চল্লিশ-চল্লিশটা বছর ধরে এই আমাদের সাথেই ছিল তার ওঠাবসা। জন্মের পর আমাদের শিশু-বাচ্চাদের মতােই সে বেদুইনদের ঘরে বড় হলাে, হাঁটতে শেখার পর এই আমাদেরই মাঠে-প্রান্তরে মেষ চড়ালাে, বয়স আরেকটু বাড়তেই তার চাচার কাফেলায় বাণিজ্য করতে সিরিয়া গেল—ঠিক যেভাবে আমরা যাই। আমাদেরই মেয়ে খাদীজাকে বিয়ে করে সংসারী হলাে, আমাদেরই ঘরে নিজের মেয়ের বিয়ে দিল—একদম আমাদের কাছের মানুষ ছিল এই মুহাম্মাদ।
জীবনটিকে শুদ্ধ পবিত্র করে গড়ে তুললেই সত্যস্বরূপ ঈশ্বর বা আত্মা আছেন এটি অনুভব করা যায়। ত্যাগ, পবিত্রতা, সংযম অভ্যাসে জীবন শুদ্ধ হয়, পবিত্র হয়। মূল কথা ত্যাগ’ বা অনাসক্তি। প্রসঙ্গক্রমে ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের উক্তি স্মরণ করতে পারি। এই ত্যাগ বা অনাসক্তির কথা বােঝাতে গিয়ে তিনি বলেছেন : “দশবার গীতা উচ্চারণ করলে যা হয় তাই গীতার মূলকথা।” বর্ণ বিপর্যয়ের | ফলে দশবার উচ্চারণে ‘গীতা’ শব্দটি ত্যাগী’ হয়ে যায়। ত্যাগী’ বা ‘তাগী’ একই অর্থ প্রকাশ করে। এইটি গীতার প্রধান কথা।
আত্মবিস্মৃতি এবং স্বল্পস্মৃতির এই শতাব্দীতে স্বামী বিবেকানন্দ বহু বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আজও কেমন করে সংখ্যাতীত মানুষের মনের মধ্যে এমনভাবে বেঁচে রইলেন, তা এক পরমবিস্ময়। এর একটা কারণ বােধ হয় তার স্বপ্ন ও বক্তব্যগুলির অফুরন্ত প্রাণশক্তি। তার ছােট ছােট , কথাগুলিও সব শ্রেণির মানুষের মনে আজও বিস্ময় জাগায়, কখনও কখনও বুকে আগুন ধরায়। অনেকের মনে পড়ে যায়, অতি সামান্য সময়ের জন্য তিনি বেঁচেছিলেন, কিন্তু তারই মধ্যে কপর্দকশূন্য অবস্থায়। বিশ্বের সুদূরতম প্রান্তে পৌছে ভিন্ন মতের মানুষের মুখােমুখি হতে তিনি কখনও ভয় পাননি।