Categories


বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ত্রাতিনা

ত্রাতিনা চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল, “আমি কোথায়?” তার কণ্ঠস্বর দূরে মিলিয়ে গেল তারপর প্রতিধ্বনিত হয়ে আবার ফিরে এল, আমি কোথা….. আমি কোথায়…. 
খুব ধীরে ধীরে প্রতিধ্বনিতগুলো মিলেয় যেতে থাকে। তারপর এক সময় আবার সেই নৈঃশব্দ্যের শূন্যতায় ডুবে যায়।
ত্রাতিনা আবার চিৎকার করল, “আমি কোথায়?” তার চিৎকার বহু দূর থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে, প্রতিধ্বনিত শব্দগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে। শব্দগুলো মিলেয়ে যেতে যেতে আবার নূতন করে অনুরণিত হয়, ত্রাতিনার মনে হয় সে বুঝি কারো কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছে। স্পষ্ট বোঝা যায় না, কিন্তু কোনো এক ধরনের কণ্ঠস্বর। মনে হয় কেউ কিছু একটা বলছে।


সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ম খণ্ড

সূচিপত্র
*কপোট্রনিক সুখদুঃখ
*মহাকাশে মহাত্রাস
*ক্রুগো
*ট্রুাইটন একটি গ্রহের নাম
*বিজ্ঞানী সফদর আলীর মহা মহা আবিষ্কার
*ওমিক্রনিক রূপান্তর
*টুকুনজিল
*যারা যায়োবট


সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২য় খণ্ড

সুহান শুয়ে শুয়ে দূরে তাকিয়ে থাকে। বহুদূরে নীল পাহাড়ের সারি। ওই পাহাড়গুলাের | কোনাে কোনােটা আগ্নেয়গিরি। সময় সময় ভয়ঙ্কর গর্জন করে অগ্ন্যুৎপাত হয়। মাটি থরথর করে

কঁপে, আকাশ কালাে হয়ে যায় বিষাক্ত ধোয়ায়, গলিত লাভা বের হয়ে আসে ক্রুদ্ধ নিশাচর | প্রাণীদের মতাে। এখন পাহাড়গুলাে স্থির হয়ে আছে। ট্ৰিনি বলেছে, পৃথিবীর পাহাড় হলে ওই পাহাড়ের চূড়ায় শুভ্র তুষার থাকত। এটা পৃথিবী নয়, তাই দূর পাহাড়ের চূড়ায় কোনাে শুভ্র তুষার নেই। এই গ্রহটি পৃথিবীর মতাে নয় কিন্তু এটাই সুহানের পৃথিবী, সুহানের গ্রহ। তার নিজের গ্রহ। যে গ্রহে ট্ৰিনি তাকে বুকে আগলে বড় করেছে। সুহান দীর্ঘ সময় দূর পাহাড়ের | দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে এক সময় ক্লান্ত হয়ে চোখ বন্ধ করল। আজকাল হঠাৎ হঠাৎ তার বুকের মাঝে বিচিত্র এক অনুভূতি হয়। সে এই অনুভূতির অর্থ জানে না। কাউকে সে এই অনুভূতির কথা বলতে পারবে না। ট্ৰিনি অনুভূতির অর্থ জানে না। ট্ৰিনি একটি রবােট। দ্বিতীয় প্রজাতির রবােট। তার, কপােট্রনে অসংখ্য তথ্য কিন্তু বুকে কোনাে অনুভূতি নেই।

 


উভচর মানুষ

জানুয়ারিতে আর্জেন্টিনার গ্রীষ্মের গুমােট রাত। কালাে আকাশ ছেয়ে গেছে তারায়। শান্তভাবে নােঙর ফেলে আছে ‘জেলি-মাছ' জাহাজ। জলের ছলাৎ বা মাস্তুলের কঁাচকঁাচানি কিছুই নেই, নিঝুম রাত। মনে হয় গভীর ঘুমে ঢলে পড়েছে মহাসাগর। | ডেকে শুয়ে আছে অর্ধনগ্ন মুক্তো-সন্ধানীরা। কাজের চাপ ও প্রচণ্ড রােদে অবসন্ন তারা ঘুমের মধ্যেই এপাশ-ওপাশ করছে, চেঁচিয়ে উঠছে। থেকে থেকে চমকে উঠছে। হাত-পা। স্বপ্নে হয়তাে দেখেছে তাদের দুশমন কোনাে হাঙর। নির্বাত এই তপ্ত। দিনগুলােয় ওরা এতই ক্লান্ত যে নৌকাগুলােকেও ডেকে তােলেনি। তবে তার দরকারও ছিল না, আবহাওয়া বদলাবার কোনাে লক্ষণ দেখা যায় নি, নােঙরের শেকলে বেঁধে তাদের জলেই রেখে দেওয়া হয়েছে। পালটাল কিছুই কষে বাঁধা হয়নি, সামান্য বাতাসেই তিরতিরিয়ে কেঁপে উঠছে সামনের মাস্তুলের তেকোনা পালটা। ডেকের প্রায় সবটা জুড়ে ঝিনুকের স্তুপ, ভাঙা প্রবালের চুনাপাথর, ডুবুরির দড়ি, ঝিনুক জমাবার ক্যানভাসের বস্তা আর ফঁাকা পিপে ছড়ানাে।

মিজেন মাস্তুলের কাছে ছিল একটা পানীয় জলের প্রকাণ্ড পিপে, তাতে শেকলে বাঁধা একটা লােহার মগ। পিপেটার আশেপাশে জল পড়ে কালাে দাগ ফুটেছে। | থেকে থেকেই এক-একজন ডুবুরি উঠে আধ-ঘুমে টলতে টলতে ঘুমন্তদের মাড়িয়ে জল খাবার জন্য যাচ্ছিল পিপেটার কাছে। 

 


নয় নয় শূন্য তিন

রিশান পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে নিচে তাকাল, যতদূর চোখ যায় ততদূর বিস্তৃত এক বিশাল অরণ্য, সবুজ দেবদারু গাছ ঝােপঝাড় লতাগুল্ম জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে। উপর থেকে এই বিশাল অরণ্যরাজিকে মনে হচ্ছে একটি কার্পেট, কেউ যেন নিচে গভীর উপত্যকায় খুব যত্ন করে বিছিয়ে রেখেছে। দূরে পর্বতমালার সারি, প্রথমে গাঢ় নীল, তার পেছনে হালকা নীল, আরাে দূরে ধূসর রং হয়ে দিগন্তে মিশে গেছে। কাছাকাছি উঁচু একটা পাহাড়ের চূড়ায় সাদা খানিকটা মেঘ আটকা পড়ে আছে। এ ছাড়া আকাশে কোথাও কোনাে মেঘের চিহ্ন নেই, স্বচ্ছ নীল রঙের আকাশ যেন পৃথিবীকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছে। পাহাড়ের পাদদেশে যে বুনাে নদীটি পাথর থেকে ভয়ঙ্কর গর্জন করে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল এই চুড়াে থেকে সেই নদীটিকেই মনে হচ্ছে একটি শান্ত স্রোতধারা । চারদিকে এক ধরনের আশ্চর্য নীরবতা, কান পাতলে গাছের পাতার মৃদু শব্দ, ঝরনার ক্ষীণ গুঞ্জন বা বন্যপাখির অস্পষ্ট কলরব শােনা যায় । কিন্তু সেসব পাহাড়ের চূড়ায় এই আশ্চর্য নীরবতাকে স্পর্শ করে না। রিশান প্রকৃতির প্রায় এই নির্লজ্জ সৌন্দর্যের দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। সে গ্রহ থেকে গ্রহে, উপগ্রহ থেকে উপগ্রহে ঘুরে বেড়িয়েছে, মহাকাশের গভীরে হানা দিয়েছে, সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে পার হয়ে গেছে; কিন্তু নিজের পৃথিবীর এই

 


শাহনাজ ও ক্যাপ্টেন ডাবলু

মহাজাগতিক প্রাণীটি যে ভাসমান যানটাতে উঠল সে রকম যান সায়েন্স ফিকমানের সিনেমাতেও দেখা যায় না। সেটি একটি মাইক্রোবাসের মতো বড় আর যন্ত্রপাতিতে বোঝাই। চকচকে ধাতব রঙের, দুই পাশে ছোট ছোট দুটি পাখা, মাথাটা সুচালো।পিছনে গেলে একটা ইঞ্জিন। ভিতরে পাশাপাশি তিনটা সিট।মাঝখানে মহাজাগিতিক প্রাণী বসেছে, দুই পামে শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলু।ভাসমান যানটা শুরু করার আগে শাহনাজ ভয়ে ভয়ে বলল, “এটা বেশি ঝাঁকাবে না তো? ঝাঁকুনি হলে আমার কিন্তু শরীর খারাপ হয়ে যায়।”


ত্রিনিত্রি রাশিমালা

সব লেখকেরই কখনো কখনো ইচ্ছে করে বিচিত্র কোন একটি চরিত্র সৃষ্টি করতে, শ্যালক্স গ্রুন নামে সেরকম বিচিত্র একটি চরিত্র সৃষ্টি করতে গিয়ে আমি ‘ত্রিনিত্রি রাশিমালা’ নামে এই বিজ্ঞান কল্পকাহিনীটি লিখেছিলাম


দ্বিতীয় মানব

টুনটুনি হলিক্রজ স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে। সায়েন্স গ্রুপ। সে জনৈক খলিলুল্লাহর উপর মোটামুটি গবেষণাধর্মী একটা প্রবন্ধ লিখছে। প্রবন্ধের নাম- ‘সে কে?’
খলিলুল্লাহ নামের লোকটির কর্মকান্ডে সে খুবই মজা পাচ্ছে। 
টুনটুনির বাবার নাম মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। তিনি মোটেই মজা পাচ্ছেন না। তিনি আতঙ্কে অস্থির হয়ে আছেন। খলিলুল্লাহ আসলে কে? সে কি দ্বিতীয় মানব?


ফাউণ্ডেশন

গ্যালাক্সির দুই কোটি পঞ্চাশ লক্ষ গ্রহে তখন মানুষের বাস। এর মধ্যে একটিও গ্রহ নেই যেটি এম্পায়ার-এর প্রতি অনুগত নয়। এবং গত পঞ্চাশ বছর ধরে ট্রানটরই এম্পায়ার-এর রাজধানী হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে।

গালের জন্য এবারের এই ভ্রমণ নিঃসন্দেহে তার নবীন শিক্ষা জীবনের চূড়ান্ত পর্ব।

মহাশূন্যভ্রমণ একবারে নতুন নয় তার কাছে। সুতরাং এটাকে স্রেফ একটা আকাশযাত্রা হিসেবে তেমন কিছু মনে হচ্ছে না ওর। অবশ্যি ওর দৌড় সিন্যাক্স-এর একমাত্র উপগ্রহ পর্যন্ত । গবেষণাপত্রের জন্য উল্কা-পতনের মেকানিক্স সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়েছিল সে উপগ্রহটায়। কিন্তু তাতে কী? পাঁচ মাইলের মহাশূন্যভ্রমণও যে কথা, কয়েক আলােকবর্ষ ভ্রমণও ঐ একই কথা। | হাইপার-স্পেসের ভেতর দিয়ে জাম্প'-এর জন্য শরীরটা একটু শক্ত করে ফেলল সে। আন্তঃগ্রহ ভ্রমণের জন্য অবশ্যি এ-ধরনের জাম্পের প্রয়ােজন হয় না । অনেকদিন থেকেই চলে আসছে জাম্পের ব্যবহার। সম্ভবত অনন্তকাল ধরেই চলবে । কারণ, এক নক্ষত্র থেকে অন্য নক্ষত্রে যাবার এটাই কার্যকর পদ্ধতি।

 


বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী অন্ধকারের গ্রহ

টেবিলের অন্যপাশে বসে থাকা মানুষটা একবার ভিডিও মডিউলটার দিকে তাকালাে, তারপর য়ুহার দিকে তাকালাে, তাকে দেখে মনে হয় সে বুঝি এখনাে বিশ্বাস করতে পারছে না যে যুহা তার সামনে বসে আছে।

“তুমি য়ুহা?”

য়ুহা মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যা। আমি য়ুহা। মনে নাই আমি গত সপ্তাহে এসেছিলাম—”

 “হ্যা আমার মনে আছে।” মানুষটা মাথা নাড়ল, “তুমি শব্দ দিয়ে কী যেন কর।”

 “আমি শব্দশিল্পী।” য়ুহা তার ছেলেমানুষী মুখটা গম্ভীর করার চেষ্টা করে বলল, “তােমরা যাকে বল কবি।” 

 “কবি?”

“হ্যা। আমি শব্দকে এমনভাবে সাজাতে পারি যে সাধারণ একটা কথা অসাধারণ হয়ে যাবে।”

“তাজ্জবের ব্যাপার।” সামনে বসে থাকা মানুষটা তার গাল চুলকাতে চুলকাতে বলল, “আমি ভেবেছিলাম এসব জিনিস উঠে গেছে। ভেবেছিলাম কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক দিয়ে সব করা যায়। ছবি আঁকা যায়, সংগীত তৈরি করা যায়, কবিতা লেখা যায়—” - মুহা হা হা করে হাসল, বলল, “যাবে না কেন? নিশ্চয়ই যায়। কিন্তু সেই ছবি, সেই সংগীত কিংবা সেই কবিতা হবে খুব নিম্নস্তরের। হাস্যকর, ছেলেমানুষী! খাটি শিল্প যদি চাও তাহলে দরকার খাটি মানুষ। খাঁটি কবিতা লিখতে পারে শুধু খাঁটি মানুষের খাঁটি মস্তিষ্ক।” য়ুহা নিজের মাথায় টোকা দিলে বলল, “আসল কবিতা লিখতে হলে দরকার আসল নিউরনের মাঝে আসল সিনান্স সংযােগ।”

 


সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৫ম খণ্ড

ছােট শিশু অর্থহীন কথা বললে বড় মানুষেরা যেভাবে সকৌতুকে তার দিকে তাকায় অনেকে সেভাবে মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল। কেউ কোনাে কথা বলল না। পৃথিবীর মানুষ আজকাল বেশি কথা বলে না, কী নিয়ে কথা বলবে কেউ জানে না। বৃদ্ধ কুরুর মতাে দুই-একজন ছাড়া সবাই জন্মের পর থেকেই দেখে আসছে পৃথিবীতে খুব বড় দুঃসময়। সবাই সেটা মেনে নিয়ে কোনােভাবে বেঁচে আছে, সেই বেঁচে থাকাটাও খুব অর্থপূর্ণ বেঁচে থাকা নয়। তাই কেউ সেগুলাে নিয়ে কথা বলতে চায় না। সেটা নিয়ে কেউ কোনাে অভিযােগও করে না। শস্যক্ষেত্রের পাশে উচু ঢিবিতে দাড়িয়ে থেকে সবাই উত্তর দিকে তাকিয়ে রইল। বহুদূরে কোথাও আগুন লেগেছে, সেই আগুন থেকে কুণ্ডলী পাকিয়ে কালাে ধোয়া আকাশে উঠছে। এটি কোনাে নূতন দৃশ্য নয়, অনেকদিন থেকেই তারা দেখছে দূরে কোথা থেকে জানি মাঝে মাঝে কুণ্ডলী পাকিয়ে কালাে ধোয়া আকাশে ওঠে। যতই দিন যাচ্ছে সেই ধোয়ার কুণ্ডলী আরাে ঘন ঘন এবং আরাে কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে। কে জানে কোনাে একদিন হয়তাে এই গ্রামটা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে। এই গ্রামের বাড়িঘর, শস্যক্ষেত্র সব পুড়ে ছাই হয়ে যাবে আর কুচকুচে কালাে ধোয়া আকাশে পাক খেয়ে উঠতে থাকবে।


সূচিপত্রী
*রুহান রুহান*জলমানব*অন্ধকারের গ্রহ*অক্টোপাসের চোখ*ইকারাস*রবো নিশি*কেপলার টুটুবি


বিজ্ঞান কল্পকাহিনী মেতসিস

বিজ্ঞান আকাদেমির সভাপতি ক্লাউস ট্রিটন সন্ধেবেলা আকাশের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে হতচকিত হয়ে গেলেন। সূর্য ডুবে গিয়ে পুরাে পশ্চিমাকাশে একটি বিচিত্র রঙ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃতি যেন নির্লজ্জের মতাে তার সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে পৃথিবীর সামনে উপস্থিত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে কিছু সূক্ষ্ম ধূলিকণা এসে পড়ার কথা। সন্ধ্যেবেলায় অস্তগামী সূর্যের আলাে সেই ধূলিকণায় বিচ্ছুরিত হয়ে আগামী কয়েকদিনের সূর্যাস্ত অত্যন্ত চমকপ্রদ হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল। ক্লাউস ট্রিটন সেটি জানতেন কিন্তু সেই সৌন্দর্য যে এত অতিপ্রাকৃতিক হতে পারে, এত অস্বাভাবিক হতে পারে তিনি সেটা কখনাে কল্পনা করেন নি। ক্লাউস ট্রিটন মন্ত্রমুগ্ধের মতাে কিছুক্ষণ দিগন্তের দিকে তাকিয়ে রইলেন এবং হঠাৎ করে তার নিজের ভিতরে একটি প্রশ্নের উদয় হলাে, তিনি নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করলেন, “আমাদের এই অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কী?”


সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৪র্থ খণ্ড

সূচিপত্র
*ত্রাতুলের জগৎ
*বেজি
*ফিনিক্স
*সায়রা সায়েন্টিস্ট
*সুহানের স্বপ্ন
*অবনীল
*নায়ীরা
*বিজ্ঞানী অনিল লুম্বা


পৃ (হার্ডকভার)

আমি খুব ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালাম। আমার মাথার কাছে একটি চতুষ্কোণ স্ক্রিন, সেখানে হালকা নীল রঙের আলাে, এই আলােটি আমার পরিচিত, কিন্তু কোথায় দেখেছি এখন কিছুতেই মনে করতে পারলাম না । খানিকক্ষণ চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কিছু একটা ঘটছে এবং আমি জানি ব্যাপারটা ঘটবে কিন্তু সেটি কী আমার মনে পড়ছে না। আমি সেটি মনে করার প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে আবার গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়লাম।

এক সময় আবার আমার চেতনা ফিরে আসতে থাকে এবং আধাে ঘুম আর আধাে জাগরণের মাঝামাঝি একটি তরল অবস্থায় আমি ঘুরপাক খেতে থাকি। আমি একরকম জোর করে চোখ খুলে তাকালাম, চতুষ্কোণ স্ক্রিনটিতে একটি নীল গ্রহের ছবি ফুটে উঠেছে। আমি এই গ্রহটিকে চিনি, এর নাম পৃথিবী, ছায়াপথের একটি সাদামাটা নক্ষত্রকে ঘিরে যে গ্রহগুলাে ঘুরছে এটি তার তৃতীয় গ্রহ। এই গ্রহে প্রাণের বিকাশ হয়েছিল এবং আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই গ্রহ থেকে এসেছে। আমরা একটি মহাকাশযানে করে এখন আবার এই গ্রহটিতে ফিরে যাচ্ছি।

 


সবার জন্য জ্যোতির্বিদ্যা

ফ্ল্যাপে লিখা কথা
* তোমরা যারা আকাশ দেখতে চাও
* তোমরা যারা মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন নিয়ে ঘুমাতে যাও
* তোমরা যারা জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে ভাবতে চাও
* তোমরা যারা এই মহাজগৎ নিয়ে ভাবিত
* তোমরা যারা আকাশের কিছু অংকও শিখতে চাও যাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পার।

-- তোমাদের জন্য এই বই

সূচিপত্র
পর্ব-১
* রাতের আকাশ
* জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস
* রেডিও তরঙ্গে পর্যবেক্ষণ
* মহাকাশযান
* জ্যোতিষাঙ্ক
* সংযোজনী ও গাণিতিক সমস্যাবলী

পর্ব-২
* আমাদের সৌরজগৎ
* চন্দ্র ও সূর্য
* কাছের গ্রহ
* দূরের গ্রহ
* গাণিতিক সমস্যাবলী

পর্ব-৩
* আলোর খেলা
* তারকালোক
* নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু
* কৃষ্ণবিবর
* গাণিতিক সমস্যাবলী

পর্ব-৪
* আমাদের ছায়াপথ
* গ্যালাক্সি জগৎ
* বিগ ব্যাং ও তারপর
* মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ
* মহাবিশ্বে আমরা কি নিঃসঙ্গ ?


প্রডিজি

শারমিনকে বিষয়টা বোঝাতে খুব বেশি সময় লাগল না। কোথা থেকে হ্যাক করছে, যেন জানতে না পারে, সে জন্য আইপি অ্যাড্রেসটাকে একটু পরে পরে বানোয়াট আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে পাল্টে দিতে হচ্ছিল। সিকিউরিটি অসম্ভব কঠিন। একবার মনে হচ্ছিল বুঝি, ডেটাবেসে ঢোকাই যাবে না। কিন্তু শারমিন কীভাবে জানি ঢুকে গেল। সেখানে সিকিউরিটির নানা পর্যায়ের এনক্রিপটেড সংখ্যাগুলো পাওয়া গেল। শারমিন সেগুলো নিয়ে কাজ করতে থাকে। একটা সুপার কম্পিউটার কয়েক মাস চেষ্টা করে যেটা বের করতে পারত। শারমিন ঘন্টা খানেকের মধ্যে সেটা করে ফেলল।

......

শারমিন মানুষগুলোর কথা বুঝতে পারছিল না, কিন্তু এক-দুটি শব্দ থেকে অনুমান করছিল, তাকে দিয়ে কোনো একটা পরীক্ষা করাবে। নিশ্চয়ই ভয়ংকর কোনো পরীক্ষা। পরীক্ষাটি কী, সে বুঝতে পারছিল না, কিন্তু সে প্রস্তুত হয়ে রইল। হঠাৎ করে তার চোখে ঘুম নেমে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে শারমিন বুঝে যায় পরীক্ষাটি কী। যন্ত্র দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু শারমিন ঘুমাবে না, সে কিছুতেই ঘুমাবে না। শারমিন জোর করে নিজেকে জাগিয়ে রাখল। হঠাৎ ঢেউয়ের মতো করে ঘুম এসে তাকে ভাসিয়ে নিতে চায় কিন্তু শারমিন তাতে কিছুতেই ভাসিয়ে নিতে দিল না। দাঁতে দাত চেপে জেগে রইল।

‘গোড়াতেই বলে রাখি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আসল চেহারা কী জানবার জো নেই। বিশ্বপদার্থের নিতান্ত অল্পই আমাদের চোখে পড়ে। তা ছাড়া আমাদের চোখ কান স্পর্শেন্দ্রিয়ের নিজের বিশেষত্ব আছে। তাই বিশ্বের পদার্থগুলি বিশেষভাবে বিশেষ রূপে আমাদের কাছে দেখা দেয়। ঢেউ লাগে চোখে, দেখি আলো। আরো সূক্ষ্ম বা আরো স্থূল ঢেউ সম্বন্ধে আমরা কানা। দেখাটা নিতান্ত অল্প, না-দেখাটাই অত্যন্ত বেশি। পৃথিবীর কাজ চালাব বলেই সেই অনুযায়ী আমাদের চোখ কান, আমরা যে বিজ্ঞানী হব প্রকৃতি সে খেয়ালই করে নি। মানুষের চোখ অণুবীক্ষণ ও দুরবীন এই দুইয়ের কাজই সামান্য পরিমাণে করে থাকে। বোধের সীমা বাড়লে বা বোধের প্রকৃতি অন্যরকম হলে আমাদের জগৎটাও হত অন্যরকম। বিজ্ঞানীর কাছে সেই অন্যরকমই তো হয়েছে। এতই অন্যরকমের যে, যে-ভাষায় আমরা কাজ চালাই এ জগতের পরিচয় তার অনেকখানিই কাজে লাগে না। প্রত্যহ এমন চিহ্নওয়ালা ভাষা তৈরি করতে হচ্ছে যে, সাধারণ মানুষ তার বিন্দুবিসর্গ বুঝতে পারে না।’


তারা তিনজন

‘তারা তিনজন’ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখার ইতিহাসটা বলি- স্টিমারের করে যাচ্ছি বরিশাল। সুন্দর কেবিন, বেশ ভাল ব্যবস্থা। রাতে ঘুমোতে যাবার সময় দেখি, কেবিনে আমি একা নই। প্রকাণ্ড এক মাকড়শা, বুকে ডিমের থলি নিয়ে এই কেবিনেই বসবাস করছে। ছুটে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলাম। ব্যাখার অতীত কোনো এক কারণে মাকড়শা নামক নিরীহ প্রাণীটিকে আমি অসম্ভব ভয় পাই। কেবিনে ফিরে গেলাম না। রাত কাটিয়ে দিলা ডেকে হাঁটাহাঁটি করে। কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যে মাকড়শা নিয়ে একটা গল্প ভাবতে লাগলাম। পুরো গল্প মাথায় তৈরি হয়ে গেল। গল্পের পাত্র-পাত্রী তিনজন। তারা মানুষ নয়-অসম্ভব বুদ্ধিমান তিনটি প্রাণী-দেখতে মাকড়শার মতো। গল্পটি নিয়ে ভাবার সময় খুব আনন্দ পেয়েছি। লেখার সময়ও আনন্দ পেয়েছি। পাঠক-পাঠিকাদের এই খবরটা দেয়া জরুরি মনে করছি।


বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী সুহানের স্বপ্ন

রিশি মনিটরে একটা গ্রহকে স্পষ্ট করতে করতে বলল, “আমি আমার জীবনে যতােগুলাে গ্রহ দেখেছি তার মাঝে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে এই গ্রহটা।”

টিরিনা তার অবাধ্য চুলগুলােকে পিছনে সরিয়ে বলল, “কেন? তুমি হঠাৎ এই গ্রহটার বিপক্ষে প্রচার শুরু করছ কেন? একটা গ্রহ হচ্ছে গ্রহ-তার মাঝে আবার ভাল খারাপ আছে নাকি?”

“থাকবে না কেন? একশবার থাকবে।” টিরিনা মুখ টিপে হেসে বলল, “কী রকম?”

“মনে করাে যে গ্রহে খােলা আকাশ, নিঃশ্বাস নেবার মতাে বাতাস আর পানিতে ঢাকা বিশাল বিশাল সাগর বা হৃদ আছে সেটা হচ্ছে ভাল গ্রহ। যে গ্রহে সেগুলাে নেই সেটা হচ্ছে খারাপ গ্রহ।”

টিরিনা খিলখিল করে হেসে বলল, “তার মানে তুমি আসলে পৃথিবীকে ধরে নিয়েছ আদর্শ গ্রহ-যে গ্রহ যত বেশি পৃথিবীর কাছাকাছি সেই গ্রহ তােমার কাছে ততাে ভাল।”

রিশিকে এক মুহূর্তের জন্যে একটু বিভ্রান্ত দেখায়, সে দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “সেটা কী খুব অযৌক্তিক ব্যাপার হলাে? এখন না হয় আমরা সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে পড়েছি—কিন্তু এক সময়ে তাে আমরা সবাই পৃথিবীতেই থাকতাম। আমাদের শরীরের বিবর্তন হয়েছে পৃথিবীর পরিবেশের উপযােগী হয়ে কাজেই পথিবীর মতাে গ্রহকে ভাল বললে তােমার এতাে আপত্তি কেন?”

টিরিনা হাসল। বলল, “মােটেও আপত্তি নেই। আমি শুধু বিষয়টি বােঝার চেষ্টা করছি।”

রিশি টিরিনার মুখে সূক্ষ্ম হাসি আবিষ্কার করে মুখটা অকারণে কঠোর করে বলল, “উহু, তুমি বােঝার চেষ্টা করছ না।”

“তাহলে আমি কী করছি?”। “তুমি আমার সাথে কৌতুক করার চেষ্টা করছ।”

টিরিনা আবার খিলখিল করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই বলল, “ঠিক আছে সেটাই না হয় হলাে—এটাও কী খুব বড় অপরাধ। আমরা দুইজন একটা মহাকাশযানে করে প্রায় আস্তো একটা গ্যালাক্সি পার হয়ে যাচ্ছি। বেশির ভাগ সময় কাটে আমাদের হিমঘরে । লিকুইড হিলিয়াম তাপমাত্রায় জমে পাথর হয়ে থাকি।

 


প্রজেক্ট নেবুলা

সন্ধ্যে থেকে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল হঠাৎ করে বৃষ্টিটা চেপে এল। জব্বার নিচু গলায় একটা অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করে উইন্ডশীন্ড ওয়াইপারটা আরেকটু দ্রুত করে দেয়। কাঁচ কাঁচ শব্দ করে ওয়াইপার দুটো গাড়ির কাঁচ পরিষ্কার করতে থাকে কিন্তু অন্ধকার দুর্যোগময় রাতে সেটা খুব কাজে আসে না, গাড়ির হেডলাইট মনে হয় সামনের অন্ধকারকে আরাে জমাট বাঁধিয়ে দিচ্ছে। রাস্তার অন্যদিক থেকে দৈত্যের মত একটা ট্রাক চোখ ধাঁধানাে | হেডলাইট জ্বালিয়ে প্রচণ্ড গর্জন করে বিপজ্জনকভাবে পাশ কাটিয়ে গেল—

পানির ঝাপটায় গাড়ির কাচ মুহূর্তের জন্যে অন্ধকার হয়ে যায়, প্যাসেঞ্জার সিটে বসে থাকা দবির কজির কাছে কাটা হাতটি সামনে এগিয়ে অদৃশ্য কিছু একটা ধরে ফেলার ভঙ্গি করে বিরক্ত হয়ে বলল, “আস্তে, জব্বার আস্তে।” জব্বার অন্ধকারে দেখা যায় না এরকম একটা রিক্সা ভ্যানকে পাশ কাটিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলল, “ভয় পাবেন না ওস্তাদ। আমি কালা জব্বার।”

 


বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ইরন

ইরন দীর্ঘসময় থেকে সমুদ্রের তীরে নির্জন বিস্তৃত বালুবেলায় একাকী বসে আছে। তার মন বিষন্ন, বিষন্নতার ঠিক কারণটি জানা নেই বলে একধরনের অস্থিরতা তার মনকে অশান্ত করে রেখেছে। ইরন অন্যমনস্কভাবে আকাশের দিকে তাকায় একটা ভাঙা চাঁদ মেঘের আড়াল থেকে বের হওয়ার মিথ্যে চেষ্টা করে আবার মেঘের আড়াল হয়ে গেল। মেঘে ঢাকা চাঁদের কোমল আলােতে চোখের রেটিনায় বর্ণ অসংবেদী রড গুলি কাজ করছে তাই চারিদিক আবছা এবং ধূসর। মধ্যরাত্রিতে নির্জন বালুবেলায় সামনের বিস্তৃত নিস্তরঙ্গ সমুদ্রটিকে একটি অতিপ্রাকৃতিক দৃশ্য বলে মনে হয়। ইরনের পিছনে দীর্ঘ ঝাউগাছ, সমুদ্রের নােনা ভেজা হাওয়ায় সেগুলি দীর্ঘশ্বাসের মতাে শব্দ করছে। হাহাকারের মতাে সেই শব্দ শুনলেই বুকের মাঝে বিচিত্র একধরনের শূন্যতা এসে ভর করে।

ইরন তার বুকের মাঝে দুর্বোধ্য সেই শূন্যতা নিয়ে নিজের হাঁটুর উপর মাথা রেখে নিঃশব্দে বসে থাকে। হঠাৎ করে সে বুঝতে পারে সে বড় নিঃসঙ্গ এবং একাকী। তার বুকের ভিতরে যে বিষন্নতা তার সাথে সে পরিচিত নয়, যে হতাশা তার মুখােমুখি হওয়ার সাহস নেই।

 


বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ফোবিয়ানের যাত্রী

আজ সকালে ঘুম ভাঙতেই আমার মায়ের কথা মনে পড়ল, অস্পষ্ট আবছা এবং হালকাভাবে নয়- অত্যন্ত তীব্রভাবে। মায়ের সাথে আমার যােগাযােগ নেই প্রায় বারাে বৎসর-আমার ধারণা ছিল খুব ধীরে ধীরে আমার মস্তিষ্ক থেকে মায়ের স্মৃতি অস্পষ্ট হয়ে আসছে। কিন্তু আজ ভােরবেলা আমি বুঝতে পারলাম সেটি সত্যি নয়, মায়ের স্মৃতি হঠাৎ করে আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। মা এবং সন্তানের মাঝে প্রাণীজগতের যে তীব্র তীক্ষ্ণ এবং আদিম ভালােবাসা রয়েছে সেই ভালােবাসার একটুখানির জন্যে আজ সকালে আমি বুকের ভিতরে একধরনের শূন্যতা অনুভব করতে থাকি, আমার মাকে এক নজর দেখার জন্যে কিংবা একবার স্পর্শ করার জন্যে হঠাৎ করে নিজের ভেতর এক ধরনের বিচিত্র অস্থিরতা আবিষ্কার করে আমি নিজেই একট অবাক হয়ে যাই।

 


মহাকাশে কী ঘটছে

দূরের আকাশের চাঁদ-সূর্য-গ্রহ-তারা চিরকালই মানুষের মনে অপরিসীম কৌতূহল জাগিয়েছে। মহাকাশের রহস্য মানুষ উদঘাটন করতে চেষ্টা করেছে আদিকাল থেকে। সেই বোকা পণ্ডিতের কাহিনীটা আমাদের সবারই জানা।পণ্ডিত রাতের বেলা পথ চলেছেন-দৃষ্টি তাঁর আকাশের দিকে।আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের ভাবনায় তিনি মশগুল।এদিকে পথে ছিল এক খাদ; আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে পথ চলতে চলতে তিনি পড়ে গেলেন সেই খাদে।এই কাহিনীর শিক্ষামূলক দিকটা বুঝতে মোটেই কষ্ট হয় না-আশপাশে না তাকিয়ে শুধু দূরের বিষয় নিয়ে ব্যস্থ থাকলে বিপদ ঘটতে পারে।তবে সেই সাথে যেসব পণ্ডিত ঘর-সংসারের চিন্তা ছেড়ে কেবলই আকাশের ভাবনা-চিন্তায় মন দেয় তাদের জন্য করুণার দিকটিও এখানে স্পষ্ট।বহুকাল ধরে জ্ঞানী মানুষদের নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা অনেকটা এরকমই ছিল। তার কারণ, আকাশের বিষয় যে তাদের জীবনে কখনো কাজে লাগবে তা ছিল মানুষের কল্পনারও অতীত।কিন্ত আজ এ অবস্থা একেবারেই পাল্টে গিয়েছে। পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে বেরিয়ে পড়েছে মানুষ; চাঁদের বুকে নেমে ঘুরে বেড়িয়েছে। মহাকাশে ঘরপাক খাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের বদৌলতে আমরা সহজেই দূরদেশে টেলিফোনে কথা বলতে পারছি, টেলিভিশনে ছবি দেখছি নানা দেশের। মহাকাশের বার্তা পেয়ে আমরা জানতে পারছি ঘূর্ণিঝড়ের আগাম খবর-খরা ও বন্যার সতর্কবাণী। বিজ্ঞানীরা মহাকাশ থেকে আশ্চর্য স্পষ্ট ছবি তুলে আনছেন সৌরজগতের অতি দূরের গ্রহ-উপগ্রহের। চাঁদের মেরু অঞ্চলে পানি আর মঙ্গলগ্রহের বুকে প্রাণের চিহ্ন থাকতে পারে-খবর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদ আর মঙ্গলগ্রহের বুকে মানুষের আন্তানা গাড়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।সূর্যের গায়ে সৌরকলঙ্কের খবর থেকে জ্যোতির্বিদরা খবর দিচ্ছেন পৃথিবীর আবহাওয়ায় বা বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় তার কোন ছাপ পড়বে কিনা। তাঁরা বলছেন সূর্যের বিকিরণে যদি শতাংশের ভগ্নাংশমাত্র হেরফের ঘটে তাহলেই বদলে যেতে পারে পথিবীর জলবায়ূ। নভোযান থেকে আশ্চর্য সব খবর আসছে মানুষের জন্য। বৃহস্পতির ওপর আছড়ে পড়েছে ধূমকেতুর কিছু খণ্ড-তার স্পষ্ট ছবি দেখছি আমরা পৃথিবীতে বসে। এমনি ধূমকেতু বা গ্রহাণু যে কোন সময় এসে পড়তে পারে পৃথিবীর ওপর। অতীতে এমন ঘটেছে-ভবিষ্যতেও যে ঘটবে তা প্রায় নিশ্চিত, তবে কখন তা কেউ বলতে পারে না।


অনুরন গোলক

আজকেও সে বাইরে তাকিয়েছিল, ঘুরে ফিরে বারবার তার সহঅভিযাত্রীদের কথা মনে পড়ছে। তাদের দলপতি শ্রুরা, ইঞ্জিনীয়ার কিরি, তাদের জীববিজ্ঞানী। ইলিনা নেভিগেটর থুল- আরাে কতজন। যখন ওয়ার্মহােলের প্রবল আকর্ষণে মহাকাশযানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল, কী পাগলের মতই না তারা মহাকাশযানটিকে বাঁচানাের চেষ্টা করেছিল ! শেষ রক্ষা করতে পারে নি, প্রচণ্ড বিস্ফোরণে একটা অংশ ছিটকে বের হয়ে গিয়েছিল, আর ঠিক তখন মহাকাশযানের মূল কম্পিউটার মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোন ভাবে প্রবল আকর্ষণের কেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসেছিল। ত্রাতিনা ছিটকে পড়েছিল কন্ট্রোল প্যানেলে, সেখান থেকে মেঝেতে। যখন জ্ঞান হয়েছে নিজেকে আবিষ্কার করেছে একটি ধ্বংসস্তুপে। ইমার্জেন্সী আলাে নিয়ে মহাকাশযানে ঘুরে ঘুরে সে তার সহঅভিযাত্রীদের মৃতদেহ আবিষ্কার করেছে। বিশাল একটা অংশ উড়ে বের হয়ে গেছে, সেখানে যারা ছিল তাদেরকে আর কখনাে খুঁজে পাওয়া যায় নি। অন্যদের মৃতদেহ সে গভীর ভালবাসায় স্টেনলেস স্টীলের ক্যাপসুলে ভরে মহাকাশে ভাসিয়ে দিয়েছে।