Categories


গল্প সমগ্র-২য়

যার নাম সুখেন্দু, সে তখনও চা-এর গ্লাস হাতে নিয়ে বসে থাকে। মুখখানা শুকননা । কপালে অল্প ঘামে ধুলাে মেশানাে। অনেক দূর থেকে গাড়ি চালিয়ে এসেছে, গাড়িটা রাস্তার ওপাশে, কালাে রঙের মােটর, খানিকটা গাছের ছায়ায়, খানিকটা রােদুর লেগে আয়না হয়ে আছে। চা-এর গ্লাস ধরা সেই যার নাম সুখেন্দু, সে বললো, আমার বড় খিদে পেয়েছে, আমি আর ড্রাইভ করতে পারবাে না—এখনাে দু ঘন্টা।


তিস্তা যাবেই

আজ রাত দশটায় মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছিল পরাগ। গত দেড় ঘণ্টা ভীষণ অসহায়ভাবে কেটেছে তার। এখন সে হাওড়া স্টেশনে। মেন লাইনের শেষ লােকালে বসে আছে। যাত্রীদের বদান্যতায় সিট পেয়েছে জানলার পাশে। ক্রমে ফিরে পাচ্ছে সেই বিশ্বাস। লাস্ট ট্রেনে ফিরলে বােঝা যায় এখনও বেশ কিছু হৃদয়বান মানুষ আছে। পৃথিবীতে। ট্রেনে উঠেই উল্টোদিকের দরজায় চলে গিয়েছিল পরাগ। আশঙ্কা ছিলই, কিছুক্ষণের মধ্যেই পেট আঁচিয়ে উঠে এল যাবতীয় মদ ও খাবার। ঘণ্টাখানেক আগে তিস্তার জামাইবাবু পার্ক স্ট্রিটের রেস্টোরেন্টে বসিয়ে খাইয়েছিল ওই সব।


ধূসর বিষাদ

বাতিকে ধরেছে। নতুন কেন বলব, আগেও ছিল। তবে এতটা ছিল না। ভাস্বতী আবার একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল—সন্দেহবাতিক রে । সারাক্ষণ নােংরা নােংরা সন্দেহ মাথায় ঘুরছে। তুমি ওই ছেলেটার সঙ্গে কথা বলাে কেন ! ওর দিকে তাকিয়ে হাসলে কেন! অফিস থেকে ফিরতে এত রাত হল কেন! রাহুলকে তাে তােরা দেখেছিস, বুবলুর জন্মদিনে এসেছিল, খুব ক্যারিকেচার করছিল...তনুশ্রীর ভাই...আমার থেকে ছেলেটা কত ছােট, আমার ভায়ের মত...তাকে নিয়ে পর্যন্ত কী ভাষায় যে কথা বলে তুই কল্পনাও করতে পারবি না দাদা।


বিশ শতকের বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতি

তাঁর সমস্ত স্নেহ-প্রেম-করুণা, ভালােবাসা এতটা আকর্ষণ করেছিল যে, তার জ্ঞানবিশ্বাসে স্বর্গের দেবতার জন্য শ্রদ্ধা ভক্তির বিশেষ কিছু অবশিষ্ট ছিল না। আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর এই অভিমত একালেও প্রশ্ন জাগিয়ে তুলবে, “স্বর্গের দেবতায় তাহার কিরূপ আস্থা ছিল জানি না, কিন্তু স্বর্গাদপি গরীয়ান জীবন্ত দেবের তুষ্টির জন্য আপনার ধর্মবুদ্ধিকে পর্যন্ত বলিদান দেওয়া সময় বিশেষে প্রয়ােজন হইতে পারে, তাহা তিনি স্বীকার করিতেন।” 'L' uomo universale—বিশ্বাসই তার অধিদেবতা, এ দিক থেকে এই ব্রাহ্মণ সন্তান আধুনিক য়ুরােপীয় লােকাশ্রয়বাদী সমাজদার্শনিকদের সঙ্গে তুলনীয়। ভারতীয় ধর্ম, দর্শন, সমাজ, স্মৃতিসংহিতায় তার ছিল অবাধ অধিকার, কিন্তু মানবহিতবাদই তার সমস্ত চেষ্টাকে নিয়ন্ত্রিত করেছিল।


সহজ কথায় মাছচাষ(রঙিন মাছের চাষ ও প্রজনন সহ)

গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে মাছ চাষের একটি বিশাল ভূমিকা আছে। সভ্যতার আদিকাল থেকেই মাছ মানব জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। মাছ একদিকে যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের যোগান দেয়, তেমনই মাছচাষীকে অর্থবহ অর্থাগমের সুযোগ করে দেয়। বিজ্ঞানসম্মত মাছচাষের প্রযুক্তি সঠিক ব্যবহার করার জন্য মাছের উৎপাদন অনেক গুণ বেড়েছে। মাছের প্রণোদিত প্রজননের প্রযুক্তির মাধ্যমে অধিক পরিমাণ চারা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে ও তার চাহিদাপূরণও সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে অনেকে মাছচাষ ও তার প্রজননকে জীবিকা অর্জনের পন্থা হিসাবে নিয়েছেন। আবার অনেকেই এইসব প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার জন্য মাছচাষকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন না। বাংলা ভাষায় মাছচাষের বইয়ের অপ্রতুলতার জন্য অনেক মাছচাষী, উদ্যোগপতিরা মাছচাষ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও নতুন নতুন ধারণা পান না। আশাকরি এই বইটি সহজ কথায় মাছচাষ।”—এই সমস্যা কিছুটা সমাধান করবে। বইটি মাছচাষ সংক্রান্ত প্ৰযুক্তি বিস্তারে সহায়ক হলে, আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে। মৎস্যবিজ্ঞান পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছেও এই বইটি সমাদর লাভ করবে। বইটিতে ব্যবহৃত তথ্য ও বিজ্ঞানসম্মত ধারণা ভবিষ্যতে তাদের মাছ নিয়ে উচ্চ পড়াশুনায় সহায়ক হবে। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্তৃপক্ষ, সমস্ত শিক্ষক ও কর্মচারীবন্ধু ও আমার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সহকমীরা (ড. নারায়ণচন্দ্র সাহু, ড. সংকর সাহা, শ্ৰী শিবানন্দ সিংহ, ড. সুকান্ত বিশ্বাস, শ্ৰী নকুল মণ্ডল, ড. সৌমেন মহাপাত্র, সুদীপ্ত দেবনাথ ও বিশ্বজিৎ তালুকদার) বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের আঞ্চলিক প্রকল্প নির্দেশনালয়,অঞ্চল-II-এর আঞ্চলিক প্রকল্প নির্দেশক ও বিজ্ঞানীদের কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, যাদের অনুপ্রেরণায় বইটি সম্পূর্ণ রূপ পেয়েছে। এই বই লেখার কাজে আমাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন ড. ইন্দ্ৰনীল দাস, সহ রসায়নবিদ, সার নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার, বহরমপুর এবং চন্দ্ৰশেখর চ্যাটাজী ও অরিন্দম ব্যানার্জি। আমার শিক্ষক মহাশয় ড. শ্যাম সুন্দর দানা ও ড. শিবকিঙ্কর দাস, অধ্যাপক, মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, প: ব: প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন সময়ে এই বই লেখার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, ওনাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। দে’জ পাবলিশিং-এর কর্ণধার শ্ৰী সুধাংশুশেখর দে বইটি প্রকাশনার দায়িত্ব নেওয়ায় আমি তার কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। পরিশেষে, যাদের কথা না বললে আমার বইটি অসমাপ্ত হয়ে যাবে তারা হলেন আমায় একান্ত নিকটজনেরা, আমার দাদু, বাবা-মা, কাকা-কাকীমারা, দাদা (ড. বিশ্বরূপ গোস্বামী), বৌদি (ড. জ্যোতিরানী গোস্বামী), ভাইবোনেরা (স্মরণিকা, সৌম্যব্রত, দেবার্থ, শুভ্ৰজিৎ, নীলাঞ্জন ও ঐন্দ্রিলা), আমার স্ত্রী (শ্ৰীমতি সংঘমিত্ৰা গোস্বামী) ও মেয়ে (অদ্রিজা গোস্বামী)-ওনাদের আন্তরিক প্রার্থনা ও প্রচেষ্টায় এই বইটির আত্মপ্রকাশ সম্ভব হয়েছে।


উড়াল

আমার সামনে সেই মেয়ে। যাকে ক’দিন ধরেই লক্ষ্য করছি। ও-ও কি। সেটা খেয়াল করেছে? ঘন চন্দনবাটার মতাে রং। এক-পিঠ কালাে চুল। পুয়ের্তোরিকান? মেক্সিকান? নাকি ক্রেওল? অ্যাকসেন্ট থেকে বােঝা গেল না। কি জানি কালাে মেয়েও হতে পারে। অনেক কৃষ্ণাঙ্গদের গায়ের রং বেশি কালাে হয় না। নাঃ, কৃষ্ণাঙ্গ নয়। হতে পারে না। ওই নাক, ওতে অন্য ইতিহাসের চিহ্ন। হয়তাে ইহুদী হতে পারে। টানা সােজা, লম্বা, কালাে চুল কোমর পর্যন্ত। চওড়া কালাে চামড়ার ওপরে রুপােলি স্টীলের বােতাম লাগানাে বেল্ট-টা পর্যন্ত একটা ভারী সিল্কের পর্দার মতাে ঝুলছে। হিস্পানিক মেয়েই হবে। ইংরেজি উচ্চারণ যদিও খুব স্পষ্ট, হিস্পানিক অ্যাকসেন্ট নেই।


পাড়ি

‘ছ’ বছরের মেয়ে, রাত জাগবে কী? ওর তােমার মতন তাে কিছুই পারার কথা নয়, শমী। তবু তাে মিতুল প্রচুর কিছু পারে। সকালে উঠে নিজে নিজেই মুখটুক ধুয়ে স্কুলের পােশাক পরে তৈরি হয়ে নেয়। সেটা কম কথা? এবার দেখাে, মিতুলই তােমাকে বেড-টী করে দেবে।


শনি-রবি

সরমা যা বলেন সেটা ভুল নয়। চুলের ওপরে না হয় কলপ মাখানাে যায়, কিন্তু হাড়ের ভেতরে কলপ লাগাবে কেমন করে? চুলে কলপ দেওয়ার অভ্যেসটা এতদিনে ছাড়িয়েছেন বড়বৌদি। কিন্তু চুলগুলাে এখনও ধপধপে শাদা হলাে না। তারও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সরমা। বলেছেন, “এখন কিছুদিন মেহেন্দী লাগাও ছােঠাকুরপাে। তােমাদের গাইয়ে-বাজিয়েদের মধ্যে তাে মেহেন্দীর বেশ চল রয়েছে। পরে ঠিক হয়ে যাবে।”


জলে আঁকা

দীপা চিন্তিত মুখে বলল, “ঠিকই বলেছিস, আমিও করব। পারলে আজ থেকেই শুরু করে দেব। তুই যা ভয় পাইয়ে দিলি। রান্নাও শিখব, আবার টিভিও দেখব। আজই বাড়ি গিয়ে একটা রুটিন তৈরি করে ফেললে কেমন হয় ? তাের কাছে কোনও সাজেশান আছে? এই ধর কোনটা ইনপর্ট্যান্ট সিরিয়াল, কোনটা ভেরি ইনপর্ট্যান্ট, এই রকম আর কী। তাহলে সেগুলাের পাশে স্টার লাগিয়ে বসে যাব। পরীক্ষায় সাজেশন হলই আসল।


পদ্য পাগলের পাণ্ডুলিপি

চমৎকার একটা বই এসে গেল হাতে। শ-র আলমারী ভেঙে আনা। কথা দিয়েছি পড়া হলেই তৎমুহূর্তে ফেরত। কিন্তু আসল ফ্যালাসিটা ওখানেই। পড়া হলে। পড়া যদি এ জীবনে শেষ না হয় ? আমি সারা জীবনে কোনাে বই শেষ পর্যন্ত পড়তে পারিনি। পড়তে পড়তে, খারাপ লাগলে তাে অন্য কথা, ছুড়েই ফেলে দি। ভালােলাগা বই-এর কথাই বলছি শুধু। পড়তে পড়তে হঠাৎ আলাের ঝলকানির মতাে কিছু একটা যেই ঘটে যায় বুকের মধ্যে কিংবা বুকের ভিতরটায় গমগমিয়ে ওঠে লম্বা ব্রীজের উপর ট্রেনের শব্দের। মতাে কোনাে দুর্দান্ত অনুভব, আমি সে বই আর পড়ি না, অন্তত তখনকার মত। তখন হয়ে যাই গৃহপালিত গাভী।


উপেন্দ্রকিশোর সমগ্র

একদিন রাজা দশরথ পুরােহিত আর মন্ত্রীদিগকে সইয়া ছেলেদের বিবাহের পরামর্শ করিতেছেন, এমন সময় বিশ্বামিত্র মুনি তাহার সহিত দেখা করিতে আসিলেন। মুনিদের ভিতরে বিশ্বামিত্রের মান বড়ই বেশি। তাহার মত তপস্যা খুব কম লােকেই করিয়াছে, তেমন ক্ষমতাও খুব কম লােকেরই আছে। তাহাতে আবার লােকটি বিলক্ষণ একটু রাগী। এরূপ লােককে যেমন করিয়া আদর-যত্ন করিতে হয়, দশরথ তাহার কিছুই বাকি রাখিলেন না। তারপর তিনি বলিলেন, ‘মুনিঠাকুর, আপনি যে আসিয়াছেন, ইহা আমার বড়ই সৌভাগ্য; আর ইহাতে আমি খুবই সুখী হইলাম। এখন আপনি কী চাহেন বলুন আমি তাহাই দিতেছি।


রচনাসমগ্র ১ম খণ্ড

মেজবােন কনকের যাওয়া হল না। দিন দশেক হল কাশিতে কষ্ট পাচ্ছে সরল। ছানি কাটলেও চোখগুলাে আর আগের মতাে কাজ করে না। কার ফোন?’ বলতে কনক কিছু ভাঙল না বুডাের কাছে। মকরধ্বজ মেড়ে খলে চাল ধােয়া জল ঢেলে দিল একটু-তারপর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বারান্দার কোণে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। হয়তাে তরঙ্গিণী ঠিক এখনই মরে যাচ্ছে।


রচনাসমগ্র ২য় খণ্ড

করখানায় জানাজা নমাজ পড়ার সময় হাত পা ধুয়ে বসার জন্যে এই পুকুর কাটানাে হয়েছিল একদিন। এখন অযত্নে পড়ে থাকা এই ভাঙা ঘাট, শ্যাওলা ঢাকা পুকুর যে কোনাে স্মৃতিভারাক্রান্ত মানুষের মন আরও ভারী করে তুলবে। পৃথিবীতে আমরা আসি অল্পদিনের জন্যে। একদিন যাব—চলে যাব—যেতেই হবে—এই ভাবনায়, ভয়ে নানাভাবে আমরা মৃত্যুর পরেও নিজেকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। সেজন্যেই স্মৃতি, স্মৃতিসৌধ, মঠ, ফলক।


দ্রৌপদী

নয়নের বসবার ঘর দুইভাগে বিভক্ত। একপ্রান্ত জলপাই, আরেকপ্রান্ত সাদা। কার্পেট, দেয়ালের রং, বাতির শেড—সব ম্যাচ করা। জানালার বাইরে উঁকি মারছে জারুলের বেগুনি স্তবক। নিখুঁত আন্তর্জাতিক রুচিতে সাজানাে পরিবেশ, কোথাও বাহুল্য ছন্দপতন নেই। এ ঘরে ঢুকলে এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে এ বাড়ির গৃহকর্তা-গৃহকত্রী পরম সুখ আর সমঝােতার বন্ধনে আবদ্ধ। হয়ত আসলে তাই-ই। এবং আজকের মৃত প্রেম বুকে না থাকলে, সে সম্ভাবনাকে আমি হয়ত ঈর্ষাই করতাম।


গল্পসমগ্র -২য়

তখনই কিন্তু গঙ্গার দিকে না গিয়ে আমি ওঁকে নিয়ে কেল্লার দিকে রাস্তা ধরে আরও একটু হাঁটলাম । হাওয়া ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। বেশ শীতের শিরশিরে ভাব। উনি শালটা ভালােভাবে জড়িয়ে নিলেন শরীরে। আপনমনেই বললেন, কলকাতায় আছি, অথচ এতখানি সময় আমার নিজস্ব, এটা যেন ঠিক বিশ্বাসই করতে পারছি না। কলকাতায় অভিযােগ অনেক বেশি থাকে।


খুঁজে ফিরি কুন্ডলিনী

হবার সময় এ নাম বলতে হেডমাষ্টার বললেন, এ নামটা ভাল নয়, তাের ভাল নাম কি জেনে আয়। বাড়ি ফিরে দেখি পিসিমা পড়ছেন শ্রীমদ্ভাগবত। পিসিমাকে জিজ্ঞাসা করলাম, পিসিমা আমার ভাল নাম কি? তিনি তখন বােধহয় পড়ছিলেন সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম-স্বরূপের কথা। না ভেবে, না চিন্তে বলে দিলেন, যা, বলগে সচ্চিদানন্দ। দুটো নামের সঙ্গেই জুড়ে গেল স্বামিজী স্বামিজী গন্ধ, ধর্ম ধর্ম ভাব। ভাগ্যের প্রহসন আর কাকে বলব! আমার প্রথম প্রকাশক আমার ডাক নামে বই ছাপালেন। সেই থেকে আমি নিগুঢ়ানন্দ’ হয়ে আছি।


শাংগ্রিলার খোঁজে

সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু সমস্যা হল চিনা লামাটিকে নিয়ে। এইরকম অভিযানের জন্য যে শারীরিক উদ্যম আর মানসিক সংকল্প লাগে, তা তার ছিল না ; ব্রিটিশ সরকারের দাক্ষিণ্যে বেমওকা প্রমােদভ্রমণ মনে করেই বেরিয়েছিল সে। তিব্বতে ঢােকার পর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর খােলসের থেকে বেরিয়ে এল এক পানাসক্ত লম্পট। কিন্টুপের সঙ্গে প্রভুর মতােই আচরণ করতে লাগল,


কর্নেল সমগ্র ৭

হােটেল দ্য লেক ভিউ-এর ব্যালকনি থেকে বাইনােকুলারে সেই সেক্রেটারি বার্ডটিকে খুঁজছিলাম। সারস জাতীয় এই দুর্লভ পাখিকে বাংলায় বলা হয় কেরানি পাখি। কারণ, সহসা দেখলে মনে হয়, তার কানে যেন কলম গোঁজা আছে। কাল বিকেলে হ্রদের তীর থেকে পাখিটাকে কয়েক মুহুর্তের জন্য দেখেছিলাম। বিস্তীর্ণ এই প্রাকৃতিক জলাশয়ের মধ্যিখানে একটা জলটঙ্গি আছে। সেখানে ঘন জঙ্গল। পাখিটা একলা, নাকি তার সঙ্গী বা সঙ্গিনী আছে জানি না। তবে সে অতিশয় ধূর্ত তাতে কোন সন্দেহ নেই। এমন একটা দুর্গম জঙ্গলে সে তার ডেরা বেছে নিয়েছে।