সময়টা সন্ধ্যাকালের আগে। একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি পড়েছে। আকাশ জুড়ে কালো মেঘের আনাগোনা। নদীর ওদিকটায় দেবী বিসর্জন চলছে। দূর থেকে ভেসে আসছে ঢাকের ধ্বনি। নদীর এদিকটায় এমনিতেও কেউ আসে না। নদীর পানির সাথে আউলা বাতাসের কানাকানিতে চারিদিকে যেন এক অপার্থিব পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। রাধিকার মাথা হতে রুপু আশীর্বাদের হাত সরায়। রাধিকার কাজল টানা চোখ রুপুর চোখে নিবদ্ধ। তার ঠোঁট কাঁপে, বিড়বিড় করে সে রুপুকে কিছু বলে, গুড়গুড় মেঘের ডাকে সে কথা আর শোনা যায় না। আবারও বৃষ্টি নামবে। চোখ বন্ধ হয়ে আসে রুপুর। সে অনুভব করে রাধিকার গায়ের মিষ্টি সুবাস তার কাছে এগিয়ে আসছে। রুপু হয়তো নিজেকে ছেড়েই দিতো কিন্তু তখনই তার চোখে ভেসে উঠে জমিদার বাড়ির দোতলার বদ্ধ ঘরের সেই মুহূর্তগুলোর স্মৃতি। সজোরে ধাক্কা দিয়ে রাধিকাকে রুপু ফেলে দেয়। মাটিতে ছিটকে পড়ে রাধিকা। গাছের গুঁড়ির সাথে বারি লেগে তার কপালের ডান পাশ কেটে রক্ত বেরোতে থাকে। রাধিকা রুপুর দিকে তাকায়। সেই চোখে কোন অভিযোগ ছিল না, ছিল কেবল একরাশ বিমূঢ়তা।
ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক ফয়েজ, পায়ের ইনজুরীতে খোঁড়া হয়ে যাওয়ায় চিরতরে স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয় কিশোর বয়সেই ৷ সেই সময়টাতেই পাড়ায় তার সমবয়সী যারা ক্রিকেট খেকে তাদের সাথে খেলার সুযোগের আশায় ঘুরতে থাকা ছোট্ট রাহাতের মাঝে সম্ভাবনা আর স্বপ্ন দেখেছিলো ফয়েজ। ব্যাট কেনার সামর্থ্য না থাকা ছেলেটাকে গাছের ডাল দিয়ে শ্যাডো করতে দেখে অসাধারণ ভঙ্গিতে, লেগ স্পিনের চেষ্টা করতে দেখে। পাড়ার ক্রিকেটে তবু দুই দলের হয়েই ফিল্ডিং করে ছোট্ট রাহাত। নিজের স্বপ্ন রাহাতকে দিয়ে দেখতে শুরু করে ফয়েজ। কিন্তু স্বপ্নযাত্রা এত সহজ নয়। জীবনের সংকটে প্রায়ই সে মুখ থুবড়ে পড়ে। তারপরেও ফয়েজের মতো, রাহাতের মতো স্বপ্নবাজরা বেঁচে থাকতে চায়। একদিন রাহাতদের উপর ভর করে ক্রিকেট বিশ্বে মাথা তুলে দাড়ানোর সংগ্রাম শুরু হয় বাংলাদেশের। পারবে কি ফয়েজ রাহাতকে দিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করতে?