট জোন’। তার একটা অংশের শুরু হচ্ছে একজন দারুণ সুন্দরী সাদা, সােনালি চুল, নীল চোখ মেয়ের অপারেশন হচ্ছে। তাকে ঘিরে রেখেছে কিছু মুখে সাদা কাপড় লাগানাে ডাক্তারের দল।


রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত

তেমনি তাঁর সমসাময়িক অনেক লেখকও রচনা করেছেন তাঁর সম্পর্কে প্রশস্তি গাথা। উনিশ শশা তিরিশের দশকে বাংলা সাহিত্য তাঁর বিরুদ্ধে এক প্রকার আন্দোলন শুরু করে। তৎকালীন তরুণদের এই যে রবীন্দ্র-বিরােধিতা, তা কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে হেয় করবার জন্য। মমাটেই নয়, এরা সকলেই রবীন্দ্রনাথকে শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসনে বসিয়ে রেখেছিলেন, এরা শুধু প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন যে আধুনিক বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র-রীতির অনুসরণ করা হবে না। এই সব তরুণেরা প্রকাশ্যে উচ্চ কণ্ঠে রবীন্দ্র-বিরােধী কথাবার্তা বললেও রাত্রে নিজের ঘরে শুয়ে। শুয়ে অনর্গল রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্থ বলে যেতেন, এমন দৃষ্টান্তও আছে। কিছুদিন আগে পরে হলেও রবীন্দ্র-উত্তর যুগের প্রধান সাহিত্যিকগণ প্রত্যেকেই আন্তরিকভাবে রবীন্দ্র-বন্দনা রচেছেন।


নীরা, আমার জন্ম কবচ

এ যে আমার সাড়ে তিন হাতের মস্ত জমিদারি এর নাই কোনও শরিক, নাইকো দখলদারি। দুইখান বাতি জ্বলে আর নেভে, ব্যস্ত সেরেস্তাখানা আসা যাওয়ার দরজা খােলা, তবু ভিতরে যেতে মানা। দুনিয়া যখন হাতছানি দেয়, এক নয়নে কান্দি যে আমারে দুরে ঠেলেছে, তারেই দু’হাতে বান্ধি। দুই কান ধরে সদা টান মারে স্বর্গ-নরকের দ্বারী তবু এ আমারই সাড়ে তিন হাতের মস্ত জমিদারি।


দিকশূন্যপুরের নিশানা

আমার একদিকে গড়বন্দীপুর, আর দিকশূন্যপুর অন্য দিকে। মাঝেমাঝেই আমি গড়বন্দীপুরে আটকা পড়ে যাই। এই যখন একটা বাচ্চা ছেলে অপহরণ আর খুন হয়। আমি গড়ের দেওয়ালে মাথা ঠুকি একজন অপদার্থ মানুষের মতন কিছুতেই বেরুতে পারি না ।