সকলের চেয়ে কাজ বাড়ে পূজো-আচ্চার দিনে—এ বাড়িতে বারাে মাসের বারােটা - পূর্ণিমাতে নিয়মিত ভাবে সত্যনারায়ণের সিন্নি হয়। গৃহদেবতা শালগ্রামের নিত্যপূজা তাে আছেই। তা ছাড়া লক্ষ্মীপূজা মাসে একটা লেগেই থাকে। এসব দিনে সংসারের দৈনিক বাসন বাদে পূজোর বাসন বেরােয় ঝুড়িখানেক। এঁদের সংসার অত্যন্ত সাত্ত্বিক গোঁড়া হিন্দুর সংসার পুজো-আচ্চার ব্যাপারে পান থেকে চুন খসবার জো নেই। সে ব্যাপারে দেখাশুননা করেন জ্যাঠাইমা স্বয়ং। ফলে ঠাকুরঘরের কাজ নিয়ে যাঁরা খাটাখাটুনি করেন, তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে।
লাইব্রেরি একটি জনহিতকর প্রতিষ্ঠান। এটি সমাজের সকল স্তরের সকল শ্রেণীর মানুষজনকে সেবা প্রদান করে। স্বাক্ষরতা থেকে শুরু করে শিক্ষা জগতের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সর্বস্তরেই গ্রন্থাগার উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে। সমাজের সার্বিক উন্নয়নে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এগুলি সবই সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে চিহ্নিত। এগুলি সমাজে বিভিন্নভাবে অবদান রাখে। তেমনি সমাজের প্রতি গ্রন্থাগারের অবদানের কথা স্মরণ করে এটিকেও সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলা চলে।
ওদের সরল বিশ্বাস দেখে মায়া হত। যে কোনও বিবাহিত মেয়েই সারা জীবন ধরে যেসব জিনিস কাছে নেই, থাকবার নয়, তাদের বাদ দিয়ে কাজ চালিয়ে যায়। কোনও বাড়িতে এমন পুরুষ দেখলাম না যে তাদের ধরবার সাধ্যি রাখে। ডিম বাদ দিলে যা কখনওই হবার নয়, মেয়েরা হামেশাই ডিম বাদ দিয়ে তাই করে নেয়— একথা পুরুষ ছাড়া সবাই মানে। আবার বলে কিনা মেয়েদের বুদ্ধি কম। সত্যি কথা বলতে কী, এই যে পুরুষানুক্রমে মেয়েদের বুদ্ধিহীনতার প্রবাদ চলে আসছে, এতে মেয়েদের কম সুবিধে হচ্ছে না। তা ছাড়া বেজায় বুদ্ধি না থাকলে মান্ধাতার আমল থেকে কেউ বােকা সেজে থাকতে পারত না। যাকগে, এখন চাকরে মেয়েদের কথাই হােক।
অনেকে কমলাকান্তকে পাগল বলিত। সে কখন কি বলিত, কি করিত, তাহার স্থিরতা ছিল না। লেখাপড়া না জানিত, এমন নহে। কিছু ইংরেজি, কিছু সংস্কৃত জানিত। কিন্তু যে বিদ্যায় অর্থোপার্জন হইল না, সে বিদ্যা কি বিদ্যা? আসল কথা এই, সাহেব সুবাের কাছে যাওয়া আসা চাই। কত বড় বড় মূখ, কেবল নাম দস্তখত করিতে পারে,—তাহারা তালুক মুলুক করিল—আমার মতে তাহারাই পণ্ডিত। আর কমলাকান্তের মত বিদ্বান, যাহারা কেবল কতকগুলাে বহি পড়িয়াছে, তাহারা আমার মতে গণ্ডমূখ।
নিজের জীবনকালের কথায় নিজের জীবনকে গৌন করে কালকে বড়ো করে শৈশবের কথা এবং কৈশোরের কথা লিখে সাহিত্য-জীবনের কথা লেখার সংকল্প যখন করেছিলাম তখন এ কাজ যে কত কঠিন তা ভেবে দেখিনি। লিখতে বসে মনে হচ্ছে এমন কঠিন কাজে হাত না দেওয়াই ভালো ছিল। সহজাত লিখনক্ষমতায় এমন কঠিন কাজকে সহজ করে তুলেছেন তিনি। উম্মোচিত হয়েছে তাঁর সৃজনজীবনের অন্দরমহল। সেই সঙ্গে, বিগত শতকের তিরিশের দশকের শুরু থেকে পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ-আমাদের জাতীয় জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই সময়পর্বকে চিনে নেবার আয়াসেও সহযোগ দান করে এই আত্মচরিতমূলক গদ্য।
‘তিন জোড়া লাথির ঘায়ে রবীন্দ্র-রচনাবলী লুটোয় পাপােশে। এক সময় এরকম আমরাই লিখেছিলাম। আমরা মানে? পঙক্তিটি রচনার মতন দুষ্কর্ম আমারই, কিন্তু যেহেতু ছ’খানা পায়ের উল্লেখ আছে, তাই সমবেত কণ্ঠস্বরও বলা যেতে পারে। ষষ্ঠ দশকের গােড়ার দিকের রচনা, রবীন্দ্রনাথের তিরােধানের পর দুটি দশক পার হয়ে গেছে, তবু বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি অতিমাত্রায় উপস্থিত। তা তাে তিনি থাকবেনই, কিন্তু এমন একটা রবীন্দ্র ভাবধারা প্রসারিত হয়েছিল,