দ্বিরুক্তি না করে দ্রুত তৈরি হয়ে নিলাম। দশ মিনিট পরেই আমাদের গাড়ি নির্জন পথ ধরে সশব্দে চেরিং ক্রস স্টেশনের দিকে ছুটে চলল। ভােরের আবছা আলাে তখন সবে ফুটতে শুরু করেছে। কুয়াশার মাঝ দিয়ে অস্পষ্টভাবে চোখে পড়ছে একটা-দুটো ছায়ামূর্তি—সকাল সকাল কাজে বেরিয়েছে মজুর শ্রেণীর লােকেরা।
ভারী কোট গায়ে জড়িয়ে চুপচাপ বসে আছে হােমস। আমিও তা-ই করছি। ঠাণ্ডায় কাঁপছি হি হি করে, সকালের নাশতাও খাওয়া হয়নি আমাদের। স্টেশনে পৌছে গরম চা খেয়ে তবেই একটু স্বাভাবিক হলাম। কথা বলতে শুরু করলাম কেন্টগামী ট্রেনে উঠে।
দ্বিতীয় জনেরও মাথায় চুল সামান্য, কিন্তু রয়েছে সুন্দর এক গােছা দাড়ি। তাঁর ধারালাে চোখজোড়া তােমার চোখে দেখে বলবেন : কতটুকুই বা জেনেছি আমরা চারপাশের এই দুনিয়ার! অণু-পরমাণুর যে অতি ছােট কণার জগৎ, তার মধ্যেও হয়তাে একদিন বেরিয়ে পড়বে আরাে কত অজানা খবর!
তৃতীয় জনের মাথায় এলােমেলাে চুল। চোখে ভাবুক দৃষ্টি। তারায় তারায় ছাওয়া আকাশের নীল চাঁদোয়ার দিকে তাকিয়ে তিনি ধীরে ধীরে বলবেন : এই বিস্ময়ভরা প্রকৃতির অপার রহস্য দেখে যে মুগ্ধ হয় না বুঝতে হবে তার মনের মৃত্যু হয়েছে।
১৯৭৪ সালের হাঙ্গেরীর ভাস্কর ও স্থাপত্য বিদ্যার অধ্যাপক ইরনো রুবিক এই কিউব আবিষ্কার করেন। শুরুতে একে "ম্যাজিক কিউব" বলা হত। ১৯৮০ সালে রুবিক এর অনুমতিক্রমে এটি আইডিয়াল টয় কর্পোরেশন এর দ্বারা বিক্রয় শুরু হয়। এবং সেই বছরেই এটি Germany Game of the Year হয় ও সারাবিশ্বে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন (!!!) রুবিক'স কিউব বিক্রয়ের ফলে একে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বুদ্ধির খেলা (Puzzle) হিসেবে স্বীকৃত দেওয়া হয়। আজকাল আমাদের দেশেও এর জনপ্রিয়তা কম নয়। জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের রুবিক'স কিউব প্রতিযোগিতায় দেশের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে। প্রায় সব খেলনার দোকানে এটি পাওয়া যায়। কিন্তু খুব কম মানুষই আছে যারা এটি মিলাতে পারে। শুধু প্রতিযোগিতার জন্য নয়, এটি মিলাতে যে কি মজা!!! আমার দুঃখ হয় যারা এটি মিলাতে পারে না তারা এই আনন্দটুকু থেকে বঞ্চিত। এই বইটি তাদের জন্য। মজার পাশাপাশি বাড়বে বুদ্ধিও।
শেষ পর্যন্ত দুপুরের দিকে মৃদুল আর ফজলু একটা সাইকেলে করে | রওনা দিল ধুপপুরের জঙ্গলের উদ্দেশে। মুকিত গেল না। তার নাকি পেট ব্যথা করছে। তা ছাড়া সাইকেলে তিনজন যাওয়াও যেত না। ধুপপুর জঙ্গলটা মূল শহর থেকে মাইল চারেক দূরে। মাটির রাস্তা, তবে রাস্তা সুন্দর। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ওরা পৌছে গেল, রাস্তায় অবশ্য মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতে হয়েছে। জঙ্গলটা দেখে ওরা অবাক। শহরের এত কাছে এমন একটা জঙ্গল আছে আর তারা জানেই না। কিন্তু আশপাশে কেউ নেই। জঙ্গলের ভেতর দু-একটা সরু রাস্তা ঢুকে গেছে এদিক-ওদিক।
শিহাবকে বন্ধুরা গ আকার বলে জানে। গ আকার মানে গাধা। হাজার হােক বন্ধু! তাই ওকে সরাসরি গাধা না বলে সাংকেতিক পদ্ধতিতে গ আকার শব্দটি প্রয়ােগ করে। এই নিয়ে শিহাবের খুব মন খারাপ। সর্বক্ষণ গুম মেরে থাকে। তবে শিহাবকে গ আকার না ডেকে ওর বন্ধুদের উপায়ই বা কি? গাধার মগজেও বােধ করি কিছু বুদ্ধি টুদ্ধি আছে। শিহাবের সেটুকুও নেই। এমন ম্যাদামারা ছেলে সুমনরা দ্বিতীয়টি পায়নি। শিহাব, রুমন, সুমন, রােকন একই স্কুলে নাইনের ছাত্র। ওদের প্রাইভেট টিউটরও একই ব্যক্তি, ওয়াজেদ মাস্টার । শিহাবদের বাড়িতেই ওয়াজেদ স্যার সকালে পড়াতে আসেন।
এই বইয়ের জন্মকথাটা বলি শোনো। আমার এক মেয়ে আছে সাশা। এখন অবশ্য দিব্যি বড়সড়ো হয়ে উঠেছে সে, নিজেই বলে, ‘আমি যখন ছোট্ট ছিলাম...’ তা এই সাশা যখন ছিল একেবারেই ছোট্র তখন ভারি ভুগত সে। কখনো ইনফ্লুয়েঞ্জা, কখনো টনসিলাইটিস। তারপর কানের ব্যথা । তোমাদের যদি কখনো কান কটকট রোগ হয়ে থাকে, তাহলে নিজেরাই বুঝবে সে কী যন্ত্রণা। আর যদি না হয়ে থাকে, তাহলে বুঝিয়ে বলা বৃথা, কেননা সে বোঝানো অসম্ভব ।
একবার সাশার কানের যন্ত্রণা খুব বাড়ল, সারা দিন-রাত সে কাঁদল, ঘুমোতে পারছিল না। আমার এত কষ্ট লাগছিল যেনিজেরই প্রায় কান্না এসে গিয়েছিল। নানা রকম বই পড়ে শোনাচ্ছিলাম আমি, নয়ত মজার মজার গল্প বলছিলাম। বলছিলাম ছোটাবেলায় কী রকম ছিলাম আমি, নতুন বল ছুড়ে দিয়েছিলাম মোটর গাড়ির নিচে । গল্পটা সাশার ভারি ভালো লাগল। ভারি ভালো লাগল যে তার বাবাও একদিন ছোট্র ছিল, দুষ্টুমি করত, কথা শুনত না, শাস্তি পেত। কথাটা মনে ধরল তার। তারপর থেকে যেই কান কটকট করত অমনি সাশা ডাকত,‘বাবা,বাবা, শিগগির!কান কটকট করছে, বলো না ছোটবেলায় তুমি কী করতে!’। আর ওকে যেসব কথা শুনিয়েছিলাম সেগুলোই তোমরা এখন পড়বে।
হজরত মোহাম্মদের নামের পর – ‘সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়াসাল্লাম’- এই ক’টি কথা বলার নিয়ম।মনে মনে বললেও চলে।কথা ক’টির মানে – তাঁর ও্রপর আল্লাহর শান্তি নেমে আসুক!হজরতের ওপর এইভাবে শান্তির জন্যে প্রার্থনা করতে হয়, কেন জানো?কেননা- • মানুষের তিনি পরম বন্ধু ছিলেন। • মানুষ তাঁর ওপর ভীষণ,অসহ্য জুলুম চালিয়েছে; কিন্তু তিনি কখনো তার প্র্রতিশোধ নেননি, কখনো তার প্রতিশোধ নেননি, কখনো তাকে সেজন্যে অভিশাপ দেননি; বরং তাকে ভাইয়ের মতো ভালোবেসেছেন,তার মঙ্গলের জন্যে প্রার্থনা করেছেন। • তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন; কিন্তু এই ধর্ম মানতে কাউকে কখনো জোর করেননি।যে তাঁর ধর্ম না মেনেছে, তাকেও তিনি সমান ভালোবাসা দিয়ে গেছেন। • সারা জীবন তিনি সাধারণ গরিবের মতো দিন কাটিয়েছেন।যখন তিনি আরব দেশের রাজা হলেন, তখনো তিনি গরিবের পোশাকে থাকতেন,গরিবের খাদ্য খেতেন,গরিবের মতো সামান্যে বাস করতেন। • গরিব অবস্থায় থেকেই তিনি মানুষের মঙ্গল করতেন। সারা জীবন তাঁর এইভাবে কেটেছে।সকলের ভালোর জন্যে,মানুষে মানুষে শান্তি আর মিলমিলাপের জন্যে জীবনভর তিনি চেষ্টা পেয়েছেন। তাই তিনি ছিলেন শান্তির দূত,সত্যের নবী, করুণার ছবি।তাই তাঁর জন্যে খোদার কাছে সবারই শান্তি চাওয়াই উচিত নয় কি?
বাপরে!’ ভাবল এলিস, এরপর সিড়ি থেকে আছাড় খেয়ে নিচে পড়তে একটুও ভয় পাব না আমি। বাড়ির ওরা সবাই কত সাহসী ভাববে আমাকে! ভাববে, কী ব্যাপার, বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গেলেও মেয়েটা কিছু বলছেনা কেন! নিচে, নিচে, আরও নিচে। এলিস নামছে তাে নামছেই। এই নামবার কি কোনাে শেষ নেই? ভাবছি এতক্ষণ ধরে কত মাইল নামলাম। বিস্ময়ে বিহ্বল মেয়েটি গলা চড়িয়ে প্রশ্ন করল। নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীর মাঝখানে কোথাও পৌছে যাচ্ছি। আচ্ছা, হিসেব করি...ও-মা, তার মানে চার । হাজার মাইল নিচে!
দিলু পরেছে একটা ধবধবে সাদা স্কার্ট। পায়ের মােজা ও জুতা দুই-ই লাল। মাথায় দুটি লম্বা বেণী। শীতের সকালের রােদে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে বড় অচেনা লাগছে। এর উপর রাগ করা যায় না। ওসমান সাহেব বাক্স-পেটরা হাতড়াতে লাগলেন। পাইপ ধরানাের ইচ্ছা হচ্ছে। অনিয়ম করা যায়। ছুটি হচ্ছে অনিয়মের জন্যে।
দিলু ওয়েটিং রুমে কাউকে দেখল না। তবে ওয়েটিং রুমের বাথরুমের দরজা বন্ধ। ভেতরে পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে। কেউ আছে নিশ্চয়ই। মা বােধহয় বাবুকে বাথরুম করাচ্ছেন। দিলু ডাকল— বাথরুমে কে? জল পড়ার শব্দ থেমে গেল। দিলু আবার বলল, বাবু তুমি? কোনাে সাড়া নেই। তার মানে মা। মা একমাত্র ব্যক্তি যিনি বাথরুম থেকে কথা বলবেন না।
দক্ষিণের শহর আর গ্রামগুলাে পােড়াতে পােড়াতে পাঞ্জাবি সৈন্যরা ধীরে ধীরে উত্তর দিকে এগিয়ে আসছিল। খবরটা শুনে মে মাসের প্রথম থেকেই গ্রামের লােক আরাে উত্তরে শালবনের দিকে সরে যেতে লাগলাে। অনেকে - সীমান্ত পেরিয়ে কুচবিহার আর পশ্চিম দিনাজপুরে চলে গেল।
সীমান্ত বেশি দূরে নয়। অনেকে ওপারে গিয়েও নিয়মিত যাওয়া আসা করছিল। জুনের মাঝামাঝি যখন সবাই নদীর ওপারের ছােট্ট শহরটাকে দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখলাে, তখন যারা যাবার তারা একেবারেই চলে গেল। থেকে গেল জামাত, মুসলিম লীগের কিছু দালাল আর কয়েকজন বুড়াে। গির্জার ঘন্টা টানতাে বুড়াে ডেসমন্ড ডি রােজারিও। সে ছিল থেকে যাওয়া বুড়ােদের একজন।
সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে কাঠুরে রাতের বেলা বাড়ি ফিরেছে। পেটে তার দারুণ খিদে। কাঠুরে-বউ কী আর করে? ঘরে তেমন কিছু নেই, কয়েকটা পােড়া রুটি আর আলুসেদ্ধ মেলে ধরল কাঠুরের সামনে। ভীষণ গরিব তারা। মাছ মাংস মাখন পনির খাবার মতাে পয়সা কোথায় তাদের? । গভীর হতাশায় নিশ্বাস ফেলে কাঠুরে-বউ বলল
– কী মন্দ কপাল নিয়েই না আমরা জন্মগ্রহণ করেছিলাম। তুমি এত পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরে এলে
— তােমাকে আমি ভালােমন্দ কিছুই খেতে দিতে পারলাম না।
একইসঙ্গে অসমবয়সী পাঠকদের জন্যে লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার জন্যে বিশেষ লেখনীশক্তির প্রয়োজন পড়ে । লেখক শিশু-কিশোরদের মনোজগত পাঠে পারদর্শী; সমকালীন প্রেক্ষাপটে তাঁদের জন্যে আনন্দময় শিক্ষাদানের বিষয়টি সম্পর্কেও সচেতন তিনি। উপন্যাস্টি লেখকের মানসম্পন্ন মজার কিশোরসাহিত্য হিসেবে শনাক্ত হবে। হাস্যরস করুণরস একসঙ্গে মিশিয়ে ঘোরলাগা স্বপ্নের জগৎ নির্মাণ করেন লেখক ।
প্রশ্ন: আমি আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি আপনি কথা বলেন না, হাসেন না, সব সময় গােমড়ামুখ করে বসে থাকেন। কারণটা কী? তবে আপনার স্ত্রী খুব হাসিখুশি মানুষ, তাকে দেখে আমরা খুব খুশি হয়েছি, তাকে আমাদের খুব ভাল লেগেছে।
উত্তর: এই অভিযােগটা আসলে অনেকের, অনেকেই আমাকে জানিয়েছে আমি গম্ভীর এবং গােমড়ামুখী। আমি যতদূর জানি আমার ছাত্রছাত্রীরাও আমাকে খুব ভয় পায় এবং তাদের ধারণা আমি বদরাগী মানুষ। আমি লক্ষ্য করেছি আমি যখন কাউকে কোন কারণে ধমক দিই সে তখন প্রায় সময়েই হাউ মাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করে। কাজেই আমার মনে হয় তােমাদের এই অভিযােগ সত্যি—আমি আসলেই গম্ভীর, বদমেজাজী এবং গােমড়ামুখী।
সুন্দর সকাল। পাখির কিচিরমিচির ডাকে মিতুর ঘুম। ভাঙে। মিতু আজ খুব খুশী। সে আজ সিসিমপুরে বেড়াতে যাবে। তার বন্ধু টুকটুকিদের বাড়িতে। সে যাবে তার দাদির সাথে ।
গােসলের পর মিতু তার প্রিয় জামাটি পড়ে চুল আঁচড়ে নেয়। দাদি লাল ফিতা দিয়ে। তার চুল বেঁধে দেন। দাদি বলেন, “তােমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”,
লাগছে।” মিতুর আর দেরী সইছে না। কখন সে তার প্রিয় বন্ধুকে দেখবে।