Categories


এক সহস্র এক আরব্য রজনী

পরদিন সুলতান প্রাসাদে ফিরতেই ভাই-এর পরিবর্তন চোখে। পড়ল। খুশি হলেন তিনি। ভাইকে কাছে ডেকে বললেন, আমি শিকারে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তােমাকে বিমর্ষ দেখেছি। তারপর। হঠাৎ কি এমন ঘটেছে যে কারণে তােমার এই পরিবর্তন?। শাহজামান সামান্য ইতস্তত করে একে একে সমস্ত ঘটনা বিবৃত। করলেন। নিজের বেগমের কথা, তাঁর মৃত্যু, মানসিক বিষাদ, তারপর কুৎসিত মুরের সঙ্গে সুলতান বেগমের প্রেমলীলা। নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারলেন না সুলতান। শাহজামান বললেন, আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয় আপনি নিজেই। সব প্রত্যক্ষ করুন। তখনি সুলতান চতুর্দিকে ঘােষণা করে দিলেন তিনি আবার শিকারে। যাবেন।


নিশুতি রাতের মহাত্মা

শীতকাল। অমাবস্যার রাত্তির। দক্ষিণ ভারতের বাগায়াম একটা গ্রাম। চমৎকার এই গ্রামটা মাদ্রাজ শহর থেকে প্রায় একশাে মাইল হবে। এখানে-ওখানে ছােট পাহাড় আর ওটেরি নামে একটা হ্রদ—এই নিয়ে গ্রামটা লােকের মন জয় করেছে। আর আছে একটু দূরে একটা ভাঙা কেল্লা, একটা ছােট শিবমন্দির। শান্ত সুন্দর পরিবেশে দিনকয়েক কাটাবার পক্ষে চমৎকার। এর কয়েক মাইলের মধ্যেই আছে বিখ্যাত তিরুভান্নামালাই মন্দির। বিরাট মন্দির। মহর্ষি রমণের আশ্রম তার কাছে। আমি সেখানে যাব। এই গ্রামের ওপর দিয়েই লােকে সেখানে যায়।


শ্বাপদ ও দ্বিপদ

যে বিস্তৃত বনভূমি উত্তর আমেরিকা ও ক্যানাডার উপর ছড়িয়ে পড়েছে, তার উপর রাজত্ব করছে দুরন্ত শীত। দারুণ ঠান্ডায় নদীর জল জমে বরফ হয়ে গেছে। তরল জলধারার পরিবর্তে দেখা দিয়েছে নিরেট বরফ-ঢাকা পথ। অস্পষ্ট আলাে-আঁধারিতে প্রেতপুরীর প্রহরীর মতাে বরফ-ঢাকা পথের দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে কালাে কালাে গাছের সারি। চারদিকে শুধু বরফ, বরফ আর বরফ। বিশাল বনভূমি এখন তুষারে আচ্ছন্ন মৃত্যুপুরীর মতােই নিস্তব্ধ ভয়ংকর, কোথাও নেই প্রাণের সাড়া.........


বাঙলা শব্দের উৎস সন্ধানে

কেন্তুম ও সতম গুচ্ছভাষাঃ ভাষা থাকলে উপভাষা থাকাই স্বাভাবিক। মূল ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাতেও নিশ্চয়ই উপভাষাগত বিভেদ ছিল। মূল ভাষার তালব্য ‘k' র উচ্চারণ ভেদ থেকে সর্বপ্রথম দুটি উপভাষা সৃষ্টি হ’ল। এই দুটি শাখার নাম কেন্তুম ও সতম। কিন্তু এইরূপ শ্রেণী নির্দেশ করার তাৎপর্য এমন নয় যে, কেন্তম শাখার উপভাষাগুলির মধ্যে পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্পর্ক বজায় আছে অথবা এমনভাবে কিছু মনে করার যুক্তি নেই যে, দুটি কেন্তুম শাখাভুক্ত উপভাষা শতম শাখাভুক্ত কোনাে উপভাষা থেকে অধিকতর নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। বস্তুতঃ মূল তালব্য ধ্বনির দু'ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করেই উপভাষাগুলিকে দুটি শাখায় বিন্যস্ত করা হয়ে থাকে। তবুও মনে রাখতে হবে যে, কেন্তুম ও শতম বিভাগদুটির বৈশিষ্ট্য কারণ নিরপেক্ষ বা স্ব-নির্ভর (unconditional) অর্থাৎ গাণিতিক সূত্রের মতাে অপরিবর্তনীয় এবং দৃঢ়মূল।


অগৌরবে চলিতেছে

মােবাইলে বার্তা এসেছিল, “কবি তােমার কবিতা বলব আজ,” কবিতা প্রেমী মেয়েটি বিদ্রোহী, তবু মিষ্টি গলায় দ্রোহের পাইনি আঁচ। বলেছি আচ্ছা “সে নয় তুমি পােডড়া, কবিতা পড়তে চাইছাে এতেই ধন্য।” কবিতা প্রেমী আদুরে গলায় ডাকে, “কবি, কয়েক লাইন লিখবে, আমার জন্য?” “তােমায় নিয়ে? বেশ তা নয় লিখবাে, প্রেমের কবিতা? না কি বিদ্রোহ চাই?” ম্লান হয়ে ডাকল, বল্ল “কবি!! আমি প্রেমে, ভীষণ ভয় পাই।” আমি কবি বটে এবং প্রকৃতি প্রেমিক, ইশারায় নাচে আবাল বৃদ্ধ নারী, কবিতাপ্রেমীকে পাগলি ডেকে বলি, “হুম্মম...তােমার জন্যে প্রেমের কবিতা!! পারি।”


মানুষ খুন করে কেন

পথটি অতিরিক্ত বনময়। অতিমাত্রায় কুটিল। সেই আরণ্যক কুটিলতা ফণাধরা সাপের মত ওপরে ওঠে, যেন ঋজু হতে। দশদিকেই পাহাড়। এক-একটা বাঁকে, নীচে, উপত্যকাদেশের পাহাড়চূড়াগুলি দেখা যায়-অন্যত্র উর্ধ্বের চূড়াকীর্ণ শূন্যতা। পেছনে পরিত্যক্ত গিরিশীর্ষ আবর্তমান অরণ্যে টুপ করে ডুবে যায়। গভীর এত খাদ এক ক্ষীণ যােগসূত্রে গ্রথিত, বিচ্ছিন্ন এত পাহাড় এক অদৃশ্য যােগসূত্রে গাঁথা, এত দ্রুত এত বিবিধ দিক পরিবর্তন যে, দিগদিগন্ত উচ্চতা বেগ ইত্যাদির আনুষঙ্গিক বনেদি ধারণাগুলি বাসটার ভেতরে ঘুরন্তশান্ত প্রক্রিয়ার মত থরথরায়। কিন্তু যান্ত্রিক কম্পনও নিয়মে বাঁধা।