সূচিপত্র
বক্তৃতা-এক
সামাজিক আসঞ্চন ও মানবিক প্রকৃতি
বক্তৃতা-দুই
সামাজিক আসঞ্জন ও সরকার
বক্তৃতা-তিন
ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের ভূমিকা
বক্তৃতা-চার
কৌশল ও মানবিক প্রকৃতির সংঘাত
বক্তৃতা-পাঁচ
নিয়ন্ত্রণ ও উদ্যোগ : তাদের যথানির্দিষ্ট ক্ষেত্র
বক্তৃতা-ছয়
ব্যক্তিভিক্তিক ও সামজিক নীতিবোধ
সূচিপত্র
* অবতরণিকা
* আশির দশকে বাংলাদেশের সমাজ
* রাষ্ট্র ও সমাজ বিষয়ে কিছু চিন্তা
* রাজত্ব কার
* আরেক নৈতিকতা
* মাপবো কি দিয়ে
* বাড়িঘর
* বাজারে কেনাবেচা
* খেলা ধূলা
* পুঁজির ক্রীড়াকৌতুক
* গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির লক্ষ্যে
* পতনের পর
* পুনরুত্থানের কারণ
* দুই প্রান্তে দুই জন
* মস্কোপস্থীদের ভবিষ্যত
* ঢাকা ও কলকাতা
* ইতিহাসের টান
* বিচ্ছেদের অপচয়
* দিনের খবর, রাতের কাছে
* বসাক স্যারকে হঠাৎ দেখা
সমালোচনা, প্রায়শই লক্ষ করা যায়, গতানুগতিক কথার ফুলঝুরি মাত্র। সেখানে থাকে না সৃষ্টির উত্তাপ, থাকে না নতুন অভিজ্ঞতার স্পর্শ। আবার কখনো কখনো সমালোচনাও হয়ে ওঠে সৃষ্টিশীল রচনা। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ধারার লেখক যে খুব বেশি নেই, তা বলাই বাহুল্য। আমাদের তরম্নণ সমালোচক পিয়াস মজিদ করম্নণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রবন্ধ গ্রন্থের মাধ্যমে সৃষ্টিশীল সমালোচনার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
পিয়াস মজিদ তরম্নণ কবি, নবীন কথাকার, সৃষ্টিপ্রিয় সমালোচক। গতানুগতিক পথে হাঁটেন না পিয়াস, নতুনের প্রতি তাঁর পিপাসা অমত্মহীন, বক্তব্যের পাশাপাশি গদ্যশৈলীতেও নিজস্বতার অভিসারী পিয়াস। সব মিলিয়ে প্রথম গদ্যগ্রন্থেই পিয়াস আমাদের আশান্বিত করেছেন, স্বাক্ষর রেখেছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। পিয়াস অনাবশ্যক কথা বলেন না, বক্তব্যহীন কথার জাল বোনাও তাঁর স্বভাব নয়। তিনি বিন্দু থেকে পৌঁছতে চান সিন্ধুতে - শিল্পমাতাল গদ্যভাষ্যে তুলে আনতে চান জীবনের না-বলা কথামালা। পাঠককে কাছে টেনে নেওয়া পিয়াসের গদ্যরীতির অব্যর্থ এক বৈশিষ্ট্য। তাঁর গদ্য-ঢং বক্তব্য প্রকাশে যেমন সহায়ক, তেমনি তা লেখকহৃদয়কে পাঠকের কাছে খোলাসা করতেও বিসত্মার করে সহযোগ। রবীন্দ্রনাথ থেকে আলতাফ হোসেন পর্যমত্ম শব্দসাধকদের সাহিত্যবৈশিষ্ট্য নিরূপণে পিয়াস করম্নণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রবন্ধ গ্রন্থে নিজস্বতার পরিচয় রেখেছেন নিজস্ব ঢঙে। মৌলিক এবং একই সঙ্গে গাঢ়-সংবেদী চিমত্মাবৃত্তে বিচরণশীল পিয়াস মজিদকে ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম-২০১২’ পুরস্কারপ্রাপ্তিতে অবারিত অভিনন্দন।
তিনি বাচ্চাকে তার কাজের জায়গায় নিয়ে যেতেন এবং যখন সে আর বাচ্চা থাকল না তখনও রােজই নিয়ে যেতেন। কারণ অন্যদের হাসিতামাশা আর কানাকানি তাকে আঘাত করতাে। তিনি তাকে অন্য বাচ্চাদের নিকট থেকে দূরে রাখতেন। মাইকেল কে বছরের পর বছর ধরে একটা কম্বলের উপরে বসে দেখত তার মা অন্য লােকের মেঝে মুছে চকচকে করে তুলছেন। সে শান্ত নীরব হয়ে বসে থাকা শিখেছিল ।
শুয়ে থাকতে থাকতে অনেক সময় সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। সারা গায়ে পােশাক, খেয়াল নেই, সমুদ্র-পাখীদের কলরব শুরু না হওয়া পর্যন্ত ঘুম আর ভাঙে না। জানালা দিয়ে চেয়ে দেখি বড় বড় কারখানার দালান, সিরিল্যাণ্ড-এর বন্দরঘাট-ঐখান থেকেই তাে রুটি নিয়ে আসি রােজ। আরাে খানিকক্ষণ শুয়ে থাকতে ভালাে লাগে, আশ্চর্য হয়ে ভাবি এইখানে নর্ডল্যাণ্ড-এ কি করে এলাম! তারপর ঈশ উনুনের ধার থেকে তার লম্বা কৃশ দেহটি মুড়ি দিয়ে বলটিতে একটু আওয়াজ করে হাই তুলে লেজ নেড়ে উঠে দাঁড়াত, আর আমিও লাফিয়ে উঠতাম-তিন চার ঘণ্টা বিশ্রামের পর তাে বটেই। নিবিড় আনন্দে তা ভরা... নিবিড় আনন্দে ভরা তাে সবই।
তেমন আলাদা করে বলার কোনাে অপেক্ষা রাখে না যে আমি আসলে একজন কুৎসিতদর্শন, মিকে ও পুরনাে ধ্যানধারণার পুরুষমানুষ। কিন্তু সারা জীবনই আমি ওই ধরনের পুরুষদের ঘেন্না করতে করতে ভান করেছি ঠিক উলটো, দেখাতে চেয়েছি আমি ওরকম কখনও নই, আলাদা। কিন্তু আজকের ঘটনাটা, আমি যা, ঠিক তাই হওয়ার জন্যে রােজার সঙ্গে আমার ওই কথাবার্তা, আমার মনে হয়েছিল আমার ভেতরে এক অন্য বিচারবােধ কাজ করছে। হাঁপিয়ে ওঠা ওই একান্ত নিজস্ব বিচারবুদ্ধিকে একটু আলাে-বাতাস দিতেই আমি রােজার কাছে অমন একটা প্রস্তাব দিয়েছি। তাছাড়া আরও মনে হয়েছিল যে আজ আমার এক নতুন জীবনের শুরু ঠিক এমনই একটা বয়সে, যখন বেশির ভাগ মরণশীলই অবধারিত মৃত।
নেলসন ম্যান্ডেলা জন্মগতভাবে একজন দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ। কিন্তু তিনি। আমাদের সকলের । তখন প্রশ্ন ওঠে না কোথায় তারা বাস করে এবং কেমন করে তারা জীবনযাপন করে। জেল থেকে বেরিয়ে আসার অল্প কিছুদিনের মধ্যে তিনি মানবিক সমঝােতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। যখন পৃথিবী অনেক গােপন ঘূণায়। একজন অন্যজনের দিক থেকে মুখ ফেরায় তিনি তখন হয়ে ওঠেন প্রেমের প্রতীক। তিনি প্রতিবাদ করে বলেন- আমি কোনাে সাধু সন্ন্যাসী নই। আমি দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ। তবে আমার দেশের মানুষের জন্য আমি হলাম রংধনু মানুষ। সত্যি কথা এবং সহজ কথা এই তার সমকক্ষ আর কেউ নেই।
মায়ের গভীর স্নেহ এবং সারাক্ষণ আগলে রাখার প্রবণতা, বাবার আধুনিক ফরাসী চিন্তাধারা পাজকে উগ্র রাজনৈতিক চিন্তা এবং বিপ্লবের প্রতি দুর্বলতা থেকে দূরে, নির্মল ও কোমল স্বভাবের মানুষ হিসেবে বড় হতে সাহায্য করেছিলাে। কিন্তু মেক্সিকোর বিপ্লবের বিভিন্ন সামাজিক প্রতিক্রিয়াগুলাে থেকে তিনি নিজেকে একেবারে শেকড়-ছেড়া বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি। পরবর্তী জীবনে এ বিষয়টি নিয়ে তিনি বিভিন্ন রকম বিশ্লেষণও করেছেন।
পাজের মনােজাগতিক তাড়া এবং ভালােলাগার বিষয়গুলাের অন্যতম মেক্সিকোর নিয়তি ও ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা। কখনাে কখনাে সেগুলাের জারিত সিদ্ধান্ত তাঁর কবিতায় এসেছে। তাঁর সেই অনুভূতি মেক্সিকোর প্রাকবিপ্লব বুদ্ধিবৃত্তিক-চরিত্রে প্রতিভাত, বিশেষ করে সংশয় এবং দ্বিধা। সেটাও হয়তাে তাঁর কাব্যিক ব্যক্তিত্বে কিছুটা রয়েছে।
টমাস এমন অনেক কিছু দেখতে পায় যা অন্যরা পায় না। খালের পরিষ্কার পানির নিচে সাতার কাটা মাছ। মিসেস ভন এমার্সফোর্টের মায়াজাল, পাশের বাড়িতে বসবাসকারী বিটোভ্যানের ভক্ত ডাইনী। মোহময়ী রূপের অধিকারিনী এলিজা যার একটি পা কৃত্রিম। এবং প্রভু যিশু, যিনি তাকে বলেন, ‘আমাকে শুধু যিশু বলো।’ টমাস তার কল্পনায় দেখা এই দৃশ্যাবলী লিপিবদ্ধ করে রাখেÑ যার নাম দিয়েছে সে সব পেয়েছির বই। এটা তাকে সান্ত্বনা এবং আশ্বাস দেয় যখন তার বাবা তাকে ভীষণ মারে, যখন স্বর্গের পরীরা তার মায়ের কালো চোখের জন্য কান্না করে। এবং এগুলো তাকে শক্তি যোগায় অবশেষে তার বাবার মুখোমুখি হওয়ার এবং সেই পথে এগিয়ে যাওয়ার বড় হয়ে সে যা হতে চায় ‘সুখী’।
প্রয়ােজন বা উচ্চাকাঙ্ক্ষার আর্জি জানাতে আসতে পারবে না। প্রথমে ধারণা হতে পারে যে এই নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি যে ব্যক্তি লাভবান হবেন তিনি রাজা মশাই নিজে কারণ, যেহেতু অল্পসংখ্যক মানুষ তাদের অভিযােগ নিয়ে তাকে বিরক্ত করার সুযােগ পায়, তিনি আরাে বেশি সময় আর ফসসরত পান তােষামােদ শােনার. বিবেচনা করার এবং উপভােগ করার। তবে, দ্বিতীয়বার চিন্তা করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, লােকসান আসলে রাজামশাইয়ের, এবং এটাই সত্যি, কারণ যখন মানুষ বুঝতে পারে যে, তাদের জবাব আসতে প্রয়ােজনের চেয়ে বেশি সময় নিচ্ছিল, তখন জনগণের প্রতিবাদ সামাজিক অসন্তোষ বাড়িয়ে তুলত বহুগুণ,
‘কোথাও দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের কাজ নয়/ ও নোঙর, তুমি ছোটো...’, বা ‘অথচ দোয়েল হে ভোরবেলা, দুপুর হে ঘুঘু/ আমি উদাসীন নম্র মুখর স্তব্ধতা নিয়ে/ আজও শিশুকাল আছি।’ কামাল চৌধুরীর ৪৪টি কবিতা নিয়ে এ কাব্যগ্রন্থ।
পাবলো নেরুদার এই আত্মজীবনীর সূত্রে আমরা কেবল একটি যুগের বিভিন্ন দেশের বহু বিশিষ্ট ও বরেণ্য কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও রাজনীতিকের নিবিড় সান্নিধ্যে আসারই সুযোগ পাব না, পাব একটি বিশাল কালপর্বের সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্থান-পতনেরও বহু বিচিত্র ঘটনার হার্দিক বিবরণ। এ গ্রন্থে তাঁর স্বদেশের প্রকৃতি, সমাজ ও রাজনীতি যেমন জীবন্ত, তেমনি জীবন্ত তাঁর একান্ত জীবনাচারের বহু বর্ণিল বিবরণ। অনুস্মৃতির পাঠ তাই এক বিরল অভিজ্ঞতা।
নাইজেরিয়ার আইবাে জনগােষ্ঠীর বিবিধ আচার-প্রথার গভীর ছাপ চিনুয়া আচেবের উপর তার শৈশবকাল থেকেই পড়তে শুরু করে। ওই প্রথাসমূহের অন্যতম একটি ছিল গল্প বলা, কিসসা-কাহিনী শােনানাে, পশুপাখির গল্প, আজগুবি গল্প। চিনুয়া আচেবে শৈশবে তার মা আর বড় বােন জিনােবিয়া উজোমার কাছ থেকে এ জাতীয় বহু গল্প শুনেছেন এবং মনপ্রাণ দিয়ে তা উপভােগ করেছেন। আমার মনে পড়ে আমাদের ঠাকুরমার ঝুলি ও ঠাকুরদাদার থলের গল্পাবলীর কথা। চিনুয়া আচেবে তার সব কিছু ভেঙে-চুরে যায়’ উপন্যাসের একটি পর্বে এই গল্প বলা ও গল্প শােনার ব্যাপারটি চমৎকারভাবে উপস্থিত করেছেন।