অভিরাম এক কাল্পনিক সাধারণ মানুষ। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বিগত শতাব্দীর সাতের দশক থেকে তার বসবাস। অনুপম এই কাব্যোপন্যাসে বিদ্ধৃত হয়েছে তাঁরই জীবনচিরত। ১১০টি চতুর্দশপদী কবিতায় লেখা এমন উপন্যাস শুধু বাংলা নয়, যে-কোনো ভাষার সাহিত্যেই বিরল
ড. নির্মল দাশের লেখক-জীবনের পরিধি প্রায় চল্লিশ বছর। লেখালেখির বিষয় ব্যাকরণ, ভাষাতত্ত্ব (বিশেষত উপভাষা), সমাজভাষাবিজ্ঞান, পুথিপাঠ ও প্রাক্-আধুনিক বাংলা সাহিত্য। ইদানীং ব্যাকরণ ও সাহিত্য বিষয়ে রম্যরচনাধর্মী কথোপকথনমূলক রচনা লিখে পাঠকমহলে বিশেষ সাড়া পেয়েছেন। এইসব রচনা থেকে কিছু প্রতিনিধিত্বমূলক রচনা বাছাই করে তাঁর ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই নির্বাচিত রচনা-সম্ভার প্রকাশিত হল।
প্রেম তো অনুভূতি মাত্র, ব্যক্তিভেদে সর্বদাই সে অন্য, কখনো কখনো অনন্যও বটে। তবে কেন এ সংগ্রহের নাম ‘অন্য প্রেম’? ‘অন্য’ কথাটি এখানে নিছকই পৃথক অর্থে গৃহীত হয়নি, হয়েছে স্বতন্ত্র এক প্রেমের ভুবনের দ্যোতক হিসেবে। এই ভুবনে পাঠকের যাতায়াত কদাচিৎ হয়ে থাকে, যেহেতু বাজারে প্রাপ্ত প্রেমের গল্পের সংকলনগুলি অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করে গল্পের তথাকথিত গ্রহণযোগ্যতার ওপর। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাস করি, গত একশো বছরে বাংলা কথাসাহিত্যে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য বিশ্বমানের প্রেমের গল্প, শুধু ছোটোগল্প হিসেবেই যেগুলি চিরায়ত, শাশ্বত। এই সংগ্রহ চয়ন করে নিয়েছে কেবলমাত্র সেই সকল প্রেমের গল্প, বাজার-নির্ধারিত সাহিত্যের চৌহদ্দির বাইরে যাওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে যারা। তাই রবীন্দ্রনাথ থেকে অভিজিৎ সেন পর্যন্ত ব্যপ্ত এ সংগ্রহের পাতা উলটে পাঠক শরিক হন ভিন্ন এক অনুভবে। যেন শতবর্ষের বাংলা ছোটোগল্পের মহানভ অঙ্গনে পরিভ্রমণ করে এলেন তিনি। পরিভ্রমণের এই অভিজ্ঞতা বহুমাত্রিক। কখনো তা সাক্ষী হয় একটি পুরুষকে কেন্দ্র করে নারী ও নাগিনীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার, আবার কখনো তা কালোবাজারে প্রেমের প্রকৃত দর জানতে পেরে বিস্ময়ে, ভয়ে শিউরে ওঠে। বুঝতে পারে, মরু ও সংঘের মধ্যেও হয়তো-বা প্রচ্ছন্ন থাকে কোনো এক বিষণ্ণ অন্ধকার, যে তমসা ছিন্ন করে আমাদের কানে ভেসে আসে মেঘমল্লার। রং বদলাতে থাকা গিরগিটির থেকে প্রথম সে মানবীর দুরত্ব যতদূর, বারান্দা থেকে ততদূর তাকালেও হয়তো শেষপর্যন্ত খুঁজে নেওয়া যায় না সেই সব আত্মহত্যার উত্তরাধুনিক উত্তরাধিকারের সূত্রটিকে। তাই এই সংগ্রহ শুধু অন্য কিংবা স্বতন্ত্র নয়, স্বয়ম্ভুও বটে। আপনা থেকেই সে গড়ে নেয় নিষ্কলুষতার এমন এক জাদুঘর, যেখানে মমি হয়ে আছে নিঃশব্দ চরাচর_যে চরাচর পেরিয়ে অন্য এক সকালবেলায় পৌঁছোতে গেলে পেরোতে হবে সাঁকো, পরে নিতে হবে আখ্যানের রক্ষাকবচ। ৩৬টি ছোটোগল্পে ছুঁয়ে নেওয়া চিরায়ত বাংলা প্রেমের গল্পের আশ্চর্য ভুবন।
কলকাতার সরকারি সংস্কৃত পাঠশালার ন্যায়শাস্ত্রের বিদ্যার্থী শ্রীঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভূগোলখগোলবর্ণনম্’-এর সানুবাদ আত্মপ্রকাশ ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় ব্রতী ব্যক্তিদের কাছে এক অমূল্যরতন। মূলত পাকেপ্রকারে বাধ্য হয়ে ‘ভুগোলখগোল’ বর্ণনায় হাত দিলেও প্রাচ্যবিদ্যার সঙ্গে পাশ্চাত্যবিদ্যার পাশাপাশি আলোচনা এবং তাকে নিজের অধীত বিদ্যার জারকরসে সিঞ্চিত করে পাঠকের দরবারে ঈশ্বরচন্দ্র এখানে উপস্থিত করেছেন। গভীর অধ্যায়নের স্বাক্ষর এই গ্রন্থ তাঁর নতুন জীবন-ভাষ্য রচনায় পথপ্রদর্শক হবে নিঃসন্দেহে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, ভারতের বিভিন্ন ভৌগোলিক ভাষায় এইবার এই গ্রন্থ অনুবাদ-সাহিত্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে_যে কাজের পথপ্রদর্শক হয়ে রইলেন অধ্যাপক অমিত ভট্টাচার্য।
হাতিবাগান বিশেষভাবেই ছিল বাংলা বইয়ের বাজার। বিয়ের পদ্য, থিয়েটারের হ্যাণ্ডবিল, কিছু বটতলা, গরাণহাটা, আহিরিটোলার চোথা বই পর্যন্ত এদের কাছে পাওয়া যেত। এতই মুখ ছিলুম যে তার কোনাে দামই তখন দিইনি। একবার অর্ধেন্দুশেখর নাট্য পাঠাগারের ছাপমারা প্রায় সত্তরআশিখানা অত্যন্ত পুরনাে কাব্য আর নাটক এদের কাছে এল। তাদের নামধাম আমার অজানা। আমি তাে যাকে বলে বাশবনে ডােম কানা! শেষ কালে তা থেকে নারাণবাবুই পনের-যােলখানি বেছে দিয়ে বলেছিলেন, সবগুলাে বই যদি নেন তাহলে নাটকের বেলায় একটাকা আর পদ্যের বই আটখানা হিসেবে পড়বে—নেবেন? আমি নিতে পারিনি। বিনােদিনী দাসীর কবিতার বইও এরা দিয়েছিলেন, কিন্তু লেখনী পুস্তিকা ভার্যা পরহস্তগত হলে আর তাে ফেরত আসে না। তাই এখন আর কাছে নেই।
সেই কোয়েলের কাছে থেকে তিনি আমাদের নিয়ে গেছেন একের পর এক মাধুকরী সংগ্রহের আরণ্যক অভিযান। পাশাপাশি, তাঁর তীব্র নাগরিক চেতনা উন্মোচিত করেছে মধ্যিবত্ত ও উচ্চমধ্যিবত্ত বাঙালি সমাজের যাবতীয় ভণ্ডামিকে। এরই মাঝে প্রস্ফুটিত হয়েছে প্রেম, তার তীব্র আবেগ, অনুপম অনুভব এবং শাশ্বত সংরাগ নিয়ে। এই পাঁচটি উপন্যাসেও অনায়াস ঋজুতায় বুদ্ধদেব ছুঁয়ে নেন নারীচরিত্র চিত্রায়ণে দক্ষতায় শীর্ষেন্দু। ‘উঁচুমহল’-এর মনীষা, ‘ঋক’-এর তৃষ্ণা, ‘আলোকঝারির দিনগুলিকে’-র শিলি, ‘পরিযায়ী’-র ঐশিকা এবং ‘ঝাঁকিদর্শন’-এর বউরানি—আমাদের চেনা চরিত্র হয়েও শেষ অবধি রয়ে যায় অচেনা। সৌন্দর্যে, সাহসে, রহস্যময়তায় তারা পাঠককে টেনে নিয়ে যায় ভিন্ন এক অন্তর্লোকের আরাধ্য দেবী আর বুদ্ধদেবের জাদুগদ্য তার চিরতৃষ্ণার্ত, চির-অপেক্ষমাণ, অভিমানী উপাসক।