Categories


নিশুতি রাতের মহাত্মা

শীতকাল। অমাবস্যার রাত্তির। দক্ষিণ ভারতের বাগায়াম একটা গ্রাম। চমৎকার এই গ্রামটা মাদ্রাজ শহর থেকে প্রায় একশাে মাইল হবে। এখানে-ওখানে ছােট পাহাড় আর ওটেরি নামে একটা হ্রদ—এই নিয়ে গ্রামটা লােকের মন জয় করেছে। আর আছে একটু দূরে একটা ভাঙা কেল্লা, একটা ছােট শিবমন্দির। শান্ত সুন্দর পরিবেশে দিনকয়েক কাটাবার পক্ষে চমৎকার। এর কয়েক মাইলের মধ্যেই আছে বিখ্যাত তিরুভান্নামালাই মন্দির। বিরাট মন্দির। মহর্ষি রমণের আশ্রম তার কাছে। আমি সেখানে যাব। এই গ্রামের ওপর দিয়েই লােকে সেখানে যায়।


শ্বাপদ ও দ্বিপদ

যে বিস্তৃত বনভূমি উত্তর আমেরিকা ও ক্যানাডার উপর ছড়িয়ে পড়েছে, তার উপর রাজত্ব করছে দুরন্ত শীত। দারুণ ঠান্ডায় নদীর জল জমে বরফ হয়ে গেছে। তরল জলধারার পরিবর্তে দেখা দিয়েছে নিরেট বরফ-ঢাকা পথ। অস্পষ্ট আলাে-আঁধারিতে প্রেতপুরীর প্রহরীর মতাে বরফ-ঢাকা পথের দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে কালাে কালাে গাছের সারি। চারদিকে শুধু বরফ, বরফ আর বরফ। বিশাল বনভূমি এখন তুষারে আচ্ছন্ন মৃত্যুপুরীর মতােই নিস্তব্ধ ভয়ংকর, কোথাও নেই প্রাণের সাড়া.........


বাঙলা শব্দের উৎস সন্ধানে

কেন্তুম ও সতম গুচ্ছভাষাঃ ভাষা থাকলে উপভাষা থাকাই স্বাভাবিক। মূল ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাতেও নিশ্চয়ই উপভাষাগত বিভেদ ছিল। মূল ভাষার তালব্য ‘k' র উচ্চারণ ভেদ থেকে সর্বপ্রথম দুটি উপভাষা সৃষ্টি হ’ল। এই দুটি শাখার নাম কেন্তুম ও সতম। কিন্তু এইরূপ শ্রেণী নির্দেশ করার তাৎপর্য এমন নয় যে, কেন্তম শাখার উপভাষাগুলির মধ্যে পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্পর্ক বজায় আছে অথবা এমনভাবে কিছু মনে করার যুক্তি নেই যে, দুটি কেন্তুম শাখাভুক্ত উপভাষা শতম শাখাভুক্ত কোনাে উপভাষা থেকে অধিকতর নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। বস্তুতঃ মূল তালব্য ধ্বনির দু'ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করেই উপভাষাগুলিকে দুটি শাখায় বিন্যস্ত করা হয়ে থাকে। তবুও মনে রাখতে হবে যে, কেন্তুম ও শতম বিভাগদুটির বৈশিষ্ট্য কারণ নিরপেক্ষ বা স্ব-নির্ভর (unconditional) অর্থাৎ গাণিতিক সূত্রের মতাে অপরিবর্তনীয় এবং দৃঢ়মূল।


অগৌরবে চলিতেছে

মােবাইলে বার্তা এসেছিল, “কবি তােমার কবিতা বলব আজ,” কবিতা প্রেমী মেয়েটি বিদ্রোহী, তবু মিষ্টি গলায় দ্রোহের পাইনি আঁচ। বলেছি আচ্ছা “সে নয় তুমি পােডড়া, কবিতা পড়তে চাইছাে এতেই ধন্য।” কবিতা প্রেমী আদুরে গলায় ডাকে, “কবি, কয়েক লাইন লিখবে, আমার জন্য?” “তােমায় নিয়ে? বেশ তা নয় লিখবাে, প্রেমের কবিতা? না কি বিদ্রোহ চাই?” ম্লান হয়ে ডাকল, বল্ল “কবি!! আমি প্রেমে, ভীষণ ভয় পাই।” আমি কবি বটে এবং প্রকৃতি প্রেমিক, ইশারায় নাচে আবাল বৃদ্ধ নারী, কবিতাপ্রেমীকে পাগলি ডেকে বলি, “হুম্মম...তােমার জন্যে প্রেমের কবিতা!! পারি।”


মানুষ খুন করে কেন

পথটি অতিরিক্ত বনময়। অতিমাত্রায় কুটিল। সেই আরণ্যক কুটিলতা ফণাধরা সাপের মত ওপরে ওঠে, যেন ঋজু হতে। দশদিকেই পাহাড়। এক-একটা বাঁকে, নীচে, উপত্যকাদেশের পাহাড়চূড়াগুলি দেখা যায়-অন্যত্র উর্ধ্বের চূড়াকীর্ণ শূন্যতা। পেছনে পরিত্যক্ত গিরিশীর্ষ আবর্তমান অরণ্যে টুপ করে ডুবে যায়। গভীর এত খাদ এক ক্ষীণ যােগসূত্রে গ্রথিত, বিচ্ছিন্ন এত পাহাড় এক অদৃশ্য যােগসূত্রে গাঁথা, এত দ্রুত এত বিবিধ দিক পরিবর্তন যে, দিগদিগন্ত উচ্চতা বেগ ইত্যাদির আনুষঙ্গিক বনেদি ধারণাগুলি বাসটার ভেতরে ঘুরন্তশান্ত প্রক্রিয়ার মত থরথরায়। কিন্তু যান্ত্রিক কম্পনও নিয়মে বাঁধা।


তিন মিতিন

বয়স নেহাত কম নয় মহিলার। অন্তত বছর পঁয়তাল্লিশ তাে হবেই। মুখেও ভাঙচুর এসেছে টুকটাক। তবু সাজগােজের কী বহর! চোখে গাঢ় আই-লাইনার, ঠোটে চড়া লিপস্টিক, গালে থুতনিতে ব্লাশ-অনের উৎকট ছােপ। কাঁধ ছোঁওয়া স্টেপ-কাট চুলে সরু সরু সােনালি টান। দামি শিফন শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজটিও বিপজ্জনক রকমের সংক্ষিপ্ত। বােঝাই যায় খুকি সাজার চেষ্টায় মহিলার কোনও খামতি নেই।


আধুনিক কবিতার ইতিহাস

প্রাচীন ও আধুনিক কবিতার প্রস্থানভূমির পার্থক্য যদি এক কথায় বলতে হয়, এটুকু বললেই পর্যাপ্ত হবে, প্রাচীন কাব্যের মূলসূত্র রচয়িতার আত্মবিলুপ্তি এবং পরবর্তী কবিতার উপপাদ্য অভিমানী অহং। এই প্রভেদ সত্ত্বেও বাংলা কবিতায় আধুনিকতার চরিত্র ও মাত্রা সংক্রান্ত আলােচনায় মধুসূদন-পূর্ব অধ্যায়ের প্রবেশাধিকার অস্বাভাবিক নয়।


দত্তা

সেকালে হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলের হেডমাস্টারবাবু বিদ্যালয়ের রত্ন বলিয়া যে তিনটি ছেলেকে নির্দেশ করিতেন, তাহারা তিনখানি বিভিন্ন গ্রাম হইতে প্রত্যহ এক ক্রোশ পথ হাঁটিয়া পড়িতে আসিত। তিনজনের কি ভালবাসাই ছিল! এমন দিন ছিলনা, যেদিন এই তিনটি বন্ধুতে স্কুলের পথে ন্যাড়া বটতলায় একত্র না হইয়া বিদ্যালয়ে প্রবেশ করিত! তিন জনেরই বাড়ি ছিল হুগলির পশ্চিমে। জগদীশ আসিত সরস্বতীর পুল পার হইয়া দিঘড়া গ্রাম হইতে, এবং বনমালী ও রাসবিহারী আসিত দুইখানি পাশাপাশি গ্রামকৃষ্ণপুর ও রাধাপুর হইতে। জগদীশ যেমন ছিল সবচেয়ে মেধাবী, তাহার অবস্থাও ছিল সবচেয়ে মন্দ। পিতা একজন ব্রাহ্মণপণ্ডিত। যজমানি করিয়া, বিয়া-পৈতা দিয়াই সংসার চালাইতেন। বনমালীরা সঙ্গতিপন্ন জমিদার। তাহার পিতাকে লােকে বিত্তশালী ব্যক্তি বলিয়াই জানিত, অথচ পল্লীগ্রামের সরল জীবনযাত্রা নির্বাহ করিতেন। রাসবিহারীদের অবস্থাও বেশ সচ্ছল। জমিজমা চাষবাস পুকুরবাগান, পাড়াগাঁয়ে যাহা থাকিলে সংসার চলিয়া যায়—সবই ছিল।


উপন্যাস সমগ্র ১২

এই পাণ্ডববর্জিত স্টেশনেও গােটা তিরিশেক লােক নেমেছে, তার মধ্যে ঠিক আমাদের কী করে চিনতে পারল কে জানে। হয়তাে আর সবাই স্থানীয় লােক, তাদের অন্ধকারেও চেনা যায়। কিংবা আমাদের মুখ কিংবা দাঁড়াবার ভঙ্গিতে কলকাতার নাম লেখা আছে। সুবিমল কিছুতেই অবাক হয় না সহজে, সপ্রতিভভাবে বলল, চল সুনীল। লােক দুটিকে জিজ্ঞেস করল, গাড়ি আছে তাে?


সাবোটাজ

ইংল্যাণ্ডের নেতারা ইচ্ছা প্রকাশ করলেন জর্মানী, ইতালির ফ্রান্সের ঘরের খবরাখবর চাই। ইনটেলিজেন্স সাভিসকে পুনগঠন করবার দাবী উঠল। যারা এই দাবী করেছিলেন তারা ছিলেন ধনী, জমিদার এবং রাজনীতিতে রক্ষণশীল। এরা দেশের অর্থনীতি তৈরি করতেন এবং এরা রাশিয়ার বিরােধী ছিলেন এবং কমনিজম এদের কাছে জুড়ি ছিল। এদের মধ্যে অনেকে হিটলারের গােপন সমর্থকও ছিলেন। একটি উদাহরণ হল সম্রাট পঞ্চম জজের বড় ছেলে প্রিন্স অব ওয়েলস, যিনি পরে ডিউক অব উইণ্ডসর নামে ইতিহাসে পরিচিত হয়ে ছিলেন, তিনি ছিলেন হিটলারের গােপন সমর্থক।