বােবা-বােবা চেহারার বাড়ি। ছােট ছােট ফোকরচোখ জানলা আর চুনখসা খিলানের হাঁ। টুল-পাতা রেস্তোরাঁর সদাব্রত, সাজো-বাসি ধােবাখানা, তারপর, কী আশ্চর্য, তারপর একটা পার্ক। মরা ঘাস, ভাঙা রেলিং, কাঠা দুই জমি, তবু তাে পার্ক। রুদ্ধশ্বাস ইটকাঠের মধ্যে একটুখানি অক্সিজেনের আশ্বাস। আরও খানিক এগিয়ে, দু-তিনটে মােড় ঘুরে, তবে কিনু গােয়ালার গলি। পাশাপাশি চারটে শরীর গলে কি গলে না এমন গলি। এ-রাস্তা মোেটরের মুখ দেখেনি, ট্রাম-বাসের ক্ষীণতম ঘর্ঘরও পার্ক পর্যন্ত এসে মিলিয়ে গেছে; ছ্যাকড়া গাড়িও ঢুকতে চায় না। কখনও সখনও দু-একটা রিকশা ঢােকে, ঢুকেই পালাই-পালাই করে।
বহুদিন হইতে তাহার ঠেলাগাড়িতে চড়িয়া হাওয়া খাইবার শখ হইয়াছে, কিন্তু কিছুতেই তাহা মিটিবার উপায় হইতেছে না। ছয় বৎসরের এক নাতিনি আসিয়া। সরােদনে কহিল, পূজার নিমন্ত্রণে যাইবার মতাে তাহার একখানিও ভালাে কাপড় নাই। রামসুন্দর তাহা জানিতেন, এবং সে-সম্বন্ধে তামাক খাইতে খাইতে বৃদ্ধ অনেক চিন্তা করিয়াছেন। রায়বাহাদুরের বাড়ি যখন পূজার নিমন্ত্রণ হইবে তখন তাঁহার বধূগণকে অতি যৎসামান্য অলংকারে অনুগ্রহপত্র দরিদ্রের মতাে যাইতে হইবে, এ কথা স্মরণ করিয়া তিনি অনেক দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়াছেন; কিন্তু তাহাতে তাহার ললাটের বার্ধক্যরেখা গভীরতর অঙ্কিত হওয়া ছাড়া আর-কোনাে ফল হয় নাই।
“মেঘমল্লার” বইয়ের সূচীপত্র:
* মেঘমল্লার
* নাস্তিক
* উমারাণী
* বউ চণ্ডীর মাঠ
* নব বৃন্দাবন
* অভিশপ্ত
* খুকীর কাণ্ড
* ঠেলা গাড়ি
* পুঁই মাচা
* উপেক্ষিতা
ইউনিক সেলিং পােপােজিশন। সেটা কী? না, ওই দাঁতের মাজনটা ঠেলে সরিয়ে দিয়ে এটা কেননা। তােমার বউ বায়না করবে যে, আমি এইটে, এই বিশেষ ধরনেরটাই কিনব। বায়না করবেই, কারণ, রূপা যখন হায়দ্রাবাদে ওর দিদির বাড়ি বেড়াতে গেছিল, এটা দিয়ে দাঁত মেজে মনে হয়েছে অনেক বেশি ঝকঝকে হাসি হাসছে ও। এই ঝকঝকে’ ব্যাপারটাই হল রূপার বায়না-করা টুথপেস্টের ইউ এস পি, যা অন্য পেস্টে নেই।
অন্ধকার রাত। কাঁচামাটির রাস্তা। ধারের বড় বড় গাছগুলাের ঝাকড়া ডালপালা আকাশের তারার আলােকেও ঢেকে রেখেছে। তারই মধ্যে হাত তিনেক দূরে একটা দেশলাই এর আলােও রােশনাই বলে মনে হয়। ক্ষণিকের জন্যে রাত্রির সমস্ত অন্ধকার শুধু একটা মুখকে স্পষ্ট করে তােলবার পশ্চাদপট হয়ে উঠল। সে মুখ ভােলবার নয়।
তবে স্যার, আপনি যদি ধর্ম বা জাতি ব্যাপারে বিশিষ্ট গোঁড়া হয়ে থাকেন, তা হলে রবীন্দ্র-উদ্ধৃতিটা অতিশয়ে দুর্বোধ্য মনে হবে। মনে হবে, এ আবার কী কথা! এ-ও হয় নাকি! একই বাপ-মায়ের ওইরকম খ্রিস্টান-হিন্দু-বৈষ্ণব-মুসলমান সন্তান। এই ফ্যামিলির তা হলে, গােড়াতেই বার্থ কন্ট্রোল্ড হওয়া উচিত। কিন্তু না স্যার। কথাটা রাম-রহিম কথিত উক্তি নয়, রামা শ্যামা-যদুমধুর বাক্যি নয়। ওটি ভেবেছেন মহামনীষী রবীন্দ্রনাথ, যার কথা আগামী হয়তাে সহস্র বছরে সত্য প্রতিপন্ন হবে। যে দিন আপনি-আমি থাকব না। কিন্তু মানবজাতি এই ভারতবর্ষে থেকে যাবে। ধর্ম হবে মানুষের নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। মানুষের সভ্যতা সেই দিকেই এগগাচ্ছে। আপনার স্যার খারাপ লাগলেও, রবীন্দ্রনাথের কিছুই করার নেই।
আমি যে সময়ের কথা বলছি সেসময় রাজেশ খন্না খুব নামী একজন হিরাে। তার মতাে জামার উপর বেল্ট পরা আর-একদিকে কান্নিক মেরে হাঁটা ফ্যাশন। সেসময় পেট মােটা ফোলা-ফোলা মােটর গাড়ি চলে শহরের রাস্তায় আর ছােট বােতলে হাফ সার্কল ফুল সার্কল কোলা পাওয়া যায় দোকানে-দোকানে। আমি যে সময়ের কথা বলছি সেটা ১৯৭৪ সাল। আমার বয়স তখন সবে পনেরাে। মানে যে বয়সে মন আর গলা একসঙ্গে ভেঙে যায় আর কী!
এত ভুল দৃশ্যে চক্ষুষ্মন। বরং অন্ধতা কাম্য, অন্তত মায়া করে দুরূহ ট্রাফিকটুকু পার করে দেবে। ওই ব্যস্তসমস্ত রাস্তার ধারে এক কোণে ফুলে-পাতায় ভরা কৃষ্ণচূড়াটার তলায় চুপ করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়েছিল ও। শব্দ এসে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে শ্রবণে। কতরকম পায়ের আওয়াজ। কাকের ডাক, ফেরিওয়ালার হাঁক, সাইকেলের ট্রিং ট্রিং, রিকশার হর্ন, যানবাহনের কর্কশতা, পথচারীদের কোলাহল, ঝগড়া, গুঞ্জন, হাসি, কাশি, থুতু ফেলা, উড়ে আসা খিস্তিখেউড়... সমস্ত ক্যাকোফনি স্তব্ধ করে একা নিশ্বাসের শব্দ শুনবে বলে। গভীর আর শান্ত। দীর্ঘ আর উতল। একটা সুঘ্রাণ বয়ে আনা। ও জানে সে আসবে। মানে একটা
গা-ছমছমে ভয়ংকর বাঘের গল্প শুনতে কে-না ভালোবাসে! বনের রাজা বাঘ না হলেও, বাঘের চেহারা ও হাঁটা-চলার মধ্যে আছে আশ্চর্য রাজকীয় ব্যাপার। ‘বাঘ’ শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক শিহরণ জাগানো রোমাঞ্চ। সুন্দর রায়ের পুরুত ঠাকুরের মশাল হাতে বাঘের দিকে তেড়ে যাওয়া, কলমের কেরামতিতে সাপ-ব্যাং দিয়ে মজাদার বাঘ-শিকার, যোশিপুরের ফরেস্ট অফিসার সরোজবাবুর খৈরি নদীর ধার থেকে কুড়িয়ে আনা বাঘের বাচ্চা, ঋজুদার বন্দুকে লাওয়ালঙের বাঘ শিকার, বিধু দারোগার সেই বদন গাছে বেঁধে রাখা লাজুক বাঘের গল্পে ঠাসা এই বই। শিবরাম চক্রবর্তী, লীলা মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহ, শৈলেন ঘোষ, অতীন বন্দোপাধ্যায়, নির্বেদ রায়, এরকম পঁচিশজন লেখকের কলমে রোমাঞ্চকর পঁচিশটি মনকাড়া বাঘের গল্পের এই সংকলন। জঙ্গলের বাঘ জঙ্গলে থাকুক, অভয়ারণ্যের বাঘ থাকুক অভয়ারণ্যে। আমরা দুই মালাটের মধ্যে বন্দি পঁচিশটি বাঘের গল্প তুলে দিলাম মরমি পাঠকের হাতে।
কেন্তুম ও সতম গুচ্ছভাষাঃ ভাষা থাকলে উপভাষা থাকাই স্বাভাবিক। মূল ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাতেও নিশ্চয়ই উপভাষাগত বিভেদ ছিল। মূল ভাষার তালব্য ‘k' র উচ্চারণ ভেদ থেকে সর্বপ্রথম দুটি উপভাষা সৃষ্টি হ’ল। এই দুটি শাখার নাম কেন্তুম ও সতম। কিন্তু এইরূপ শ্রেণী নির্দেশ করার তাৎপর্য এমন নয় যে, কেন্তম শাখার উপভাষাগুলির মধ্যে পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্পর্ক বজায় আছে অথবা এমনভাবে কিছু মনে করার যুক্তি নেই যে, দুটি কেন্তুম শাখাভুক্ত উপভাষা শতম শাখাভুক্ত কোনাে উপভাষা থেকে অধিকতর নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। বস্তুতঃ মূল তালব্য ধ্বনির দু'ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করেই উপভাষাগুলিকে দুটি শাখায় বিন্যস্ত করা হয়ে থাকে। তবুও মনে রাখতে হবে যে, কেন্তুম ও শতম বিভাগদুটির বৈশিষ্ট্য কারণ নিরপেক্ষ বা স্ব-নির্ভর (unconditional) অর্থাৎ গাণিতিক সূত্রের মতাে অপরিবর্তনীয় এবং দৃঢ়মূল।
পরদিন সুলতান প্রাসাদে ফিরতেই ভাই-এর পরিবর্তন চোখে। পড়ল। খুশি হলেন তিনি। ভাইকে কাছে ডেকে বললেন, আমি শিকারে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তােমাকে বিমর্ষ দেখেছি। তারপর। হঠাৎ কি এমন ঘটেছে যে কারণে তােমার এই পরিবর্তন?। শাহজামান সামান্য ইতস্তত করে একে একে সমস্ত ঘটনা বিবৃত। করলেন। নিজের বেগমের কথা, তাঁর মৃত্যু, মানসিক বিষাদ, তারপর কুৎসিত মুরের সঙ্গে সুলতান বেগমের প্রেমলীলা। নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারলেন না সুলতান। শাহজামান বললেন, আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয় আপনি নিজেই। সব প্রত্যক্ষ করুন। তখনি সুলতান চতুর্দিকে ঘােষণা করে দিলেন তিনি আবার শিকারে। যাবেন।