Categories


কালের কপোল তলে

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর যে চার দশক কাল অতিক্রান্ত হয়েছে, সেই সময়সীমার মধ্যে এ দেশের অর্জন মােটেই হেলাফেলা করার মতাে নয়। পরিসংখ্যানবিদরা নানা পরিসংখ্যান দিয়ে নানা ক্ষেত্রে সেই অর্জনের প্রমাণ হাজির করেছেন। এসব পরিসংখ্যানের খোঁজখবর যারা রাখেন না, তেমন সাধারণ মানুষেরাও খােলা চোখে তাকিয়েই আশপাশে সেসব অর্জনের প্রমাণ পেয়ে যেতে পারেন, এবং নিজেদের জীবনেও সেসবের কিছু-না-কিছু ছোঁয়া অনুভব করেন। বলতে গেলে এ অর্জনের পুরাে কৃতিত্বটাও এঁদের—অর্থাৎ এই সাধারণ মানুষদেরই। এদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গাঁয়ের কৃষক, এঁরাই “কর্মযােগে ঘর্ম ঝরিয়ে সােনার ফসল ফলাচ্ছেন, দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে তুলছেন। কৃষক দেখছেন যে নদীতে বাঁধা সােনার তরীটি—‘আমারই সােনার ধানে গিয়েছে ভরি।'


Roots

Roots resulted in a cultural phenomenon in the United States, kindling a deeper interest in African American history and heritage. It also forced the country to do a re-examination of its social and racial history. It made Americans look at where they stood on racial issues at the time the novel was published, in the late 1970s. The novel sets out to trace the author's family history, back to the first member of the family to set foot in America, Kunta Kinte. Haley had heard stories about this man from his grandmother, a man she referred to as the African. The family had an oral tradition, passing on the tales of this man and his descendants, through each generation.


Talking It Over

Shy, sensible banker Stuart has trouble with women; that is, until a fortuitous singles night, where he meets Gillian, a picture restorer recovering from a destructive affair. Stuart's best friend Oliver is his complete opposite – a language teacher who ‘talks like a dictionary', brash and feckless. Soon Stuart and Gillian are married, but it is not long before a tentative friendship between the three evolves into something far different. Talking It Over is a brilliant and intimate account of love's vicissitudes. It begins as a comedy of misunderstanding, then slowly darkens and deepens, drawing us compellingly into the quagmires of the heart.


History of the World in 10 1/2 Chapters

Funny, ironic, erudite, surprising, and not afraid to take a dive overboard into the depths of sorrow and loss. My novel of the year' Nadime Gordimer Beginning with an unlikely stowaway’s account of life on board Noah’s Ark, A History of the World in 10½ Chapters presents a surprising, subversive, fictional history of earth told from several kaleidoscopic perspectives. Noah disembarks from his ark but he and his Voyage are not forgotten: they are revisited in on other centuries and other climes - by a Victorian spinster mourning her father, by an American astronaut on an obsessive personal mission. We journey to the Titanic, to the Amazon, to the raft of the Medusa, and to an ecclesiastical court in medieval France where a bizarre case is about to begin... This is no ordinary history, but something stranger, a challenge and a delight for the reader's imagination. Ambitious yet accessible, witty and playfully serious, this is the work of a brilliant novelist.


একাত্তরের গণহত্যা: রাজধানী থেকে বিয়ানীবাজার

প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে জেগে আছে মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালির অসম সাহস ও বীরত্বের কথা মনে করিয়ে দেয় এই যুদ্ধ। কিন্তু এই যুদ্ধের ও প্রতিরোধের দিনগুলোর প্রতিটি প্রহর ছিল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় ভরা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সমগ্র বাংলাদেশে একাত্তরের পঁচিশে মার্চ থেকে দেশ স্বাধীন হবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যে-নারকীয় গণহত্যা চালিয়েছিল, তা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন নির্মমতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। গ্রামে-গঞ্জে-জনপদে পাকিস্তানিরা শুধু গণহত্যায় মেতে ওঠেনি; লক্ষ লক্ষ নারীকে ধর্ষণ করেছে। এই গণহত্যা ও নারী-ধর্ষণে পাকিস্তানিদের সহযোগী ছিল তাদের দোসররা।


Beloved

Margaret Garner escaped slavery in Kentucky, by fleeting to the free state, Ohio, in 1856. She killed her two-year-old daughter when she and her children were retrieved under the Fugitive Slave Act of 1850. In Beloved, the protagonist, Sethe, kills her daughter and tries killing her three other children, all of which happen in the same backdrop as the life of Margaret. Beloved won the Pulitzer Prize for Fiction in the year 1988 and made it as a finalist for the National Book Award in 1987. A movie of the same name was made in 1998, starring Oprah Winfrey and Danny Glover. The book depicts the poignant shades of not only slavery, but also of mother-daughter relationships and other human relationships intensely.


আগুনপাখি

ইতোমধ্যেই যে বই বিক্রি র শীর্ষে স্থান নিয়েছে। আর হাসান আজিজুল হক মানেই তো অন্য এক নতুন আবিষ্কার। যে আবিষ্কার ঢেউ তুলতে সক্ষম যে কোনো লেখায়। আগুনপাখি বাংলাসাহিত্যেই এক অভাবনীয় যোগ। কারণ এই উপন্যাসটি দিয়ে হাসান আজিজুল হক জানিয়ে দিয়েছেন তিনি শুধু অসম্ভব শক্তিমান ছোটগল্পকারই নন, তিনি একজন আধুনিক উপন্যাসিকও। গাঁয়ের একটি মেয়ে, বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ির বাইরে সে জানে চারপাশের মানুষজনকে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু । হিন্দু বলে তারা যে আলাদা, তেমন তো কিছু বোঝেনা সে । গভীর মমতায় সে গড়ে তোলে তাদের বড় একান্নবর্তী সংসার, আর রাতের নিরালায় স্বামীর কাছে শিখে নেয় অল্পসল্প লেখাপড়া । সুখ দুঃখ এর নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সে দেখে কেমন করে তার স্বামী জড়িয়ে পড়ে সামাজিক কাজে, হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায় এর কাছেই কতটা প্রিয় এক নেতা হয়ে ওঠে সে। কিন্তু হঠাত যেন পাল্টে যায় সব। তাদের একান্নবর্তী সংসারেও ধরে ভাঙ্গন, আর বাইরেও কোথা থেকে রব ওঠে যে দেশটাও নাকি ভাগ হয়ে যাবে । তা কি করে হয় ? দেশ আবার ভাগ হয় কেমন করে ? অবিশ্বাস্য সেই ঘটনাও সত্য হলো একদিন। মুসলমান পাড়া প্রতিবেশীরা চলে যেতে লাগলো ভিটে ছেড়ে । পরিজনেরাও । কিন্তু সে? না , সে কিছুতেই যাবেনা, কেননা, সে বলে " আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলেনা ক্যানে আলেদা একটো দ্যাশ হয়েছে ,...[কেন] এই দ্যাশটি আমার লয়।"


আইল্যান্ডস ইন দ্য স্ট্রীম

জাহাজঘাটা আর ভােলা সমুদ্রের মাঝখানে সরু হয়ে আসা জিহ্বার মতাে দেখতে

যে ভূমিখণ্ড, তার সবচেয়ে উঁচুতে জাহাজের মতাে মজবুত করেই বানানাে হয়েছিল বাড়িটা—তিন-তিনটি হারিকেনকে ও বুড়াে আঙুল দেখিয়েছে। ছায়া দেওয়ার উপযােগী করে রােপণ করা নারকেল চারাগুলাে বড় হয়েছে, বাণিজ্য বায়ুর ধাক্কায় ওরা নুয়ে পড়ে, শুয়ে পড়ে না । দরজা খুলে বের হলে তুমি সামনের পাথুরে বুলি ধরে নিচে নেমে সৈকতের সাদা বালু মাড়িয়ে সােজা গালফ স্ট্রীমে নেমে যা ডােবাতে পার। বাতাস যখন দম বন্ধ করে থাকে, তখন তুমি উপসাগরীয় স্রোতের দিকে তাকালে দেখবে কালচে নীল জমাট জলরাশি।

 


ডিসগ্রেস

উইন্ডসর ম্যানশনের বাইরে তার জীবন সম্পর্কে সুরাইয়া কিছুই বলে না। সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, সুরাইয়া তার প্রকৃত নাম নয়। সে যে সন্তান ভূমিষ্ঠ করেছে তার চিহ্ন রয়েছে। এটা হতে পারে যে সে আদৌ পেশাদার নয়। সে এজেন্সির হয়ে হয়ত সপ্তাহে এক অথবা দুই বিকাল কাজ করে এবং বাকি সময় রাইল্যান্ডস অথবা এথলনের উপকণ্ঠে পরিশীলিত জীবন অতিবাহিত করে। যা একজন মুসলমানের জন্য অনিত্যনৈমেত্তিক, কিন্তু বর্তমানে সবকিছুই সম্ভব।


এলিজাবেথ এন্ড আফ্‌টার

একদিন এলিজাবেথ ম্যাকেলভীও আগন্তক হয়ে এসেছিলেন এখানে। দীর্ঘ এক শীতের শেষে, বাস্তব এবং রূপক দুই অর্থেই, এক বসন্ত দিনে এই কবরস্থানের খিলান দিয়ে ভেতরে ঢুকেছিলেন তিনি। নিখুঁত, মসৃণ চুনাপাথরের গায়ে হাত রেখে, ঘন, ভেজা ঘাসের ওপর সন্তর্পণে পা ফেলে এগােচ্ছিলেন তিনি। সেদিন আকাশ ছিল পরিষ্কার, নীল ; কচি-কোমল পাতায় সূর্যের আলাে পিছলে পড়ে ঝিলিক দিয়ে উঠছিল। যে গাড়িটিতে তিনি এসেছিলেন, সেটি কোথায় উধাও হয়ে গেছে। গাড়ির চালক খানিকটা তফাতে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিল। এই নতুন পৃথিবীতে তিনি ভাবনার অতলে তলিয়ে গিয়েছিলেন। একদিন তিনিও এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হতে পারবেন- এমন একটা ভাবনা স্বভাবতই উকি দিয়েছিল মনে।


সাড়ে তিন হাত ভূমি

কোদালটা সহজেই পেয়ে গেছি, বাবা। গােয়ালঘরের পিছন দিকটায় পড়েছিল। সঙ্গে ভাঙাচোরা একটা চাঙারি। চাঙারি আমার দরকার নেই। আমার দরকার ছিল কোদাল। এই কোদাল দিয়ে গােয়ালঘরের ওদিককার গােবর আর ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে কদম। চাঙারি ভরে সেই আবর্জনা নিয়ে ফেলে আসে বাঁশঝাড়ের ওদিকটায়। দিনে দিনে ভঁই হয় জিনিসগুলাে। তারপর সার হিসাবে ফল ফলারি আর সবজি বাগানে ব্যবহার করা হয়।


আত্নস্মৃতি ও কয়েকটি কবিতা

দীর্ণ রক্তাক্ত স্বদেশের মুখচ্ছবি দেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার জন্য এর অর্থ হচ্ছে মৃত্যু।' এই আশঙ্কাবাণী উচ্চারণের কয়েক মাস পরেই নৃশংসতম ফাশিস্ত দংশন আক্রান্ত হয় চিলি এবং রক্ত, বারুদ ও বুলেটের ধোঁয়ার মাঝে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন পাবলাে নেরুদা, বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, স্পেনীয় কাব্যধারার মহত্তম প্রতিভা।

 


ঘরভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ্য

আহমাদ মোস্তফা কামাল ঘরবসতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ্য গল্পগ্রন্থে কুশলী কলমে তুলে ধরেছেন সমাজের নানা বৈকল্য ও বিকার, অসুখ ও স্খলনের গল্প। মানুষের মনের নিভৃতে আলো ফেলে ছেঁকে এনেছেন প্রেম, স্বপ্ন ও ভালো লাগার নিকষিত অনুভূতিগুলো। তাঁর গল্পে বাস্তব জটিল , বাস্তবের প্রকাশ জটিলতর। মানুষের স্বপ্ন বাস্তবের আঘাতে হারিয়ে যায়, প্রেম দিগভ্রান্ত হয়, প্রাপ্তির মুহূর্ত ঢুকে পড়ে অপ্রাপ্তির অঞ্চলে। যাত্রাদলের এক সদস্য অতীত স্মরণ করে কাঁদেন আশ্চর্য কান্না। স্বপ্নের আঘাতে কাতর মানুষের ওপর রূঢ় বাস্তবের চাবুক পড়ে। বিজ্ঞাপনের জৌলুশমাখা জগতে স্ত্রীকে হারিয়ে কেউ উৎকল্পনার হাত ধরে পরিত্রাণের পথে নামে। অনিদ্রায় আক্রান্ত একজন এক রাতে প্রেমের সন্ধান পায় । তরুণ বিপ্লবী পরীক্ষার মুহূর্তে তার আদর্শ হারিয়ে ফেলে। এক ঘোর লাগা মানুষ প্রকাশ্যে স্ত্রীর কাছে প্রেমানুভূতি জানাতে গিয়ে ডেকে আনে সর্বনাশ। এক শহরে অচেনা এক লোক এসে তার স্ফিংক্‌স -সদৃশ প্রশ্নে মানুষের সব হিসাব নিকাশ এলোমেলো করে দেয়।


হুলিয়া খালা ও অনুলেখক

মারিও ভার্গাস ইয়োসার দীপ্তিময় বহুস্তর বিশিষ্ট উপন্যাস পেরুতে লেখকের যৌবনে লিমার পটভূমিতে লেখা, মারিটো নামের এক তরুণ ছাত্র স্থানীয় রেডিও স্টেশনের সংবাদ বিভাগে কঠোর পরিশ্রম করে। দু’জন মানুষের আগমনের ঘটনায় তার জীবন বিঘ্নিত হয়। প্রথমটি হলো সদ্য তালাকপ্রাপ্তা, তার চেয়ে ১৩ বছরের বড় হুলিয়া খালা, যার সঙ্গে সে গোপন প্রণয়ে লিপ্ত হয়। আর দ্বিতীয় হলো বাতিকগ্রস্ত পাণ্ডুলিপি লেখক পেড্রো কামাকো, যার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কটুক্তিতে ভরপুর সোপ অপেরাগুলো নগরীর শ্রোতৃমণ্ডলীকে ক্রীতদাসের মতো গ্রথিত করে রাখে। মস্তিষ্ক বিকৃতির দিকে ধাবিত হতে থাকা পেড্রো তরুণ মারিটোকে তার আস্থাভাজন হিসেবে গ্রহণ করে। নিউইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউ-এর দৃষ্টিতে বছরের সেরা ধ্রুপদী সাহিত্য হিসেবে উল্লেখিত হাস্য রসাত্মক, দুষ্টুমীপূর্ণ ও অনিয়ন্ত্রিত ভার্গাস ইয়োসার এই উপন্যাসটি পেড্রো কামাকোর উত্তেজনায় ভরপুর গল্পগুলোর সঙ্গে মারিটোর গ্রথিত জীবনের গল্প।


হিরন্ময় দুঃখ এবং প্রতিদিন একটি পপি

পরিযায়ী পাখিদের ভ্রমণের নির্দিষ্ট একটা সময় প্রকৃতি বেধে দিয়েছে, কিন্তু যাদের পায়ের তলায় শর্ষে; সেই সব মানুষের দেশ ভ্রমণের কোনো সময় অসময় নেই। এর জ্বলন্ত প্রমাণ বহুমাত্রিক লেখক রাবেয়া খাতুন। জীবনের মধ্যসময়ে উপনীত হবার পূর্বেই পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধের অসংখ্য দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন। সেই সব ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন চমৎকার সব কাহিনী।
বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণ নির্ভর কাহিনীর অপ্রতুলতা না থাকলেও মনোজ্ঞ, মনোরম সুখপাঠ্য ভ্রমণ কাহিনীর অভাব রয়েছে। রাবেয়া খাতুনের ঐকান্তিক প্রয়াসে তার অনেকখানি আজ পূর্ণ। তাঁর কাহিনীর বৈশিষ্ট্য এখানে যে, তিনি ঘটনাটি বর্ণনা করেন তার সাথে তুলে আনেন সেখানকার অতীত ইতিহাস। তাই যখন তাঁর লেখা পড়ি, অবাক ইহ। এখানে ভ্রমণকে উপজিব্য করে লেখক তৈরি করেছেন মনোজ্ঞ উপন্যাস। যার টানাপোড়ন ও সুখ-দুঃখের সাথে পাঠক নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন।
গল্প পড়তে পড়তে পাঠক তার নিজের অবস্থানকে আবিষ্কার করবেন কখনও দেশে কখনও বিদেশে। দেশ যাই হোক চরিত্ররা সবাই বাঙালি এবং তাদের জীবন যাপন ও বৈচিত্র অনেককে অবাক করলেও পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে নানা ঘোরপাকে। বিশ্বাস করি বা না করি জীবনে অনেক কিছুই ঘটে যা অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবের জন্য ঘোর সত্যি।


চোর ও সারমেয় সমাচার

আবার সে স্বাধীনতার প্রাণদায়ী বাতাস বুক ভরে গ্রহণ করল। কিন্তু অসহ্য ভ্যাপসা গরম আর ধূলিমলিন বাতাসে দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল এবং পুরনাে নীল রঙের একটি স্যুট ও একজোড়া জুতাে ছাড়া তার জন্য আর কেউই বাইরে অপেক্ষা করছিল। ভেতরের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশাসহ জেলের দরজা যতই তার থেকে পিছু হটে যেতে থাকল, ততই রােদে তেতে-ওঠা রাস্তা, ঘঁাচর্ঘ্যাচ আওয়াজ তুলে চলে-যাওয়া গাড়ি এবং স্থির কিংবা চলমান মানুষের দঙ্গল নিয়ে পৃথিবী তার দিকে ফিরে আসতে লাগল।

 


এক বুড়ো আর সমুদ্র

বুড়াে একা, বড় একা। ওর ডিঙি নৌকাটা নিয়ে একা একা মাছ ধরতে যায় উপসাগরে। গত চুরাশি দিন একটাও মাছ ধরতে পারেনি। প্রথম চল্লিশ দিন একটা ছেলে ছিল ওর সাথে । কিন্তু চল্লিশ দিন পরে ছেলেটার বাবা-মা ওকে বললে যে বুড়াে অপয়া, আর তাই বাবা-মা’র হুকুমে ও এখন অন্য নৌকায় যায় আর প্রথম সপ্তাহেই ওরা তিন-তিনটে বড় মাছ ধরেছে ।কিন্তু রােজ বুড়াে খালি নৌকা নিয়ে ফিরছে দেখে ছেলেটার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। ও গিয়ে বুড়ােকে সাহায্য করে নৌকার মাছ ধরার সরঞ্জামগুলাে বয়ে নিয়ে আসতে। কখনও দড়াদড়িগুলাে, কখনও বা | কোচ, হারপুন অথবা নৌকার মাস্তুলে লাগানাে পালটা বয়ে নিয়ে আসে। ময়দার বস্তা কেটে অসংখ্য তালি মারা পাল, হাওয়ায় যখন ফুলে ওঠে, মনে হয় একটা হেরে যাওয়া লােকের পতাকা উড়ছে।

 


একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে

ডেক বলতে যা বােঝায় জাহাজে তা ছিল না। মাসটা জানুয়ারি হলেও জাহাজের পানশালার দুটো দিক একেবারে খােলা, জনা তিনেক লােক ঐ পানশালার সামনে দাঁড়ালেই মনে হবে যেন একগাদা লােক দাঁড়িয়ে আছে । গ্রীস দেশের লােকটা কাউন্টারে যে কফি বিক্রি করছিল তা অতি জঘন্য এবং তার ব্যবহারও ছিল অত্যন্ত কর্কশ। ইতালি থেকে আসা এক রাতের যাত্রীরা ছােট ঘরটার প্রায় সব কটা চেয়ার দখল করে নিয়েছিল। তাদের সঙ্গে যােগ দিয়েছিল উনিশ কুড়ি বছরের কয়েকজন আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ স্কুল পড়ুয়া, তারা বিনয়ী হলেও চালচলনে খুব সপ্রতিভ। পানশালা ছাড়া আর যে ঘরটা সাধারণের ব্যবহারের জন্য রাখা ছিল সেটা হল খাবার ঘর। সেখানে প্রথমবার ভােজনের ব্যবস্থা যারা করছিল তারা ঐ পানশালার লােকটার মতাে বদ-মেজাজী। এতদিন গ্রীক সৌজন্যের কথা শুনে এসেছিলাম। এখন মনে হল ওটা তীরভূমিতেই থেকে গিয়েছে। যারা কুঁড়ে, বেকার কিংবা গ্রামের হতাশাগ্রস্ত তারাই বুঝি সৌজন্যবােধ আঁকড়ে ধরে আছে।