নানা অন্বেষণ, ব্যাপক বিবিধ বিশ্বাস, রীতি ও আচার এবং ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রাচুর্য নিয়ে গড়ে ওঠা বিপুল বৈচিত্র্যের দেশ এই ভারত। অর্থশাস্ত্রী অমর্ত্য সেন-এর তর্কপ্রিয় ভারতীয় জ্ঞানদীপ্ত এমন কিছু নির্বাচিত রচনার সংকলন, যা এই ভারতের দীর্ঘ তার্কিক ঐতিহ্যের আলোকে দেশ ও তার ক্রমপরিপুষ্ট গণতন্ত্রকে অনুধাবন করবার প্রয়োজনীয়তাটিকে তুলে ধরে। এই ঐতিহ্যটি যে শুধুমাত্র তার সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক বিকাশের ইতিহাসটিকে প্রভাবিত করেছে তাই নয়, সেই সঙ্গে তার ধর্মীয় বিবিধতার ভিত্তি— মননগত বহুত্ববাদের ভাব-বিনিময়মূলক ও গতিবান ঐতিহ্যটিকে যথাযথ মূল্য দিতেই হবে। পশ্চিমি দুনিয়ার ধারণায় ভারত প্রায়শই এক অন্তহীন আধ্যাত্মিকতা ও অসংগত রহস্যবাদের দেশ। তা সত্ত্বেও ভারতের আছে। সংশয়বাদ ও যুক্তিপ্রয়োগের সুদীর্ঘ এক পরম্পরা। গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র ও রাজনৈতিক অর্থনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ অবদানগুলি ছাড়াও সব মহান সভ্যতার মতোই এর আছে। অজ্ঞেয়বাদী ও নাস্তিক্যবাদী সাহিত্যের বিপুলতম সম্ভার। লেখকের আলোচনায় উঠে আসে। ভারতের বুদ্ধিচর্চার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য যার মধ্যে পড়ে চতুর্থ ও তৃতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দে যথাক্রমে কৌটিল্য ও অশোক এবং খ্রিস্টােব্দ ১৫৯০-এর দশকে আকবরের রেখাঙ্কিত রাষ্ট্র সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইতিহাস ও প্রাসঙ্গিকতা; ভারতের প্রাচীন ও সুসম্বদ্ধ বর্ষপঞ্জি; সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা; এবং ভারতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে স্ৰষ্টা কবি রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গাঁধীর বিতর্ক। অমর্ত্যুর জোরালো যুক্তিতে উঠে আসে। ভারতের
সূচীপত্র:
১/ জনারণ্যে একজন
২/ হীরক দিপ্তী
৩/ তোমার-আমার
৪/ স্বর্গের নীচে মানুষ
৫/ একা এবং কয়েকজন
তিনি বলেছেন, “আমি বাঙালি জাতির বিদূষক মাত্র। তবে রসিকতাচ্ছলে সত্য কথা বলতে গিয়ে ভুল করেছি। কারণ নিত্য আমি দেখতে পাই যে, অনেকে আমার সত্য কথাকে রসিকতা বলে, আর আমার রসিকতাকে সত্য কথা বলে ভুল করেন। এখন এ ভুল শােধরাবার আর উপায় নেই। পাঠকেরা যে আমার লেখার ভিতর সত্য না, পান, রস পেয়েছেন, এতেই আমি কৃতার্থ।” (তদেব)। এই তীক্ষ ব্যঙ্গদিগ্ধ মন্তব্যের আলােয় প্রমথ চৌধুরীর মনের চেহারাটা আমাদের কাছে স্পষ্ট প্রতিভাত হয়। বাংলা সাহিত্যে ও বাঙালি জীবনে ইমােশ-এর অতিচর্চার ফলে মননশীলতার হানি হয়েছে এবং সেজন্য আমাদের জীবনে ও সাহিত্যে জ্ঞানের ফসল ফলেনি। এই কারণে আমাদের মানসিক অধঃপতন ঘটেছে।
গত বছর পুরাে একটি মাস টান টান উত্তেজনার পর হজরতবাল মসজিদে আটক সশস্ত্র কাশ্মীরি জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করল। টিভির পর্দায় সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে আবিদ হােসেন আর গােলাম রসুলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ওদের প্রসঙ্গ শুরু করার আগে ছােট্ট একটি ভূমিকা আছে। উনিশ শ’ পঁচাত্তর বা ছিয়াত্তরে আমাকে কাশ্মীর যেতে হয়েছিল। বম্বের এক ফিল্ম কোম্পানি বিদেশি গল্প বেমালুম চুরি করে তখন একটা ক্রাইম থ্রিলার জাতীয় ছবি তৈরির ছক পাকা করে ফেলেছে। কাশ্মীরের ব্যাকগ্রাউন্ডে বাংলা-হিন্দি দ্বিভাষিক ছবি। প্রােডিউসারের একটি লোেক, নাম সুরেশ বেরি, কলকাতায় এসে বললে, আমাকে লােকেশানে গিয়ে বাংলা সংলাপগুলাে লিখে দিতে হবে।
সঙ্গে সঙ্গে আজকালকার কবিতার আর একটা বিশেষত্ব নজরে পড়ে। সেটা হচ্ছে কোনাে কবিতা সমগ্রভাবে হয়তাে মনে কিছু দাগ কাটে, কিন্তু কোনাে বিশেষ পক্তি কিংবা কোনাে বিশেষ ছবি সব সময় মনে থাকে না। অর্থাৎ আবেগ দু একটা ছবিতে কিংবা দু একটা লাইনে দানা না বেঁধে সমস্ত লেখায় শিথিলভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক সময় উচ্ছাসে মিলিয়ে যায়। কবি শক্তিমান হলে এই বিস্তারের ফল যে শুভ হয় সেটা নিঃসন্দেহ। কিন্তু কবিদেরও বিচ্যুতি হয় বারে বারে; অনেক সময় বিলম্বিত লয়ে বিস্তারটা আবেগ-প্রসূত না হয়ে ছন্দের ও অভ্যাসের ঠেলায় হয়। এবং যেহেতু দশটা কবিতা লিখলে বড় জোর হয়তাে একটা উৎরােয়, সেহেতু পাঠকদের বিড়ম্বনার সম্ভাবনা আজকাল অনেক বেশি।
বাজখাই গলার চিৎকারে ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি চোখ খুললাম। ট্রেন কি চলছে? নাকি থেমে আছে? ট্রেনের এই একটা মজা। অনেকক্ষণ চলার পর থেমে গেলেও বােঝা যায় না। বাইরের বদলে ট্রেন তখন চলতে থাকে শরীরের ভেতরে। ভেতরের সেই ট্রেনটা মাঝেমধ্যে হুইল্ল দেয়, ঘটাং ঘটাং করে নদীর সাঁকো পেরােয়! উঠে বসলাম! না, ট্রেন থেমেই আছে। কামরা অন্ধকার। তবে একেবারে অন্ধকার নয়। কোথা থেকে যেন আবছা একটা আলাে আসছে। এই তাে ঘুমােনাের আগেই দেখেছি, করিডরে নীল রঙের ডুমাে ডুমাে আলাে জ্বলছিল। সেগুলাের কী হল? ট্রেন থামার সঙ্গে আলােও নিভে গেল! আবছা আলােটা কোথা থেকে আসছে? নিশ্চয় কোনও জানলা খােলা। আবার চিৎকার।
এ মুক্তি-ধারণা নিছক কবি-কল্পনা নয়। বহুবার দেখা গিয়েছে সন্ধ্যার সময় পশ্চিমপানে তাকাতে তাকাতে সাঁওতাল ছেলে হঠাৎ দাওয়া ছেড়ে সূর্যাস্তের দিকে রওয়ানা দিল। তারপর সে আর ফিরল না। মড়া পাওয়া গেল পরের দিন খােয়াইয়ের মাঝখানে—বাড়ি হতে অনেক দূরে; বুড়াে মাঝিরা বলে, ভূত তাকে ডেকেছিল, তারপর অন্ধকারে পথ হারিয়ে কী দেখেছে, কী ভয় পেয়ে মরেছে, কে জানে?
বড় রাস্তা থেকে বেশ অনেকটা দুরে আমার বাড়িটা এবং অন্য অনেক বাড়ির চেয়ে আমার বাড়ির আব্রু অনেক বেশি। এছাড়া আমার ভাড়াটেও হবে এই একটিই, আমার নিজের কোনাে পরিবারও নেই। মনে হয় উনি অন্য অনেক বাড়ি দেখে তবে আমার বাড়িটা পছন্দ করেন। আসল কথা উনি আড়াল খুঁজছিলেন, যে-কোনাে ভাড়া দিতে প্রস্তুত ছিলেন।
দু’মাস-ছ’মাসের কথা নয়, পঁচিশ বৎসরের কাহিনী বলিতেছি। বনমালী প্রাচীন হইয়াছেন। কয়েক বৎসর হইতে রােগে ভুগিয়া ভুগিয়া এইবার শয্যা আশ্রয় করিয়া টের পাইয়াছিলেন, আর বােধ হয় উঠিতে হইবে না। তিনি চিরদিনই ভগবৎপরায়ণ ও ধর্মভীরু। মরণে তাহার ভয় ছিল না। শুধু একমাত্র সন্তান বিজয়ার বিবাহ দিয়া যাইবার অবকাশ ঘটিল না মনে করিয়াই কিছু ক্ষুন্ন ছিলেন। সেদিন অপরাহুকালে হঠাৎ বিজয়ার হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে লইয়া বলিয়াছিলেন, মা, আমার ছেলে নেই বলে আমি এতটুকু দুঃখ করিনে। তুই আমার সব। এখনাে তাের।
রেডিওতে কড়কড় আওয়াজ হচ্ছে। কলকাতা বেতারকেন্দ্র একবার উকি মেরে আবার কোথায় লুকিয়ে পড়ল। তার বদলে ভেসে এল রেডিও পাকিস্তান। তারপর রেডিও পিকিং-এর কণ্ঠস্বর আসরে প্রবেশ করার চেষ্টা করল। রেডিওর বােতাম ঘােরানাে বন্ধ রেখে বিরক্ত ভদ্রলােক এবার প্রকাশের দিকে তাকালেন। সুপ্রকাশ যে বাঙালী তা তিনি আন্দাজ করে নিয়েই বললেন, “এমন দুর্বল রেডিও স্টেশন এই কলকাতা যে ওয়েস্ট বেঙ্গলের বাইরে ধরে কার সাধ্য!”
উড়তে উড়তে বাজপাখি যেমন তার বত্তকে ক্রমশ ছােট করে আনে, তারপর লাফিয়ে। পড়ে শিকারের ওপর তেমনি অভিরাম বহ, পরিশ্রম আর পর্যবেক্ষণের ফল হিসেবে যখন শিকারকে হাতের মুঠোয় পায়, তখন তার মনে নিঠুরতা নেই, হিংসা নেই, ক্রোধ নেই আছে শুধু পরিষ্কারভাবে কাজ শেষ করার চমৎকার আনন্দ। প্রতিটি হত্যার পর। তার মনে আশ্চর্য প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। কাজ শেষ হতে দেরি হলে, কিম্বা বাধা পড়লে। ভয়ানক বিরক্তি জন্মায়। জীবনের দ্বিতীয় কি তৃতীয় কাজের কথা এখনাে মনে পড়ে।
নয়নের বসবার ঘর দুইভাগে বিভক্ত। একপ্রান্ত জলপাই, আরেকপ্রান্ত সাদা। কার্পেট, দেয়ালের রং, বাতির শেড—সব ম্যাচ করা। জানালার বাইরে উঁকি মারছে জারুলের বেগুনি স্তবক। নিখুঁত আন্তর্জাতিক রুচিতে সাজানাে পরিবেশ, কোথাও বাহুল্য ছন্দপতন নেই। এ ঘরে ঢুকলে এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে এ বাড়ির গৃহকর্তা-গৃহকত্রী পরম সুখ আর সমঝােতার বন্ধনে আবদ্ধ। হয়ত আসলে তাই-ই। এবং আজকের মৃত প্রেম বুকে না থাকলে, সে সম্ভাবনাকে আমি হয়ত ঈর্ষাই করতাম।
‘বিভূতিভূষণ গল্প সমগ্র’ বইয়ের সূচিপত্রঃ
* সিঁদুরচরণ-৭
* একটি কোঠাবাড়ীর ইতিহাস-১৫
* বুধোর মায়ের মৃত্যু-২২
* ছেলে ধরা-৩২
* রামতারণ চাটুজ্যে, অথর-৩৭
* নুটি মন্তর-৪৬
* ফড় খেলা-৫১
* হাট-৫৫
* অরণ্যকাব্য-৫৯
* মণি ডাক্তার-৬৭
* পুরোনো কথা-৭৫
* খোসগল্প-৭৯
* একটি দিনের কথা-৮৪
* বাটি-চচ্চড়ি-৯০
* ডাইনী-৯৩
* বুধীর বাড়ি ফেরা-৯৬
* বিধু মাস্টার- ১০৭
* উন্নতি-১১১
* কিন্নর দল-১১৬
* ননীবালা-১২৮
* বিরজা হোম ও তার বাধা-১৩৪
* বুড়ো হাজরা কথা কয়-১৩৯
* কাশী কবিরাজের গল্প-১৪৭
* ছোটনাগপুরের জঙ্গলে-১৫২
* মায়া-১৫৪
* আমার ডাক্তারি-১৬১
* বর্শেলের বিড়ম্বনা-১৬৮
* কাদা-১৭২
* ভৌতিক পালঙ্ক-১৭৭
* যদু হাজরা ও শিখিধ্বজ-১৮২
* জন্ম ও মৃত্যু-১৮৯
* সই-১৯৫
* রামশরণ দারোগার গল্প- ১৯৭
* খুড়িমা-২০১
* বায়ুরোগ-২০৯
* অরন্ধনের নিমন্ত্রণ-২১৩
* লেখক-২২৬
* বড়বাবুর বাহাদুরি-২৩০
* অন্নপ্রাশন-২৩৫
* তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প-২৪৩
* ডাকগাড়ী-২৫৬
* অকারণ-২৬৪
* দ্রবময়ীর কাশীবাস-২৬৬
* ক্যানভাসার কৃষ্ণলাল-২৮১
* পারমিট-২৯০
* মুক্তি-২৯৭
* গায়ে হলুদ-৩০৭
* ঠাকুরদর গল্প-৩১৩
* ভিড়-৩১৯
* আরক-৩২৩
* থিয়েটারের টিকিট-৩২৮
* পাথক্য-৩১৩
* স্বপ্ন-বাসুদেব-৩৩৩
* অসাধারণ-৩৪৮
* নদীর ধারের বাড়ী-৩৫৪
* বিপদ-৩৬১
* জন্মদিন-৩৬৭
* কাঠ বিক্রি বুড়ো-৩৭৩
* হারুণ অল রসিদের বিপদ-৩৭৬
* সুলেখা-৩৮০
* রূপো বাঙল-৩৮৫
* তেঁতুলতলার ঘাট-৩৮৯
* দুই দিন-৩৯৫
* মাকাল-লতার কাহিনী-৪০০
* বংশলতিকার সন্ধানে- ৪০৩
* কমপিটিশন-৪১১
* ব্ল্যাকমার্কেট দমন কর-৪১৭
* তুচ্ছ-৪২০
* পিদিমের নিচে-৪২২
* সংসার-৪৩২
* হিঙের কচুরি-৪৪০
* দুই দিন- ৪৫১
* অনুশোচনা-৪৫৬
* দাদু-৪৫৯
* বাসা-৪৬৮
* বন্দী-৪৭৪
* থনটন কাকা-৪৮০
* কালচিতি-৪৮৪
* দিবাবসান-৪৯১
* মুশকিল-৪৯৩
* গল্প নয়-৪৯৭
* কুশল পাহাড়ী-৫০০
* ঝগড়া-৫০৪
* বড় দিদিমা-৫১৬
* অবিশ্বাস্য –৫২২
* খেলা-৫২৫
* জাল-৫৩৩
* আবির্ভাব-৫৪১
* মানতালাও-৫৪৪
* বে-নিয়ম-৫৫০
* অভিমানী-৫৫৭
* শিকারী-৫৬৪
* পরিহাস-৫৬৮
* জওহরলাল ও গড্-৫৭২
* গল্পনয়-৫৬৭
* সীতনাথের বাড়ি ফেরা-৫৭৮
* হরিকাকা-৫৮৬
* পথিকের বন্ধু-৫৯৩
* এমনিই হয়-৫৯৭
* ঝড়ের রাতে-৬০৫
* আর্টিস্ট-৬১০
* শেষ লেখা-৬১৫
* ভণ্ডুলমামার বাড়ি-৬২৩
* পেয়ালা-৬৩১
* উইলের খেয়াল –৬৩৫
* কনে দেখা-৬৪৩
* সার্থকাতা-৬৪৮
* একটি দিন-৬৫৩
* বাইশ বছর-৬৫৫
* বৈদ্যনাথ-৬৫৯
* ডানপিটে-৬৬৪
* যাত্রাবদল-৬৭৪
* মরীচিকা-৬৮২
* আমার লেখা-৬৮৮
* রহস্য –৬৯২
* অশরীরী- ৬৯৬
* বিশ্ব-শিল্পী- ৭০২
* বনে-পাহাড়ে-৭০৪
ভয়ানক বর্ষা। ক’দিন সমানভাবে চলিয়াছে; বিরাম বিশ্রাম নাই। প্রতুল মেসের বাসায় নিজের সিটটিতে বসিয়া বসিয়া বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছে। কোথায় বা বাহির হইবে? যাইবার উপায় নাই কোনদিকে, ছাদ চুঁইয়া ঘরে জল পড়িতেছে—সকাল হইতে বিছানাটা একবার এদিকে, একবার ওদিকে সরাইয়াই বা কতক্ষণ পারা যায়? সন্ধ্যার সময় আরও জোর বর্ষা নামিল। চারিদিক ধোঁয়াকার হইয়া উঠিল, বৃষ্টির জলের কুয়াশার ফাকে ফাকে গ্যাসের আলােগুলা রাস্তার ধারে ঝাপসা দেখাইতেছে।
পরদিন খুঁজিয়া হ্যারিংটন স্ট্রীট বাহির করিলাম, বন্ধুর বাড়িও বাহির করিলাম। বাড়ি খুব বড় নয়, তবে সামনে পিছনে বাগান। গেটে উইস্টারিয়া লতা, নেপালী দারােয়ান ও পিতলের প্লেট। লাল সুরকির বাঁকা রাস্তা। রাস্তার এক ধারেসবুজ ঘাসের বন, অন্য ধারে বড়বড়মুচুকুন্দ চাপাও আমগাছ। গাড়িবারান্দায়বড় একখানা মােটর গাড়ি।বড়লােকের বাড়ি নয় বলিয়া ভুল করিবার কোন দিক হইতে কোন উপায় নাই। সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিয়াই বসিবার ঘর। অবিনাশ আসিয়া আদর করিয়া ঘরে বসাইল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুরাতন দিনের কথাবার্তায় আমরা দুজনেই মশগুল হইয়া গেলাম। অবিনাশের বাবা ময়মনসিংহের একজন বড় জমিদার, কিন্তু সম্প্রতি কলিকাতার বাড়িতে তাহারা কেহই নাই। অবিনাশের এক ভগ্নীর বিবাহ উপলক্ষে গত অগ্রাহয়ণ মাসে দেশে গিয়াছিলেন- এখনও কেহই আসেন নাই।