সূচিপত্র
*দৃষ্টি ও স্পর্শ : পৃথিবী ও নভোমণ্ডল
*কি ঘটে এবং কি পর্যবেক্ষণ করা হয়
*আলোকের বেগ
*ঘড়ি আর ফুটরুল
*স্থান-কাল
*বিশিষ্ট অপেক্ষাবাদ
*স্থান-কাল অন্তর
*আইনস্টাইনের মহাকর্ষীয় বিধি
*আইনস্টাইনের মহাকর্ষীয় বিধির প্রমাণ
*ভর, ভরবেগ, শক্তি এবং ক্রিয়া
*প্রসারমান মহাবিশ্ব
*প্রচলিত রীতি এবং প্রাকৃতিক বিধি বল-এর অবলুপ্তি
*পদার্থ কি
*দার্শনিক ফলাফল
* বাট্রান্ড রাসেলের সংক্ষিপ্ত জীবনী
আহমাদ মোস্তফা কামাল ঘরবসতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ্য গল্পগ্রন্থে কুশলী কলমে তুলে ধরেছেন সমাজের নানা বৈকল্য ও বিকার, অসুখ ও স্খলনের গল্প। মানুষের মনের নিভৃতে আলো ফেলে ছেঁকে এনেছেন প্রেম, স্বপ্ন ও ভালো লাগার নিকষিত অনুভূতিগুলো। তাঁর গল্পে বাস্তব জটিল , বাস্তবের প্রকাশ জটিলতর। মানুষের স্বপ্ন বাস্তবের আঘাতে হারিয়ে যায়, প্রেম দিগভ্রান্ত হয়, প্রাপ্তির মুহূর্ত ঢুকে পড়ে অপ্রাপ্তির অঞ্চলে। যাত্রাদলের এক সদস্য অতীত স্মরণ করে কাঁদেন আশ্চর্য কান্না। স্বপ্নের আঘাতে কাতর মানুষের ওপর রূঢ় বাস্তবের চাবুক পড়ে। বিজ্ঞাপনের জৌলুশমাখা জগতে স্ত্রীকে হারিয়ে কেউ উৎকল্পনার হাত ধরে পরিত্রাণের পথে নামে। অনিদ্রায় আক্রান্ত একজন এক রাতে প্রেমের সন্ধান পায় । তরুণ বিপ্লবী পরীক্ষার মুহূর্তে তার আদর্শ হারিয়ে ফেলে। এক ঘোর লাগা মানুষ প্রকাশ্যে স্ত্রীর কাছে প্রেমানুভূতি জানাতে গিয়ে ডেকে আনে সর্বনাশ। এক শহরে অচেনা এক লোক এসে তার স্ফিংক্স -সদৃশ প্রশ্নে মানুষের সব হিসাব নিকাশ এলোমেলো করে দেয়।
কোদালটা সহজেই পেয়ে গেছি, বাবা। গােয়ালঘরের পিছন দিকটায় পড়েছিল। সঙ্গে ভাঙাচোরা একটা চাঙারি। চাঙারি আমার দরকার নেই। আমার দরকার ছিল কোদাল। এই কোদাল দিয়ে গােয়ালঘরের ওদিককার গােবর আর ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে কদম। চাঙারি ভরে সেই আবর্জনা নিয়ে ফেলে আসে বাঁশঝাড়ের ওদিকটায়। দিনে দিনে ভঁই হয় জিনিসগুলাে। তারপর সার হিসাবে ফল ফলারি আর সবজি বাগানে ব্যবহার করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর যে চার দশক কাল অতিক্রান্ত হয়েছে, সেই সময়সীমার মধ্যে এ দেশের অর্জন মােটেই হেলাফেলা করার মতাে নয়। পরিসংখ্যানবিদরা নানা পরিসংখ্যান দিয়ে নানা ক্ষেত্রে সেই অর্জনের প্রমাণ হাজির করেছেন। এসব পরিসংখ্যানের খোঁজখবর যারা রাখেন না, তেমন সাধারণ মানুষেরাও খােলা চোখে তাকিয়েই আশপাশে সেসব অর্জনের প্রমাণ পেয়ে যেতে পারেন, এবং নিজেদের জীবনেও সেসবের কিছু-না-কিছু ছোঁয়া অনুভব করেন। বলতে গেলে এ অর্জনের পুরাে কৃতিত্বটাও এঁদের—অর্থাৎ এই সাধারণ মানুষদেরই। এদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গাঁয়ের কৃষক, এঁরাই “কর্মযােগে ঘর্ম ঝরিয়ে সােনার ফসল ফলাচ্ছেন, দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে তুলছেন। কৃষক দেখছেন যে নদীতে বাঁধা সােনার তরীটি—‘আমারই সােনার ধানে গিয়েছে ভরি।'
ফোকলোর সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা প্রচলিত আছে- ফোকলোর কেবল নিরক্ষর লোকের সংস্কৃতি এবং এর সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও শিক্ষিতদের শিল্পভুবনের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। সম্ভবত এসব বদ্ধমূল ধারণার কারণে এদেশে ফোকলোরের সাথে লেখ্য-ঐতিহ্য, এমনকি লিখিত সাহিত্যের সম্পর্ক বিচার বিষয়ে বিশ্লেষণ বা আলোচনা-সমালোচনা চোখে পড়ে না। অথচ একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জগৎ জুড়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রসারে ফোকলোরের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিতদের সৃষ্ট বহু উপাদান তথা কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি ফোকলোরে আত্তীকৃত হয়ে থাকে। ফোকলোর ও লিখিত সাহিত্য : জারিগানের আসরে ‘বিষাদ-সিন্ধু’ আত্তীকরণ ও পরিবেশ-পদ্ধতি শীর্ষক গ্রন্থটি জনসমাজে চর্চিত সেই ধারাকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে বৃহত্তর পাঠকের সামনে উপস্থাপন করছে। গ্রন্থটি প্রথম অধ্যায়ে ফোকলোর সম্পর্কে বৈশ্বিক ধারণার সঙ্গে বাংলাদেশের ফোকলোর চর্চার ঐতিহ্যকে উপস্থাপিত হয়েছে, যা যথার্থভাবেই প্রমাণ করছে-বাংলাদেশের ফোকলোর যথেষ্ট অভিনবত্বের অধিকারী।
মোগল শাহজাদা শাহ সুজা পালাচ্ছেন। রাজমহল থেকে টেকনাফের দিকে। এই তাঁর আখেরি সফর। একদিকে তাঁর অন্তরে চলছে হরেক ভাবনার টানাপোড়েন-ক্ষমতার টান আর তা থেকে পিছলে যাওয়ার পরিণতির, শরীরে প্রবাহিত তৈমুরের রক্তের তাপ আর পলায়নকারী বাস্তবতার, দৌলত আর কিসমতের। তিনি যাচ্ছেন। পেছনে চলেছে কাফেলা। বাংলার দীর্ঘ পথজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে তাঁর পলায়নের স্থায়ী চিহ্ন-সড়কে, স্থাপনায়, মানুষের মুখে মুখে তৈরি হয়ে ওঠা গীতে। শাহ সুজার পেছনে চলেছে এক প্রেমিকও। পেশায় কলমচি, আচরণে উভকামী। পথে পথে কত কিসিমের মানুষের সঙ্গেই না তার মোলাকাত-পর্তুগিজ জাহাজের লশকর, শোলক-কাটা জেনানা, মাতাল, হিজড়া, পানের আড়তদার, মক্তবের মিয়াজি। তাদের ধূলিমাখা কাহিনি এসে পৌঁছায় রোহিঙ্গাদের এ সময়ের রক্তাক্ত ইতিহাসে। এ কাহিনি যোগের-রাজাপ্রজা-নির্বিশেষে মানুষের সঙ্গে মানুষের, ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমানের। শাহীন আখতার লোকগান থেকে বের করে এনেছেন সামন্তযুগে চাপা পড়া সাধারণ মানুষের কথা। তুলে ধরেছেন মানুষের চিরন্তন কুহকী মন।
সূচিপত্র
* আমার বাবা
* আমার বাবার স্যুটকেস : ওরহান পামুকের নোবেল বক্তৃতা
* নিহিত লেখক
* এপ্রিল ২৯,১৯৯৪ : কিছু টোকা
* আপনি কার জন্য লেখেন
* শিরিনের বিস্ময়
* জানালা দিয়ে দেখা
* প্রবেশ নিষেধ
* বিচারের কাঠগড়ায়
* ‘আমার নাম লাল’ সম্পর্কে বিভিন্ন সাক্ষৎকারের নির্বাচিত অংশ
* ‘আমার নাম লাল’ সম্পর্কে লেখকের কিছু কথা
* কারস এবং ফ্র্যাঙ্কফার্টে
বৃহদাকৃতির সুসজ্জিত জাহাজটি পবিত্র নদীর উজান বেয়ে চলেছে। এর পদ্মাকৃতির গলুই প্রাচীনকাল থেকে উথিত শান্ত ঢেউ ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে সময়ের সীমাহীন ঝরনায় এক একটি পর্যায়ের মতাে। নদীর উভয় পাশে প্রকৃতির মাঝে বিছানাে গ্রাম, একক ও গুচ্ছভাবে দাঁড়ানাে পাম গাছ। সবুজের বিস্তার পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত। সূর্য মধ্যগগনে, গাছপালার ওপর আলাে ছড়াচ্ছে এবং যেখানে পানি স্পর্শ করছে সেখানে চকচক করে উঠছে। কিছু কিছু জেলে নৌকার আনাগােনা ছাড়া নদী শূন্য এবং তারা বড় জাহাজটির পথ ছেড়ে দিচ্ছে। নৌকাগুলাের আরােহীরা সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে ও অবিশ্বাসে তাকাচ্ছে উত্তরের প্রতীক পদ্মের দিকে।
বাংলাদেশের চিলেরা পাহাড়ে থাকে না। অন্যদিকে পাখি গবেষকেরা বলছেন যে সােনালি ইগল পার্বত্য অঞ্চলে পাওয়া যায়। তাই আমাদের কাছে। মনে হয়, কবি কোথাও সােনালি ইগল সম্পর্কে পড়েছেন এবং সেই অর্থেই তিনি সােনালি চিল বা সােনালি ডানার চিলের কথা বলছেন। সােনালি। ইগলের একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এই পাখি হচ্ছে একগামী বা monogamous। এরা বহুগামী নয়। দুটি সােনালি ডানার ইগল একসঙ্গে জীবন কাটিয়ে দেয়। এরা সব সময় জোড়ায় জোড়ায় চলে। এ ধরনের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ কারও সঙ্গী মারা গেলে যে মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়, কবি তা-ই ফুটিয়ে তুলেছেন এ কবিতায়।
উপন্যাস এখন বিচরণ করে সমাজজীবনের প্রামিত্মক পরিসরে। আলো ফেলে সামাজিক সত্মরের আনাচে-কানাচে, মনোগহনে, কখনো অজ্ঞাত ভুবনে। প্রকৃতিবৈচিত্র্যে ভরা বাংলাদেশের হাওর-অঞ্চল, তেমনি একটি প্রত্যমত্ম এলাকা, সেখানে সমাজের সত্মরবিন্যাস ও কাঠামো মূল সামাজিক বিন্যাস থেকে আলাদা। মাসউদুল হকের দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসে উপন্যাসে তেমনি একটি পরিসরকে কাহিনির পটভূমি করেন, তুলে আনেন সেখানকার মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, অসিত্মত্বের সংগ্রাম ও স্বপ্নের পসরা। গোটা দেশের শিক্ষা, উন্নতি ও সভ্যতার কাঠামো থেকে দূরে এই হাওর। সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর এলাকা ও সন্নিহিত গ্রামগুলো নিয়ে লেখক যে-কাহিনি বয়ন করেন তা তাঁর অভিজ্ঞতার ফসল। তাতে আছে হাওর-অঞ্চলে বসবাসরত মানুষগুলোর কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, অনিয়ন্ত্রিত আদিম বৃত্তির অনুপুঙ্খ বর্ণনা। আরো আছে আফাজ মাস্টার নামে এক স্কুলশিক্ষকের শিক্ষার আলো ছড়ানোর একনিষ্ঠ প্রয়াস। লেখক চিহ্নিত করেন জমিদারি প্রথার অবসান হলেও তার ছায়ারূপী জল-অধিপতিদের দৌরাত্ম্য ও শোষণপ্রক্রিয়া। এছাড়া দেখান প্রশাসনযন্ত্রের অত্যাচার ও ক্ষমতায়নের কুটিলতায় বিপর্যসত্ম মানুষগুলোর দুরবস্থা, তাদের সংঘাত-দ্বন্দ্ব। সেখানকার প্রজন্ম স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে হাওর থেকে পাথর তোলার কাজে ভবিষ্যৎকে বাধ্য হয়ে বন্দি করে রাখে। প্রকৃতির মধ্যে টিকে থাকার আদিম লড়াই আর মানুষের গড়া সভ্যতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত তাদের দ্বন্দ্বের মর্মতলে প্রবেশ করেন লেখক, তুলে আনেন জীবনের বহমানতা ও টিকে থাকার সৃষ্টিশর্তকে। এ-উপন্যাস একামত্মই বাসত্মবধর্মী ধারায় রচিত। গ্রন্থনা সরল বর্ণনামূলক, ভাষা প্রাঞ্জল ও নিরলংকার। লেখকের অভিজ্ঞতা ও সহমর্মিতায় উপন্যাসটি আঞ্চলিক জীবনছবির শিল্পপ্রতিমা হয়ে ওঠার দাবি রাখে।
সমালোচনা, প্রায়শই লক্ষ করা যায়, গতানুগতিক কথার ফুলঝুরি মাত্র। সেখানে থাকে না সৃষ্টির উত্তাপ, থাকে না নতুন অভিজ্ঞতার স্পর্শ। আবার কখনো কখনো সমালোচনাও হয়ে ওঠে সৃষ্টিশীল রচনা। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ধারার লেখক যে খুব বেশি নেই, তা বলাই বাহুল্য। আমাদের তরম্নণ সমালোচক পিয়াস মজিদ করম্নণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রবন্ধ গ্রন্থের মাধ্যমে সৃষ্টিশীল সমালোচনার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
পিয়াস মজিদ তরম্নণ কবি, নবীন কথাকার, সৃষ্টিপ্রিয় সমালোচক। গতানুগতিক পথে হাঁটেন না পিয়াস, নতুনের প্রতি তাঁর পিপাসা অমত্মহীন, বক্তব্যের পাশাপাশি গদ্যশৈলীতেও নিজস্বতার অভিসারী পিয়াস। সব মিলিয়ে প্রথম গদ্যগ্রন্থেই পিয়াস আমাদের আশান্বিত করেছেন, স্বাক্ষর রেখেছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। পিয়াস অনাবশ্যক কথা বলেন না, বক্তব্যহীন কথার জাল বোনাও তাঁর স্বভাব নয়। তিনি বিন্দু থেকে পৌঁছতে চান সিন্ধুতে - শিল্পমাতাল গদ্যভাষ্যে তুলে আনতে চান জীবনের না-বলা কথামালা। পাঠককে কাছে টেনে নেওয়া পিয়াসের গদ্যরীতির অব্যর্থ এক বৈশিষ্ট্য। তাঁর গদ্য-ঢং বক্তব্য প্রকাশে যেমন সহায়ক, তেমনি তা লেখকহৃদয়কে পাঠকের কাছে খোলাসা করতেও বিসত্মার করে সহযোগ। রবীন্দ্রনাথ থেকে আলতাফ হোসেন পর্যমত্ম শব্দসাধকদের সাহিত্যবৈশিষ্ট্য নিরূপণে পিয়াস করম্নণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রবন্ধ গ্রন্থে নিজস্বতার পরিচয় রেখেছেন নিজস্ব ঢঙে। মৌলিক এবং একই সঙ্গে গাঢ়-সংবেদী চিমত্মাবৃত্তে বিচরণশীল পিয়াস মজিদকে ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম-২০১২’ পুরস্কারপ্রাপ্তিতে অবারিত অভিনন্দন।
ইমতিয়ার শামীম আমাদের ছোটগল্পে ভিন্ন বিষয় ও স্বর নিয়ে বিরাজ করছেন। তাঁর গল্পে বাংলার সমাজ ভূগোল রাজনীতি আলাদা মাত্রা পায়। জীবন ও বাস্তবতার আনাচে-কানাচে তাঁর গহন অবগাহন ও নিবিড় আলোকপাত আমাদের বিস্মিত করে। তাঁর চরিত্রদের ও তাদের পরিপার্শ্ব তিনি এমন সূক্ষ্ম ও বিস্তারিত করে তুলে ধরেন যে, তাদের জীবনসমগ্র আমাদের চোখে আয়নার মতো দৃশ্যমান হয়। এই বইয়ের অধিকাংশ গল্পে বাংলার গ্রামজীবন ও এর শেকড় ধরে থাকা দরিদ্র ও প্রায়-উন্মূল মানুষের বাসনা কামনা স্বপ্ন দ্বন্দ্ব আর হাস্যকরুণ অন্তর্গত বাস্ততা তাঁর কলমে তীব্রতা ও রসবোধ নিয়ে জেগে উঠেছে। অন্যদিকে মানুষের দস্যুতা, লোভ ও ভোগপ্রবৃত্তির কারণে ক্রমশ বিলীয়মান বাংলার নিসর্গ ও ভূগোলের বিবরণ তিনি তুলে এনেছেন গভীর বেদনায়। রূপসী বাংলা পর্বের কবিতায় জীবনানন্দ লিখেছেন ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’র কথা, আর ইমতিয়ার শামীম তাঁর গল্পে তুলে ধরেছেন বিধ্বস্ত বাংলার গাঢ় বয়ান। সৈকত হাবিব কবি
অথচ প্রতিদিন স্বাতি জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে... জামিল রিকশায় বসেই দৃশ্যটা দ্যাখে। তারপর ভাড়া মিটায়, তারপর ক্রমাগত সিঁড়ি টপকে একদম দোতলায়। প্রায় প্রতিদিনই, কোনােদিন তাই কলিংবেল বাজাতে হয় নি। স্বাতিই দরজা খুলে দেয়, দরজার সামনে গা ভর্তি থকথকে ঘাম নিয়ে দাঁড়িয়েও থাকতে হয় না। স্বাতি সন্ধ্যার দক্ষিণে হাওয়া। যত সমস্যাই থাকুক মাথায়, জামিলকে দেখে রােজই একমাপের এক টুকরাে হাসি এবং পারফিউমসহ চমৎকার আহ্বান। তারপর শার্ট, কোট খুলে দেওয়া, অবশ্য জুতাে জামিলই খােলে, জুতােতে কেমন বাধাে বাধাে ঠেকে। তারপর ফ্যানের সুইচটাও স্বাতিরই আঙুলের স্পর্শে জেগে ওঠে
বিশ্বাস করতে চাই আমাদের কোন দুঃখের কথা নেই। এই জীবন শুধুই পূর্ণতার সন্ধান। ঘাসফুল বুকে নিয়ে ঘুমায় শহর। হিম হিম সকালে দু’গালে গােলাপী আভা ছড়িয়ে গাঢ় নীল কার্ডিগান পরে ঘুম ঘুম চোখে ইস্কুলে চলে যায় শিশুরা। দীর্ঘদেহ পুত্ররা বেড়ে ওঠে। তবু অনেক ভালবাসার ধন জীবন থেকে হারিয়েও যায়। সৌন্দর্য কিম্বা তার প্রাবল্য কোন এক অর্বাচিন প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায় অকস্মাৎ মহানক্ষত্রের পথে । তেমনি দৃশ্য সীমা থেকে হারিয়ে গেছে অনেক ভালবাসার মানুষ। তাই তােমাকে নিয়ে কিছু লিখব না এমন একটা অনমনীয় সিদ্ধান্ত ছিল।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বিল্ডিংয়ের বারান্দা ধরে প্রতিদিনের মতাে আজও হেঁটে আসে রেবেকা। তিন রাস্তার মােড়ে এসে প্রধান সড়ক পার হতে গিয়ে ইটের খােয়ায় পড়ে পা মচকে যায় তার। রাস্তায় বসে পড়ে কাতরে ওঠে সে। ববি দৌড়ে এসে আহত রেবেকাকে কোলে তুলে নিয়ে ছুটে যায়। গাড়ির পেছনের সিটে ওকে শুইয়ে রেখে নিজেই ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। ড্রাইভারকে বলে পাশে গিয়ে বসতে। তীব্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসে সে।