সান্তা মনিকা পর্বতে রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল ছোট্ট একটি বিমান। খুনের গন্ধ পেল গোয়েন্দাপ্রধান কিশোর পাশা। দুই সহকারী মুসা আর রবিনকে নিয়ে তদন্তে নামল সে। খুনির গন্ধ শুঁকে শুঁকে, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পৌঁছল গিয়ে নেভাডা মরুভূমিতে। ‘এক্স’,‘ওয়াই’ ও ‘জেড’-এর জটিল রহস্যের সমাধান না করে তারা ছাড়বে না। কিন্তু মরুভূমির আকাশে রাতের বেলা অদ্ভুত ভায়া হয়ে যা ওড়ে, ওটা আসলে কী?
কালো আংটির রহস্য: পরার সময় স্বাভাবিক থাকে, পরার সঙ্গে সঙ্গে ছোট হয়ে আযুলের গাঁটে আটকে যায়, এমন আংটির কথা জীবনে শুনিনি আমি। আমাদের ক্লাস টীচারের হাতে দেখলাম আংটিটা। মাঝখানে বড় একটা কালো পাথর বসানো। অতি সাধঅরণ চেহারা । তবু, আংটিটাকে ভীষণ রহস্যময় মনে হলো আমার কাছে । নাহ্, অকারণেই ভাবছি, এর মধ্যে কোনও রহস্য নেই। বললাম বটে নেই, কিন্তু, ওই মুহূর্তে কল্পনাই করতে পারিনি, শ্রীঘ্রই আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে ওই আংটি।
ভূতুড়ে গাড়ির রহস্য: নতুন মড়েলের করভেট গাড়ি। আমার বাবা যখন গাড়িটা কিনতে চাইল, গাড়ির মালিকের ঠোঁট দুটো পরস্পরের সঙ্গে চেপে বসল। হাসি নেই মুখে। সেট লক্ষ করে গাড়িটার কোনও গোলমাল আছে কিনা, জানতে চাইল বাবা। ঘুরিয়ে জবাব দিল লোকটা, জবাবটা খুব রহস্যময় হনে হলো আমার কাছে। তার হাত দুটো কাঁপছে। তাড়াতাড়ি ওভারঅলের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফেলল। কোনও কারণে ভয় পাচ্ছে লোকট? নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে গাড়িটার । সমাস্যাটা যখন বুঝতে পারলাম, তখন আর কিছু করার থাকল না আমাদের । নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হলো ভূতের গাড়ি।
ঠাকুরদাদা মারা গেলে পর, তাঁর লােহার সিন্ধুকে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে একটি ছােট বাক্স পাওয়া গেল। সে বাক্সের ভিতরে নিশ্চয়ই কোনাে দামি জিনিস আছে মনে করে মা সেটি খুলে ফেললেন। কিন্তু তার মধ্যে পাওয়া গেল শুধু একখানা পুরনাে পকেট-বুক, আর একখানা ময়লা কাগজে মােড়া কী একটা জিনিস। মা কাগজটা খুলেই জিনিসটা ফেলে দিয়ে হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠলেন।
আমি ব্যস্ত হয়ে বললুম, “কী, কী হল মা?”
মা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মাটির দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন, “কুমার,
শিগগির ওটা ফেলে দে!”
ভূমিকা
আমার ধারণা কিশোর উপন্যাস সমগ্রের এই খণ্ডটি একটু অন্যরকম হয়েছে-অন্যান্য খণ্ডগুলোর তুলনায় এখানে বৈচিত্র্য একটু বেশি। আমার একমাত্র রূপকথাটি এখানে আছে, বাচ্চা সায়েন্টিস্টের উপন্যাসটি এখানে আছে, বিদেশের পটভূমিতে এখানে আছে। এর বাইরে আমার ডানপিটে ছেলেমেয়েদের এ্যাডভেঞ্চার তো আছেই। মেয়েরা মনে হয় এবারে আমাকে বেশি দোষ দিতে পারবে না-তিন তিনটি উপন্যাসের মূল চরিত্র মেয়ে। এই গ্রন্থের উপন্যাসগুলোর মাঝে চোখ বুলিয়ে এবারে দুটো জিনিস চোখে পড়েছে। কিশোর কিশোরীদের জন্যে লেখা আমার প্রায় সব উপন্যাসেই কম বেশি মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারটি চলে আসে। এবারে লক্ষ করেছি আরো একটি ব্যাপার চলে আসেত শুরু করেছে-সেটি হচ্ছে লেখাপড়া আমি মাস্টার মানুষ মাথায় মাঝে লেখাপড়ার ব্যাপারটা মনে হয় পাকাপাকিভাবে ঢুকে গেছে-কিছু লিখতে চাইলে কিভাবে কিভাবে সেটা যেন চলে আসে! যারা পড়ছে তারা যেহেতু সেভাবে প্রতিবাদ করছে না আমি তাই সেটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করছি না। বেশ কিছুদিন ছোট একজন পাঠক আমাকে বলেছিল, “আপনি বড়দের জন্যে কেন লিখেন? কক্ষনো লিখবেন না-শুধু আমাদের জন্যে লিখবেন!” আমি মুখ কাচুমাচু করে বলেছিলাম, “বিশ্বাস কর, আমিও আসলে শুধু তোমাদের জন্যেই লিখতে চাই-কিন্তু কী করব বল, বড় বড় মানুষেরা বড় বিরক্ত করে!” আমার মনে হয় আমার সময় হয়েছে শুধু বাচ্চাদের জন্যে লিখা, তার কারণ একটা জিনিস বড় মানুষেরা কখনো দিতে পারে না, ছোটরা পারে। সেটি হচ্ছে ভালোবাসা এবং ভালোবাসা!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
সূচীপত্র
*নাট-বল্টু
*বৃষ্টির ঠিকানা
*লাবু এল শহরে
*রাশা
*মেয়েটির নাম নারিনা
*লিটু বৃত্তান্ত
যে স্যুটকেসটা বুবুন আর আম্মা মিলে টেনে নাড়াতে পারেনি জাহিদ চাচা সেটা এক হাতে তুলে একেবারে বাসার দরজার সামনে রেখে দিলেন। জাহিদ চাচার শরীরে মনে হয় মােষের মতাে জোর। যাদের শরীরে মােষের মতাে জোর হয় তাদের চেহারায় একটা গুণ্ডা-গুণ্ডা ভাব থাকে কিন্তু জাহিদ চাচার বেলায় সেটা সত্যি না। তার চেহারাটা একেবারেই ভালাে মানুষের মতাে। ফর্সা গায়ের রং, চুল সুন্দর করে আঁচড়ানাে, চোখে কালাে ফ্রেমের চশমা। কথা বলেন সুন্দর করে আর যখন হাসেন তখন মনে হয় তার এত | আনন্দ হচ্ছে যে সেই আনন্দে চোখ দুটি বুজে আছেন। বুবুন মানুষজনের বেলায় খুব খুঁতখুঁতে কিন্তু এই মানুষটাকে তার বেশ পছন্দ হলাে।
. জাহিদ চাচা পকেট থেকে একটা চাবি বের করে দরজার তালা খুলে আম্মাকে বললেন, “ডক্টর রওশান, এই হচ্ছে আপনার নূতন বাসা।”
আম্মা ভিতরে ঢুকে বললেন, “বাহ!”
বুবুন বুঝতে পারল বাসাটা আম্মার পছন্দ হয়েছে। পছন্দ না হলে আম্মা চুপচাপ থাকতেন আর জিজ্ঞেস করলে বলতেন, “হুম! বেশ ভালােই | তাে মনে হচ্ছে-
ভূমিকা
গোঁসাইজির কাছ থেকে অনুরোধ এল, ছেলেদের জন্যে কিছু লিখি। ভাবলুম, ছেলেমানুষ রবীন্দ্রনাথের কথা লেখা যাক। চেষ্টা করলুম সেই অতীতের প্রেতলোকে প্রবেশ করতে। এখনকার সঙ্গে তার অন্তর-বাহিরের মাপ মেলে না। তখনকার প্রদীপে যত ছিল আলো তার চেয়ে ধোঁয়া ছিল বেশি। বুদ্ধির এলাকায় তখন বৈজ্ঞানিক সার্ভে আরম্ভ হয় নি, সম্ভব-অসম্ভবের সীমা-সরহদ্দের চিহ্ন ছিল পরস্পর জড়ানো। সেই সময়টুকুর বিবরণ যে ভাষায় গেঁথেছি সে স্বভাবতই হয়েছে সহজ, যথাসম্ভব ছেলেদেরই ভাবনার উপযুক্ত। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমানুষি কল্পনাজাল মন থেকে কুয়াশার মতো যখন কেটে যেতে লাগল তখনকার কালের বর্ণনার ভাষা বদল হয় নি, কিন্তু ভাবটা আপনিই শৈশবকে ছাড়িয়ে গেছে। এই বিবরণটিকে ছেলেবেলাকার সীমা অতিক্রম করতে দেওয়া হয় নি— কিন্তু শেষকালে এই স্মৃতি কিশোরবয়সের মুখোমুখি এসে পৌঁছিয়েছে। সেইখানে একবার স্থির হয়ে দাঁড়ালে বোঝা যাবে, কেমন করে বালকের মনঃপ্রকৃতি বিচিত্র পারিপার্শ্বিকের আকস্মিক এবং অপরিহার্য সমবায়ে ক্রমশ পরিণত হয়ে উঠেছে। সমস্ত বিবরণটাকেই ‘ছেলেবেলা’ আখ্যা দেওয়ার বিশেষ সার্থকতা এই যে, ছেলেমানুষের বৃদ্ধি তার প্রাণশক্তির বৃদ্ধি। জীবনের আদিপর্বে প্রধানত সেইটেরই গতি অনুসরণযোগ্য। যে পোষণপদার্থ তার প্রাণের সঙ্গে আপনি মেলে বালক তাই চারি দিক থেকে সহজে আত্মসাৎ করে চলে এসেছে। প্রচলিত শিক্ষাপ্রণালীদ্বারা তাকে মানুষ করবার চেষ্টাকে সে মেনে নিয়েছে অতি সামান্য পরিমাণেই।
এই বইটির বিষয়বস্তুর কিছু কিছু অংশ পাওয়া যাবে জীবনস্মৃতিতে, কিন্তু তার স্বাদ আলাদা— সরোবরের সঙ্গে ঝরনার তফাতের মতো। সে হল কাহিনী, এ হল কাকলি; সেটা দেখা দিচ্ছে ঝুড়িতে, এটা দেখা দিচ্ছে গাছে— ফলের সঙ্গে চার দিকের ডালপালাকে মিলিয়ে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। কিছুকাল হল, একটা কবিতার বইয়ে এর কিছু কিছু চেহারা দেখা দিয়েছিল, সেটা পদ্যের ফিল্মে। বইটার নাম ‘ছড়ার ছবি’। তাতে বকুনি ছিল কিছু নাবালকের, কিছু সাবালকের। তাতে খুশির প্রকাশ ছিল অনেকটাই ছেলেমানুষি খেয়ালের। এ বইটাতে বালভাষিত গদ্যে।
-- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নটরডেম কলেজের বিজ্ঞানের ছাত্র রোহান মামার সাথে কাজল আর সজলের খুব ভাব। ছোটখাটো অপরাধ করে বাবার কাছে যখন ওরা ঝাড় খায়, রোহান তখন বুক দিয়ে আগলায় ওদের। রোহানের বন্ধু নিতু। ওর সৎমা তাকে খুব জালায়। বাপ কিছু বলে না, মেনিমুখোর মতো চোখ বুজে থাকে। ওদিকে কাজলের বন্ধু সায়ান লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাতে গিয়ে একটা মেয়েকে চাপা দেয়। মামলা হয় ওর নামে। সায়ানদের মেলা টাকা। ভেবেছিল, টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। সেই মেয়েটি হাসপাতালে মারা গেলে সায়ানকে পুলিশ কোর্টে চালান করে। ওরা একদিন সাফারি পার্কে যায় ঘুরতে। সেখানে ফুটবলের মতো দেখতে উটপাখির ডিম পায় ওরা। তাই নিয়ে শুরু হয় অবাক কা-। নিতুর সৎমায়ের ঘরে হঠাৎ ভূতের নাচ দেখা যায়, সাথে হরর মুভির মতো পিলেকাঁপানো কণ্ঠস্বর। কা-টা কী জানতে চলো পড়ে ফেলি ‘রোহান ও তার বিচ্ছুরা’ বইটি।