কেউ বলেন, তিনি বিষন্নতার কবি, আবার কেউ তার লেখনীর মধ্যে এক অতীন্দ্রিয় জীবনবােধের সন্ধান করেছেন। কেউ বলেছেন, জীবনানন্দ মানে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মেলবন্ধন। কোনাে কোনাে উন্নাসিক সমালােচক আবার জীবনানন্দীয় কবিতাকে দুর্বোধ্য আখ্যা দিয়েছেন। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতায় এমন একটি নাম, যা রবীন্দ্রনাথের পর নির্দ্বিধায় স্মরণযােগ্য। এই যােগ্যতাকে আমরা কীসের নিরিখে পরিমাপ করব? মনে প্রশ্ন জাগে, কবিদের কবিত্বশক্তির বিচার কি এই ভাবে যােগ্যতার মাপকাঠিতে নির্ণীত হতে পারে? রবীন্দ্রনাথের মতাে জীবনানন্দও ছিলেন স্বতন্ত্র প্রতিভার অধিকারী। জীবনানন্দীয় কবিতা বিচার বিশ্লেষণ করতে হলে তার সময় এবং তার যুগকে অনুভব করা উচিত।
নববর্ষ মানে ক্যালেন্ডারের ছড়াছড়ি। তাদের কত না রূপ, কত বিচিত্র ধরন। যেমন, চোঙের ভেতর পাকিয়ে রাখা দেওয়াল ক্যালেন্ডারগুলাে; সেগুলােকে খুলে সােজা করে দেওয়ালে ঝােলানাের পরও পাকানাে ভাবটা থেকেই যায়, তারা যেন তাদের চোঙের ভেতরকার জীবনের স্মৃতিটা ভুলতেই চায় না! আবার দেখুন, টেবিল ক্যালেন্ডারগুলাের চেহারা, সুন্দর সুন্দর ছবিতে ভর্তি, কিন্তু তাতে তারিখগুলাে খুঁজে পাওয়া মুশকিল, সব ছবিতে ঢাকা। আর যে বস্তুটিতে রাখার জন্য তাদের নামকরণ টেবিল ক্যালেন্ডার, সেটাতে কী ঝামেলা করেই না তাদের বসাতে হয়।
ছদ কাকে বলে অথবা ছন্দের বিশ্লেষণ করা যায় কীভাবে, বাংলা ছন্দের কটা ধরণ আর কী বা তাদের পরিচয় – এসব নিয়ে এখনও অনেক লেখা সম্ভব, অনেকে লিখেছে তা। কিন্তু এ বইয়ের উদ্দেশ্য একটু ভিন্ন। কবির ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার ব্যবহৃত ছন্দের যােগ কোথায়, কীভাবে কোনাে কবি অল্পে অল্পে খুঁজে নেন তার নিজের ছদ, অথবা কীভাবে কোনাে ছদ যেন খুলে যায় এক মুক্তির দিকে, এই নিয়েই ছিল আমার নানা সময়ের ভাবনা।
‘ভবঘুরে শাস্ত্র’ লেখার প্রয়ােজনীয়তা আমি অনেক দিন থেকে অনুভব করছিলাম। আমার মনে হয় অন্যান্য সমধর্মী বন্ধুরাও এর প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করছিলেন। ভবঘুরেমির অঙ্কুর জাগানাে এই শাস্ত্রের কাজ নয়; বরং যে অঙ্কুর মাথা তুলেছে তার পুষ্টি ও পরিবর্ধন তথা পথ প্রদর্শন এ বইয়ের লক্ষ্য। ভবঘুরের পক্ষে উপযােগী সমস্ত কথা সূক্ষ্ম রূপে এখানে এসে গিয়েছে, এমন কথা বলা উচিত হবে না, কিন্তু যদি আমার ভবঘুরে বন্ধুরা তাদের জিজ্ঞাসা ও অভিজ্ঞতার দ্বারা সাহায্য করেন, তাহলে আশা করি, পরের সংস্করণে এর অপূর্ণতা অনেকটা দূর করা যাবে।
এ-ভাবেই একের পর এক করে, বিভিন্ন সুযােগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ হয়ে রকমারী ক্যামেরা হাজির হতে লাগলাে, তার সঙ্গে-সঙ্গে চাহিদাও বৃদ্ধি পেলাে আগ্রহশীল ফটোগ্রাফারদের আকাঙক্ষা মেটাতে। বহু কাজের সহায়ক হয়ে ফটোগ্রাফি একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে নিলাে অতি সহজেই। আজও সেভাবেই প্রচেষ্টা চলেছে নানা কাজের উপযােগী করে বিভিন্ন রকমের ক্যামেরা প্রস্তুত করার।
ক্রিস্টি কলম ছুঁয়েছেন আজ একশাে বছর হয়ে গেল, কিন্তু তার নির্যাসে আজও আমরা অর্থাৎ রহস্য পি সমধিক রােমাঞ্চিত হয়ে চলেছি। তার প্রতিটি সৃষ্টি আজও আমাদের চোখের সামনে চির নতুন হয়ে ধরা দেয়, আজকের জীবনের পটভূমিকাতেও। ধ্রুপদী সাহিত্যের এই গুনই সময়ান্তরে তাঁকে চিরকাল সমাদৃত করে রাখবে পাঠকের কাছে।
আজকের খবরের কাগজে কোনাে চাকরির বিজ্ঞাপন নেই। অর্জুন কাগজটাকে ভাঁজ করে আকাশের দিকে তাকাতেই যেন বুড়িদিকে দেখতে পেল। দু’বছর আগেও এই জলপাইগুড়ি শহরে বুড়িদির মতাে ফরসা সুন্দরী বােধহয় কেউ ছিল না। এমন রঙ ছবিতেও দেখা যায় না। তারপর কী হল কে জানে, বুড়িদির মুখে কালাে ছােপ জমতে লাগল। এখন সেগুলােয় ছেয়ে গেছে মুখ, তবু ফাঁকে ফাঁকে ফরসা চামড়াটাকে বােঝা যায়। কিন্তু সেটাই যে অস্বস্তির। এই দুপুরের আকাশটা যেন অবিকল বুড়িদি, সারা মুখে মেঘের মেচেতা নিয়ে বসে আছে।
রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য দীর্ঘদিন লাভ করিয়াছেন, বাংলা সাহিত্যের লেখকদের মধ্যে এমন সংখ্যা বেশি নয়। এই প্রসঙ্গে শ্ৰীপ্ৰমথনাথ বিশীর পর একমাত্র সৈয়দ মুজতবা আলীর নামই করা যায়। সৈয়দ মুজতবা আলীর নিকট একটি পূর্ণাঙ্গ কবিস্মৃতি লিখিবার অনুরোধ আমরা অনেকবার করিয়াছিলাম। লিখিবার বাসনাও তাঁহার হইয়াছিল। কতকটা সময়াভাব ও কতকটা আলস্যবশত শেষ পর্যন্ত তাহা হইয়া ওঠে নাই, যদিও তিনি বলিতেন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে বিভিন্ন স্থানে প্রবন্ধে যাহা লিখিয়াছেন তাহা সাজাইয়া সম্পাদন করিয়া একটি পূর্ণাঙ্গ স্মৃতি-গ্রন্থের রূপ দেওয়া বিশেষ আয়াসসাধ্য নয়। “গুরুদেব ও শান্তিনিকেতন’ গ্রন্থটির প্রকাশ তাহার সেই অপূর্ণ বাসনা পরিপূরণের একটি প্রয়াস মাত্র। এই গ্রন্থ সংকলন কালে “গুরুদেব” নামক প্রথম অংশে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্ৰ-সাহিত্য সম্পর্কিত রচনাগুলি সংকলিত হইয়াছে। শান্তিনিকেতন আশ্রম ও অন্যান্য আশ্রম-সতীর্থদের সম্বন্ধে মূল্যবান রচনাগুলি অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে “শান্তিনিকেতন’ নামক দ্বিতীয় অংশে। ‘গুরুদেব’ অংশের রচনাগুলির বিস্তৃত পরিচয় গ্রন্থ-পরিচয়ে দেওয়া হইয়াছে। গ্রন্থের দুই অংশেরই রচনাগুলি ঘটনা-পরম্পর্য ক্রম অনুসারে সাজানো হইয়াছে। ত্রুটিবিচূতি থাকিলেও থাকিতে পারে। সহৃদয় পাঠক কেহ সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করিলে বাধিত হইব।
আমাদের আজকের আলােচ্য বিষয় হল নাট্যকলা সম্পর্কে। সাহিত্য, চিত্র, নৃত্য, সঙ্গীত এই সমস্ত যেমন কলা হিসাবে স্বীকৃত, সেইরকম নাট্যকলাও কলা হিসাবে স্বীকৃত। কিন্তু এর মধ্যে একটা গােলযােগও আছে। একটা তফাতও আছে। তফাতটা এইরকম যে, ধরুন সাহিত্যকার, কিংবা একজন চিত্রকর বা একজন গায়ক যখন সৃষ্টি করেন তখন তিনি সােজাসুজি তাঁর পাঠক বা দর্শক বা শ্রোতা—তাঁদের জন্যই করেন। এবং সােজাসুজি তাঁদের কাছে পৌঁছেও দেন।
কিটু লাহিড়ির আসল নাম কীর্তি লাহিড়ি। ওর ডাকনাম কিছু, কিন্তু বােধ হয় আধুনিক হবার ঝোঁকেই নিজের ডাকনামকেই স্থায়ী করে নিয়েছে। এই গােয়েন্দাটি একটু অন্য রকম। ওর যে গুরু ফটিকচাঁদ সে আরও অন্যরকম। এরই ডাকনাম বাঘা। একদিন জেল থেকে বেরিয়েই সম্পূর্ণ অপরিচিত এই ব্যক্তি হঠাৎই বাড়ির তালা খুলে ঢুকে পড়েন কিটু লাহিড়ির বাড়িতে। সেই থেকেই কিছুর কাজের-লােক, বন্ধু, সহকারি, অভিভাবক এবং মুখ্য উপদেষ্টা। বাঘাকাকা না হলে কিটু লাহিড়ির আর উপায় নেই। সমস্যার সমাধান অনেক সময়েই বাঘাকাকাই করে দেন, কিটু তাতে একটু-আধটু মন খারাপ করে, কিন্তু উপায়ই বা কি ? বাঘাকাকা জানেন অনেক কিছু মনে রাখার ক্ষমতা অসাধারণ, আর যা রান্না করেন তা খেয়ে রাজা মহারাজারাও অখুসি হবেন না !
রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ থেকে সাজাদপুরে যাওয়ার সময় নিজেদের পদ্মাবােটে করে দুটি জলপথে যেতেন। এর একটি হল—শিলাইদহ থেকে পদ্মা পার হয়ে পাবনা শহরের কাছে ইছামতী নদী ধরতেন এবং ইছামতী ধরে যেতেন। ইছামতী যেখানে হুড়া সাগরে পড়েছে, সেখানে গিয়ে তিনি হুড়া সাগর ধরে বড়ল নদীতে যেতেন। কিছুটা গিয়ে বড়লের শাখা সােনাই নদী দিয়ে রাউতাড়া পর্যন্ত যেতেন। সেখান থেকে পালকিতে সাজাদপুরে কাছারির কুঠিবাড়িতে যেতেন।
রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ থেকে সাজাদপুরে যাওয়ার সময় নিজেদের পদ্মাবােটে করে দুটি জলপথে যেতেন। এর একটি হল—শিলাইদহ থেকে পদ্মা পার হয়ে পাবনা শহরের কাছে ইছামতী নদী ধরতেন এবং ইছামতী ধরে যেতেন। ইছামতী যেখানে হুড়া সাগরে পড়েছে, সেখানে গিয়ে তিনি হুড়া সাগর ধরে বড়ল নদীতে যেতেন। কিছুটা গিয়ে বড়লের শাখা সােনাই নদী দিয়ে রাউতাড়া পর্যন্ত যেতেন। সেখান থেকে পালকিতে সাজাদপুরে কাছারির কুঠিবাড়িতে যেতেন।