বাবার চাকরি ছিল রেলে। শৈশব ভাল করে পরিস্ফুট হয়নি তখননা, তার আগেই শুরু হল এক যাযাবর জীবন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কলকাতায়, আর যুদ্ধ থামবার আগেই বাবার সঙ্গে বদলি হয়ে ঘুরে ঘুরে আমরা সাতঘাটের জল খেয়েছি। বিহার, উত্তর বাংলা, পূর্ব বাংলা, আসাম। এক জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায়। পিছনে ফেলে এসেছি। পুরােনাে আসবাব, হেঁড়া বই, প্রিয় বন্ধু, পােষা কুকুর। কত কেঁদেছি, মনে মনে বলেছি—আমি এ জায়গা ছেড়ে কোথাও যাবাে না। পরে দেখেছি জীবন যা কেড়ে নেয় তাই ফিরিয়ে দেয় আবার। একটা সরে গিয়ে আর একটার কেমন জায়গা করে দেয়। পুরােনাে জায়গা ছেড়ে নতুন জায়গায় গিয়ে নির্লজ্জের মতাে বন্ধু পাতিয়েছি কতজনার সঙ্গে।
টাইটানিক জাহাজের মালিকের নাম ‘হােয়াইট স্টার লাইন। সংস্থাটি আমেরিকান হলেও এর সমস্ত সত্তাই ছিল ব্রিটিশ। কোম্পানির সব জাহাজই চলত ব্রিটিশ পতাকা নিয়ে। জাহাজগুলির কর্মী ও অফিসার—সবাই ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। অবশ্যই কোম্পানির প্রধান প্রশাসক ব্রুস ইসমে ব্রিটিশ। তখন জার্মানির সঙ্গে রেষারেষির ফলে ব্রিটেনের জাহাজ তৈরির কারখানাগুলাে ভাবতে শুরু করে, কী করে আরও বড় জাহাজ তৈরি করা যায়।
ঔপন্যাসিক স্বয়ং যখন চয়ন করে নেন তাঁর উপন্যাসমালার এক-একটি আখ্যান, তখন নিশ্চিতভাবেই সেই নির্বাচনের পিছনে কোনো–না-কোনো অভিপ্রায় কাজ করে। ‘শ্রীবুদ্ধদেব গুহর স্বনির্বাচিত উপন্যাস’ (প্রথম খণ্ড) আমাদের বিস্ময় উদ্রেক করেছিল। সাতটি উপন্যাস নিয়ে শুরু হয়েছিল যে-সিরিজ, তাঁর দ্বিতীয় খণ্ডে এসে রচিত হয় এমন এক জীবন যে- জীবনকে ঘিরে এমন এক বহুমাত্রিক আখ্যান, যার সহস্র দ্বার অবারিত। উপন্যাসের এই সহস্র দুয়ার দিয়ে পাঠক পরিভ্রমণ করেন কথাসাহিত্যের ভুবনে।
হাট শেষে তারা উল্কোপাত করে বাড়ি ফেরে। হাতে থাকে গামছায় বাঁধা দেড় কেজি চাল। জলিল মােল্লা, খােকা কোটাল, নগেন কোরােংয়াঁ, যতীন বেরা, হরেন ঘােড়া, হিমু চেঁকি, অখিল ভোড় একদল গরু ব্যাপারীর দালাল, শনিবার উলুবেড়ের হাটবারের দিন পাঁচটা গ্রাম থেকে এসে জোটে বিড়লাপুরের তিন ফটকে পােলের ফেরিঘাটায়। জোয়ারে নৌকো ছাড়বে। ততক্ষণ বসে বসে গাঁজা ডলে রওশন। পালােয়ানের কাছে। রওশন পেতলের সাঁপি পরানাে বিরাট বড় অর্ডারী কোলকেতে একবারে এক ভরি গাঁজা চড়ায়। কোলজেয় বল থাকে তাে দম মারাে। খােকা বুড়াে বার দুই টেনে বুলবুল করে নীলচে ধোঁয়া ছেড়ে খ্যাকশিয়ালের মতাে খ্যাকখ্যাক করে কাশতে কাশতে বলে, ‘কোজে যেন কয়লা হয়ে যায় মাইরি।
বৈষ্ণব শেঠ স্নান করতে-করতে তাকালেন পুকুরের অপর পাড়ের দিকে। তিনি দেখলেন সেখানে এক দীর্ঘাঙ্গ গৌরবর্ণ সুকান্ত ব্রাহ্মণ গাছের ছায়ায় গৃহদেবতা লক্ষ্মীজনার্দনকে ভােগ দিচ্ছেন। সপরিবার তিনি আশ্রয় নিয়েছেন ওই তেঁতুল গাছের তলায়। বৈষ্ণব শেঠ ইতিমধ্যেই শুনেছেন ব্রাহ্মণের কাহিনি, তাঁর পরিচয় ও নামও জেনেছেন। বৈষ্ণব নীলমণিকে বললেন,