কোটি কল্পকালের পৃথিবীর বুকে কোটি কোটি বছর ধরেই চলেছে এই লীলা। পাশাপাশি চলেছে অন্যায় আর তার প্রতিবাদ। আজকের মিছিলটা যে বিশেষ একটা কিছু তা বােঝা যাচ্ছে তার দৈর্ঘ্যে, শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না। একবার স্তিমিত হয়ে আসছে আওয়াজ, আবার পিছন থেকে আসছে নতুন আওয়াজের ঢেউ। অবশেষে, অনেকক্ষণের পর হালকা হয়ে এল দল, ফিকে হয়ে এল ধ্বনি, যারা পিছিয়ে পড়েছিল তারা ছুটে ছুটে আসছে, তাদের ফাকে ফাকে অন্য অন্য পথচারীর চেহারা দেখা যাচ্ছে।
আরও কিছু আছে। ধর্ম, শিল্প ও সাহিত্য সম্বন্ধেও আমাদের কিছু কিছু জানিবার সুযােগ আছে। এ বিষয়ে সর্বাগ্রে স্বর্গত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের নাম করিতে হয়। প্রাচীন বাঙলার সাহিত্য এবং বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের স্বরূপ সম্বন্ধে তিনিই সর্বপ্রথম আমাদের সজাগ করিয়াছিলেন। তাহার এবং স্বর্গত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয়ের প্রদর্শিত পথে শিল্প, সাহিত্য, ভাষা ও ধর্ম-সম্পৃক্ত সংবাদ আহরণ ও আলােচনায় স্বর্গত নগেন্দ্রনাথ বসু, গিরীন্দ্রমােহন সরকার, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীযুক্ত জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নলিনীকান্ত ভট্টশালী, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সরসীকুমার সরস্বতী, অর্ধেন্দ্রকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, প্রবােধচন্দ্র বাগচী, নলিনীনাথ দাশগুপ্ত, চিন্তাহরণ চক্রবর্তী, দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, যােগেশচন্দ্র রায়, শ্রীমতী স্টেলা ক্ৰামরিশ প্রভৃতি পণ্ডিত ও মনীষীরা নানাদিকে। উল্লেখযােগ্য উদ্যম প্রকাশ করিয়া বাঙলার ইতিহাসের সীমা ও পরিধি বিস্তৃত করিয়াছেন।
কয়েকটি মানুষকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ব্যাপারে। আর একটু সোচ্চার হচ্ছি। তাদের শীর্ষে প্ৰয়াত বন্ধু কুমার মুখার্জি এবং অমর সান্যাল। কুমার “রোমন্থন” প্রকাশ হওয়া অবধি বর্তমান লেখাটি লিখতে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। দুই কিস্তি প্ৰকাশ হওয়ার পর তিনি চলে গেলেন। আমার নানা অনুল্লেখ্য কাজের সাক্ষী অমর সান্যাল মহা উৎসাহে লেখাটি পড়ছিলেন। যে কিস্তিতে ওঁর কথা লিখেছি, সেটি প্রকাশিত হওয়ার কয়েকদিন আগে তিনিও লোকান্তরিত হলেন। আমার সমস্ত লেখাটি ধাপে ধাপে যাদের মাথায় লোষ্ট্রবৎ নিক্ষেপ করেছি। তাদের মধ্যে প্রথম উল্লেখযোগ্য ঔপন্যাসিক-অধ্যাপক কুণাল বসু এবং তাঁর পত্নী সুস্মিতা। অক্সফোর্ডে ওঁদের বহু শ্ৰান্ত সন্ধ্যাস্মিত মুখে এই অত্যাচার সহ্য করে কেটেছে। আমার স্ত্রীও এই উৎপীড়নের সহ-শিকার ছিলেন। চতুর্থ এবং পঞ্চম যে দুই ব্যক্তি এইভাবে উৎপীড়িত হয়েছেন দুর্ভাগ্যক্রমে তারাও ‘আনন্দবাজার’ সংস্থার কর্মী, ফলে তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা তাদেরও টেলিপ্যাথি মারফত বুঝে নিতে হবে।
রেডিওতে কড়কড় আওয়াজ হচ্ছে। কলকাতা বেতারকেন্দ্র একবার উকি মেরে আবার কোথায় লুকিয়ে পড়ল। তার বদলে ভেসে এল রেডিও পাকিস্তান। তারপর রেডিও পিকিং-এর কণ্ঠস্বর আসরে প্রবেশ করার চেষ্টা করল। রেডিওর বােতাম ঘােরানাে বন্ধ রেখে বিরক্ত ভদ্রলােক এবার প্রকাশের দিকে তাকালেন। সুপ্রকাশ যে বাঙালী তা তিনি আন্দাজ করে নিয়েই বললেন, “এমন দুর্বল রেডিও স্টেশন এই কলকাতা যে ওয়েস্ট বেঙ্গলের বাইরে ধরে কার সাধ্য!”
সত্তর বছর বয়সে আথেন্সের সক্রেটিসকে বিচারকদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযােগ ছিল তিনটি। দেশের প্রচলিত দেবতাদের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন, নতুন নতুন দেবতার প্রবর্তন করার চেষ্টা এবং তৃতীয়টিই মারাত্মক,—তিনি যুবকদের নৈতিক চরিত্র কলুষিত করে তাদের বিপথে চালিত করছেন। আথেন্সের তিনজন খ্যাতিমান পুরুষ তার বিরুদ্ধে অভিযোেগ এনেছিলেন। সে এক বিচিত্র বিচার কাহিনি। পাঁচশাে জন জুরির সামনে বিচার।
পাইনের ওপরে এসে কি দেখা যাচ্ছে? দেখছি সেই বরফ, সেই বনরাজি আর সেই উচু-নীচু পার্বত্য-ভূমি। যা, পাহাড়ের অপর পারে এক জায়গায় ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। জনপ্রাণী-শব্দশুন্য বনভূমির মধ্যে ধোঁয়ার কুণ্ডলী কৌতূহল জাগিয়ে তােলে। আসুন ওখানে গিয়ে নিজেদের কৌতুহল মিটিয়ে আসি।
রাজনীতি ক্রমশ ব্যক্তিগত জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। বিদ্যা বাণিজ্য হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির নামে ছেলেমেয়েদের রােবট তৈরি করা হচ্ছে। স্পেকটেটর স্পাের্টস বিশেষ করে ক্রিকেট যা একটি কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য আর রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয় তা অদ্ভুতভাবে মানুষের মধ্যে মাদকতার সৃষ্টি করছে। তারা ভাবছে প্রতিদিন ক্রিকেট খেলা দেখতে হয় নয়তাে পিছিয়ে পড়তে হয়। ছেলেমেয়েরা বিভ্রান্ত। তারা জীবনে কোনটি অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারছে না। সবাই ভাবছে জয়েন্ট এনট্রান্স পাস করতে পারলেই কেরিয়র তৈরি হয়ে গেল।
রাস্তার একটা ভিখিরি যখন মহাত্মা গান্ধীর বাপ-মা তুলে গালাগাল দেয় আমরা তাকে বেদম মারতে পারি, কিন্তু মেরে ফেলতে পারি না। মহরমের দিন আমার মুসলিম বন্ধু নগ্ন হয়ে শুয়ে থাকে আমি বলি, ওঠ, জামা পর, আমি তাে প্রাপ্তবয়স্ককে জামা পরিয়ে দিতে পারি না। একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকে দেখলাম সেখানে আমার বউয়ের নামে যা তা সব চলছে আমি কি বলব, আমি তাে আর ওদের টেবিল উল্টে দিতে পারি না। আমার বন্ধু হাউহাউ করে কাঁদছিল তার প্রেমিকা চলে গেছে তার বন্ধুর সঙ্গে কী করবে সে? তেরােতলা থেকে তাে আর ঝাপিয়ে পড়তে পারে না।
সূচিপত্র
রাণুর প্রথম ভাগ
* রাণুর প্রথম ভাগ
* বিয়ের ফুল
* অকাল বোধন
* পৃথ্বিরাজ
* ডি-এন-ডব্লুর ব্রাঞ্চ লাইনে
* “গজভুক্ত”
* এক রাত্রি
* হার-জিত
* নোংরা
* কাব্যের মূলতত্ত্ব
* নির্বাসিত
রাণুর দ্বিতীয় ভাগ
* দাঁতের আলো
* বরযাত্রী
* শিক্ষা-সঙ্কট
* যুগান্তর
* বাদল
* শোক সংবাদ
* কুইন অ্যানর তাপস
* নবোঢ়ার পত্র
* ভূমিকম্প
* কৈকলার দাদা
* ননীচোরা
রাণুর তৃতীয় ভাগ
* স্বয়ম্বরা
* দ্রব্যগুণ
* বর ও নফর
* শ্যামল-রাণী
* চিত্ত ও চিত্র
* মধুলিড়
* পূর্ণ চাঁদের নস্টামি
* রংলাল
* ষড়-রত্ন
* কলতলার কাব্য
* জালিয়াত
রাণুর কথামালা
* মোটর -দূর্ঘটনা
* বাঘ
* বিপন্ন
* হোমিওপ্যাথি
* খাঁটির মর্যাদা
* অব্যবহিতা
* ‘কস্মৈ হবিষা বিধেম?’
* ধার্মিক
* আশা
* মাতৃপূজা
* বন্য ও বন্যা
* ছত্রপতি
দু’মাস-ছ’মাসের কথা নয়, পঁচিশ বৎসরের কাহিনী বলিতেছি। বনমালী প্রাচীন হইয়াছেন। কয়েক বৎসর হইতে রােগে ভুগিয়া ভুগিয়া এইবার শয্যা আশ্রয় করিয়া টের পাইয়াছিলেন, আর বােধ হয় উঠিতে হইবে না। তিনি চিরদিনই ভগবৎপরায়ণ ও ধর্মভীরু। মরণে তাহার ভয় ছিল না। শুধু একমাত্র সন্তান বিজয়ার বিবাহ দিয়া যাইবার অবকাশ ঘটিল না মনে করিয়াই কিছু ক্ষুন্ন ছিলেন। সেদিন অপরাহুকালে হঠাৎ বিজয়ার হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে লইয়া বলিয়াছিলেন, মা, আমার ছেলে নেই বলে আমি এতটুকু দুঃখ করিনে। তুই আমার সব। এখনাে তাের।