দাদীমা আমার খুবই প্রিয় মানুষ। মজার মজার সব গল্প আর কাহিনী জানেন। প্রতি রাতে তিনি একটি করে গল্প শােনান। যেনাে তেনাে গল্প নয়, কোনাে রাজা-রাণী আর পাইক-পেয়াদার গল্প নয়। দুষ্ট কোনাে ভূত-প্রেতের গল্প নয়। নয় কোনাে প্রতারক যাদুকরের গল্প। সব জীবন থেকে নেয়া সুন্দর সুন্দর গল্প। জীবন
রাঙানাের গল্প। জীবন সাজানাের গল্প। যে গল্প আমার পৃথিবী সাজিয়ে দেয়, যে গল্প আমার পরকাল রাঙিয়ে দেয়।
ওমর প্রতিদিন অধির আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে। কখন দাদীমা আসবেন আর নতুন নতুন গল্প শােনাবেন?...
ওমর আজ রাতের খাবার দ্রুত খেয়ে নিলাে। আজ যে তাকে অনেক বড় গল্প শুনতে হবে। অবশেষে মৃদুপায়ে দাদীমা ঘরে
আরবি ভাষায় যাকে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয়, বাংলায় তাকে বলা হয় অন্ধকার যুগ’ । প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব-পূর্ব আরবদেশকে অন্ধকার যুগের আরব বলে অভিহিত করা হয়। সে যুগের আরবের লােকেরা ছিল বাধাবন্ধনহীন এক উচ্ছল ও অসভ্য জাতি। মূর্তিপূজার ন্যায় ঘূণিত অপকর্ম ছিল তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেজন্য তাদের পৌত্তলিকও বলা হয়। তাদের মনগড়া দেবতার মূর্তি বানিয়ে তারা তার উপাসনা করত। এই পৌত্তলিকতা তাদের সমস্ত মানবীয় গুণাবলী ও সুকুমারবৃত্তিকে ধ্বংস করে ফেলেছিল এবং সেই সাথে তাদের মধ্যে অদ্ভুত সব কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল। দুনিয়ার সমস্ত বস্তু উপকারী-অপকারী সমস্ত বস্তুকেই তারা দেবতাজ্ঞানে পূজা করত। যেমন- পাথর, বৃক্ষ, চাদ, সূর্য, পাহাড়, সমুদ্র সমস্ত কিছুই ছিল তাদের আরাধ্য। আরবরা দৈত্য-দানব, ভূত-প্রেত ইত্যাদি অদৃশ্য বস্তুসহ তাদের পূর্বপুরুষদেরও মূর্তি বানিয়ে পূজা করত। এমন কি, যে জ্বিন।
শয়তানের কথা বিশ্বাস করে বিবি হাওয়া নিজে এই ফল খেলেন এবং হযরত আদম (আঃ)-কেও খাওয়ালেন। তা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের শরীর হতে বেহেশতের পােশাক অপসৃত হলাে। আল্লাহর নিষেধ অমান্য করায় তিনি তাদের উপর খুবই অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাদেরকে বেহেশত হতে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করলেন। হযরত আদম (আঃ) সিংহল দ্বীপে এবং বিবি হাওয়া জেদ্দায় পড়লেন। তাঁরা দু’জনে তাদের ভুল বুঝতে পারেন এবং করুণাময় আল্লাহ তাআলার কাছে তিনশত বৎসর ধরে আকুলভাবে কান্নাকাটি করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। হযরত আদম (আঃ) আকাশের দিকে তাকিয়ে মােনাজাত করার সময় দেখলে আরশে লেখা আছে 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য নাই এবং মুহাম্মদ প্রেরিত রাসূল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তা পাঠ করলেন। তার মহিমায় দয়ালু আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রার্থনা কবুল করলেন। তখন জিবরাঈল (আঃ) তাঁর নিকট এসে বললেন, “হে আদম! হজ্জ
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নবী-রাসূলদের রোমঞ্চকর জীবন কাহিনীর মাধ্যমে মানবজাতিকে জীবন সম্পর্কে সঠিক দিক-নির্দেশনা দান করা হয়েছে। এই কাহিনীগুলো ছোট্ট সোনামনিদের উপযোগী করে সিরিজ বই আকারে মুসলিম ভিলেজ ধারাবাহিক প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে এ থেকে সোনামনিরা নৈতিক শিক্ষা লাভ করতে পারে। “ইব্রাহিম (আঃ) কিভাবে আল্লাহকে চিনতে পারলো” বইটি হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কিভাবে আল্লাহর সন্ধান পেয়েছেন।
কুরআন করীমে শতাধিক স্থানে সালাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সালাতের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হয়নি। বিভিন্ন স্থানে রুকু করার বা সেজদা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ‘যেভাবে তোমাদের সালাত শিখিয়েছি সেভাবে সালাত আদায় করা।’ কিন্তু কুরআন করীমের কোথাও সালাতের এই পদ্ধতিটি শেখানো হয়নি। ‘সালাত’ বা ‘নামায’ কী, কথন তা আদায় করতে হবে, কখন কত রাকায়াত আদায় করতে হবে, প্রত্যেক রাক‘আত কী পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে, প্রত্যেক রাক‘আতে কুরআন পাঠ কিভাবে হবে, রুকু কয়টি হবে, সিজদা কয়টি হবে, কিভাবে রুকু ও সেজদা আদায় করতে হবে…ইত্যাদি কোনো কিছুই কুরআনে শিক্ষা দেওয়া হয়নি।
গিরিশচন্দ্র সেনের মূল অনুবাদের শতবর্ষকে সামনে রেখে ঢাকার খােশরােজ কিতাব মহল থেকে ১৯৮১ সালে একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল । নিউজপ্রিন্টে ছাপা এ সংস্করণটিকে মূলানুগ মনে করা যেতে পারে । কিন্তু এ সংস্করণটি এখন দুষ্প্রাপ্য। ঢাকার দিব্য প্রকাশ থেকে ২০০৮ সালে একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। এ সংস্করণটি আমার সামনে ছিল। কিন্তু যাচাই করে দেখার সময় হয়নি। কিন্তু উপরিউক্ত দুটি (খােশরােজ ও দিব্য প্রকাশ) সংস্করণে গিরিশ সেনের দেওয়া কোরআনের নাম অনুসৃত হয়নি। দুটোতেই কোরআন শরীফ নাম দেওয়া হয়েছে। গিরিশ সেন বঙ্গানুবাদে প্রকৃতপক্ষে কী নাম দিয়েছিলেন তার প্রামাণ্য দলিলের ছবি আমরা এই সংস্করণের প্রথম পৃষ্ঠায় ছেপে দিয়েছি। এতে দেখা যাচ্ছে, গিরিশ সেন তার অনুবাদিত কোরআনের নাম দিয়েছিলেন, কোরাণ শরিফ। বিশ্বসাহিত্য ভবন থেকে ২০১৪ সালে প্রকাশিত এই সংস্করণটি এসব দিককে গুরুত্ব দিয়ে সম্পাদনা করা হয়েছে।
সূচিপত্র
প্রথম অধ্যায় : আমরা কেমন মুসলমান?
দ্বিতীয় অধ্যায় : মানব দেহের গুপ্ত ক্যান্সার; নামাজ কবুলের প্রতিবন্ধক
তৃতীয় অধ্যায় : শয়তানের ওয়াছওয়াছা ও নামাজ কবুল না হওয়া
চতুর্থ অধ্যায় : উপার্জন, ছয়টি মারাত্মক গুনাহ ও নামাজ
পঞ্চম অধ্যায় : বিপদমুক্তি, নামাজ এবং নাফরমানির পরিণতি
ষষ্ঠ অধ্যায় : নামাজ ও পর্দা
সপ্তম অধ্যায় : জাহান্নামের খুঁটি স্থাপিত, নামাজ-হেলাওয়াত বিতাড়িত
অষ্টম অধ্যায় : নামাজের স্বাদ পেতে দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচুন
নবম অধ্যায় : বিদআতীর নামাজ-রোজা কবুল হয় না
দশম অধ্যায় : মাতা-পিতা বনাম জান্নাত-জাহান্নাম
একাদশ অধ্যায় : কবরের ভয় কেন আসে না?
দ্বাদশ অধ্যায় : নামাজী খারাপ হয় কিভাবে
ত্রয়োদশ অধ্যায় : মুসলমানের অভাবটা কি?
চতুর্দশ অধ্যায় : ঈমান ও সুখ-শান্তি
রচনা ও তাসনীফ একটি কঠিন কাজ, বিশেষত তা যদি হয় নেসাবী কিতাবের তাসনীফ। আর নেসাবের প্রাথমিক কিতাবসমূহ তৈয়ার করা তাে কঠিন নয়; সুকঠিন। আল্লাহ তায়ালার শােকর, তিনি হযরত মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ দামাত বারাকাতুহুমকে এই সুকঠিন কাজের তাওফীক দান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে আরাে তাওফীক দান করুন। মােকাম্মাল ও দায়েমী তাওফীকের নেয়ামত দ্বারা মালামাল করুন। আমীন।
একসময় মুসলিমরা ছিল সবার ওপরে। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যে সময়ে আমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নাহ আঁকড়ে ধরেছিলাম, সে সময়ে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সম্মানিত করেছেন। আর যখন আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুতে সম্মান খুঁজেছি, রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নাহর চেয়ে অন্য কিছুকে শ্রেষ্ঠ ভেবেছি, তখন পদে পদে লাঞ্ছিত হয়েছি। . রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, "সামনে তোমাদের জন্য রয়েছে ধৈর্য্যের সময়। সে সময় ধৈর্য্য অবলম্বন করা জ্বলন্ত অঙ্গার ধরে রাখার মতোই কঠিন হবে। (সে সময়ে) যারা ভালো কাজ করবে, তারা পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ পুরস্কার পাবে।’ জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ?’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তোমাদের পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ।’ (আবু দাউদ, হাদিস নংঃ ৪৩৪১) কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, ‘তারা হচ্ছে সেসব ব্যক্তি, যারা আমার সুন্নাহকে জীবিত করবে এবং মানুষকে তা শেখাবে’।” . একজন মুসলিম হিসেবে তাই আমাদের সবার কাছে সুন্নাহর গুরুত্ব স্পষ্ট। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদিসের মাধ্যমে আমরা এটাও বুঝতে পেরেছি; ফিতনার সময়ে সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা, মানুষকে ভুলে যাওয়া সুন্নাহ স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং হারানো সুন্নাহকে জীবিত করার মর্যাদা কতোখানি। ঈমানের দাবীদার কোনো মুসলিমই এটা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হারানো সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করার তাড়না থেকেই 'হারিয়ে যাওয়া মুক্তো' বইটির জন্ম। আশা করব, এ বইটি পড়ে সবাই সুন্নাহকে অন্যভাবে দেখতে শিখবেন। ভালোবাসতে শিখবেন। তারা বুঝতে শিখবেন, সুন্নাহ মানে শুধু যোহরের আগের চার রাকাত কিংবা মাগরিবের পর দুই রাকাত সালাত নয়। সুন্নাহ হতে পারে দুপুর বেলা ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা। কোথাও পরিষ্কার মাটি দেখলে খালি পায়ে হাঁটা। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাতের বেলা প্রিয়তমার সাথে হাঁটা। তার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা।
নবি-রাসূলগণ যেই দৃষ্টি নিয়ে দুনিয়াকে দেখতেন তা সবচেয়ে বেশি যারা মনে প্রাণে আত্মস্থ এবং উপলব্ধি করেছিলেন তারা হচ্ছেন সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইন। আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেই গিয়েছেন উম্মতের সেরা প্রজন্ম হচ্ছেন নবির সাহাবারা। উম্মতের সেরা প্রজন্ম হিসেবে, কী এমন দৃষ্টিভঙ্গি তারা লালন করতেন যে দুনিয়াতে থাকা অবস্থায়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। ১৪০০ বছর পরে আজকের এই যুগে আমরা যদি ইসলামকে উপলব্ধি করতে চাই তবে অবশ্যই জানতে হবে সাহাবিরা ঠিক কোন চোখে এই দুনিয়াকে দেখেছেন, কোন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। নবি-সাহাবিদের চোখে এই দুনিয়া ঠিক কেমন ছিল এই বিষয়কে কেন্দ্র করে সালাফদের মাঝে যারা কিতাব রচনা করে গিয়েছেন তাদের মাঝে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল অন্যতম। তার রচিত সাড়ে এগারো শত বছর পূর্বের "কিতাবুয যুহদ" এর অনুবাদ হিসেবে মাকতাবাতুল বায়ান থেকে ইতোপূর্বেই প্রকাশিত হয়েছে প্রথম খন্ড "রাসূলের চোখে দুনিয়া"। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আসছে দ্বিতীয় পর্ব "সাহাবিদের চোখে দুনিয়া"। এই খন্ডে বিখ্যাত সাহাবিদের জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি জানার পাশাপাশি জানা যাবে, দুনিয়াকে কোন চোখ দিয়ে দেখার মাঝে এই উম্মতের সফলতা, দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ নিহিত সেই রুপরেখা।
মধ্যরাতের পর কয়েকজন পুলিশ মুহাম্মদ ও আবদুল্লাহকে নিয়ে আমার কাছে এল। তারা জানাল, আপনার দুই ছেলেকে এখনই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনি আগামীকাল ছাড়া পাবেন। আমি আমার দুই ছেলেকে বিদায় জানালাম, তারা চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর আরও কজন পুলিশ এল। তাদের সঙ্গে ছয়জন আরব বন্দী। তাঁদের কয়েকজনকে আমি আগে থেকে চিনতাম।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, সেই রাতে পাকিস্তানি পুলিশ আরও প্রায় ১০ জন আরবকে তাঁদের ঘর থেকে গ্রেপ্তার করে। তারা পাকিস্তান সরকারের অনুমােদিত দাতব্য সংস্থায় কাজ করতেন। তাদের সবার বৈধ কাগজপত্র ছিল। আটককৃত ১০ জনের ৬ জনকে আমার সঙ্গে একই সেলে রাখা হয়। বাকিদের রাখা হয় অন্য জায়গায়।
আমার জীবনের বড় একটি অংশ কেটেছে আফগানিস্তানে, যেখানে অধিকাংশ মানুষই মুসলমান। তাই ইউরােপ বা আমেরিকার মানুষ ইতিহাসকে যেভাবে চিনে, সেখান থেকে আমি একটু ভিন্নভাবে ইতিহাসকে জানার ও বােঝার সুযােগ পেয়েছি। যদিও আফগানিস্তানের সেই স্মৃতিগুলাে আসলে আমার জীবনের একেবারের গােড়ার দিকের কথা, যখন আমার নিজের ভাবনাগুলােই খুব একটা পূর্ণতা পায়নি। সেই সময়গুলােতে আমি ইতিহাস পড়তাম মূলত আনন্দ পাওয়ার জন্যই। আফগানিস্তানে সেই সময়ে স্থানীয়ভাবে ফার্সি ভাষার প্রচলন বেশি ছিল। আর ফার্সি ভাষায় তখন কিছু নির্দিষ্ট পাঠ্যবই ছাড়া তেমন কোনাে মানসম্মত ইতিহাসের বই পাওয়াও যেত না। তখনও পর্যন্ত আমি ভালাে বই বলতে যা পড়েছি, সেগুলাে আসলে ইংরেজীতে লেখা। ছােটবেলায় আমি ইতিহাসের উপর যেসব বই পড়েছিলাম, তার মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় বই ছিল ভি ভি হিলয়্যারের লেখা চাইল্ডস হিস্টোরি অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড'। তবে বড় হয়ে যখন বইটি আমি পুনরায় পড়ার সুযােগ পাই, তখন আর তেমন ভালাে লাগেনি। কারণ, আমার চিন্তাগুলাে তখন আগের তুলনায় বেশ পরিনত হওয়ায় আমি বেশ ভালােভাবেই বুঝতে পারছিলাম, আমার ছােটবেলার ইতিহাসের সেই প্রিয় বইটি আসলে ইউরােপীয় মানসিকতায় লেখা। বইটির পাতায় পাতায় বর্ণবাদের কুৎসিত প্রভাবও আমি তখন অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। ছােটবেলায় এই বইটি পড়ার সময় এই ব্যাপারগুলাে বুঝতে পারিনি কারণ আমার চিন্তা তখন খুব একটা পরিপক্ক ছিল না। তাছাড়া হিলয়্যারের গল্প বলার ধরনটাও ছিল খুবই হৃদয়গ্রাহী ও আকর্ষণীয়; যা আমাকে খুব অল্পতেই আকর্ষণ করেছিল। তখন আমার বয়স নয় কি দশ। ইতিহাসবিদ আরনল্ড টয়েনবি আমাদের ছােট্ট গ্রামটিতে এসেছিলেন। আমাদের গ্রামের নাম ছিল লস্করগাঁও। সম্ভবত গ্রামেরই কেউ তখন তাকে আমার কথা বলেছিল। হয়তাে বলেছিল এই গ্রামে একটি ছােট্ট ছেলে আছে, যার ইতিহাস নিয়ে বেশ আগ্রহ আছে। এই কথা শুনে টয়েনবি আমাকে তাঁর সাথে চা খাওয়ার দাওয়াত দেন। আমি সানন্দে সেই দাওয়াত কবুল করে কাছে যাই এবং মুগ্ধ নয়নে ব্রিটিশ সেই বৃদ্ধের সাথে কিছুটা সময় কাটাই।
কবরে অবস্থানকালীন জীবন এমনই হবে, থাকবে না সূর্যের কিরণ না চাঁদের আলাে, না থাকবে কোন তারকারাজির আলাে, না কোন ইলেকট্রিক বাল্বের আলাে, না কোন সাধারণ বাতির আলাে, আর না চোখে পড়বে | কোন জোনাকীর ঝলক। তখন চারিদিক থেকে নানান সমস্যায় হতে হবে দিশাহারা। পৃথিবীর জীবন থেকে সে জীবন যে কত ভয়ংকর হবে তা কল্পনারও বাইরে। পৃথিবীর জীবনে বিপদ-আপদে, সংকট-সমস্যায় কারাে।