Categories


টমটমপুরের গল্প

টমটমপুর নামে কোনাে জায়গা কোথাও নেই। টমটমপুর নামে কোনাে জায়গা কোথাও ছিলাে না। আসলে অন্য একটা জায়গার কথা কিছুদিন হলাে বারবার লিখছি, এবার তাই নামটা একটু বদলিয়ে দিলাম। তবে এই নাম বদলের অন্য একটা কারণও আছে। যানবাহন বলতে নৌকো ছাড়া টমটম ঘােড়ার গাড়িই ছিলাে আমাদের অল্পবয়সের সেই শহরের একমাত্র সম্বল। হয়তাে কারাে মনে পড়তে পারে ডুলি বা পালকিও ছিলাে, কিন্তু তার ব্যবহার ছিলাে সীমিত, সংখ্যা ছিল নিতান্তই নগণ্য। অবশ্য যাতায়াত প্রধানত ছিলাে জলপথেই, স্থলপথ প্রায় ছিলাে না বললেই চলে। রেলগাড়ি আমরা ছােটবেলায় চোখেই দেখিনি।


আগুন পাখির রহস্য

সকালবেলা রেডিয়াে খােলা থাকে, কাকাবাবু দু-তিনখানা। খবরের কাগজ পড়েন। কাগজ পড়তে-পড়তে কখনও রেডিয়ােতে ভাল গান হলে শােনেন কিছুক্ষণ, আবার কাগজ-পড়ায় মন দেন। বেলা ন’টার আগে তিনি বাইরের কোনও লােকের সঙ্গে দেখা করেন না। কাকাবাবুর মতে, সকালবেলা প্রত্যেক মানুষেরই দু-এক ঘণ্টা আপনমনে সময় কাটানাে উচিত। জেগে ওঠার পরেই কাজের কথা শুরু করা ঠিক নয়।


কলকাতায় ফেলুদা

মানুষ তার মনের ভাব যতই গােপন করার চেষ্টা করুক না কেন, তার বাইরের ছােটখাটো হাবভাব থেকেই সেটা ধরা পড়ে যায়। কথাটা যখন তােকে বললাম, ঠিক সেই সময়টা তাের একটা হাই। আসছিল। কিন্তু কথাটা শুনে মুখটা খানিকটা খুলেই বন্ধ হয়ে গেল। তুই যদি আমার কথায় উত্তেজিত না হতিস, তা হলে কিন্তু যথারীতি হাইটা তুলতিস—মাঝপথে থেমে যেতিস না।


দশটি কিশোর উপন্যাস

আমাদের মফস্বল শহরে বরাবরই খুব শীত পড়ত। একেই তাে জায়গাটা ছিল বিহারের পাহাড়ি এলাকা, তার ওপর আমাদের শহরের আশেপাশে ছিল যত রকম বনজঙ্গল। ছােটনাগপুর পার্বত্য এলাকা বলতে ভূগােল বইয়ে যা বােঝাত আমরা তার চেয়েও বেশি বুঝতাম, অন্তত শীতকালে পার্বত্য এলাকার দৌরাত্মটা বেশ হাড়ে হাড়ে অনুভব করতাম। তবু একথা ঠিক, আমাদের মফস্বল শহরটি ছিল খুব সুন্দর।


আমি আমার মৃত্যুর পর স্বাধীনতা চাই না

জোরা নীল হার্সটন হারলেম রেনেসাঁস’ সময়ের একজন প্রধান বুদ্ধিজীবী। তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ নিগ্রো অভিব্যক্তির চরিত্র থেকে কিছু সারাংশ এখানে তুলে ধরছি যাতে আফ্রিকান আমেরিকান কবিদের লেখা বুঝতে সুবিধে হয়। আমেরিকায় একটা বিখ্যাত টিভি সিরিয়াল ছিলনাম ‘টুইলাইট জোন’। তার একটা অংশের শুরু হচ্ছে একজন দারুণ সুন্দরী সাদা, সােনালি চুল, নীল চোখ মেয়ের অপারেশন হচ্ছে। তাকে ঘিরে রেখেছে কিছু মুখে সাদা কাপড় লাগানাে ডাক্তারের দল।


রবীন্দ্রনাথকে নিবেদিত

তেমনি তাঁর সমসাময়িক অনেক লেখকও রচনা করেছেন তাঁর সম্পর্কে প্রশস্তি গাথা। উনিশ শশা তিরিশের দশকে বাংলা সাহিত্য তাঁর বিরুদ্ধে এক প্রকার আন্দোলন শুরু করে। তৎকালীন তরুণদের এই যে রবীন্দ্র-বিরােধিতা, তা কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে হেয় করবার জন্য। মমাটেই নয়, এরা সকলেই রবীন্দ্রনাথকে শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসনে বসিয়ে রেখেছিলেন, এরা শুধু প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন যে আধুনিক বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র-রীতির অনুসরণ করা হবে না। এই সব তরুণেরা প্রকাশ্যে উচ্চ কণ্ঠে রবীন্দ্র-বিরােধী কথাবার্তা বললেও রাত্রে নিজের ঘরে শুয়ে। শুয়ে অনর্গল রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্থ বলে যেতেন, এমন দৃষ্টান্তও আছে। কিছুদিন আগে পরে হলেও রবীন্দ্র-উত্তর যুগের প্রধান সাহিত্যিকগণ প্রত্যেকেই আন্তরিকভাবে রবীন্দ্র-বন্দনা রচেছেন।


যার যা হারিয়ে গেছে

তারপর ধর্ম বক বললেন, বৎস, 

তােমাকে আমি আরও তিনটি প্রশ্ন করব। 

বলাে তাে, মানুষের কোন কষ্ট মুখের ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না।

কিংবা বলতে গেলেও কেউ বুঝবে না? 

মুহূর্তমাত্র চিন্তা না করে যুধিষ্ঠির বললেন, 

কোনাে কবি যখন ভাব প্রকাশের জন্য প্রকৃত ভাষা খুঁজে 

পায় না তখন তার যে কষ্ট তা দ্বিতীয় কোনাে ব্যক্তির পক্ষে।

সহমর্মী হওয়া সম্ভব নয়।

 


নীরা, আমার জন্ম কবচ

এ যে আমার সাড়ে তিন হাতের মস্ত জমিদারি এর নাই কোনও শরিক, নাইকো দখলদারি। দুইখান বাতি জ্বলে আর নেভে, ব্যস্ত সেরেস্তাখানা আসা যাওয়ার দরজা খােলা, তবু ভিতরে যেতে মানা। দুনিয়া যখন হাতছানি দেয়, এক নয়নে কান্দি যে আমারে দুরে ঠেলেছে, তারেই দু’হাতে বান্ধি। দুই কান ধরে সদা টান মারে স্বর্গ-নরকের দ্বারী তবু এ আমারই সাড়ে তিন হাতের মস্ত জমিদারি।


দিকশূন্যপুরের নিশানা

আমার একদিকে গড়বন্দীপুর, আর দিকশূন্যপুর অন্য দিকে। মাঝেমাঝেই আমি গড়বন্দীপুরে আটকা পড়ে যাই। এই যখন একটা বাচ্চা ছেলে অপহরণ আর খুন হয়। আমি গড়ের দেওয়ালে মাথা ঠুকি একজন অপদার্থ মানুষের মতন কিছুতেই বেরুতে পারি না ।


কবিতাসমগ্র ৪

দুলে দুলে দুলে দুলে মাটি ওঠে ফুলে ফুলে বাড়ি যাও বাড়ি যাও বাড়ি যাও বাড়ি যাও, দেখাে হাতলণ্ঠনে আছে কিনা কেরােসিন। দেখাে পথ দেখে চলাে, পেটে খিদে বড় খিদে, বাড়ি গেলে সব পাবে লেবু আছে নুন আছে, কঁচা লঙ্কাও গাছে, আছে আছে সব আছে। নেই নেই, পান্তার হাঁড়িতে যে হু হু হাওয়া, কেন এত হু হু হাওয়া ফুটো হাঁড়ি চোখ আঁকা, জল ছছাটে আঁকাবাঁকা চৌকাঠে ভাঙা শাখা নেই নেই ভাত নেই, আমানি ও চিড়ে নই, গুড় নেই খই নেই। কী খাবে গাে খাবেটা কী, খিদে জ্বলে দাউ দাউ পেটে কিল পেটে কিল বউ ছেলে কোথা গেল, ছােট মেয়ে কঁদুনিটা, সেই মেয়ে কোথা গেল ঘরে নেই কেউ নেই, আলাে নেই ঘর নেই, দেয়ালের চকখড়ি দাগ নেই দাগ নেই, বসুধারা মুছে গেছে, ঘরভরা ভাঙা কাচে তালগাছে কেউ নেই, পুকুরেও কেউ নেই,